এপার-ওপারদাঁড়াবে না দৌড়াবে by অমিত বসু
কাকে চাই, চিৎকার করে বলা যায় না।
একে-ওকে, তাকে-যাকেই পছন্দ, বলতে হয় গোপন ব্যালটে। তালা না খোলা পর্যন্ত
ইচ্ছাটা ভোটবাক্সে বন্দি। একটা একটা করে খোলার পর জানা যায় উল্টেপাল্টে
গেল, না একই রকম থাকল।
কারা দৌড়ে এগিয়ে গেল, কাদের
দাঁড়িয়ে পড়তে হলো। এমনো হতে পারে দুপক্ষই দৌড়াল। একে অন্যের থেকে একটু
এগিয়ে-পিছিয়ে রইল। পিছিয়ে থাকারা প্রতিদ্বন্দ্বীকে টপকে যাওয়ার চেষ্টা
অব্যাহত রাখল। দৌড়টা ম্যারাথনের চেয়ে বেশি। পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রাম
থেকে দিল্লির দরবার। দেড় হাজার কিলোমিটার তো হবেই।
চিতা মানুষের চেয়ে বেশি জোরে ছোটে মাসল ফাইবার স্ট্রং বলে। তার জন্য জিমে গিয়ে কসরত করতে হয় না। জন্মেই বাতাসকে হারায়। চড়চড়িয়ে গাছেও চড়ে। বিশেষ করে রাতে। দিনে হরিণ না পেলে রজনীতে বাঁদর ধরে। কী করবে, খিদে নিয়ে তো ঘুমানো যায় না! বাঁদররা সারা দিন বাঁদরামি করলেও নিশীথে অসহায়। চোখে ভালো দেখে না, প্রায় অন্ধ। দুর্বলতাটা কাজে লাগায় চিতা। লেজের নাগাল পেলেই হলো। টেনে-ছিঁড়ে খায়। মাসল পাওয়ার সর্বত্র স্বীকৃত। আছে বা নেইয়ের মধ্যে তফাৎ অনেকটাই। পেশিশক্তি যাদের আছে, তারা কাউকে পরোয়া করে না। মেরে-ধরে কড়া শাসনে মানুষকে বশে আনতে মরিয়া। নিজের ইচ্ছাটা চাপিয়ে দেয় অন্যের ঘাড়ে। নিরীহ লোকের স্বাধীনতা কেড়ে, তাদের নির্দেশ পালনে বাধ্য করে। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করার সাধ্য কজনের! বেশির ভাগই পাঁপড়ের মতো গুঁড়িয়ে যায়।
রক্ত ঝরিয়ে গায়ের জোরে যারা গ্রাম দখলে ব্যস্ত, তারা বাস্তবে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার পরাজয়ের সূচনা করছে। উত্তরণের বদলে পতন। দীর্ঘ সংগ্রামে পঞ্চায়েত রাজের জন্ম। দিল্লি বা কলকাতায় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না রেখে গ্রামের সাধারণ মানুষের হাতে উন্নয়নের দায়িত্ব তুলে দেওয়া। যাদের স্বাবলম্বী হওয়াটা পছন্দ করেনি বিত্তবানরা। আক্রোশে বলেছে, পঞ্চায়েত মানে তো আকিঞ্চনদের আঁস্তাকুড়। ওরা কী করবে! যা করার আমাদেরই করতে হবে। সেই চেষ্টাই হচ্ছে। দাবিয়ে দাপিয়ে দমিয়ে দেওয়ার দাপট। মানুষের দিকে কপট ভালোবাসা ছুড়ে দিয়ে পেছন থেকে ছুরি মারা। তাদের কাছে লোক নয়, ভোটব্যাংক। চুপচাপ ভোট সাপ্লাই দিয়ে যাবে। ক্ষমতা নয়, আনুগত্যই হবে অলংকার। তারা মাটির লোক, মাটিতে মিশে থাকবে। উচ্চ শ্রেণীর চোখে চোখ রেখে কথা বলার স্পর্ধা যেন না দেখায়।
ভুল হচ্ছে হিসাবে। জোর যার মুল্লুক তাদের সময় চলে গেছে। কাজ দিয়ে জয় করতে হবে মানুষকে। নিঃস্বার্থ সেবার বিকল্প নেই। বিহারের ছবিটা সে কথাই বলছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার গ্রামের চেহারাটা বদলে দিয়েছেন। যে রাস্তায় সাইকেল যেতে পারত না, সেখানে গাড়ি ছুটছে। পড়ে থাকা বাড়ি থাকলেই স্কুল। একটু খালি জমি পেলেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। বারো ক্লাস পাস করলেই প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি। একদিকে চাষবাস, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গ্রামে মাস্তানদের মাতব্বরির দিন শেষ। সেলুনে চুল কাটতে কাটতে রামাশীষ শর্মা বললেন, বিএ পাস করেছি। বিহারেই থেকে যেতাম। সরকারি চাকরির সুযোগ ছিল। কী করব কলকাতায় বাপ-ঠাকুরদার সেলুন চালাবে কে? নওদা জেলায় আমার বাড়ি। উন্নয়নের ধারায় নিজের গ্রামটাকেই চিনতে পারি না। জিজ্ঞেস করলাম, বিহারে কোন দলের কী অবস্থা। সাফ জবাব, দলটল বুঝি না। নীতিশ কুমার কাজ করছেন। তাঁকে আরো চাই। তাঁর সব থেকে বড় সাফল্য গুণ্ডারাজ দমন। এখন কেউ গুণ্ডামি করতে এলে মানুষই তাকে ধরে মাটিতে পুঁতে দেবে।
সব থেকে পিছিয়ে পড়া রাজ্য ওড়িশাকে টেনে তুলতে সক্রিয় মুখ্যমন্ত্রী নবীশ পট্টানায়েক। মুখে টুঁ শব্দটি নেই। নীরবে গ্রাম বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আর কিছু না হোক দুবেলা দুমঠো ভাত আর মাথার ওপর ছাদের গ্যারান্টি দিতে ব্যস্ত।
বিহার, ওড়িশা থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম। পঞ্চায়েতি রাজ্যের হাত ধরে অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস সম্ভব হয়েছিল। গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের ক্ষমতা, অধিকার বুঝে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল মানুষ। আচমকা পিছুটান দিলে তারা সইবে কেন? তাদের কাছেও দল নয়, কাজ বড়। এক বাড়িতেই একাধিক দলের সমর্থক। হাতে আলাদা পতাকা হলেও হাঁড়ি এক।
গ্রামের মানুষ চুপ করে বসে নেই। ভোট দিচ্ছে নিজেদের ইচ্ছাটাকে জাহির করতে। সূর্য ডুবছে, ভোটের লাইন ফুরাচ্ছে না। সূর্য ওঠার সময় পর্যন্ত ভোট চলেছে জঙ্গলমহলে। যদি কোনো নেতা বা নেত্রী বলেন, জানতাম ওখানে এ রকমই ভোট হবে, মিথ্যা কথা। ছবিটা সবারই কল্পনার বাইরে। যাঁরা দাবি করতেন, মানুষকে চিনি হাতের তালুর মতো। তাঁদের দর্পচূর্ণ। মানুষের থেকে যে তাঁরা কতটা বিচ্ছিন্ন, বুঝতে পারছেন।
চরম রাজনৈতিক ব্যর্থতা এখানেই। না চিনেই, চিনি, চিনি বলে চেঁচানো মস্ত বড় অপরাধ। গাঁ-গঞ্জে ছুটে ছুটে ভূরি ভূরি ভাষণ দিয়ে কী মানুষের মনের নাগাল মেলে। অনেকে বলছেন, কই সর্বত্র তো রক্তপাত হয়নি। বেশির ভাগ জায়গায়ই উৎসবের মেজাজ। বুথ দখল বা ছাপ্পা ভোটের ঘটনাও খুব বেশি নয়। অন্যায়ের কমবেশি হয় না। একটুতেই কলঙ্কের দাগ। হাজার ধুলেও উঠবে না। অন্যায়টা যারাই করুক, গ্রামীণ সমাজ তাদের মনে রাখবে। তারা পার পাবে না। শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বেয়াড়াপনা দেখে বাড়ির মেয়েরাও চুপ থাকেনি। লাঠিসোঁটা, বাঁশ, বঁটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। ধাওয়া করেছে দুষ্কৃতকারীদের। কাকছলির মেয়েরা তো আরো ওপরে। গ্রামের অপমান সইতে না পেরে সটান দিল্লি। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও তাদের দেখে নিশ্চয়ই বিস্মিত। যে গ্রামে আলো নেই, রাস্তা নেই সেখানকার মেয়েরা কমলের দীপ্তি ছড়াচ্ছে, সংগ্রামের প্রশস্ত পথ নির্মাণ করছে।
পঞ্চায়েতের সব থেকে বড় সাফল্য এটাই। মূঢ় ম্লান মুখে ভাষা ফুটেছে। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরাও কোনো কিছুতে কম নয়, বরং বেশি। গতবার ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন ৪৯.১৮ শতাংশ মহিলা। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ, যেখানে মহিলা আধিপত্য সেখানেই সুফল ফলেছে বেশি। আজ পর্যন্ত কোনো মহিলা প্রতিনিধির দিকে দুর্নীতির আঙুল তুলতে পারেনি কেউ। তফসিলি জাতি, আদিবাসী আর পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর উত্থানও এই পঞ্চায়েতের সিঁড়ি বেয়ে। মুসলিম প্রতিনিধিত্বও বেড়ে হয়েছে ২৩.১৭ শতাংশ।
৬৮.৪ শতাংশ মানুষ থাকে গ্রামে। তাদের হাতেই রাজ্যের চাবিকাঠি। বিধানসভা বা লোকসভায় যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়ার অধিক অধিকার তাদেরই। আগে যাদের ঘাড়ে কাঁঠাল ভাঙা চলত, এখন তারা সচেতন। অন্যায় সুযোগ নিতে চাইলে ছাড় দেয় না। কেউ গেঁয়োভূত বললে উল্টো শহুরে সং বলতেও ছাড়ে না। এত দিনে রাজনীতিকরাও ভালো করে জেনে গেছেন, গ্রামের মানুষ ভালোর ভালো, খারাপের খারাপ।
লেখক : কলকাতার সাংবাদিক
চিতা মানুষের চেয়ে বেশি জোরে ছোটে মাসল ফাইবার স্ট্রং বলে। তার জন্য জিমে গিয়ে কসরত করতে হয় না। জন্মেই বাতাসকে হারায়। চড়চড়িয়ে গাছেও চড়ে। বিশেষ করে রাতে। দিনে হরিণ না পেলে রজনীতে বাঁদর ধরে। কী করবে, খিদে নিয়ে তো ঘুমানো যায় না! বাঁদররা সারা দিন বাঁদরামি করলেও নিশীথে অসহায়। চোখে ভালো দেখে না, প্রায় অন্ধ। দুর্বলতাটা কাজে লাগায় চিতা। লেজের নাগাল পেলেই হলো। টেনে-ছিঁড়ে খায়। মাসল পাওয়ার সর্বত্র স্বীকৃত। আছে বা নেইয়ের মধ্যে তফাৎ অনেকটাই। পেশিশক্তি যাদের আছে, তারা কাউকে পরোয়া করে না। মেরে-ধরে কড়া শাসনে মানুষকে বশে আনতে মরিয়া। নিজের ইচ্ছাটা চাপিয়ে দেয় অন্যের ঘাড়ে। নিরীহ লোকের স্বাধীনতা কেড়ে, তাদের নির্দেশ পালনে বাধ্য করে। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করার সাধ্য কজনের! বেশির ভাগই পাঁপড়ের মতো গুঁড়িয়ে যায়।
রক্ত ঝরিয়ে গায়ের জোরে যারা গ্রাম দখলে ব্যস্ত, তারা বাস্তবে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার পরাজয়ের সূচনা করছে। উত্তরণের বদলে পতন। দীর্ঘ সংগ্রামে পঞ্চায়েত রাজের জন্ম। দিল্লি বা কলকাতায় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না রেখে গ্রামের সাধারণ মানুষের হাতে উন্নয়নের দায়িত্ব তুলে দেওয়া। যাদের স্বাবলম্বী হওয়াটা পছন্দ করেনি বিত্তবানরা। আক্রোশে বলেছে, পঞ্চায়েত মানে তো আকিঞ্চনদের আঁস্তাকুড়। ওরা কী করবে! যা করার আমাদেরই করতে হবে। সেই চেষ্টাই হচ্ছে। দাবিয়ে দাপিয়ে দমিয়ে দেওয়ার দাপট। মানুষের দিকে কপট ভালোবাসা ছুড়ে দিয়ে পেছন থেকে ছুরি মারা। তাদের কাছে লোক নয়, ভোটব্যাংক। চুপচাপ ভোট সাপ্লাই দিয়ে যাবে। ক্ষমতা নয়, আনুগত্যই হবে অলংকার। তারা মাটির লোক, মাটিতে মিশে থাকবে। উচ্চ শ্রেণীর চোখে চোখ রেখে কথা বলার স্পর্ধা যেন না দেখায়।
ভুল হচ্ছে হিসাবে। জোর যার মুল্লুক তাদের সময় চলে গেছে। কাজ দিয়ে জয় করতে হবে মানুষকে। নিঃস্বার্থ সেবার বিকল্প নেই। বিহারের ছবিটা সে কথাই বলছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার গ্রামের চেহারাটা বদলে দিয়েছেন। যে রাস্তায় সাইকেল যেতে পারত না, সেখানে গাড়ি ছুটছে। পড়ে থাকা বাড়ি থাকলেই স্কুল। একটু খালি জমি পেলেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। বারো ক্লাস পাস করলেই প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি। একদিকে চাষবাস, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গ্রামে মাস্তানদের মাতব্বরির দিন শেষ। সেলুনে চুল কাটতে কাটতে রামাশীষ শর্মা বললেন, বিএ পাস করেছি। বিহারেই থেকে যেতাম। সরকারি চাকরির সুযোগ ছিল। কী করব কলকাতায় বাপ-ঠাকুরদার সেলুন চালাবে কে? নওদা জেলায় আমার বাড়ি। উন্নয়নের ধারায় নিজের গ্রামটাকেই চিনতে পারি না। জিজ্ঞেস করলাম, বিহারে কোন দলের কী অবস্থা। সাফ জবাব, দলটল বুঝি না। নীতিশ কুমার কাজ করছেন। তাঁকে আরো চাই। তাঁর সব থেকে বড় সাফল্য গুণ্ডারাজ দমন। এখন কেউ গুণ্ডামি করতে এলে মানুষই তাকে ধরে মাটিতে পুঁতে দেবে।
সব থেকে পিছিয়ে পড়া রাজ্য ওড়িশাকে টেনে তুলতে সক্রিয় মুখ্যমন্ত্রী নবীশ পট্টানায়েক। মুখে টুঁ শব্দটি নেই। নীরবে গ্রাম বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আর কিছু না হোক দুবেলা দুমঠো ভাত আর মাথার ওপর ছাদের গ্যারান্টি দিতে ব্যস্ত।
বিহার, ওড়িশা থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম। পঞ্চায়েতি রাজ্যের হাত ধরে অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস সম্ভব হয়েছিল। গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের ক্ষমতা, অধিকার বুঝে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল মানুষ। আচমকা পিছুটান দিলে তারা সইবে কেন? তাদের কাছেও দল নয়, কাজ বড়। এক বাড়িতেই একাধিক দলের সমর্থক। হাতে আলাদা পতাকা হলেও হাঁড়ি এক।
গ্রামের মানুষ চুপ করে বসে নেই। ভোট দিচ্ছে নিজেদের ইচ্ছাটাকে জাহির করতে। সূর্য ডুবছে, ভোটের লাইন ফুরাচ্ছে না। সূর্য ওঠার সময় পর্যন্ত ভোট চলেছে জঙ্গলমহলে। যদি কোনো নেতা বা নেত্রী বলেন, জানতাম ওখানে এ রকমই ভোট হবে, মিথ্যা কথা। ছবিটা সবারই কল্পনার বাইরে। যাঁরা দাবি করতেন, মানুষকে চিনি হাতের তালুর মতো। তাঁদের দর্পচূর্ণ। মানুষের থেকে যে তাঁরা কতটা বিচ্ছিন্ন, বুঝতে পারছেন।
চরম রাজনৈতিক ব্যর্থতা এখানেই। না চিনেই, চিনি, চিনি বলে চেঁচানো মস্ত বড় অপরাধ। গাঁ-গঞ্জে ছুটে ছুটে ভূরি ভূরি ভাষণ দিয়ে কী মানুষের মনের নাগাল মেলে। অনেকে বলছেন, কই সর্বত্র তো রক্তপাত হয়নি। বেশির ভাগ জায়গায়ই উৎসবের মেজাজ। বুথ দখল বা ছাপ্পা ভোটের ঘটনাও খুব বেশি নয়। অন্যায়ের কমবেশি হয় না। একটুতেই কলঙ্কের দাগ। হাজার ধুলেও উঠবে না। অন্যায়টা যারাই করুক, গ্রামীণ সমাজ তাদের মনে রাখবে। তারা পার পাবে না। শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বেয়াড়াপনা দেখে বাড়ির মেয়েরাও চুপ থাকেনি। লাঠিসোঁটা, বাঁশ, বঁটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। ধাওয়া করেছে দুষ্কৃতকারীদের। কাকছলির মেয়েরা তো আরো ওপরে। গ্রামের অপমান সইতে না পেরে সটান দিল্লি। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও তাদের দেখে নিশ্চয়ই বিস্মিত। যে গ্রামে আলো নেই, রাস্তা নেই সেখানকার মেয়েরা কমলের দীপ্তি ছড়াচ্ছে, সংগ্রামের প্রশস্ত পথ নির্মাণ করছে।
পঞ্চায়েতের সব থেকে বড় সাফল্য এটাই। মূঢ় ম্লান মুখে ভাষা ফুটেছে। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরাও কোনো কিছুতে কম নয়, বরং বেশি। গতবার ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন ৪৯.১৮ শতাংশ মহিলা। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ, যেখানে মহিলা আধিপত্য সেখানেই সুফল ফলেছে বেশি। আজ পর্যন্ত কোনো মহিলা প্রতিনিধির দিকে দুর্নীতির আঙুল তুলতে পারেনি কেউ। তফসিলি জাতি, আদিবাসী আর পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর উত্থানও এই পঞ্চায়েতের সিঁড়ি বেয়ে। মুসলিম প্রতিনিধিত্বও বেড়ে হয়েছে ২৩.১৭ শতাংশ।
৬৮.৪ শতাংশ মানুষ থাকে গ্রামে। তাদের হাতেই রাজ্যের চাবিকাঠি। বিধানসভা বা লোকসভায় যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়ার অধিক অধিকার তাদেরই। আগে যাদের ঘাড়ে কাঁঠাল ভাঙা চলত, এখন তারা সচেতন। অন্যায় সুযোগ নিতে চাইলে ছাড় দেয় না। কেউ গেঁয়োভূত বললে উল্টো শহুরে সং বলতেও ছাড়ে না। এত দিনে রাজনীতিকরাও ভালো করে জেনে গেছেন, গ্রামের মানুষ ভালোর ভালো, খারাপের খারাপ।
লেখক : কলকাতার সাংবাদিক
No comments