অবরুদ্ধ নগর ও চিন্তিত নগরবাসী by মোঃ মাহমুদুর রহমান
অসহনীয় অবস্থায় দেশের মানুষ। সরকার পক্ষ,
বিরোধী পক্ষ ও সরাসরি কোনো পক্ষের সঙ্গে নয়- এমন সাধারণ মানুষ মিলেই প্রায়
১৬ কোটি মানুষের দেশে বাস করছি আমরা। তিনটি পক্ষই অসহনীয় অবস্থায়। সবচেয়ে
খারাপ অবস্থায় সম্ভবত প্রশাসন ও পুলিশের সদস্যরা। ইদানীং রাস্তাঘাটে দেখা
যায়, পুলিশের গাড়িতে বসে ঝিমুচ্ছে অনেকেই। দেখেই বোঝা যায়, একটানা ডিউটির
ধকল আর সইছে না শরীরে। এ ছাড়া বিরোধী দলের কর্মসূচি নির্বিঘেœ পালনের সুযোগ
দিলে সরকারের কাছে জবাবদিহিতা, আর বাধা দিলে আক্রমণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি
নিয়ে সব সময় পুলিশকে মাঠে থাকতে হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষমতায় যেতে হলে বিরোধী
দলকে আন্দোলন তীব্র করতে হবে। ক্ষমতায় থাকতে হলে সরকারি দলকে আন্দোলন
প্রতিহত করতে হবে। সাধারণ মানুষকে এ কর্মসূচি পালন ও প্রতিহতকরণের মধ্য
দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। রাজনৈতিক সব কর্মসূচি সহিংস হয়ে ওঠায় সত্যিকার
অর্থেই মানুষ অস্বস্তিতে আছে। এ সমস্যা সমাধানের কোনো লক্ষণ ফুটে উঠছে না।
তাই হতাশাও বাড়ছে দিন দিন।
বিরোধী দলের দাবি, জনগণের আন্দোলন কখনও বিফলে যায় না। তাই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর করতে হবে। সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে এসব কঠোর আন্দোলনের হুমকি মোকবেলার জন্য কঠোর মনোভাব পোষণ করে। উভয়পক্ষের কঠোরতার মধ্যে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অনেক সময় কঠিন ও কঠোর আন্দোলনে সাধারণ মানুষের জীবন থেঁতলে নরম হয়ে যায়। এ সরকারের মেয়াদে বিরোধী দলের আগের হরতালগুলোয় পিকেটিং করতে দেখা যেত না। মোটামুটি দায়সারা গোছের হরতাল করে রাজনৈতিক মাঠে থাকতেন তারা। এতে জনগণের খুব একটা সমস্যা হতো না। কিন্তু বিগত ২৭ অক্টোবর থেকে হরতালে যথেষ্ট পিকেটিং হচ্ছে। সঙ্গে ভয়ংকরভাবে যুক্ত হয়েছে ককটেল ও বোমার বিস্ফোরণ। ককটেল ও বোমা নতুন আতংক সৃষ্টি করেছে। আগে হরতালে রিকশায় অফিসে যেতে সমস্যা হতো না, ভয়ও করত না। কিন্তু বিগত তিনদিনের একটানা হরতালের সময় রিকশায় অফিসে যেতে কিছুটা ভীত ছিলাম মূলত ককটেল ও বোমার কারণে। রাস্তায় যখন মুখোমুখি হলাম জামায়াত-শিবিরকর্মীদের পিকেটিংয়ের, তখন তাদের বড় বড় চোখে তাকানো দেখে ভয় পেলাম, মনে হল কেউ কিছু জিজ্ঞেস না করে এখনই হয়তো ককটেল মারবে। ভাগ্য ভালো, যারা আমার রিকশার দিকে এগিয়ে এলো তাদের মধ্যে একজন আমাকে সালাম দিল, সাবেক শিক্ষক হিসেবে। এতে পুরো পরিস্থিতি আমার অনুকূলে চলে এলো। আরও কিছুদূর যাওয়ার পর বিএনপি কর্মীদের পিকেটিংয়ে বাধ্য হয়ে রিকশা ছেড়ে দিতে হল। তারপর হেঁটে গন্তব্যের দিকে যাত্রা। এরকম অভিজ্ঞতা অনেকের আছে। সবাইকে ভীতি নিয়ে রাস্তায় বের হতে হচ্ছে এবং সামনেও বের হতে হবে। কারণ শহর, বন্দর, নগর সবই অবরুদ্ধ- সহিংসতায় পরিপূর্ণ। এরই মধ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ইনিংসের হরতালে ২০টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। ২০টি পরিবারে শোকের মাতম চলছে। এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে। সরকার বলছে, বিরোধী দলের হরতালে প্রাণহানি হয়েছে, তাই বিরোধী দলকে দায়িত্ব নিতে হবে। বিরোধী দল বলছে, সরকার নিরপেক্ষ সরকারের বিধান সংবিধান থেকে বাতিল করায় এবং পুনঃসংযোজন না করার কারণে তারা বাধ্য হয়েছে হরতাল দিতে। আর হরতালে সরকারি দল ও পুলিশের সহিংসতায় প্রাণ গেছে, তাই দায়িত্ব তাদের। দায়-দায়িত্ব কার কতটুকু তা সঠিকভাবে নির্ণীত না হলেও কমবেশি সবার যে দায়িত্ব রয়েছে সে ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রতিপক্ষ দলের কর্মীদের মধ্যে এবং দায়িত্বরত পুলিশের সঙ্গে বিরোধী দলের সংঘর্ষ হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এবার হরতালে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা। সরকার যেসব গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ মনে করে, তাদের ওপর আক্রমণ করে আইনি অস্ত্রের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে। ফলে এ মুহূর্তে সরকারবিরোধী কোনো কোনো সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচার বন্ধ রয়েছে। একজন সম্পাদকও জেলে বন্দি আছেন। অন্যদিকে যারা ক্ষমতায় নেই, হাতে আইন নামক অস্ত্র নেই- তারা হাতে তুলে নিয়েছে ককটেল ও বোমা। বোমার আঘাতে মিডিয়া ও মিডিয়া কর্মীরা আহত হয়েছেন- যা কোনোভাবেই একটি গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজের কাম্য হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি অশুভ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তারা কেউই ভিন্নমত সহ্য করতে পারেন না। অথচ গণতান্ত্রিক সমাজের সৌন্দর্যই ভিন্নমতের মধ্যে নিহিত। সবাই যার যার মত প্রকাশ করবে। মতের বিপরীতে মত আসবে, চিন্তার বিপরীতে চিন্তা। অবাধ ও অহিংস তর্কবিতর্ক হবে। আর মিডিয়ার মাধ্যমে এসব বিপরীতমুখী চিন্তা ও তর্কবিতর্ক জনগণ জানবে। যার যার পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো চিন্তা গ্রহণ বা বর্জন করবে। রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে প্রগতির দিকে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।
বর্তমানে প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার হরতাল ও রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য সীমিত। আমাদের চলাফেরার স্বাধীনতা নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর মর্জির ওপর। অন্যদিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নির্ভর করে সরকারের সহিষ্ণুতা ও উদারতার ওপর। সরকারবিরোধী মত প্রকাশের জন্য পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ, টেলিভিশনের প্রচার নিষিদ্ধ হতে পারে। সঙ্গে রয়েছে সংশ্লিষ্টদের জেল-জুলুম ও হয়রানির মতো ঘটনা। সরকারের পক্ষে যেসব মিডিয়া রয়েছে এতদিন তারা নিরাপদ থাকলেও বোমা হামলার নামে নতুন উপদ্রব শুরু হয়েছে। সাংবাদিকরা এখন আর একমাত্র সরকার দ্বারা নিগৃহীত নয়, বিরোধী দলের আক্রোশেরও শিকার হয়ে বোমা ও ককটেলের আঘাতে আহত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি অবশ্যই নিন্দনীয়। বেশিরভাগ মানুষের চোখে এ অবনতিশীল পরিস্থিতির জন্য দায়ী আমাদের নোংরা রাজনীতি, যা সমাজের প্রতিটি পেশা ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে।
মোঃ মাহমুদুর রহমান : ব্যাংকার
বিরোধী দলের দাবি, জনগণের আন্দোলন কখনও বিফলে যায় না। তাই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর করতে হবে। সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে এসব কঠোর আন্দোলনের হুমকি মোকবেলার জন্য কঠোর মনোভাব পোষণ করে। উভয়পক্ষের কঠোরতার মধ্যে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অনেক সময় কঠিন ও কঠোর আন্দোলনে সাধারণ মানুষের জীবন থেঁতলে নরম হয়ে যায়। এ সরকারের মেয়াদে বিরোধী দলের আগের হরতালগুলোয় পিকেটিং করতে দেখা যেত না। মোটামুটি দায়সারা গোছের হরতাল করে রাজনৈতিক মাঠে থাকতেন তারা। এতে জনগণের খুব একটা সমস্যা হতো না। কিন্তু বিগত ২৭ অক্টোবর থেকে হরতালে যথেষ্ট পিকেটিং হচ্ছে। সঙ্গে ভয়ংকরভাবে যুক্ত হয়েছে ককটেল ও বোমার বিস্ফোরণ। ককটেল ও বোমা নতুন আতংক সৃষ্টি করেছে। আগে হরতালে রিকশায় অফিসে যেতে সমস্যা হতো না, ভয়ও করত না। কিন্তু বিগত তিনদিনের একটানা হরতালের সময় রিকশায় অফিসে যেতে কিছুটা ভীত ছিলাম মূলত ককটেল ও বোমার কারণে। রাস্তায় যখন মুখোমুখি হলাম জামায়াত-শিবিরকর্মীদের পিকেটিংয়ের, তখন তাদের বড় বড় চোখে তাকানো দেখে ভয় পেলাম, মনে হল কেউ কিছু জিজ্ঞেস না করে এখনই হয়তো ককটেল মারবে। ভাগ্য ভালো, যারা আমার রিকশার দিকে এগিয়ে এলো তাদের মধ্যে একজন আমাকে সালাম দিল, সাবেক শিক্ষক হিসেবে। এতে পুরো পরিস্থিতি আমার অনুকূলে চলে এলো। আরও কিছুদূর যাওয়ার পর বিএনপি কর্মীদের পিকেটিংয়ে বাধ্য হয়ে রিকশা ছেড়ে দিতে হল। তারপর হেঁটে গন্তব্যের দিকে যাত্রা। এরকম অভিজ্ঞতা অনেকের আছে। সবাইকে ভীতি নিয়ে রাস্তায় বের হতে হচ্ছে এবং সামনেও বের হতে হবে। কারণ শহর, বন্দর, নগর সবই অবরুদ্ধ- সহিংসতায় পরিপূর্ণ। এরই মধ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ইনিংসের হরতালে ২০টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। ২০টি পরিবারে শোকের মাতম চলছে। এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে। সরকার বলছে, বিরোধী দলের হরতালে প্রাণহানি হয়েছে, তাই বিরোধী দলকে দায়িত্ব নিতে হবে। বিরোধী দল বলছে, সরকার নিরপেক্ষ সরকারের বিধান সংবিধান থেকে বাতিল করায় এবং পুনঃসংযোজন না করার কারণে তারা বাধ্য হয়েছে হরতাল দিতে। আর হরতালে সরকারি দল ও পুলিশের সহিংসতায় প্রাণ গেছে, তাই দায়িত্ব তাদের। দায়-দায়িত্ব কার কতটুকু তা সঠিকভাবে নির্ণীত না হলেও কমবেশি সবার যে দায়িত্ব রয়েছে সে ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রতিপক্ষ দলের কর্মীদের মধ্যে এবং দায়িত্বরত পুলিশের সঙ্গে বিরোধী দলের সংঘর্ষ হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এবার হরতালে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা। সরকার যেসব গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ মনে করে, তাদের ওপর আক্রমণ করে আইনি অস্ত্রের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে। ফলে এ মুহূর্তে সরকারবিরোধী কোনো কোনো সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচার বন্ধ রয়েছে। একজন সম্পাদকও জেলে বন্দি আছেন। অন্যদিকে যারা ক্ষমতায় নেই, হাতে আইন নামক অস্ত্র নেই- তারা হাতে তুলে নিয়েছে ককটেল ও বোমা। বোমার আঘাতে মিডিয়া ও মিডিয়া কর্মীরা আহত হয়েছেন- যা কোনোভাবেই একটি গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজের কাম্য হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি অশুভ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তারা কেউই ভিন্নমত সহ্য করতে পারেন না। অথচ গণতান্ত্রিক সমাজের সৌন্দর্যই ভিন্নমতের মধ্যে নিহিত। সবাই যার যার মত প্রকাশ করবে। মতের বিপরীতে মত আসবে, চিন্তার বিপরীতে চিন্তা। অবাধ ও অহিংস তর্কবিতর্ক হবে। আর মিডিয়ার মাধ্যমে এসব বিপরীতমুখী চিন্তা ও তর্কবিতর্ক জনগণ জানবে। যার যার পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো চিন্তা গ্রহণ বা বর্জন করবে। রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে প্রগতির দিকে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।
বর্তমানে প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার হরতাল ও রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য সীমিত। আমাদের চলাফেরার স্বাধীনতা নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর মর্জির ওপর। অন্যদিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নির্ভর করে সরকারের সহিষ্ণুতা ও উদারতার ওপর। সরকারবিরোধী মত প্রকাশের জন্য পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ, টেলিভিশনের প্রচার নিষিদ্ধ হতে পারে। সঙ্গে রয়েছে সংশ্লিষ্টদের জেল-জুলুম ও হয়রানির মতো ঘটনা। সরকারের পক্ষে যেসব মিডিয়া রয়েছে এতদিন তারা নিরাপদ থাকলেও বোমা হামলার নামে নতুন উপদ্রব শুরু হয়েছে। সাংবাদিকরা এখন আর একমাত্র সরকার দ্বারা নিগৃহীত নয়, বিরোধী দলের আক্রোশেরও শিকার হয়ে বোমা ও ককটেলের আঘাতে আহত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি অবশ্যই নিন্দনীয়। বেশিরভাগ মানুষের চোখে এ অবনতিশীল পরিস্থিতির জন্য দায়ী আমাদের নোংরা রাজনীতি, যা সমাজের প্রতিটি পেশা ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে।
মোঃ মাহমুদুর রহমান : ব্যাংকার
No comments