সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ
ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে বরিশালের চর কাউয়ার কালীখোলা গ্রামে একজনের খুন হওয়া এবং জখম আরও একজনের হাসপাতালে মৃত্যুর গুজবের অজুহাতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের যে ঘটনা ঘটানো হলো, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিভিন্ন অজুহাতে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, উপাসনালয় ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা কিছুদিন পরপরই ঘটে চলেছে। কয়েক দিন আগেই পাবনার সাঁথিয়ায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গত বছর রামুসহ পার্বত্য তিনটি জেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষও একই রকম হিংসাত্মক ঘটনার শিকার হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার বরিশালের চর কাউয়ার কালীখোলা গ্রামে ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারি বেধে যাওয়ার পরিণতিতে যে এমন হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে, স্থানীয় প্রশাসনের তা আগে থেকেই বোঝা উচিত ছিল। মারামারির সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েনি; তা ঘটেছে পরদিন শুক্রবারে। এই সময়ের মধ্যে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ ওই গ্রামে পাঠানো হলে এত বড় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানোর সুযোগ কেউ পেত না।
কিন্তু সেটা করা হয়নি। এটা পরিষ্কার যে কালীখোলা গ্রামের এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অনিবার্য ছিল না; এটা ঘটতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতা ও অবহেলার কারণে। তা ছাড়া সংখ্যাগুরু গ্রামবাসীর হিংসার উন্মাদনায় মেতে ওঠাও যারপরনাই নিন্দনীয়। কেননা, খেলার মাঠে মারামারি নতুন নয়, এবং দুর্ভাগ্যজনক হলেও মারামারি থেকে খুন-জখমও ঘটে যেতে পারে। কালীখোলার এই ঘটনায় যে যুবক নিহত হয়েছেন, তিনি ঘটনাক্রমে মুসলমান সম্প্রদায়ের সদস্য। আর যাঁদের আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁরা ঘটনাক্রমে হিন্দু। এটি কোনো সম্প্রদায়গত বিষয় নয়। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটিকে দুটি সম্প্রদায়ের শত্রুতায় পরিণত করে দুর্বল সংখ্যালঘুদের পুরো সম্প্রদায়কেই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে, যা অত্যন্ত গর্হিত অন্যায়। এটাও ন্যক্কারজনক যে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ঘরবাড়িতে শুধু অগ্নিসংযোগই করেনি, লুটপাটও চালিয়েছে। লুটপাটের সুযোগ নেওয়ার এমন প্রবণতা পাবনার সাঁথিয়া এবং গত বছর রামুর ঘটনায়ও লক্ষ করা গেছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী যদি তাদের সংখ্যালঘু প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কী হতে পারে? ছোটখাটো নানা ঘটনায় কিছুসংখ্যক মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে যখন সংঘবদ্ধ হিংসার প্রকাশ ঘটাতে চায়, তখন সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানবিকতার সমস্ত বোধ ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে। কিছুদিন পর পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ঘটনার অজুহাতে এমন হিংসা ও ঘৃণার প্রকাশ এই সমাজের চিরায়ত প্রীতিবন্ধনে বড় বড় ক্ষতের সৃষ্টি করছে। এসবের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হলে যেকোনো উত্তেজনাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া মাত্র যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, সংখ্যাগুরু মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষকেও শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে, সংখ্যালঘু প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়িয়ে সুরক্ষা দিতে হবে
No comments