বিশেষ সাক্ষাৎকার : রাশেদ খান মেনন- হাসিনা সরলেও খালেদা নির্বাচনে আসবেন না
রাশেদ খান মেননের জন্ম ফরিদপুরে, ১৯৪৩ সালে। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল ও ঢাকা কলেজে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করেন।
১৯৬৩
সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং পরের বছর স্নাতকোত্তর
ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থায় প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন; পূর্ব
পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩-৬৪
শিক্ষাবর্ষে ডাকসুর সহসভাপতি নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি ওয়ার্কার্স
পার্টির সভাপতি। তিনি ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত
হন। সংসদে শিক্ষাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান
প্রথম আলো প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিচ্ছেন কি?
রাশেদ খান মেনন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, আমরা মনে করি, তাতে সংকটের একটি সমাধানসূত্র পাওয়া যেতে পারে। আমাদের দল সেই মন্ত্রিসভায় যোগদানের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
প্রথম আলো কিন্তু এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী যখন মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন তো সাড়া দেননি।
মেনন দুই সরকারের মধ্যে পার্থক্য আছে। সেটি ছিল পরিপূর্ণ শাসন পরিচালনা। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে যখন আমরা ১৪ দল করেছিলাম তখন কথা ছিল একসঙ্গে আন্দোলন, একসঙ্গে নির্বাচন ও একসঙ্গে সরকার গঠন। কিন্তু নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণে অনেক ক্ষেত্রেই সরকার আমাদের কথা আমলে নেয়নি। এই বিবেচনায় ২০১১ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি মন্ত্রিসভায় যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তখন প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আর সর্বদলীয় সরকার হলো নির্বাচন নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার একটি উপায়। দুটোকে এক করে দেখা ঠিক হবে না।
প্রথম আলো কবে নাগাদ সর্বদলীয় সরকার গঠিত হচ্ছে?
মেনন এটি এখনো তাত্ত্বিক পর্যায়ে আছে। তবে বর্তমান সরকার পদত্যাগের পরই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে বলে আমাদের ধারণা।
প্রথম আলো মহাজোটের শরিক হিসেবে শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতাকে কীভাবে দেখছেন?
মেনন সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোই আছে। তবে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকার জরিপ ও প্রতিবেদনমতে, সরকারের সাফল্যের পরিমাণই বেশি। যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য, শ্রমিকস্বার্থ রক্ষায় সরকারের সাফল্য রয়েছে। আবার বিদ্যুতে সাফল্য থাকলেও রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের কারণে জনগণের ওপর চাপ বেড়েছে। শেয়ারবাজারের ঘটনায় যে সংবেদনশীলতা আশা করা গিয়েছিল, অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকেও সেটি পাওয়া যায়নি। হল-মার্কসহ অন্যান্য আর্থিক কেলেঙ্কারিতে সরকার কিছু করছে না বলেই জনমনে ধারণা রয়েছে।
একই সঙ্গে এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশ চারটি ক্ষেত্রে জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে। মানুষের আয় বেড়েছে। দারিদ্র্য কমেছে।
প্রথম আলো আপনারা একসময় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন। কিন্তু এখন যে সরকারটির সঙ্গে আছেন, সেই সরকারটি ধনতন্ত্রেরই সমর্থক। বিষয়টি কি স্ববিরোধী নয়?
মেনন এ কথা ঠিক যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ঘোষণা করলেও পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে সরে আসে এবং নব্বইয়ের দশকে তারা ধনতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সরকার যেসব অর্থনৈতিক নীতি নিয়েছে, তাতে গরিববান্ধব কর্মসূচি অগ্রাধিকার পেয়েছে। সরকারের প্রথম দুটি বাজেটেও তার স্বাক্ষর রয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে আমাদের যে পার্থক্য আছে, তাও আমরা বলেছি, এখনো বলছি।
প্রথম আলো মহাজোটের শরিক হিসেবে গত পাঁচ বছরে যেসব দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে, আপনারা তার দায় নেবেন কি?
মেনন আমরা সরকারের ভালো কাজকে যেমন সমর্থন করেছি, তেমনি ভুলত্রুটির সমালোচনাও করেছি। সংসদে আমার বক্তৃতা-বিবৃতি লক্ষ করলে দেখবেন, আমরা সরকারের সমালোচনা করতে দ্বিধা করিনি।
প্রথম আলো সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণ। কিন্তু করতে পারেনি। এ ব্যর্থতাকে কীভাবে দেখছেন?
মেনন বিশ্বব্যাংকের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণেই সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একবার বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার কথা বলেছিলেন। আমরাও তাঁর এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু অর্থমন্ত্রী ও আমলাতন্ত্র সবকিছু লেজেগোবরে করে ফেলে।
প্রথম আলো এটি কি নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না?
মেনন কিছুটা তো ফেলবে। একটি বড় কাজ সরকার করতে পারেনি। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ক্ষুব্ধ হবে।
প্রথম আলো নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল দুই মেরুতে। প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা বলেছেন। বিরোধী দলের নেতা বলেছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া তাঁরা নির্বাচনে যাবেন না। এ সংকটের সমাধান কী?
মেনন বিরোধী দলের আন্দোলনের লক্ষ্য নির্বাচন নয়। তাদের লক্ষ্য হলো দেশকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত ধারায় নিয়ে যাওয়া, যেমনটি তারা পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে করেছিল। এ কারণেই তারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐক্য করেছে। তাদের সব কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতটি দেখুন। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আযমকে দেশে নিয়ে আসেন এবং খালেদা জিয়া প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তাঁর নাগরিকত্ব দেন এবং দ্বিতীয়বার জামায়াতের নেতাদের মন্ত্রী করেন। ২০০১-২০০৬ সালে জামায়াতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসিত করার কাজটি বিএনপিই করেছে। ১৯৯২ সালে গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে যাঁরা গণ-আদালত করেছিলেন, খালেদা জিয়া তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা পর্যন্ত দিয়েছিলেন। বিএনপি-জামায়াতের বর্তমান আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো আদালতের রায়ের মাধ্যমে যে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়েছে, সেটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে দেশকে প্রতিবিপ্লবী ধারায় নিয়ে যাওয়া।
প্রথম আলো নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীও ছিল। তখন কেন তাদেরকে আন্দোলনের সহযাত্রী হিসেবে মেনে নিলেন?
মেনন অনেকে বলার চেষ্টা করেন যে জামায়াতে ইসলামীও সমান্তরালভাবে আন্দোলন করেছে। আসলে সেটি সত্য নয়। তারা তিন জোটের সঙ্গে লিয়াজোঁ করার চেষ্টা করলেও আমরা রাজি হইনি। তিন জোটের ঘোষণায় স্পষ্ট করে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ধারায় দেশ পরিচালনার কথা ছিল। সেখানে জামায়াতের আসার প্রশ্নই ওঠে না। বরং রাজশাহীতে রিমু হত্যার পর পঞ্চম সংসদে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিল। সংসদের তৎকালীন উপনেতা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী কথাও দিয়েছিলেন, আইনি পথেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে। তাই এখন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, সেটি নতুন নয়।
প্রথম আলো কিন্তু পরবর্তীকালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগও তো জামায়াতকে সঙ্গী করেছে?
মেনন আওয়ামী লীগ বলছে, এটি তারা কৌশল হিসেবে নিয়েছিল। পরের নির্বাচনে জামায়াতের আসন ১৮ থেকে ৩-এ নেমে এসেছিল। তার পরও বলব, আওয়ামী লীগের সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। তারা দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেনি।
প্রথম আলো বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের মূলে তো রাষ্ট্রাদর্শ নয়, নির্বাচন। বিরোধী দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে।
মেনন এটি তাদের আসল কথা নয়। ২০০৭ সালে তারা যখন একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিল, তখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অকার্যকর করে ফেলল। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি এবং দুই বছরের জন্য সেনা-সমর্থিত সরকার কায়েম হলো। বিএনপির নেত্রী এবারই নির্বাচন বর্জনের কথা প্রথম বলছেন না, ২০০৮ সালের নির্বাচনও তিনি বর্জন করতে চেয়েছিলেন। দেশি-বিদেশি চাপে তিনি পারেননি। এরপর ২০১০ সালে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলো, যা করেছিলেন তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমান। এটি বিএনপির পক্ষে হজম করা কঠিন। তাদের গত দুই বছরের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে আমরা কী দেখতে পাই? মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বললেও তারা বাতিল হয়ে যাওয়া পঞ্চম সংশোধনী পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণেই তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা হেফাজতে ইসলামকে মাঠে নামিয়েছে. তাদের ১৩ দফা সমর্থন করেছে। হেফাজতের ১৩ দফাকে সমর্থন করলে তো বাংলাদেশ রাষ্ট্র, গণতন্ত্র কিছুই থাকে না। জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে নেমে আসার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২৪ অক্টোবর থেকে সরকার অবৈধ বলে ঘোষণা করলেন। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলে হেফাজতিদের উসকে দিলেন। এসব কর্মকাণ্ড ও বক্তৃতা-বিবৃতি প্রমাণ করে যে বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত রাষ্ট্রের প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্রই চালাচ্ছে।
প্রথম আলো কিন্তু বিএনপির আশঙ্কা, বর্তমান সরকারপ্রধানের অধীনে নির্বাচন হলে ব্যাপক কারচুপি হবে, জনরায় বানচাল হয়ে যাবে।
মেনন এটি জিয়া বা এরশাদের জমানা নয় যে চাইলেই কেউ নির্বাচনে কারচুপি করতে পারবে। এখন ভোটার পরিচয়পত্র আছে, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আছে, সর্বোপরি আছে স্বাধীন গণমাধ্যমের তীক্ষ দৃষ্টি। এসব এড়িয়ে কারও পক্ষেই নির্বাচনে যে কারচুপি করে ফল পক্ষে নেওয়া যায় না, তার প্রমাণ পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
প্রথম আলো বিরোধী দল তো শুধু নির্বাচন বর্জনের কথা বলছে না, নির্বাচন প্রতিহত করার কথাও বলছে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে?
মেনন সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সমঝোতার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনটি করা। বিএনপি যদি নির্বাচনে না-ই আসে এবং নির্বাচন ঠেকাতে চায়, তাহলে সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়বে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে তো নির্বাচনের বিকল্প নেই।
প্রথম আলো সমঝোতার জন্য সর্বশেষ ব্যবসায়ীরাও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তারও পরিণাম হতাশাব্যঞ্জক।
মেনন আমি তো মনে করি, বিএনপি যদি নির্বাচন করে, আলোচনার সুযোগ এখনো আছে। আর যদি নির্বাচন না করতে চায়, তাহলে সরকার যে প্রস্তাবই দেবে, তারা তা প্রত্যাখ্যান করবে।
প্রথম আলো বিএনপির নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে মনে হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানের পদে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না থাকলে তারা নির্বাচনে আসবে।
মেনন আমার ধারণা, নির্বাচনকালীন সরকারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও তারা নির্বাচনে আসবে না। দলের স্থায়ী কমিটির প্রায় সব সদস্যই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষপাতী। কিন্তু খালেদা জিয়া নির্বাচনে আসার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
নির্দলীয় সরকারের যে প্রস্তাব খালেদা জিয়া দিয়েছেন, তা বাস্তবসম্মত নয় বুঝতে পেরেই বিএনপির নেতা এম কে আনোয়ার সরকারপ্রধানের ওপর জোর দিয়েছিলেন। তারপর কিন্তু বিএনপি সে অবস্থান থেকে সরে আসে। তারা এখন নির্বাচন বানচাল করতেই তৎপর। পঁচাত্তরের পর তারা যে প্রতিবিপ্লবী ধারায় বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতা হলো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ইত্যাদিও এই ষড়যন্ত্রের অংশ।
প্রথম আলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তৃতীয় শক্তি হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেই অনেকে আশঙ্কা করছেন।
মেনন আমি মনে করি, এবারের বিরোধটা শুধু নির্বাচন নিয়ে নয়। বিরোধ হলো বাংলাদেশ প্রগতির ধারায় থাকবে, না প্রতিবিপ্লবী ধারায় যাবে। সে ক্ষেত্রে সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি প্রগতির পক্ষে থাকবে বলেই আশা করি এবং তৃতীয় শক্তির হস্তক্ষেপের আশঙ্কা দেখছি না। বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা জনগণ সমর্থন দেবে না।
প্রথম আলো স্বাধীনতার পর যেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, সেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখন জোট বেঁধেছেন। এটি কি রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা নয়?
মেনন দুটো পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ভিন্নতা ছিল দেশ গড়ার মত ও পথ নিয়ে। কিন্তু এখন লড়াই হচ্ছে, বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে। দেশটি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ধারায় থাকবে, না প্রতিক্রিয়াশীলদের হাতে চলে যাবে। তাই এবারের ঐক্য কেবল নির্বাচনী ঐক্য বলা ঠিক হবে না।
প্রথম আলো আপনি একসময় বলেছিলেন, সংসদ ভেঙেই নির্বাচন করতে হবে। এখনো সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি।
মেনন আমি এখনো মনে করি, সংসদ ভেঙেই নির্বাচন হওয়া উচিত।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
মেনন ধন্যবাদ।
রাশেদ খান মেনন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, আমরা মনে করি, তাতে সংকটের একটি সমাধানসূত্র পাওয়া যেতে পারে। আমাদের দল সেই মন্ত্রিসভায় যোগদানের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
প্রথম আলো কিন্তু এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী যখন মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন তো সাড়া দেননি।
মেনন দুই সরকারের মধ্যে পার্থক্য আছে। সেটি ছিল পরিপূর্ণ শাসন পরিচালনা। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে যখন আমরা ১৪ দল করেছিলাম তখন কথা ছিল একসঙ্গে আন্দোলন, একসঙ্গে নির্বাচন ও একসঙ্গে সরকার গঠন। কিন্তু নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণে অনেক ক্ষেত্রেই সরকার আমাদের কথা আমলে নেয়নি। এই বিবেচনায় ২০১১ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি মন্ত্রিসভায় যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তখন প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আর সর্বদলীয় সরকার হলো নির্বাচন নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার একটি উপায়। দুটোকে এক করে দেখা ঠিক হবে না।
প্রথম আলো কবে নাগাদ সর্বদলীয় সরকার গঠিত হচ্ছে?
মেনন এটি এখনো তাত্ত্বিক পর্যায়ে আছে। তবে বর্তমান সরকার পদত্যাগের পরই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে বলে আমাদের ধারণা।
প্রথম আলো মহাজোটের শরিক হিসেবে শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতাকে কীভাবে দেখছেন?
মেনন সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোই আছে। তবে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকার জরিপ ও প্রতিবেদনমতে, সরকারের সাফল্যের পরিমাণই বেশি। যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য, শ্রমিকস্বার্থ রক্ষায় সরকারের সাফল্য রয়েছে। আবার বিদ্যুতে সাফল্য থাকলেও রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের কারণে জনগণের ওপর চাপ বেড়েছে। শেয়ারবাজারের ঘটনায় যে সংবেদনশীলতা আশা করা গিয়েছিল, অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকেও সেটি পাওয়া যায়নি। হল-মার্কসহ অন্যান্য আর্থিক কেলেঙ্কারিতে সরকার কিছু করছে না বলেই জনমনে ধারণা রয়েছে।
একই সঙ্গে এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশ চারটি ক্ষেত্রে জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে। মানুষের আয় বেড়েছে। দারিদ্র্য কমেছে।
প্রথম আলো আপনারা একসময় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন। কিন্তু এখন যে সরকারটির সঙ্গে আছেন, সেই সরকারটি ধনতন্ত্রেরই সমর্থক। বিষয়টি কি স্ববিরোধী নয়?
মেনন এ কথা ঠিক যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ঘোষণা করলেও পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে সরে আসে এবং নব্বইয়ের দশকে তারা ধনতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সরকার যেসব অর্থনৈতিক নীতি নিয়েছে, তাতে গরিববান্ধব কর্মসূচি অগ্রাধিকার পেয়েছে। সরকারের প্রথম দুটি বাজেটেও তার স্বাক্ষর রয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে আমাদের যে পার্থক্য আছে, তাও আমরা বলেছি, এখনো বলছি।
প্রথম আলো মহাজোটের শরিক হিসেবে গত পাঁচ বছরে যেসব দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে, আপনারা তার দায় নেবেন কি?
মেনন আমরা সরকারের ভালো কাজকে যেমন সমর্থন করেছি, তেমনি ভুলত্রুটির সমালোচনাও করেছি। সংসদে আমার বক্তৃতা-বিবৃতি লক্ষ করলে দেখবেন, আমরা সরকারের সমালোচনা করতে দ্বিধা করিনি।
প্রথম আলো সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণ। কিন্তু করতে পারেনি। এ ব্যর্থতাকে কীভাবে দেখছেন?
মেনন বিশ্বব্যাংকের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণেই সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একবার বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার কথা বলেছিলেন। আমরাও তাঁর এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু অর্থমন্ত্রী ও আমলাতন্ত্র সবকিছু লেজেগোবরে করে ফেলে।
প্রথম আলো এটি কি নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না?
মেনন কিছুটা তো ফেলবে। একটি বড় কাজ সরকার করতে পারেনি। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ক্ষুব্ধ হবে।
প্রথম আলো নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল দুই মেরুতে। প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা বলেছেন। বিরোধী দলের নেতা বলেছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া তাঁরা নির্বাচনে যাবেন না। এ সংকটের সমাধান কী?
মেনন বিরোধী দলের আন্দোলনের লক্ষ্য নির্বাচন নয়। তাদের লক্ষ্য হলো দেশকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত ধারায় নিয়ে যাওয়া, যেমনটি তারা পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে করেছিল। এ কারণেই তারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐক্য করেছে। তাদের সব কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতটি দেখুন। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আযমকে দেশে নিয়ে আসেন এবং খালেদা জিয়া প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তাঁর নাগরিকত্ব দেন এবং দ্বিতীয়বার জামায়াতের নেতাদের মন্ত্রী করেন। ২০০১-২০০৬ সালে জামায়াতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসিত করার কাজটি বিএনপিই করেছে। ১৯৯২ সালে গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে যাঁরা গণ-আদালত করেছিলেন, খালেদা জিয়া তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা পর্যন্ত দিয়েছিলেন। বিএনপি-জামায়াতের বর্তমান আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো আদালতের রায়ের মাধ্যমে যে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়েছে, সেটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে দেশকে প্রতিবিপ্লবী ধারায় নিয়ে যাওয়া।
প্রথম আলো নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীও ছিল। তখন কেন তাদেরকে আন্দোলনের সহযাত্রী হিসেবে মেনে নিলেন?
মেনন অনেকে বলার চেষ্টা করেন যে জামায়াতে ইসলামীও সমান্তরালভাবে আন্দোলন করেছে। আসলে সেটি সত্য নয়। তারা তিন জোটের সঙ্গে লিয়াজোঁ করার চেষ্টা করলেও আমরা রাজি হইনি। তিন জোটের ঘোষণায় স্পষ্ট করে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ধারায় দেশ পরিচালনার কথা ছিল। সেখানে জামায়াতের আসার প্রশ্নই ওঠে না। বরং রাজশাহীতে রিমু হত্যার পর পঞ্চম সংসদে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিল। সংসদের তৎকালীন উপনেতা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী কথাও দিয়েছিলেন, আইনি পথেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে। তাই এখন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, সেটি নতুন নয়।
প্রথম আলো কিন্তু পরবর্তীকালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগও তো জামায়াতকে সঙ্গী করেছে?
মেনন আওয়ামী লীগ বলছে, এটি তারা কৌশল হিসেবে নিয়েছিল। পরের নির্বাচনে জামায়াতের আসন ১৮ থেকে ৩-এ নেমে এসেছিল। তার পরও বলব, আওয়ামী লীগের সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। তারা দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেনি।
প্রথম আলো বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের মূলে তো রাষ্ট্রাদর্শ নয়, নির্বাচন। বিরোধী দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে।
মেনন এটি তাদের আসল কথা নয়। ২০০৭ সালে তারা যখন একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিল, তখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অকার্যকর করে ফেলল। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি এবং দুই বছরের জন্য সেনা-সমর্থিত সরকার কায়েম হলো। বিএনপির নেত্রী এবারই নির্বাচন বর্জনের কথা প্রথম বলছেন না, ২০০৮ সালের নির্বাচনও তিনি বর্জন করতে চেয়েছিলেন। দেশি-বিদেশি চাপে তিনি পারেননি। এরপর ২০১০ সালে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলো, যা করেছিলেন তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমান। এটি বিএনপির পক্ষে হজম করা কঠিন। তাদের গত দুই বছরের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে আমরা কী দেখতে পাই? মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বললেও তারা বাতিল হয়ে যাওয়া পঞ্চম সংশোধনী পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণেই তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা হেফাজতে ইসলামকে মাঠে নামিয়েছে. তাদের ১৩ দফা সমর্থন করেছে। হেফাজতের ১৩ দফাকে সমর্থন করলে তো বাংলাদেশ রাষ্ট্র, গণতন্ত্র কিছুই থাকে না। জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে নেমে আসার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২৪ অক্টোবর থেকে সরকার অবৈধ বলে ঘোষণা করলেন। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলে হেফাজতিদের উসকে দিলেন। এসব কর্মকাণ্ড ও বক্তৃতা-বিবৃতি প্রমাণ করে যে বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত রাষ্ট্রের প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্রই চালাচ্ছে।
প্রথম আলো কিন্তু বিএনপির আশঙ্কা, বর্তমান সরকারপ্রধানের অধীনে নির্বাচন হলে ব্যাপক কারচুপি হবে, জনরায় বানচাল হয়ে যাবে।
মেনন এটি জিয়া বা এরশাদের জমানা নয় যে চাইলেই কেউ নির্বাচনে কারচুপি করতে পারবে। এখন ভোটার পরিচয়পত্র আছে, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আছে, সর্বোপরি আছে স্বাধীন গণমাধ্যমের তীক্ষ দৃষ্টি। এসব এড়িয়ে কারও পক্ষেই নির্বাচনে যে কারচুপি করে ফল পক্ষে নেওয়া যায় না, তার প্রমাণ পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
প্রথম আলো বিরোধী দল তো শুধু নির্বাচন বর্জনের কথা বলছে না, নির্বাচন প্রতিহত করার কথাও বলছে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে?
মেনন সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সমঝোতার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনটি করা। বিএনপি যদি নির্বাচনে না-ই আসে এবং নির্বাচন ঠেকাতে চায়, তাহলে সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়বে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে তো নির্বাচনের বিকল্প নেই।
প্রথম আলো সমঝোতার জন্য সর্বশেষ ব্যবসায়ীরাও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তারও পরিণাম হতাশাব্যঞ্জক।
মেনন আমি তো মনে করি, বিএনপি যদি নির্বাচন করে, আলোচনার সুযোগ এখনো আছে। আর যদি নির্বাচন না করতে চায়, তাহলে সরকার যে প্রস্তাবই দেবে, তারা তা প্রত্যাখ্যান করবে।
প্রথম আলো বিএনপির নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে মনে হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানের পদে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না থাকলে তারা নির্বাচনে আসবে।
মেনন আমার ধারণা, নির্বাচনকালীন সরকারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও তারা নির্বাচনে আসবে না। দলের স্থায়ী কমিটির প্রায় সব সদস্যই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষপাতী। কিন্তু খালেদা জিয়া নির্বাচনে আসার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
নির্দলীয় সরকারের যে প্রস্তাব খালেদা জিয়া দিয়েছেন, তা বাস্তবসম্মত নয় বুঝতে পেরেই বিএনপির নেতা এম কে আনোয়ার সরকারপ্রধানের ওপর জোর দিয়েছিলেন। তারপর কিন্তু বিএনপি সে অবস্থান থেকে সরে আসে। তারা এখন নির্বাচন বানচাল করতেই তৎপর। পঁচাত্তরের পর তারা যে প্রতিবিপ্লবী ধারায় বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতা হলো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ইত্যাদিও এই ষড়যন্ত্রের অংশ।
প্রথম আলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তৃতীয় শক্তি হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেই অনেকে আশঙ্কা করছেন।
মেনন আমি মনে করি, এবারের বিরোধটা শুধু নির্বাচন নিয়ে নয়। বিরোধ হলো বাংলাদেশ প্রগতির ধারায় থাকবে, না প্রতিবিপ্লবী ধারায় যাবে। সে ক্ষেত্রে সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি প্রগতির পক্ষে থাকবে বলেই আশা করি এবং তৃতীয় শক্তির হস্তক্ষেপের আশঙ্কা দেখছি না। বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা জনগণ সমর্থন দেবে না।
প্রথম আলো স্বাধীনতার পর যেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, সেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখন জোট বেঁধেছেন। এটি কি রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা নয়?
মেনন দুটো পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ভিন্নতা ছিল দেশ গড়ার মত ও পথ নিয়ে। কিন্তু এখন লড়াই হচ্ছে, বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে। দেশটি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ধারায় থাকবে, না প্রতিক্রিয়াশীলদের হাতে চলে যাবে। তাই এবারের ঐক্য কেবল নির্বাচনী ঐক্য বলা ঠিক হবে না।
প্রথম আলো আপনি একসময় বলেছিলেন, সংসদ ভেঙেই নির্বাচন করতে হবে। এখনো সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি।
মেনন আমি এখনো মনে করি, সংসদ ভেঙেই নির্বাচন হওয়া উচিত।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
মেনন ধন্যবাদ।
No comments