বাংলাদেশ কি আইভরি কোস্টের পথ ধরলো? by অমিত রহমান
কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয়
মাতৃভূমি- কেউ কি হলফ করে বলতে পারবেন। রাজনীতির কারবারিদের হিসাব-নিকাশের
মধ্যে তা নেই। আর যারা রাজনীতির পণ্ডিত তারা বলছেন দুঃখিত। আমরাও হিসাব
মেলাতে ব্যর্থ।
তাহলে বুঝুন কি অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দেশটা
এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতিটাকে বড্ড কঠিন করে
ফেলেছেন। এটা করতে চেয়েছিলেন প্রয়াত জিয়াউর রহমান। সময়ের পরিবর্তনে রাজনীতি
এখন ঘোর অমানিশায় ঢাকা। কাল সকালে কি হবে কেউ জানেন না। একজন প্রবীণ
সম্পাদক কথায় কথায় বলছিলেন আগাম কোন মিটিং দেয়া যায় না। কারণ কখন কি হবে তা
কি বলা যায়? বাস্তব অবস্থা কিন্তু তাই। সুড়ঙ্গের ওপারে আলোর কোন দেখা নেই।
আলো ফিরবে তার নিজস্ব গতিতে এমনটাও কেউ বলতে পারছেন না। তাহলে কেউ কি
জানেন না? প্রধানমন্ত্রী হয়তো জানেন। খালেদা যে জানেন না তার কথাবার্তা
থেকেই স্পষ্ট। আগে তার কথা ছিল মার্জিত, সৌজন্যে ভরা। এখন চটকদার শিরোনাম
পাওয়ার জন্য তিনি হররোজ এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করছেন, যা কিনা তার চরিত্রের
সঙ্গে একদম বেমানান। প্রধানমন্ত্রী তো এ ব্যাপারে চ্যাম্পিয়ন। বরাবরই
লাগামহীন কথা বলে থাকেন। যা ঐ পদে থেকে বলা ভাল নয়। যাইহোক প্রসঙ্গে ফিরে
আসি। এই কলাম যখন লিখছি, তখন টিভির স্ক্রলে দেখলাম গাড়ি ভাঙচুরের খবর।
পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার খবর। আগুন দেয়ার খবর। কার গাড়ি কে
ভাঙে, কে আগুন দেয়। যার গাড়ি সে জানে, তার কত কষ্ট। ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিগুলোর মাথায় হাত। শত শত গাড়ি ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগ হচ্ছে প্রতিটি
রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনে অথবা আগের দিন। যাদের গাড়ির বীমা নেই তারা কার
সাহায্য পাবেন। বীমা কোম্পানি যৌক্তিক কারণেই এগিয়ে আসবে না। রাজনীতির
কারবারিরা কি টাকা দেবেন? এই অসুস্থ রাজনীতির ধারা বাংলাদেশকে কবজা করে
ফেলেছে। ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। পুলিশও বাদ থাকছে না।
রাজনীতিকরা বলে থাকেন জনসেবাই নাকি তাদের মূল উদ্দেশ্য। তাই যদি হয়- তাহলে
তারা জনস্বার্থের কথা ভেবে কোন সমঝোতায় যান না কেন? আসলে তাদের উদ্দেশ্য
অন্য। তারা চান ক্ষমতা। ক্ষমতা মানে অঢেল টাকা। বাংলাদেশের মানুষ তিনটি
শব্দের সঙ্গে কম-বেশি পরিচিত। আর তা হচ্ছে ভ্যাট, ভোট আর লুট। বাংলাদেশ
জুড়ে এখন লুট চলছে। অতীতেও হয়েছে। তবে দিন দিন এর পাল্লা ভারি হচ্ছে। এই
লুট থামাতে সুশীলরাও কথা বলছেন না। বিভাজনের লু-হাওয়া তাদেরকে গ্রাস করেছে।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে কোন ধরনের সমঝোতা যে হবে না তা নিয়ে সবাই
নিশ্চিত। এক নেত্রী অপর নেত্রীকে বিদেশে পাঠাতে চান। যেমনটা করেছিল জরুরি
জমানার সরকার। আখেরে তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। শ্রদ্ধার পরিবর্তে
ঘৃণা যেখানে মূল অস্ত্র সেখানে সমঝোতার কথা বলাও বোকামি বা পাগলামি। দেশটা
কাঁপছে গুলির শব্দে। বারুদের গন্ধ চারদিকে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গুলি
হচ্ছে। হয় পুলিশ করছে- অথবা প্রাইভেট বাহিনী। হালে শিবির কর্মীদের হাতেও
পিস্তল দেখা যাচ্ছে। মাঠ প্রশাসন তটস্থ। পুলিশের মধ্যেও হতাশা। তারা আর
গুলি করতে চায় না। ‘ডিসিপ্লিন ফোর্স’ বিধায় হুকুম তামিল করতে হচ্ছে। কার
বিরুদ্ধে গুলি করবে? কাকে মারবে? দিনের শেষে দেখা যাবে সে তার ভাই কিংবা
বন্ধুকে গুলি করছে। রাজনৈতিক হাঙ্গামায় নিরপরাধ মানুষই মারা যাচ্ছে বেশি।
যদিও রাজনীতির কারবারিরা নিজেদের লোক বলে প্রচার করছেন নিজেদের স্বার্থে।
দেশী-বিদেশী সবাই ক্লান্ত সমঝোতার কথা বলতে বলতে। সমঝোতার পথে সমাধান না
হলে দেশটা কি এভাবেই চলবে। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে গুলি, বোমা আর মানুষ
খুন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। বাংলাদেশও কি সে পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কি
আইভরি কোস্টের পথ ধরছি। এখানে বলে রাখা ভাল, আইভরি কোস্টেও এক সময় উদার
গণতন্ত্র ছিল। অর্থনীতি ছিল চাঙ্গা। বাইরের দুনিয়ায় ভাল ইমেজ ছিল। জাতিগত
দাঙ্গায় দেশটি এখন একদম পঙ্গু। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা শান্তি ফেরাতে
চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত সফল হননি। বাংলাদেশের
শান্তিরক্ষীরাও সেখানে আছেন। বাংলাদেশ যেদিকে যাচ্ছে তাতে আন্তর্জাতিক
শান্তিরক্ষীর প্রয়োজন হবে এমন বলাবলি তো আছেই সচেতন মহলে।
No comments