আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আতংকবাদী রাজনীতি কোন পথে? by বদরুদ্দীন উমর
ম্যাক্সিম
গোর্কি বলেছিলেন, প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেম ও বিরহের ওপর কবিতা লেখা যায়,
কিন্তু একজন কৃপণের টাকা হারানোর ওপর কোনো কবিতা লেখা বা গান গাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে একে কৃপণের টাকা
হারানোর মতো অবস্থা ছাড়া অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনা করা মুশকিল। কিন্তু এ
দেশে শাসকশ্রেণীর দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজনীতি
ক্ষেত্রে যা করছে তার ওপর কিছু লেখা শুধু মুশকিল নয়, খুব কষ্টকর হলেও এ কাজ
বাধ্য হয়েই করতে হচ্ছে। এর কারণ, উপরোক্ত দুই দলের ক্ষমতা হারানো এবং
ক্ষমতা অর্জনের যে লড়াই চলছে, কৃপণের টাকা হারানোর সঙ্গে তার একটা পার্থক্য
আছে। কৃপণের টাকা হারিয়ে যাওয়ায় অন্য কারও ক্ষতি হয় না, কিন্তু এ দুই দলের
মধ্যে, বিশেষত এ দুই দলের নেতার মধ্যে, যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ চলছে তার দ্বারা
দেশ ও জনগণের প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে। কাজেই এ দুই দল যা করছে, তার বিরুদ্ধে
লেখা হয়ে দাঁড়িয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য কাজ।
বিএনপির প্রতিষ্ঠা এবং আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন ঘটার পর আশির দশক থেকেই এ দুই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ চলে আসছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় এই দ্বন্দ্ব-বিবাদ বেশ শক্তভাবে দানা বাঁধে। এর ফলে সে সময় সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনও দ্বিধাবিভক্ত হয়। এ দুই দলের নেতৃত্বে ১৫ দল ও ৭ দল নামে দুটি জোট গঠিত হয়। পরে এই জোট ভেঙে গেলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে শত্র“তা কমে আসার পরিবর্তে বৃদ্ধি পায়। এদের এই শত্র“তা এবং আপসহীনতার মধ্যেই সৃষ্টি হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শর্ত। আশির দশকের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পর এ কারণেই একটি জাতীয় সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের নির্বাচন পরিচালিত না হয়ে সেটা হয় একটি অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এ কারণেই ১৯৯৬ সালে সংবিধান সংশোধন করে ব্যবস্থা করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের।
যে কারণে এভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্ভব হয়, সে কারণ এখন আর নেই- এটা কোনো সৎ ও সুস্থ লোকের পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ ও শত্র“তা আশির দশকে শুরু হয়েছিল, সেটা এখন বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর রাজনীতির একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই দেউলিয়া ঐতিহ্যই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির একটা নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এজন্য অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে বিদ্যমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে, বাংলাদেশে সেটা সম্ভব নয়। কৃপণের টাকা হারানোর আশংকার মতো ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের অবস্থা হয় উন্মাদের মতো। কাজেই তারা সব বিরোধী দলের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক স্বাধীনতা খর্ব করতে দাঁড়িয়ে দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। এই ত্রাসের রাজত্বই এখন বাংলাদেশে চলছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের মনে আতংক ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। সরকার নিজের কার্যকলাপের মাধ্যমে হরতালের শর্ত তৈরি করছে এবং বিরোধী দল হরতালের পর হরতাল ডেকে চারদিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। হরতাল আহ্বান করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলের কোনো বিবেচনা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় কখনোই পাওয়া যায় না। এটা আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এবং এখন বিএনপির ক্ষেত্রে নতুন করে দেখা যাচ্ছে। হরতাল দিয়ে এই রাজনৈতিক দলগুলো জনজীবনে, বিশেষত খেটে খাওয়া দিনমজুর, হকার, রিকশা, স্কুটার, ভ্যানচালক ইত্যাদির জীবনে কী দুর্দশা সৃষ্টি করে তার হিসাব নেই। এই হিসাবের কোনো প্রয়োজনও হরতাল দেনেওয়ালা দলের মধ্যে দেখা যায় না। কাজেই জনগণকে তাদের দেয়া হরতালের ধকল সহ্য করতে হয়। বিএনপি এখন ২৭ তারিখ সকাল থেকে ২৯ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬০ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে। এভাবে ৬০ ঘণ্টার হরতালে দিন আনা দিন খাওয়া লোকদের যে সপরিবারে পেটে পাথর বেঁধে বসে থাকতে হবে, এ চিন্তা ও বিবেচনা কি তাদের কারও আছে? এত গেল হরতালের একদিক। এর অন্যদিক হল হরতালের সময়। এমনকি হরতালের আগের দিনও রাস্তায় চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, গাড়ি ভাংচুর, বাসে ও স্কুটারে আগুন, খুনখারাবি সবকিছুই চলে হরতালের সময়। সরকারের পুলিশ ও র্যাবও মারমুখী অবস্থায় বিরোধী দল ও সেই সঙ্গে জনগণের ওপর আক্রমণ চালায়। তাদের হাতেও মানুষ রাস্তাঘাটে নিগৃহীত হয়, নিহত ও আহত হয়। এক কথায়, যেসব সমস্যা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব, সেসব সমস্যা এভাবে সমাধানের কোনো চেষ্টা না করে সন্ত্রাসের দ্বারা এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেই সরকার ও বিরোধী দল তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এদিক দিয়ে বিচার করলে এদেরকে আতংকবাদী বললে সত্যের অপলাপ হয় না। বস্তুতপক্ষে পরস্পরের প্রতি হুমকি-ধামকি এবং সাধারণভাবে জনগণের মধ্যে আতংক সৃষ্টির মাধ্যমেই বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এখন তাদের ক্ষমতার রাজনীতি চর্চা করছে।
বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। এ নির্বাচন কীভাবে ও কার পরিচালনায় হবে এটাই এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতির এক নম্বর এজেন্ডা। এর থেকেই বোঝা যায়, এদেশে নির্বাচন কমিশনের কোনো স্বাধীন ভূমিকা নেই, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনার মতো অবস্থা নেই। সাধারণ প্রশাসন থেকে নিয়ে আদালত পর্যন্ত যেভাবে সরকারের দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হচ্ছে, সেভাবেই নির্বাচন কমিশন যে কাজ করবে এ বিষয়ে কোনো নিরপেক্ষ লোকেরই সন্দেহ নেই। এই পরিস্থিতিতে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন এখনও নিঃশেষিত হয়নি। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে যেভাবে এর প্রয়োজন ছিল, এখনও তা-ই আছে। কিন্তু সরকারি দল আওয়ামী লীগ যেভাবে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে বিদ্যমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে, তার সঙ্গে দেশের বাস্তব পরিস্থিতির কোনো মিল নেই। শুধু তাই নয়, বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে এ সিদ্ধান্তের দ্বন্দ্ব আছে। এই দ্বন্দ্বই এ মুহূর্তে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এক চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা এবং ব্যাপক আতংক সৃষ্টির জন্য দায়ী।
এই সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যেও হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে এই যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য তাকে টেলিফোন করবেন এমন কথা বলার পর সংবাদপত্র এবং তথাকথিত সুশীল সমাজের লোকজনের মধ্যে বেশ চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়েছে! এর মধ্যে তারা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন!! কিন্তু ২৬ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সেই টেলিফোন কলের কোনো দেখা নেই। যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধী দলের নেতাদের টেলিফোনে বা সাক্ষাতে আলাপ-আলোচনা এক স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু বাংলাদেশে যেহেতু এদিক দিয়ে দুই পক্ষের মধ্যেই এক চীনের প্রাচীর তৈরি হয়েছে, সে কারণে এই টেলিফোনের কথায় অনেকের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে! টেলিফোন না হলেও এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা আছে!!
২৬ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকার পক্ষ আলোচনার ব্যাপারে কোনো অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ না নিলে বিরোধী দল ২৭ তারিখ সকাল থেকে ৬০ ঘণ্টার হরতাল পালন করবে। রাজনীতি ক্ষেত্রে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপির এই খেলা জনগণের দিক থেকে কৃপণের টাকা হারানোর মতোই অন্তঃসারশূন্য ব্যাপার। এ বিষয়ে কিছু লেখা, এই পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে এটা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা করা কৃপণের টাকা হারানো নিয়ে গান গাওয়ার মতোই এক দুঃসাধ্য ব্যাপার।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
বিএনপির প্রতিষ্ঠা এবং আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন ঘটার পর আশির দশক থেকেই এ দুই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ চলে আসছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় এই দ্বন্দ্ব-বিবাদ বেশ শক্তভাবে দানা বাঁধে। এর ফলে সে সময় সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনও দ্বিধাবিভক্ত হয়। এ দুই দলের নেতৃত্বে ১৫ দল ও ৭ দল নামে দুটি জোট গঠিত হয়। পরে এই জোট ভেঙে গেলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে শত্র“তা কমে আসার পরিবর্তে বৃদ্ধি পায়। এদের এই শত্র“তা এবং আপসহীনতার মধ্যেই সৃষ্টি হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শর্ত। আশির দশকের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পর এ কারণেই একটি জাতীয় সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের নির্বাচন পরিচালিত না হয়ে সেটা হয় একটি অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এ কারণেই ১৯৯৬ সালে সংবিধান সংশোধন করে ব্যবস্থা করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের।
যে কারণে এভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্ভব হয়, সে কারণ এখন আর নেই- এটা কোনো সৎ ও সুস্থ লোকের পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ ও শত্র“তা আশির দশকে শুরু হয়েছিল, সেটা এখন বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর রাজনীতির একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই দেউলিয়া ঐতিহ্যই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির একটা নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এজন্য অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে বিদ্যমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে, বাংলাদেশে সেটা সম্ভব নয়। কৃপণের টাকা হারানোর আশংকার মতো ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের অবস্থা হয় উন্মাদের মতো। কাজেই তারা সব বিরোধী দলের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক স্বাধীনতা খর্ব করতে দাঁড়িয়ে দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। এই ত্রাসের রাজত্বই এখন বাংলাদেশে চলছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের মনে আতংক ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। সরকার নিজের কার্যকলাপের মাধ্যমে হরতালের শর্ত তৈরি করছে এবং বিরোধী দল হরতালের পর হরতাল ডেকে চারদিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। হরতাল আহ্বান করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলের কোনো বিবেচনা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় কখনোই পাওয়া যায় না। এটা আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এবং এখন বিএনপির ক্ষেত্রে নতুন করে দেখা যাচ্ছে। হরতাল দিয়ে এই রাজনৈতিক দলগুলো জনজীবনে, বিশেষত খেটে খাওয়া দিনমজুর, হকার, রিকশা, স্কুটার, ভ্যানচালক ইত্যাদির জীবনে কী দুর্দশা সৃষ্টি করে তার হিসাব নেই। এই হিসাবের কোনো প্রয়োজনও হরতাল দেনেওয়ালা দলের মধ্যে দেখা যায় না। কাজেই জনগণকে তাদের দেয়া হরতালের ধকল সহ্য করতে হয়। বিএনপি এখন ২৭ তারিখ সকাল থেকে ২৯ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬০ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে। এভাবে ৬০ ঘণ্টার হরতালে দিন আনা দিন খাওয়া লোকদের যে সপরিবারে পেটে পাথর বেঁধে বসে থাকতে হবে, এ চিন্তা ও বিবেচনা কি তাদের কারও আছে? এত গেল হরতালের একদিক। এর অন্যদিক হল হরতালের সময়। এমনকি হরতালের আগের দিনও রাস্তায় চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, গাড়ি ভাংচুর, বাসে ও স্কুটারে আগুন, খুনখারাবি সবকিছুই চলে হরতালের সময়। সরকারের পুলিশ ও র্যাবও মারমুখী অবস্থায় বিরোধী দল ও সেই সঙ্গে জনগণের ওপর আক্রমণ চালায়। তাদের হাতেও মানুষ রাস্তাঘাটে নিগৃহীত হয়, নিহত ও আহত হয়। এক কথায়, যেসব সমস্যা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব, সেসব সমস্যা এভাবে সমাধানের কোনো চেষ্টা না করে সন্ত্রাসের দ্বারা এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেই সরকার ও বিরোধী দল তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এদিক দিয়ে বিচার করলে এদেরকে আতংকবাদী বললে সত্যের অপলাপ হয় না। বস্তুতপক্ষে পরস্পরের প্রতি হুমকি-ধামকি এবং সাধারণভাবে জনগণের মধ্যে আতংক সৃষ্টির মাধ্যমেই বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এখন তাদের ক্ষমতার রাজনীতি চর্চা করছে।
বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। এ নির্বাচন কীভাবে ও কার পরিচালনায় হবে এটাই এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতির এক নম্বর এজেন্ডা। এর থেকেই বোঝা যায়, এদেশে নির্বাচন কমিশনের কোনো স্বাধীন ভূমিকা নেই, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনার মতো অবস্থা নেই। সাধারণ প্রশাসন থেকে নিয়ে আদালত পর্যন্ত যেভাবে সরকারের দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হচ্ছে, সেভাবেই নির্বাচন কমিশন যে কাজ করবে এ বিষয়ে কোনো নিরপেক্ষ লোকেরই সন্দেহ নেই। এই পরিস্থিতিতে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন এখনও নিঃশেষিত হয়নি। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে যেভাবে এর প্রয়োজন ছিল, এখনও তা-ই আছে। কিন্তু সরকারি দল আওয়ামী লীগ যেভাবে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে বিদ্যমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে, তার সঙ্গে দেশের বাস্তব পরিস্থিতির কোনো মিল নেই। শুধু তাই নয়, বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে এ সিদ্ধান্তের দ্বন্দ্ব আছে। এই দ্বন্দ্বই এ মুহূর্তে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এক চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা এবং ব্যাপক আতংক সৃষ্টির জন্য দায়ী।
এই সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যেও হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে এই যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য তাকে টেলিফোন করবেন এমন কথা বলার পর সংবাদপত্র এবং তথাকথিত সুশীল সমাজের লোকজনের মধ্যে বেশ চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়েছে! এর মধ্যে তারা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন!! কিন্তু ২৬ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সেই টেলিফোন কলের কোনো দেখা নেই। যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধী দলের নেতাদের টেলিফোনে বা সাক্ষাতে আলাপ-আলোচনা এক স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু বাংলাদেশে যেহেতু এদিক দিয়ে দুই পক্ষের মধ্যেই এক চীনের প্রাচীর তৈরি হয়েছে, সে কারণে এই টেলিফোনের কথায় অনেকের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে! টেলিফোন না হলেও এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা আছে!!
২৬ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকার পক্ষ আলোচনার ব্যাপারে কোনো অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ না নিলে বিরোধী দল ২৭ তারিখ সকাল থেকে ৬০ ঘণ্টার হরতাল পালন করবে। রাজনীতি ক্ষেত্রে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপির এই খেলা জনগণের দিক থেকে কৃপণের টাকা হারানোর মতোই অন্তঃসারশূন্য ব্যাপার। এ বিষয়ে কিছু লেখা, এই পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে এটা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা করা কৃপণের টাকা হারানো নিয়ে গান গাওয়ার মতোই এক দুঃসাধ্য ব্যাপার।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
No comments