শিক্ষা-অন্তঃপ্রাণ একজন শিক্ষক
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে ছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও নিজেকে একজন শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন। শিক্ষকতা ছিল তাঁর কাছে নেশার মতো। তাই দেখা যেত, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের সময়ও তিনি প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের যেকোনো একটি কোর্সে নিয়মিত ক্লাস নিতেন, ছাত্রছাত্রীদের দক্ষ ও যোগ্য করে তুলতে নিজের মেধা ও মননের প্রয়োগ ঘটাতেন। তিনি অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। শিক্ষা-অন্তঃপ্রাণ এ মানুষটির সন্তান হওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব। আজ ২৭ জুলাই। ২০০৬ সালের এমন দিনে তিনি আকস্মিকভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না-ফেরার ভুবনে।
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের জন্ম হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় ১৯৪২ সালে। প্রগতিশীল সামাজিক আন্দোলনের অগ্রপথিক হাবিবুর রহমান তাঁর দীর্ঘ ৩৬ বছরের কর্মজীবনের একটি বড় সময় কাটিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, গবেষণা আর সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে। ১৯৯২ সালে নবগঠিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করে স্থায়ীভাবে চলে আসেন সিলেটে। পরবর্তী সময়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে যেমন দায়িত্ব পালন করেছেন, তেমনি ১৯৯৭-২০০১ সাল পর্যন্ত দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা আর সফলতার সঙ্গে পালন করেছেন উপ-উপাচার্য আর উপাচার্যের কঠিন দায়িত্ব। অবসর নেওয়ার পর সিলেটের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যক্তিজীবনে তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। বাবা হিসেবে ছিলেন দায়িত্বশীল। পেশাজীবনে ছিলেন নীতির প্রশ্নে আপসহীন। সিলেটে বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেকে যুক্ত করেছিলেন সিলেটের সব প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে। আটপৌরে গড়নের এই অকুতোভয় মানুষটি সিলেটের যেকোনো প্রগতিশীল সামাজিক আন্দোলনে থাকতেন সামনের কাতারে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় গড়ে ওঠা সিংহবাড়ী আন্দোলনে তাঁর সাহসী ভূমিকা আজও স্মরণীয়। কতিপয় গোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সিলেটের মানুষ যখন ১৯৯৫ সালে কবি শামসুর রাহমানকে সংবর্ধনার আয়োজন করে, তখন তিনিই হন সেই সংবর্ধনা প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক; যদিও বাধার কারণে ওই সংবর্ধনা সভা আর হয়নি। ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পুনঃ তদন্তের দাবিতে সিলেটে যে কমিটি হয়, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সভাপতি হিসেবে এর দায়িত্ব পালন করেন।
স্বপ্ন দেখতেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। তাঁর অসংখ্য লেখায় উঠে এসেছে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপরেখা। তিনি চাইতেন এ দেশের মানুষ হবে অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঋদ্ধ ও পরমতসহিষ্ণু। উদীচী, বৃহত্তর সিলেট ইতিহাস প্রণয়ন পরিষদ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) অসংখ্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল আত্মিক আর আদর্শিক। তাই তো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছুটে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যেকোনো আয়োজনের মধ্যমণি হয়ে। শারীরিক অসু্স্থতার মধ্যেও ছুটে গেছেন উদীচীর অনুষ্ঠানে, শহীদ সোলেমান হলে, সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কিংবা সিলেট বিভাগের যেকোনো কাছের বা প্রত্যন্ত জনপদে।
তাঁর সংস্পর্শে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা দেখেছেন, একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি কতটা সমাজ-সচেতন। তাঁর পাণ্ডিত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ ছাপিয়ে বাইরেও ছড়িয়ে ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা তিনি ব্যয় করতেন সামাজিক বিজ্ঞানসহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা থেকে জ্ঞানচর্চায়। সমাজবিজ্ঞানী হিসেবেও তিনি মৌলিক গবেষণায় রেখেছেন বিশেষ অবদান।
বাংলাদেশের সবচেয়ে আত্মহত্যাপ্রবণ এলাকা ঝিনাইদহের ওপর তিনিই প্রথম নিয়মতান্ত্রিক সামাজিক গবেষণা পরিচালনা করেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত তাঁর মৌলিক গ্রন্থ ১০টি, আর যৌথভাবে সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ছয়টি। তাঁর অধিকাংশ গ্রন্থই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রেফারেন্স বুক হিসেবে ব্যবহূত হয়।
একজন সফল শিক্ষক হিসেবেও মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পরিচিত তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর কাছে। তিনি যখন শ্রেণীকক্ষে বক্তব্য দিতেন, তখন পিনপতন নীরবতা বিরাজ করত। ছাত্রছাত্রীরা তন্ময় হয়ে শুনত তাঁর কথা। দীর্ঘ ৩৬ বছরের শিক্ষকতা জীবনে প্রগতিশীল শিক্ষক বলয়ের মানুষ হয়েও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দলমত-নির্বিশেষে সব ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণতার এক চমৎকার উদাহরণ।
মনে পড়ে ১৯৯৮ সালে একদিনের কথা। তিনি তখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বেশ কয়েকজন ছাত্রকে শাস্তি দেওয়া হয়, যার মধ্যে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কয়েকজন ছাত্রনেতাও ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে যদিও সেই শাস্তি বহুলাংশে মওকুফ করা হয়েছিল, কিন্তু অনেক চাপের মধ্যেও তিনি কারও প্রতি বিশেষভাবে পক্ষপাতিত্ব করেননি। নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এ ধরনের সাহস আর দৃঢ়তা খুব কম উপাচার্যই দেখাতে পেরেছিলেন। তাঁর সময় সিলেটের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটি গড়ে উঠেছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর সেটি হলো আবহমান বাঙালির গর্বের ধন, রক্ত, ঘাম আর সংগ্রামের প্রতীক—শহীদ মিনার।
তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু সিলেটে শিক্ষার বিস্তারে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা আর বহুবিধ কর্মকাণ্ডে মানুষের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণে আছেন তিনি। যেকেনো বিপৎসংকুল পরিবেশে যে মানুষটি সবার আগে দৃশ্যমান থাকতেন, আজ তিনি নেই। দেশকে ভালোবাসতেন তিনি, ভালোবাসতেন এ দেশের মাটি আর মানুষকে। তাই তো মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন মানুষের পাশাপাশি।
এনামুল হাবীব
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বড় ছেলে।
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের জন্ম হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় ১৯৪২ সালে। প্রগতিশীল সামাজিক আন্দোলনের অগ্রপথিক হাবিবুর রহমান তাঁর দীর্ঘ ৩৬ বছরের কর্মজীবনের একটি বড় সময় কাটিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, গবেষণা আর সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে। ১৯৯২ সালে নবগঠিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করে স্থায়ীভাবে চলে আসেন সিলেটে। পরবর্তী সময়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে যেমন দায়িত্ব পালন করেছেন, তেমনি ১৯৯৭-২০০১ সাল পর্যন্ত দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা আর সফলতার সঙ্গে পালন করেছেন উপ-উপাচার্য আর উপাচার্যের কঠিন দায়িত্ব। অবসর নেওয়ার পর সিলেটের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যক্তিজীবনে তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। বাবা হিসেবে ছিলেন দায়িত্বশীল। পেশাজীবনে ছিলেন নীতির প্রশ্নে আপসহীন। সিলেটে বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেকে যুক্ত করেছিলেন সিলেটের সব প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে। আটপৌরে গড়নের এই অকুতোভয় মানুষটি সিলেটের যেকোনো প্রগতিশীল সামাজিক আন্দোলনে থাকতেন সামনের কাতারে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় গড়ে ওঠা সিংহবাড়ী আন্দোলনে তাঁর সাহসী ভূমিকা আজও স্মরণীয়। কতিপয় গোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সিলেটের মানুষ যখন ১৯৯৫ সালে কবি শামসুর রাহমানকে সংবর্ধনার আয়োজন করে, তখন তিনিই হন সেই সংবর্ধনা প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক; যদিও বাধার কারণে ওই সংবর্ধনা সভা আর হয়নি। ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পুনঃ তদন্তের দাবিতে সিলেটে যে কমিটি হয়, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সভাপতি হিসেবে এর দায়িত্ব পালন করেন।
স্বপ্ন দেখতেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। তাঁর অসংখ্য লেখায় উঠে এসেছে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপরেখা। তিনি চাইতেন এ দেশের মানুষ হবে অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঋদ্ধ ও পরমতসহিষ্ণু। উদীচী, বৃহত্তর সিলেট ইতিহাস প্রণয়ন পরিষদ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) অসংখ্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল আত্মিক আর আদর্শিক। তাই তো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছুটে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যেকোনো আয়োজনের মধ্যমণি হয়ে। শারীরিক অসু্স্থতার মধ্যেও ছুটে গেছেন উদীচীর অনুষ্ঠানে, শহীদ সোলেমান হলে, সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কিংবা সিলেট বিভাগের যেকোনো কাছের বা প্রত্যন্ত জনপদে।
তাঁর সংস্পর্শে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা দেখেছেন, একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি কতটা সমাজ-সচেতন। তাঁর পাণ্ডিত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ ছাপিয়ে বাইরেও ছড়িয়ে ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা তিনি ব্যয় করতেন সামাজিক বিজ্ঞানসহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা থেকে জ্ঞানচর্চায়। সমাজবিজ্ঞানী হিসেবেও তিনি মৌলিক গবেষণায় রেখেছেন বিশেষ অবদান।
বাংলাদেশের সবচেয়ে আত্মহত্যাপ্রবণ এলাকা ঝিনাইদহের ওপর তিনিই প্রথম নিয়মতান্ত্রিক সামাজিক গবেষণা পরিচালনা করেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত তাঁর মৌলিক গ্রন্থ ১০টি, আর যৌথভাবে সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ছয়টি। তাঁর অধিকাংশ গ্রন্থই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রেফারেন্স বুক হিসেবে ব্যবহূত হয়।
একজন সফল শিক্ষক হিসেবেও মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পরিচিত তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর কাছে। তিনি যখন শ্রেণীকক্ষে বক্তব্য দিতেন, তখন পিনপতন নীরবতা বিরাজ করত। ছাত্রছাত্রীরা তন্ময় হয়ে শুনত তাঁর কথা। দীর্ঘ ৩৬ বছরের শিক্ষকতা জীবনে প্রগতিশীল শিক্ষক বলয়ের মানুষ হয়েও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দলমত-নির্বিশেষে সব ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণতার এক চমৎকার উদাহরণ।
মনে পড়ে ১৯৯৮ সালে একদিনের কথা। তিনি তখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বেশ কয়েকজন ছাত্রকে শাস্তি দেওয়া হয়, যার মধ্যে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কয়েকজন ছাত্রনেতাও ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে যদিও সেই শাস্তি বহুলাংশে মওকুফ করা হয়েছিল, কিন্তু অনেক চাপের মধ্যেও তিনি কারও প্রতি বিশেষভাবে পক্ষপাতিত্ব করেননি। নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এ ধরনের সাহস আর দৃঢ়তা খুব কম উপাচার্যই দেখাতে পেরেছিলেন। তাঁর সময় সিলেটের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটি গড়ে উঠেছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর সেটি হলো আবহমান বাঙালির গর্বের ধন, রক্ত, ঘাম আর সংগ্রামের প্রতীক—শহীদ মিনার।
তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু সিলেটে শিক্ষার বিস্তারে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা আর বহুবিধ কর্মকাণ্ডে মানুষের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণে আছেন তিনি। যেকেনো বিপৎসংকুল পরিবেশে যে মানুষটি সবার আগে দৃশ্যমান থাকতেন, আজ তিনি নেই। দেশকে ভালোবাসতেন তিনি, ভালোবাসতেন এ দেশের মাটি আর মানুষকে। তাই তো মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন মানুষের পাশাপাশি।
এনামুল হাবীব
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বড় ছেলে।
No comments