সহজিয়া কড়চা- মুহূর্তটির দাবি মিলের—গোঁজামিলের নয় by সৈয়দ আবুল মকসুদ
গত দুই দিনে রাজনৈতিক সহিংসতায় জনা
দশেকের বেশি নিহত হয়েছেন। কেউ বলবেন, দেশে দেশে রাজনৈতিক কারণে যে হারে
মানুষ মরছে, তাতে এটি আর তেমন বড় সংখ্যা কী?
অনেক বছর আগে
ইতালিতে এক শিশু কুয়ার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। তাকে উদ্ধারের জন্য রাষ্ট্র
সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। সেই আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন করায় এক নেতা বলেছিলেন,
হোয়েন কোশ্চেন অব লাইফ, ওয়ান ইজ টু বিগ এ নাম্বার। যেখানে জীবনের প্রশ্ন
জড়িত, সেখানে একজন মানুষই অনেক বড় সংখ্যা।
যে মানুষগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে, বোমার আঘাতে অথবা অন্যভাবে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের বাবা-মা আছেন। তা না থাকলে আছেন স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, চাচা-মামা, ফুফু-খালা, বন্ধুবান্ধব প্রভৃতি। তাঁদের এই অপমৃত্যুতে তাঁদের শোকসন্তপ্ত আত্মীয়স্বজনের অবস্থা সহজেই অনুমান করা সম্ভব। নিহত ব্যক্তিদের কারও এই জগতে যদি কেউ-ই না থেকে থাকে, আমরা দেশের কোটি কোটি মানুষ তো আছি। আমাদের কি বিন্দুমাত্র করুণা নেই?
উপনিবেশিত দেশে পরাধীন মানুষের জীবনের দাম নেই শাসকশ্রেণীর কাছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য সেখানে জীবন বলিদান গৌরবের, স্বাধীনতাসংগ্রামে যাঁরা জীবন দেন, তাঁরা পান শহীদের মর্যাদা। নজরুলের ভাষায়: ‘গোলামীর চেয়ে শহিদি দর্জা অনেক ঊর্ধে জেনো।’ কিন্তু রাজনৈতিক সহিষ্ণুতায় পথেঘাটে বেঘোরে মৃত্যু কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যাঁরা আত্মোৎসর্গ করেছেন, তাঁরা কেউই কোনো দলের ক্যাডার ছিলেন না। ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলনে যাঁরা নিহত হন, তাঁরা ছিলেন স্বায়ত্তশাসনের পক্ষের মানুষ বা দলের কর্মী—ক্যাডার নন। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হন, তাঁরা স্বাধিকার আন্দোলনের পক্ষের মানুষ— কোনো দলের ক্যাডার নন। স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের দলীয় পরিচয় খুঁজতে যাওয়ার প্রশ্ন আসে না। সেদিন কেউ কোনো না কোনো দলের সমর্থক ছিলেন, কর্মী হলেও হতে পারেন—ক্যাডার নামক বস্তু সেদিন কোনো দলেই ছিল না, একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া। একাত্তরের লাখ লাখ শহীদের প্রায় সবাই ছিলেন দলের ঊর্ধ্বে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতিকে জনগণ থেকে সরিয়ে এনে তাকে করা হয়েছে ক্যাডারভিত্তিক। ক্ষমতার রাজনীতির স্বার্থে ডাকা হরতাল-অবরোধ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কার্যকর করতে দলীয় সমর্থক নয়, ক্যাডার দরকার। ক্ষমতার স্বার্থে হরতালকে প্রতিহত করতেও ক্যাডার দরকার। হরতাল কার্যকর ও হরতাল প্রতিহত করতে নিরস্ত্র ক্যাডার শুধু নয়, প্রয়োজন লাঠিসোঁটা, দা-বঁটি, বোমা-ককটেল, কাটা রাইফেল, গাদা বন্দুক প্রভৃতি। দুই পক্ষেরই দরকার ক্যাডারদের পেশি প্রদর্শন—জনসমর্থন নয়। কিন্তু সেই ক্যাডার কারা? নগদ প্রাপ্তি ছাড়া কেউ স্বেচ্ছায় ক্যাডারের খাতায় নাম লেখায় না। ক্যাডারের শরীরে যতক্ষণ শক্তি থাকে ততক্ষণ তার চড়া দাম। যে মুহূর্তে সহিংসতায় রাজপথে প্রাণটা চলে যায়, সেই মুহূর্তে তার মৃতদেহের এক পয়সা দাম নেই নিয়োগ দেওয়া দলের নেতাদের কাছে। তখন থেকে তার স্মৃতির অশেষ মূল্য শুধু তার প্রিয়জনদের কাছেই। কারণ, ক্যাডারদের প্রাথমিক পরিচয় তারা মানুষ।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা ভারত সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ‘বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি, নির্বাচন ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।’ রাষ্ট্রদূত গত রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন: ‘সব রাজনৈতিক দলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এই বার্তা দিচ্ছে যে সহিংসতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ নয় এবং তা গ্রহণযোগ্য নয়। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সহিংসতা কখনোই কোনো কিছুর জবাব হতে পারে না। সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশ সরকার সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হওয়ার জন্য আমরা সব দলের প্রতি আহ্বান জানাই।’ [প্রথম আলো]
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় এমন দলগুলো রাজপথে আছে। তারা যানবাহন ভাঙচুর করছে, তাতে আগুন লাগাচ্ছে। তাদের ভান্ডারে ককটেলের মজুত যথেষ্ট আছে বলেই ধারণা হয়। সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন চান এমন দলগুলোর ক্যাডাররাও রাজপথে রয়েছেন। তাঁরা এত নিঃস্ব নন যে খালি হাতে পথে নামবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পূর্ণ সহায়তার ওপরও তাঁরা আস্থা রাখতে পারছেন না। প্রায় তিন হাত লম্বা লাঠি ও অন্যান্য পদার্থ তাঁদের হাতেও আছে—তা টিভির পর্দায় দেখা যায় হরতালের দিন ঘরে বসেও।
‘নাশকতা’ শব্দটি মহাজোট নেতাদের বোল শুধু নয়, সর্বাধিক উচ্চারিত শব্দে পরিণত হয়েছে। মহাজোট নেতারা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তারা ‘নাশকতা’ পদটিকে তাঁদের রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত করেছেন। কয়েকটি নির্বাচিত কাগজ এই শব্দটি প্রচার করে সুখ পাচ্ছে। খুচরো সন্ত্রাসী তৎপরতা, যানবাহন ভাঙচুর আর ‘নাশকতা’ দুই জিনিস। গত আড়াই বছরে মহাজোট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে অনুমিত নাশকতা যদি শতকরা ৫০ ভাগের ১ ভাগও হতো, তাহলে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যেত আফগানিস্তান, ইরাক ও পাকিস্তানকে। একই কথা প্রতিদিন বললে তার ধার নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু তার পরিণতি খুব খারাপ। বিরোধী দলের কর্মসূচি ঘোষণার অর্থ নাশকতা হবেই—তা অনুমানে দূরদর্শিতা থাকতে পারে কিন্তু প্রজ্ঞার পরিচয় নেই। সতর্ক থাকা ভালো, আতঙ্ক ছড়ানো বা মিথ্যা অপবাদ দেওয়া অনুচিত।
বিরোধী দল কর্মসূচি ঘোষণা করলেই তাদের কার্যালয় পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক আচরণ। যেভাবে বিরোধী দলের খ্যাতিমান নেতারা কলাপসিবল গেটের ভেতরে পিতৃমাতৃহীন এতিম বালকের মতো বসে থাকেন, এবং তা আমাদের মিডিয়ায় দেখা যায়—তা করুণ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি ছাড়া আর কিছু নয়। কর্মসূচির আগেই বিরোধী নেতাদের বাড়িতে পুলিশের হানা দেওয়া, অপরাধ করার আগেই বিরোধী নেতা-কর্মীদের পাইকারি গ্রেপ্তার আইনের শাসন ও গণতন্ত্র সমর্থন করে না। একই সঙ্গে হরতালের আগের সন্ধ্যায় ও হরতালের দিন সাধারণ মানুষের যানবাহনে আগুন দেওয়া, বোমা মারা, পুলিশের গাড়ি পোড়ানো ফৌজদারি অপরাধ। বিরোধী দল তাদের কর্মীদের এই অপকর্মের দায় এড়াতে পারে না। সরকারের উচিত অপরাধীদের তাৎক্ষণিক পাকড়াও করে কঠোর শাস্তি দেওয়া। বাংলাদেশে এ ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা চলে গণতন্ত্রের নামে।
বর্তমানে এই যে হানাহানি ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এবং বাইরের চাপে তা সমাধানের যে লোক দেখানো উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তা যে ফলপ্রসূ হবে সে সম্পর্কে আশাবাদী হওয়া কোনো বাস্তববাদীর পক্ষেও সম্ভব নয়। যাঁরা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে চাইছেন, তাঁরা তাঁদের অতীত থেকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে যে বেরিয়ে এসেছেন—সে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ক্ষমতায় গিয়ে কী করবেন সে জন্য কোনো হোমওয়ার্ক নেই। সংবিধান সংশোধন করে মহাজোট পুনর্নির্বাচিত হওয়ার যে পরিকল্পনা করেছে, তাতে তাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রমাণ নেই। নিরপেক্ষ নির্বাচনই বলে দেবে জনগণ কাকে চায় আর কাকে আপাতত চায় না।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি শক্তিগুলো যদি মনে করে তাদের কথিত সন্ত্রাসবাদ দমনে ১৪-দলীয় জোটই শুধু ভরসা, তাহলে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি করা হবে অত্যন্ত অবিচার। বাংলাদেশে ইসলামি মৌলবাদ এবং ধর্মীয় জঙ্গিবাদ দমনে সেক্যুলারপন্থী আওয়ামী লীগ এবং মুসলিম জাতীয়তাবাদী বিএনপি—দুই দলকেই প্রয়োজন। তবে তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পর্কে দুই দলকেই উপলব্ধি করতে হবে, শুধু ক্ষমতার চিন্তা মাথায় রাখলে হবে না। বিদেশিদের বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সামাজিক বাস্তবতা বুঝতে হবে এবং ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সব দলকেই কাজে লাগাতে হবে। আমাদের বিদ্যা-বুদ্ধি কম থাকলেও বাংলাদেশের হতভাগ্য মানুষদের আমরা বিদেশিদের চেয়ে বেশি চিনি। এদের যেমন অনেক দোষ ও দুর্বলতা আছে, কিছু ভালো গুণ ও দৃঢ়তাও আছে। তা না থাকলে আইয়ুব খানের পতন হতো না মেয়াদ পূরণের আগেই, মুক্তিযুদ্ধ হতো না, নব্বইতে সামরিক একনায়কত্বের অবসান হতো না।
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের অভাবে গত এক যুগে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ব্যর্থতার শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে, এই সময়টিতে দেশ পরিচালনা করেছে চার-দলীয় জোট, তিনোদ্দীনের প্রশাসন এবং ১৪-দলীয় মহাজোট, এই সময়ের সফলতা ও ব্যর্থতার দায় এই তিন প্রশাসনের ওপরই বর্তায়। কিন্তু দায় এড়াতে পারে না ক্ষমতার বাইরে থাকা ছোট দলগুলো, বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্বাধীন নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী নেতারা এবং গণমাধ্যম। একটি অসাম্প্রদায়িক, উদার, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দায় শুধু প্রধান দু-তিনটি দলের নেতাদের নয়। ছোট দলগুলোর নেতাদের ভূমিকাও হওয়া উচিত যথাযথ। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সেই ভূমিকা তাঁরা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে তাঁদের ভূমিকায় হতাশ হয়েছি। ব্যবসায়ী নেতা ও গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ যখন যেদিকে ভারী দেখেন তখন সেদিকে কাত হয়ে যান—তাঁরা সোজা থাকেন না।
ফোনালাপ ও নৈশভোজের কথা শুনে পত্রপত্রিকার খবরে ও টক শোতে স্তুতিবাদের বন্যা বয়ে যায়। বিষয়টি যে কত জটিল ও গভীর তা নিয়ে কোনো বিশ্লেষণ দেখা গেল না। কাগজে দেখলাম, ‘খালেদা জিয়ার খাবারের মেন্যু জানতে চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর’। নৈশভোজের চেয়ে আলোচনা জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে খাওয়াদাওয়ার ঝামেলা এড়ানোই ভালো। ডাইনিং টেবিলে যদি বিরোধীদলীয় নেতাকে বাসভবন থেকে উচ্ছেদের প্রসঙ্গ ওঠে বা জিয়া চ্যারিটেবলের মামলায় হাজিরার কথা আসে তাহলে আমন্ত্রাতা বিব্রত হবেন। বেগম জিয়ার পাতে বড় পাবদা মাছটি তুলে দিয়ে যদি তাঁর জন্মদিনের কথা তোলা হয়—তাহলে ভোজটাই মাটি। সুতরাং এই সময় ভোজ কোনো সমাধান নয়। অচলাবস্থা দূর করতে আলোচনা করা অপরিহার্য।
ভোজ একটি ব্যক্তিগত বিষয়। সৌজন্য ও সামাজিকতা। তার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক সামান্যই। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আজন্ম শত্রুতা। দুই দেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও লিয়াকত আলী খান। কেউ কারও মুখ দেখারই কথা নয়। ১৪ আগস্ট ভারতবর্ষ তিন টুকরা হতে যাবে। বেদনায় কাতর পণ্ডিত নেহরু। দুই দিন আগে তাঁরা একত্রে খেতে বসেন। অবিভক্ত ভারতে নবাবজাদার সঙ্গে সেটাই পণ্ডিতজির শেষ ভোজ। উচ্চতর সংস্কৃতিমানেরা এ রকম করেন। ব্যক্তিগত আচরণ রাজনৈতিক বৈরিতার ঊর্ধ্বে রাখেন তাঁরা।
আমি যদি আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ হতাম, যে ভোজসভা কোনো দিনই হবে না সেই ভোজের মেন্যু চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২-কে বিরোধীদলীয় নেতার সহকারী একান্ত সচিবের কাছে পাঠাতাম না। সময়টি এখন সহকারী একান্তদের নয়— শীর্ষস্থানীয়দের। মুহূর্তটি সংলাপের আলোচ্যসূচি নিয়ে পত্র পাঠানোর। আমি বিএনপির কোনো নেতা হলে দলীয় প্রধানকে বলতাম, বাস্তবের সঙ্গে সংগতি রেখে আলোচনার বিষয়বস্তু তৈরি করুন। এখন দুপক্ষের দুকূলে বসে বসে ঢেউ গোনার সময় নয়। বিদেশিদের দোষ দেব না। তাঁরা ভাববাচ্যে কথা বলছেন। এদিকেও আছেন, ওদিকেও আছেন। তাঁরা আমাদের নেতাদের প্রায়-প্রভু। তাঁদের সবারে আমি নমি।
সময়টি দীর্ঘসূত্রতার নয়, চাতুর্যের নয়, গোঁজামিলেরও নয়। মানুষ চায় মিল। অতীতের তিক্ততা ভুলে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে মিলে কাজ করবেন। আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে মিলে অচলাবস্থা ও জাতীয় সংকট সমাধানে কাজ করবে। তা না হলে দুই নেতার অলৌকিক ভোজের কথা শুনে আমাদের জিহ্বায় পানি এলেও জনগণের অন্তরাত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে।
যে মানুষগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে, বোমার আঘাতে অথবা অন্যভাবে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের বাবা-মা আছেন। তা না থাকলে আছেন স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, চাচা-মামা, ফুফু-খালা, বন্ধুবান্ধব প্রভৃতি। তাঁদের এই অপমৃত্যুতে তাঁদের শোকসন্তপ্ত আত্মীয়স্বজনের অবস্থা সহজেই অনুমান করা সম্ভব। নিহত ব্যক্তিদের কারও এই জগতে যদি কেউ-ই না থেকে থাকে, আমরা দেশের কোটি কোটি মানুষ তো আছি। আমাদের কি বিন্দুমাত্র করুণা নেই?
উপনিবেশিত দেশে পরাধীন মানুষের জীবনের দাম নেই শাসকশ্রেণীর কাছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য সেখানে জীবন বলিদান গৌরবের, স্বাধীনতাসংগ্রামে যাঁরা জীবন দেন, তাঁরা পান শহীদের মর্যাদা। নজরুলের ভাষায়: ‘গোলামীর চেয়ে শহিদি দর্জা অনেক ঊর্ধে জেনো।’ কিন্তু রাজনৈতিক সহিষ্ণুতায় পথেঘাটে বেঘোরে মৃত্যু কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যাঁরা আত্মোৎসর্গ করেছেন, তাঁরা কেউই কোনো দলের ক্যাডার ছিলেন না। ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলনে যাঁরা নিহত হন, তাঁরা ছিলেন স্বায়ত্তশাসনের পক্ষের মানুষ বা দলের কর্মী—ক্যাডার নন। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হন, তাঁরা স্বাধিকার আন্দোলনের পক্ষের মানুষ— কোনো দলের ক্যাডার নন। স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের দলীয় পরিচয় খুঁজতে যাওয়ার প্রশ্ন আসে না। সেদিন কেউ কোনো না কোনো দলের সমর্থক ছিলেন, কর্মী হলেও হতে পারেন—ক্যাডার নামক বস্তু সেদিন কোনো দলেই ছিল না, একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া। একাত্তরের লাখ লাখ শহীদের প্রায় সবাই ছিলেন দলের ঊর্ধ্বে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতিকে জনগণ থেকে সরিয়ে এনে তাকে করা হয়েছে ক্যাডারভিত্তিক। ক্ষমতার রাজনীতির স্বার্থে ডাকা হরতাল-অবরোধ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কার্যকর করতে দলীয় সমর্থক নয়, ক্যাডার দরকার। ক্ষমতার স্বার্থে হরতালকে প্রতিহত করতেও ক্যাডার দরকার। হরতাল কার্যকর ও হরতাল প্রতিহত করতে নিরস্ত্র ক্যাডার শুধু নয়, প্রয়োজন লাঠিসোঁটা, দা-বঁটি, বোমা-ককটেল, কাটা রাইফেল, গাদা বন্দুক প্রভৃতি। দুই পক্ষেরই দরকার ক্যাডারদের পেশি প্রদর্শন—জনসমর্থন নয়। কিন্তু সেই ক্যাডার কারা? নগদ প্রাপ্তি ছাড়া কেউ স্বেচ্ছায় ক্যাডারের খাতায় নাম লেখায় না। ক্যাডারের শরীরে যতক্ষণ শক্তি থাকে ততক্ষণ তার চড়া দাম। যে মুহূর্তে সহিংসতায় রাজপথে প্রাণটা চলে যায়, সেই মুহূর্তে তার মৃতদেহের এক পয়সা দাম নেই নিয়োগ দেওয়া দলের নেতাদের কাছে। তখন থেকে তার স্মৃতির অশেষ মূল্য শুধু তার প্রিয়জনদের কাছেই। কারণ, ক্যাডারদের প্রাথমিক পরিচয় তারা মানুষ।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা ভারত সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ‘বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি, নির্বাচন ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।’ রাষ্ট্রদূত গত রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন: ‘সব রাজনৈতিক দলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এই বার্তা দিচ্ছে যে সহিংসতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ নয় এবং তা গ্রহণযোগ্য নয়। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সহিংসতা কখনোই কোনো কিছুর জবাব হতে পারে না। সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশ সরকার সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হওয়ার জন্য আমরা সব দলের প্রতি আহ্বান জানাই।’ [প্রথম আলো]
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় এমন দলগুলো রাজপথে আছে। তারা যানবাহন ভাঙচুর করছে, তাতে আগুন লাগাচ্ছে। তাদের ভান্ডারে ককটেলের মজুত যথেষ্ট আছে বলেই ধারণা হয়। সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন চান এমন দলগুলোর ক্যাডাররাও রাজপথে রয়েছেন। তাঁরা এত নিঃস্ব নন যে খালি হাতে পথে নামবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পূর্ণ সহায়তার ওপরও তাঁরা আস্থা রাখতে পারছেন না। প্রায় তিন হাত লম্বা লাঠি ও অন্যান্য পদার্থ তাঁদের হাতেও আছে—তা টিভির পর্দায় দেখা যায় হরতালের দিন ঘরে বসেও।
‘নাশকতা’ শব্দটি মহাজোট নেতাদের বোল শুধু নয়, সর্বাধিক উচ্চারিত শব্দে পরিণত হয়েছে। মহাজোট নেতারা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তারা ‘নাশকতা’ পদটিকে তাঁদের রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত করেছেন। কয়েকটি নির্বাচিত কাগজ এই শব্দটি প্রচার করে সুখ পাচ্ছে। খুচরো সন্ত্রাসী তৎপরতা, যানবাহন ভাঙচুর আর ‘নাশকতা’ দুই জিনিস। গত আড়াই বছরে মহাজোট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে অনুমিত নাশকতা যদি শতকরা ৫০ ভাগের ১ ভাগও হতো, তাহলে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যেত আফগানিস্তান, ইরাক ও পাকিস্তানকে। একই কথা প্রতিদিন বললে তার ধার নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু তার পরিণতি খুব খারাপ। বিরোধী দলের কর্মসূচি ঘোষণার অর্থ নাশকতা হবেই—তা অনুমানে দূরদর্শিতা থাকতে পারে কিন্তু প্রজ্ঞার পরিচয় নেই। সতর্ক থাকা ভালো, আতঙ্ক ছড়ানো বা মিথ্যা অপবাদ দেওয়া অনুচিত।
বিরোধী দল কর্মসূচি ঘোষণা করলেই তাদের কার্যালয় পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক আচরণ। যেভাবে বিরোধী দলের খ্যাতিমান নেতারা কলাপসিবল গেটের ভেতরে পিতৃমাতৃহীন এতিম বালকের মতো বসে থাকেন, এবং তা আমাদের মিডিয়ায় দেখা যায়—তা করুণ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি ছাড়া আর কিছু নয়। কর্মসূচির আগেই বিরোধী নেতাদের বাড়িতে পুলিশের হানা দেওয়া, অপরাধ করার আগেই বিরোধী নেতা-কর্মীদের পাইকারি গ্রেপ্তার আইনের শাসন ও গণতন্ত্র সমর্থন করে না। একই সঙ্গে হরতালের আগের সন্ধ্যায় ও হরতালের দিন সাধারণ মানুষের যানবাহনে আগুন দেওয়া, বোমা মারা, পুলিশের গাড়ি পোড়ানো ফৌজদারি অপরাধ। বিরোধী দল তাদের কর্মীদের এই অপকর্মের দায় এড়াতে পারে না। সরকারের উচিত অপরাধীদের তাৎক্ষণিক পাকড়াও করে কঠোর শাস্তি দেওয়া। বাংলাদেশে এ ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা চলে গণতন্ত্রের নামে।
বর্তমানে এই যে হানাহানি ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এবং বাইরের চাপে তা সমাধানের যে লোক দেখানো উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তা যে ফলপ্রসূ হবে সে সম্পর্কে আশাবাদী হওয়া কোনো বাস্তববাদীর পক্ষেও সম্ভব নয়। যাঁরা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে চাইছেন, তাঁরা তাঁদের অতীত থেকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে যে বেরিয়ে এসেছেন—সে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ক্ষমতায় গিয়ে কী করবেন সে জন্য কোনো হোমওয়ার্ক নেই। সংবিধান সংশোধন করে মহাজোট পুনর্নির্বাচিত হওয়ার যে পরিকল্পনা করেছে, তাতে তাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রমাণ নেই। নিরপেক্ষ নির্বাচনই বলে দেবে জনগণ কাকে চায় আর কাকে আপাতত চায় না।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি শক্তিগুলো যদি মনে করে তাদের কথিত সন্ত্রাসবাদ দমনে ১৪-দলীয় জোটই শুধু ভরসা, তাহলে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি করা হবে অত্যন্ত অবিচার। বাংলাদেশে ইসলামি মৌলবাদ এবং ধর্মীয় জঙ্গিবাদ দমনে সেক্যুলারপন্থী আওয়ামী লীগ এবং মুসলিম জাতীয়তাবাদী বিএনপি—দুই দলকেই প্রয়োজন। তবে তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পর্কে দুই দলকেই উপলব্ধি করতে হবে, শুধু ক্ষমতার চিন্তা মাথায় রাখলে হবে না। বিদেশিদের বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সামাজিক বাস্তবতা বুঝতে হবে এবং ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সব দলকেই কাজে লাগাতে হবে। আমাদের বিদ্যা-বুদ্ধি কম থাকলেও বাংলাদেশের হতভাগ্য মানুষদের আমরা বিদেশিদের চেয়ে বেশি চিনি। এদের যেমন অনেক দোষ ও দুর্বলতা আছে, কিছু ভালো গুণ ও দৃঢ়তাও আছে। তা না থাকলে আইয়ুব খানের পতন হতো না মেয়াদ পূরণের আগেই, মুক্তিযুদ্ধ হতো না, নব্বইতে সামরিক একনায়কত্বের অবসান হতো না।
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের অভাবে গত এক যুগে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ব্যর্থতার শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে, এই সময়টিতে দেশ পরিচালনা করেছে চার-দলীয় জোট, তিনোদ্দীনের প্রশাসন এবং ১৪-দলীয় মহাজোট, এই সময়ের সফলতা ও ব্যর্থতার দায় এই তিন প্রশাসনের ওপরই বর্তায়। কিন্তু দায় এড়াতে পারে না ক্ষমতার বাইরে থাকা ছোট দলগুলো, বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্বাধীন নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী নেতারা এবং গণমাধ্যম। একটি অসাম্প্রদায়িক, উদার, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দায় শুধু প্রধান দু-তিনটি দলের নেতাদের নয়। ছোট দলগুলোর নেতাদের ভূমিকাও হওয়া উচিত যথাযথ। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সেই ভূমিকা তাঁরা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে তাঁদের ভূমিকায় হতাশ হয়েছি। ব্যবসায়ী নেতা ও গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ যখন যেদিকে ভারী দেখেন তখন সেদিকে কাত হয়ে যান—তাঁরা সোজা থাকেন না।
ফোনালাপ ও নৈশভোজের কথা শুনে পত্রপত্রিকার খবরে ও টক শোতে স্তুতিবাদের বন্যা বয়ে যায়। বিষয়টি যে কত জটিল ও গভীর তা নিয়ে কোনো বিশ্লেষণ দেখা গেল না। কাগজে দেখলাম, ‘খালেদা জিয়ার খাবারের মেন্যু জানতে চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর’। নৈশভোজের চেয়ে আলোচনা জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে খাওয়াদাওয়ার ঝামেলা এড়ানোই ভালো। ডাইনিং টেবিলে যদি বিরোধীদলীয় নেতাকে বাসভবন থেকে উচ্ছেদের প্রসঙ্গ ওঠে বা জিয়া চ্যারিটেবলের মামলায় হাজিরার কথা আসে তাহলে আমন্ত্রাতা বিব্রত হবেন। বেগম জিয়ার পাতে বড় পাবদা মাছটি তুলে দিয়ে যদি তাঁর জন্মদিনের কথা তোলা হয়—তাহলে ভোজটাই মাটি। সুতরাং এই সময় ভোজ কোনো সমাধান নয়। অচলাবস্থা দূর করতে আলোচনা করা অপরিহার্য।
ভোজ একটি ব্যক্তিগত বিষয়। সৌজন্য ও সামাজিকতা। তার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক সামান্যই। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আজন্ম শত্রুতা। দুই দেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও লিয়াকত আলী খান। কেউ কারও মুখ দেখারই কথা নয়। ১৪ আগস্ট ভারতবর্ষ তিন টুকরা হতে যাবে। বেদনায় কাতর পণ্ডিত নেহরু। দুই দিন আগে তাঁরা একত্রে খেতে বসেন। অবিভক্ত ভারতে নবাবজাদার সঙ্গে সেটাই পণ্ডিতজির শেষ ভোজ। উচ্চতর সংস্কৃতিমানেরা এ রকম করেন। ব্যক্তিগত আচরণ রাজনৈতিক বৈরিতার ঊর্ধ্বে রাখেন তাঁরা।
আমি যদি আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ হতাম, যে ভোজসভা কোনো দিনই হবে না সেই ভোজের মেন্যু চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২-কে বিরোধীদলীয় নেতার সহকারী একান্ত সচিবের কাছে পাঠাতাম না। সময়টি এখন সহকারী একান্তদের নয়— শীর্ষস্থানীয়দের। মুহূর্তটি সংলাপের আলোচ্যসূচি নিয়ে পত্র পাঠানোর। আমি বিএনপির কোনো নেতা হলে দলীয় প্রধানকে বলতাম, বাস্তবের সঙ্গে সংগতি রেখে আলোচনার বিষয়বস্তু তৈরি করুন। এখন দুপক্ষের দুকূলে বসে বসে ঢেউ গোনার সময় নয়। বিদেশিদের দোষ দেব না। তাঁরা ভাববাচ্যে কথা বলছেন। এদিকেও আছেন, ওদিকেও আছেন। তাঁরা আমাদের নেতাদের প্রায়-প্রভু। তাঁদের সবারে আমি নমি।
সময়টি দীর্ঘসূত্রতার নয়, চাতুর্যের নয়, গোঁজামিলেরও নয়। মানুষ চায় মিল। অতীতের তিক্ততা ভুলে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে মিলে কাজ করবেন। আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে মিলে অচলাবস্থা ও জাতীয় সংকট সমাধানে কাজ করবে। তা না হলে দুই নেতার অলৌকিক ভোজের কথা শুনে আমাদের জিহ্বায় পানি এলেও জনগণের অন্তরাত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
No comments