শচীন দেব বর্মণের আদি নিবাসটি রক্ষা করুন by সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী
উপমহাদেশের
কিংবদন্তি গায়ক ও সুরকার শচীন দেব বর্মণ ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লার
চর্থায় এক বিশাল রাজপ্রাসাদসম অট্টালিকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তদানীন্তন
ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্যের অর্থানুকূল্যে যুবরাজ নবদ্বীপচন্দ্র
বর্মণ ৬০ একর জমিতে, সামনে-পেছনে বড় দীঘি ও পৃথক অন্দরমহলসহ এ ভবনটি
নির্মাণ করেছিলেন। চর্থার বাসভবনেই শচীন বাবু তার জীবনের প্রথম ১৯টি বছর
অতিবাহিত করেন। স্কুল পর্ব শেষ করে ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএ ও
বিএ পাস করেন। লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গীতের চর্চা চালিয়ে যান। পিতা নবদ্বীপ
চন্দ্র বর্মণ ছিলেন নিপুণ সেতার শিল্পী ও মার্গ সঙ্গীতের গায়ক। মা নির্মলা
দেবীও সঙ্গীতের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। তাদের হাতেই শচীনের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে
হাতেখড়ি। তার আত্মজীবনীমূলক লেখা ‘সরগমের নিখাদ’ থেকে জানা যায়,
গ্রাম-বাংলার লোকসঙ্গীতের প্রতি তাকে প্রথম আকৃষ্ট করেন বাড়ির দুই গৃহভৃত্য
মাধব ও আনোয়ার। মাধব সহজ সুর করে রামায়ণ পড়ে শোনাত, যা যুবরাজকে করত
মোহিত। অপরদিকে আনোয়ার দোতারা বাজিয়ে ভাটিয়ালি গান গেয়ে তাকে গ্রাম-বাংলায়
নিয়ে যেত। বিভিন্ন জেলার গ্রাম ও গ্রামান্তরে লোক গানের খোঁজে ঘুরে
বেড়িয়েছেন শচীন দেব। পরে তার অনুপম সৃষ্টি হিন্দি ও বাংলা গানগুলো আমাদের
ঐতিহ্যবাহী ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, সারি, মুর্শিদি, বাউল, ঝুমুর গানের ভিত্তির
ওপর রচিত হয়। শচীন দেব যে অপূর্ব সঙ্গীত জগৎ তৈরি করেছিলেন, তার মূল
উপাদান হচ্ছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত ও আমাদের লোকগীতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। পরে
রবীন্দ্রসঙ্গীত তৃতীয় ধারা হিসেবে যোগ দেয়।
চর্থার রাজপ্রাসাদেই গড়ে উঠেছিল সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারার এক অপূর্ব মিলন কেন্দ্র। সেখানে আসতেন আলাউদ্দিন খান, হিমাংশু দত্ত ও অন্যান্য দিকপাল। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম অনেকবার এসেছেন এ রাজপ্রাসাদে এবং গান গেয়েছেন শচীন দেবের সঙ্গে।
১৯৩১ সালে তার বাবা তদানীন্তন ত্রিপুরার প্রধানমন্ত্রী নবদ্বীপ মৃত্যুবরণ করেন। শচীন দেব ইচ্ছা করলে ত্রিপুরা বা কুমিল্লায় ফিরে এসে একটি উচ্চ রাজপদে অধিষ্ঠ হয়ে রাজপ্রাসাদেই আরাম-আয়েশে দিন কাটাতে পারতেন। কিন্তু সঙ্গীত পাগল শচীন দেব সেসব প্রলোভন উপেক্ষা করে সঙ্গীতের কঠিন জীবন বেছে নেন। কলকাতায় ছোট একটি ঘর ভাড়া নেন। কিন্তু তার সঙ্গীত জীবনে প্রবেশটা মসৃণ ছিল না। তদানীন্তন সর্ববৃহৎ রেকর্ড প্রস্তুতকারী কোম্পানি এইচএম ভির অডিশনে ফেল করেন শচীন ১৯৩২ সালে। কারণ তার কণ্ঠস্বর ও গানের সুর নাকি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রত্যাখ্যাত হয়েও শচীন সাধনা চালিয়ে যান ও সার্থক হন। ওই বছরই হিন্দুস্তান মিউজিক্যাল প্রডাক্টস বের করে শচীনের প্রথম রেকর্ডকৃত দুটি গান- পল্লীগীতির আদলে গাওয়া ‘ডাকিলে কোকিল রোজ বিহানে’ ও ঠুমরী অঙ্গের রাগপ্রধান গান ‘এ পথে আজ এসো প্রিয়’। গান দুটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
শচীন দেব ১৯৪৪ সালে বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) পাড়ি দেন বিখ্যাত বাঙালি চিত্র পরিচালক শশধর মুখার্জির আমন্ত্রণে। তার সুরারোপিত গান ‘মেরা সুন্দর স্বপ্না বীত গ্যায়া’ তদানীন্তন বলিউডে বিশাল সাড়া জাগায়। গানটির শিল্পী ছিলেন ফরিদপুরের গীতা রায় (পরে দত্ত)। একের পর এক হিট গানের সুরকার শচীন দেব অত্যন্ত কম সময়ে নিজকে অধিষ্ঠিত করেন মুম্বাই ফিল্ম জগতের এক দিকপাল হিসেবে। পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত হন ১৯৬৯ সালে। তিনি শ্রেষ্ঠ গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন ডজনখানেক।
কিংবদন্তী গায়ক শচীন দেবের অনেক ভক্ত ছিলেন সারা উপমহাদেশে। তাদের মধ্যে একজন তার প্রিয় নাতির নামকরণ করেন তার প্রিয় গায়কের নামে। নাতিটি ক্রিকেট জগতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার।
কুমিল্লা থেকে হাজার মাইল দূরে বোম্বে গিয়েও শচীন দেব বাংলাদেশকে ভোলেননি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি গান গেয়ে আমাদের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেন এবং উদ্বাস্তুদের জন্য সাহায্য তহবিল গড়ে তোলেন। ১৯৭১ সালে তার লেখা ‘তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’ গানটির মধ্য দিয়ে উজাড় করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রতি তার সব ভালোবাসা। যার শেষ পঙ্ক্তিটি ছিল ‘বাংলা জনম দিলা আমারে, তোমার পরান, আমার পরান, এক নাড়িতে বাঁধারে। মা-পুতের এই বাঁধন ছেঁড়ার সাধ্য কারো নাই, সব ভুলে যাই তাও ভুলি না, বাংলা মায়ের কোল।’
গভীর পরিতাপের বিষয়, শচীন বাবু বাংলাদেশকে না ভুললেও আমরা তাকে ভুলে গেছি। বছর কয়েক আগে সস্ত্রীক কুমিল্লায় বেড়াতে গিয়েছিলাম পুত্রবধূ ডেনা ও নাতি ফয়সালকে নিয়ে। কুমিল্লা আমার প্রিয় শহর। পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের জেলা প্রশাসনের ট্রেনিং নিতে এ শহরে আমার প্রথম পোস্টিং হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। এ শহরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি আমাকে আজও মোহিত করে।
চর্থার শচীন দেব বর্মণের বাসভবনটি দেখতে গিয়েছিলাম। পাকিস্তানি আমলে তার প্রাসাদসম বাড়িটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয় এবং তা মিলিটারি গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বাংলাদেশ আমলে প্রথমে পশু চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে এবং বর্তমানে হাঁস-মুরগির খামার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দীঘি দুটিতে মাছের চাষ হচ্ছে। খামারের সরকারি ভবনটি শচীন দেবের আদি রাজপ্রাসাদটি প্রায় ঢেকে ফেলেছে। সেই ভবনটি পেছন দিক দিয়ে অতি কষ্টে ঢুকে এক জরাজীর্ণ প্রাসাদসম বাড়ির ভগ্নাংশের সামনে দাঁড়াই। মনে হচ্ছিল যুগযুগের অবহেলা ও অযত্নে বাড়িটি যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়বে। ভবনটির বুকে পাথরের শিলালিপিতে লেখা আছে তার গৌরবময় নাম ও পরিচয়। লেখা আছে কবে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এখানে এসেছিলেন ও গান গেয়েছিলেন শচীন দেবের সঙ্গে। সারা দালানটি ঘিরে রেখেছে জঙ্গল ও হাঁটু সমান উঁচু উঁচু ঘাস।
আমাদের জাতীয় দৈন্য ও উদাসীনতা দেখে রাগেদুঃখে চোখে পানি আসছিল। সারা কুমিল্লা শহরে কি হাঁস-মুরগি ও মাছের খামারের জন্য আর কোনো জায়গা ছিল না? এ প্রাসাদসম অট্টালিকা কি সারানো যায় না? এটাকে শচীন দেবের স্মৃতিভবন হিসেবে গড়া যায় না? শুধু এই ভবনটিকে পুঁজি করে কুমিল্লাকে গড়া যেত উপমহাদেশের এক বিখ্যাত সঙ্গীত কেন্দ্র ও প্রদর্শনশালা হিসেবে। মুম্বাই ও কলকাতার সিনেমা জগতের দিকপালরা আসতেন তাকে শ্রদ্ধা জানাতে। প্রতিবছর ১ অক্টোবর লোকগানের এক আন্তর্জাতিক জলসা বসানো যেত এখানে।
সেই রাতে কুমিল্লায় ভালো ঘুম হয়নি। বারবার মনে হয়েছে, আমাদের জতীয় দৈন্য ও উদাসীনতা কি এতটাই অপরিমেয়? নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা কি এতটাই অক্ষম? সরকার ও কুমিল্লাবাসীর কাছে আমার আকুল আবেদন, এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটি রক্ষা করতে এগিয়ে আসুন এবং গড়ে তুলুন শচীন স্মৃতি সঙ্গীতভবন আমাদের উত্তরসূরিদের জন্য। সেটাই হবে আমাদের সুযোগ্য সন্তান শচীন দেবের প্রতি আমাদের যোগ্য সম্মান।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র সচিব
চর্থার রাজপ্রাসাদেই গড়ে উঠেছিল সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারার এক অপূর্ব মিলন কেন্দ্র। সেখানে আসতেন আলাউদ্দিন খান, হিমাংশু দত্ত ও অন্যান্য দিকপাল। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম অনেকবার এসেছেন এ রাজপ্রাসাদে এবং গান গেয়েছেন শচীন দেবের সঙ্গে।
১৯৩১ সালে তার বাবা তদানীন্তন ত্রিপুরার প্রধানমন্ত্রী নবদ্বীপ মৃত্যুবরণ করেন। শচীন দেব ইচ্ছা করলে ত্রিপুরা বা কুমিল্লায় ফিরে এসে একটি উচ্চ রাজপদে অধিষ্ঠ হয়ে রাজপ্রাসাদেই আরাম-আয়েশে দিন কাটাতে পারতেন। কিন্তু সঙ্গীত পাগল শচীন দেব সেসব প্রলোভন উপেক্ষা করে সঙ্গীতের কঠিন জীবন বেছে নেন। কলকাতায় ছোট একটি ঘর ভাড়া নেন। কিন্তু তার সঙ্গীত জীবনে প্রবেশটা মসৃণ ছিল না। তদানীন্তন সর্ববৃহৎ রেকর্ড প্রস্তুতকারী কোম্পানি এইচএম ভির অডিশনে ফেল করেন শচীন ১৯৩২ সালে। কারণ তার কণ্ঠস্বর ও গানের সুর নাকি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রত্যাখ্যাত হয়েও শচীন সাধনা চালিয়ে যান ও সার্থক হন। ওই বছরই হিন্দুস্তান মিউজিক্যাল প্রডাক্টস বের করে শচীনের প্রথম রেকর্ডকৃত দুটি গান- পল্লীগীতির আদলে গাওয়া ‘ডাকিলে কোকিল রোজ বিহানে’ ও ঠুমরী অঙ্গের রাগপ্রধান গান ‘এ পথে আজ এসো প্রিয়’। গান দুটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
শচীন দেব ১৯৪৪ সালে বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) পাড়ি দেন বিখ্যাত বাঙালি চিত্র পরিচালক শশধর মুখার্জির আমন্ত্রণে। তার সুরারোপিত গান ‘মেরা সুন্দর স্বপ্না বীত গ্যায়া’ তদানীন্তন বলিউডে বিশাল সাড়া জাগায়। গানটির শিল্পী ছিলেন ফরিদপুরের গীতা রায় (পরে দত্ত)। একের পর এক হিট গানের সুরকার শচীন দেব অত্যন্ত কম সময়ে নিজকে অধিষ্ঠিত করেন মুম্বাই ফিল্ম জগতের এক দিকপাল হিসেবে। পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত হন ১৯৬৯ সালে। তিনি শ্রেষ্ঠ গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন ডজনখানেক।
কিংবদন্তী গায়ক শচীন দেবের অনেক ভক্ত ছিলেন সারা উপমহাদেশে। তাদের মধ্যে একজন তার প্রিয় নাতির নামকরণ করেন তার প্রিয় গায়কের নামে। নাতিটি ক্রিকেট জগতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার।
কুমিল্লা থেকে হাজার মাইল দূরে বোম্বে গিয়েও শচীন দেব বাংলাদেশকে ভোলেননি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি গান গেয়ে আমাদের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেন এবং উদ্বাস্তুদের জন্য সাহায্য তহবিল গড়ে তোলেন। ১৯৭১ সালে তার লেখা ‘তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’ গানটির মধ্য দিয়ে উজাড় করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রতি তার সব ভালোবাসা। যার শেষ পঙ্ক্তিটি ছিল ‘বাংলা জনম দিলা আমারে, তোমার পরান, আমার পরান, এক নাড়িতে বাঁধারে। মা-পুতের এই বাঁধন ছেঁড়ার সাধ্য কারো নাই, সব ভুলে যাই তাও ভুলি না, বাংলা মায়ের কোল।’
গভীর পরিতাপের বিষয়, শচীন বাবু বাংলাদেশকে না ভুললেও আমরা তাকে ভুলে গেছি। বছর কয়েক আগে সস্ত্রীক কুমিল্লায় বেড়াতে গিয়েছিলাম পুত্রবধূ ডেনা ও নাতি ফয়সালকে নিয়ে। কুমিল্লা আমার প্রিয় শহর। পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের জেলা প্রশাসনের ট্রেনিং নিতে এ শহরে আমার প্রথম পোস্টিং হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। এ শহরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি আমাকে আজও মোহিত করে।
চর্থার শচীন দেব বর্মণের বাসভবনটি দেখতে গিয়েছিলাম। পাকিস্তানি আমলে তার প্রাসাদসম বাড়িটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয় এবং তা মিলিটারি গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বাংলাদেশ আমলে প্রথমে পশু চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে এবং বর্তমানে হাঁস-মুরগির খামার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দীঘি দুটিতে মাছের চাষ হচ্ছে। খামারের সরকারি ভবনটি শচীন দেবের আদি রাজপ্রাসাদটি প্রায় ঢেকে ফেলেছে। সেই ভবনটি পেছন দিক দিয়ে অতি কষ্টে ঢুকে এক জরাজীর্ণ প্রাসাদসম বাড়ির ভগ্নাংশের সামনে দাঁড়াই। মনে হচ্ছিল যুগযুগের অবহেলা ও অযত্নে বাড়িটি যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়বে। ভবনটির বুকে পাথরের শিলালিপিতে লেখা আছে তার গৌরবময় নাম ও পরিচয়। লেখা আছে কবে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এখানে এসেছিলেন ও গান গেয়েছিলেন শচীন দেবের সঙ্গে। সারা দালানটি ঘিরে রেখেছে জঙ্গল ও হাঁটু সমান উঁচু উঁচু ঘাস।
আমাদের জাতীয় দৈন্য ও উদাসীনতা দেখে রাগেদুঃখে চোখে পানি আসছিল। সারা কুমিল্লা শহরে কি হাঁস-মুরগি ও মাছের খামারের জন্য আর কোনো জায়গা ছিল না? এ প্রাসাদসম অট্টালিকা কি সারানো যায় না? এটাকে শচীন দেবের স্মৃতিভবন হিসেবে গড়া যায় না? শুধু এই ভবনটিকে পুঁজি করে কুমিল্লাকে গড়া যেত উপমহাদেশের এক বিখ্যাত সঙ্গীত কেন্দ্র ও প্রদর্শনশালা হিসেবে। মুম্বাই ও কলকাতার সিনেমা জগতের দিকপালরা আসতেন তাকে শ্রদ্ধা জানাতে। প্রতিবছর ১ অক্টোবর লোকগানের এক আন্তর্জাতিক জলসা বসানো যেত এখানে।
সেই রাতে কুমিল্লায় ভালো ঘুম হয়নি। বারবার মনে হয়েছে, আমাদের জতীয় দৈন্য ও উদাসীনতা কি এতটাই অপরিমেয়? নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা কি এতটাই অক্ষম? সরকার ও কুমিল্লাবাসীর কাছে আমার আকুল আবেদন, এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটি রক্ষা করতে এগিয়ে আসুন এবং গড়ে তুলুন শচীন স্মৃতি সঙ্গীতভবন আমাদের উত্তরসূরিদের জন্য। সেটাই হবে আমাদের সুযোগ্য সন্তান শচীন দেবের প্রতি আমাদের যোগ্য সম্মান।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র সচিব
No comments