হরতালের আগুন- অলৌকিক কিছুর অপেক্ষায় রোগী-স্বজন-চিকিৎসক by শেখ সাবিহা আলম
সেই ১৫ বছর বয়স থেকে তাঁতীবাজারে সোনার
দোকানে কাজ করেন মন্টু পাল (৩৫)। যাঁর দক্ষ হাতে তৈরি হয় নানাপদের অলংকার,
তাঁর স্ত্রী সঞ্জু পাল চিরটা কাল নিরাভরণই থেকে গেলেন।
এ
নিয়ে সঞ্জুর কোনো ক্ষোভ নেই। সবকিছুর বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে তিনি
স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাইছেন। হরতালের আগুনে পোড়া মন্টু এখন জীবন-মৃত্যুর
সন্ধিক্ষণে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘এমন একটা সময় আসে যখন স্রষ্টার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। রোগী-রোগীর স্বজন আর চিকিৎসক সবার অবস্থাই এখন একই রকম। আমরা সবাই অলৌকিক একটা কিছুর জন্য অপেক্ষা করে আছি।’
গত রোববার রাত ১০টার দিকে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে যাত্রীবাহী লেগুনায় পেট্রল বোমা ছোড়ে হরতালের সমর্থনকারীরা। তাতে মন্টু পালসহ আরও চারজন দগ্ধ হন। আহত হন বেশ কয়েকজন।
হরতাল সমর্থনকারীদের ধরিয়ে দেওয়া আগুনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই মুহূর্তে ভর্তি আছেন ২৩ জন। তাঁদের মধ্যে তিনজন আছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। মন্টু পালের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ৯০ শতাংশ পোড়া নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তিনি। গতকাল পর্যন্ত কথা বলছিলেন মন্টু, আজ তেমন কথা বলছেন না। শুধু স্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন তাঁকে যেন বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একই অনুরোধ রেখেছেন চিকিৎসকের কাছেও। পার্থ শংকর পাল প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘মনিরও শেষের দু-একটা দিন বাড়ি ফিরতে চাইত খুব। মন্টু একই অনুরোধ করছেন। আগুনে পোড়া মৃত্যুপথযাত্রী মানুষগুলোর অবস্থা অন্যান্য মুমূর্ষু রোগীদের চেয়ে কিছুটা আলাদা। আগুনে মানুষের চামড়া পুড়ে যায়, অনেকেই এর ভয়াবহতা প্রথমে বুঝতে পারেন না। চামড়া শরীরকে সব জীবাণু থেকে রক্ষা করে। যখন চামড়া উঠে যায়, তখন জীবাণু প্রথমে রক্তে মেশে। তারপর ধীরে ধীরে সবগুলো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হতে শুরু করে।’
মন্টুর স্বজনেরা অবশ্য এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন। মন্টুর শ্বশুর পরেশ পাল প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘সহায়-সম্পত্তি, সঞ্চয় বলতে কিচ্ছু নেই আমার জামাইয়ের। মন্টুর দুটো ভাই মাটির হাঁড়ি-পাতিল বানায়। বাবা মারা গেছে সেই ছেলেবেলায়। আমি মূর্তি গড়ি। এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকা দেনা হয়েছে। কী করব, কোথায় যাব জানি না।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যাঁরা চিকিৎসাধীন তাঁদের সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। জীবনের তাগিদে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, বাড়িতে বসে থাকলে ভাত জুটবে কোথা থেকে।
ভালোর দিকে সুমি
বার্ন ইউনিটের প্রতিটি তলায় শুধু পোড়া মাংসের গন্ধ, মানুষের আহাজারি, চিৎকার, বিষণ্নতা আর উৎকণ্ঠা। এত এত খারাপ খবরের মধ্যে একটিই আশার খবর এখন। ছয় বছরের ছোট্ট মেয়ে সুমি এখন কিছুটা স্থিতিশীল। দাদির সঙ্গে নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে ফুফুর বাড়ি বেড়াতে আসছিল। বাস জ্বালিয়ে দেওয়ায় পুড়ে যায় সুমি। শিশুরা ১০ শতাংশ পুড়লেই জীবনহানি হতে পারে, সুমির পুড়েছিল ১৩ শতাংশ। আজ সুমি কথা বলছে, একটু-আধটু নড়াচড়াও করছে। দুটো হাত-পা পোড়া, মুখ পুড়ে গেছে। আজ কেমন আছে, এই প্রশ্নের উত্তরে সুমি জানায়, সে ভালো আছে। সুমির মা রুবিনা বেগম বললেন, মেয়ে যন্ত্রণায় সারারাত ছটফট করে। একটুও ঘুমোতে পারে না। প্রথমবারের মতো ঢাকায় বেড়াতে আসার খেসারত দিতে হচ্ছে এইটুকুন মেয়েকে। মাকে সে বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বারবার বলেছে, বাসে আগুন লাগার পর সে যখন বারবার বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিল তখন কে বা কারা তাকে বাসের ভেতর ঠেলে দিয়েছে।
বার্ন ইউনিটে ছুটি বাতিল
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে হরতালের সময় সব চিকিৎসককে ঢাকায় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসকেরা ছুটি নিলেও ঢাকা ছাড়ছেন না।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘এমন একটা সময় আসে যখন স্রষ্টার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। রোগী-রোগীর স্বজন আর চিকিৎসক সবার অবস্থাই এখন একই রকম। আমরা সবাই অলৌকিক একটা কিছুর জন্য অপেক্ষা করে আছি।’
গত রোববার রাত ১০টার দিকে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে যাত্রীবাহী লেগুনায় পেট্রল বোমা ছোড়ে হরতালের সমর্থনকারীরা। তাতে মন্টু পালসহ আরও চারজন দগ্ধ হন। আহত হন বেশ কয়েকজন।
হরতাল সমর্থনকারীদের ধরিয়ে দেওয়া আগুনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই মুহূর্তে ভর্তি আছেন ২৩ জন। তাঁদের মধ্যে তিনজন আছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। মন্টু পালের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ৯০ শতাংশ পোড়া নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তিনি। গতকাল পর্যন্ত কথা বলছিলেন মন্টু, আজ তেমন কথা বলছেন না। শুধু স্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন তাঁকে যেন বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একই অনুরোধ রেখেছেন চিকিৎসকের কাছেও। পার্থ শংকর পাল প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘মনিরও শেষের দু-একটা দিন বাড়ি ফিরতে চাইত খুব। মন্টু একই অনুরোধ করছেন। আগুনে পোড়া মৃত্যুপথযাত্রী মানুষগুলোর অবস্থা অন্যান্য মুমূর্ষু রোগীদের চেয়ে কিছুটা আলাদা। আগুনে মানুষের চামড়া পুড়ে যায়, অনেকেই এর ভয়াবহতা প্রথমে বুঝতে পারেন না। চামড়া শরীরকে সব জীবাণু থেকে রক্ষা করে। যখন চামড়া উঠে যায়, তখন জীবাণু প্রথমে রক্তে মেশে। তারপর ধীরে ধীরে সবগুলো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হতে শুরু করে।’
মন্টুর স্বজনেরা অবশ্য এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন। মন্টুর শ্বশুর পরেশ পাল প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘সহায়-সম্পত্তি, সঞ্চয় বলতে কিচ্ছু নেই আমার জামাইয়ের। মন্টুর দুটো ভাই মাটির হাঁড়ি-পাতিল বানায়। বাবা মারা গেছে সেই ছেলেবেলায়। আমি মূর্তি গড়ি। এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকা দেনা হয়েছে। কী করব, কোথায় যাব জানি না।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যাঁরা চিকিৎসাধীন তাঁদের সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। জীবনের তাগিদে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, বাড়িতে বসে থাকলে ভাত জুটবে কোথা থেকে।
ভালোর দিকে সুমি
বার্ন ইউনিটের প্রতিটি তলায় শুধু পোড়া মাংসের গন্ধ, মানুষের আহাজারি, চিৎকার, বিষণ্নতা আর উৎকণ্ঠা। এত এত খারাপ খবরের মধ্যে একটিই আশার খবর এখন। ছয় বছরের ছোট্ট মেয়ে সুমি এখন কিছুটা স্থিতিশীল। দাদির সঙ্গে নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে ফুফুর বাড়ি বেড়াতে আসছিল। বাস জ্বালিয়ে দেওয়ায় পুড়ে যায় সুমি। শিশুরা ১০ শতাংশ পুড়লেই জীবনহানি হতে পারে, সুমির পুড়েছিল ১৩ শতাংশ। আজ সুমি কথা বলছে, একটু-আধটু নড়াচড়াও করছে। দুটো হাত-পা পোড়া, মুখ পুড়ে গেছে। আজ কেমন আছে, এই প্রশ্নের উত্তরে সুমি জানায়, সে ভালো আছে। সুমির মা রুবিনা বেগম বললেন, মেয়ে যন্ত্রণায় সারারাত ছটফট করে। একটুও ঘুমোতে পারে না। প্রথমবারের মতো ঢাকায় বেড়াতে আসার খেসারত দিতে হচ্ছে এইটুকুন মেয়েকে। মাকে সে বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বারবার বলেছে, বাসে আগুন লাগার পর সে যখন বারবার বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিল তখন কে বা কারা তাকে বাসের ভেতর ঠেলে দিয়েছে।
বার্ন ইউনিটে ছুটি বাতিল
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে হরতালের সময় সব চিকিৎসককে ঢাকায় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসকেরা ছুটি নিলেও ঢাকা ছাড়ছেন না।
No comments