পিএইচডি চাই, তবে... by শেখ হাফিজুর রহমান
৬ জুন প্রথম আলোয় প্রকাশিত অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘মাত্র এক হাজার পিএইচডি’ শিরোনামের কলামটি পড়লাম। তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে ওঠেনি। তার কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দায়িত্ব দুটি—এক. জ্ঞান বিতরণ করা, দুই. জ্ঞান সৃষ্টি করা। এই দুটি মূল দায়িত্বের একটি আমরা হয়তো জোড়াতালি দিয়ে পালন করছি, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জ্ঞান বিতরণ করে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা জ্ঞান সৃষ্টি করতে পারছি না। জ্ঞান সৃষ্টি করতে হলে গবেষণা করতে হয়, আর সত্যিকার অর্থে গবেষণা করার জন্য দরকার মাস্টার্স এবং বিশেষ করে পিএইচডি ছাত্রছাত্রী। কাজেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু জ্ঞান সৃষ্টি করছে, তার সবচেয়ে সহজ হিসাব হচ্ছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ছাত্রছাত্রী নেই, বুঝে নিতে হবে সেখানে গবেষণাও নেই।’
ধন্যবাদ যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে তার দৈন্যের চিত্রটি তুলে ধরেছেন। তিনি উল্লেখ করতে ভোলেননি যে এ দৈন্যের মূল কারণ শিক্ষার গুরুত্বের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় উপলব্ধি ও সরকারি বরাদ্দের অভাব। ভারত শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নানা ক্ষেত্রে সক্ষমতার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য তারা শিক্ষাকে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেই ভারত তার জিডিপির চার শতাংশ শিক্ষার জন্য খরচ করছে, অথচ বাংলাদেশ করছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। জাফর ইকবাল যথার্থই নির্দেশ করেছেন, গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকার কারণেই গবেষণা হচ্ছে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেটা অন্যতম প্রধান কাজ, অর্থাৎ নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা, তা আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না।
২০১০ সালের ২৬ জুন প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘মৌলিক গবেষণাশূন্য ১৫ গবেষণাকেন্দ্র’। গবেষণাকেন্দ্রগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ১৫টি গবেষণাকেন্দ্রের জন্য এক শিক্ষাবর্ষে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ২৪ লাখ টাকা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ১৫টি গবেষণাকেন্দ্রের মানসম্পন্ন গবেষণার জন্য এক বছরে সাড়ে ২৪ লাখ টাকা কি পর্যাপ্ত? গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রাপ্ত বরাদ্দ ও ব্যয়ের ব্যাপারে দু-একটি উদাহরণ এখানে প্রাসঙ্গিক হবে। জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় (Washington University in St. Louis) ২০০৬ অর্থনৈতিক বর্ষে গবেষণা করার জন্য ফেডারেল রিসার্চ ফান্ড থেকে ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার লাভ করে। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বার্ষিক বরাদ্দ (Endowment) হচ্ছে ১৪৪ কোটি সিঙ্গাপুর ডলার।
বাংলাদেশের সঙ্গে আমি যুক্তরাষ্ট্র বা সিঙ্গাপুরের মতো ধনী দেশের তুলনা দিচ্ছি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ যে খুবই দরকার, সেটা বোঝার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ করলাম। আর জাফর ইকবাল তো উল্লেখই করেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পিএইচডি শিক্ষার্থীকে মাসে ১২ হাজার রুপি করে বৃত্তি দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে গবেষণা করার জন্য আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু বাংলাদেশে, প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫টি গবেষণাকেন্দ্রের জন্য বার্ষিক বরাদ্দ সাড়ে ২৪ লাখ টাকা। তাহলে একটি গবেষণাকেন্দ্রের ভাগে দেড় লাখ টাকাও পড়ে না। এই টাকা দিয়ে গবেষণা করাই তো সম্ভব নয়, মানসম্পন্ন ও মৌলিক গবেষণা তো দূরের কথা! যাঁরা গবেষণার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা স্বীকার করবেন যে মানবিক বা সামাজিক বিজ্ঞানবিষয়ক কোনো একটি গবেষণাকেন্দ্রের মানসম্পন্ন গবেষণার জন্য বছরে ২৪ লাখ টাকা কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়। সেখানে ১৫টি গবেষণাকেন্দ্রের জন্য কীভাবে সাড়ে ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়? আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণার জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরিসহ যে সুযোগ-সুবিধা দরকার, তার জন্য প্রয়োজন কোটি কোটি টাকা।
বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ, এ জন্য গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। এ কথা বলে গবেষণার মতো মৌলিক বিষয় এড়ানো যাবে না। এ বছর এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার বিশাল বাজেট দেওয়া হয়েছে এবং রাজস্ব বাজেটের প্রায় ৫৮ শতাংশ ব্যয় হবে সিভিল প্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খাতের মতো অনুৎপাদনশীল খাতে। এসব অনুৎপাদনশীল খাতের ব্যয় কমিয়ে ৫০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা কি শুধু গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা যায় না? মৌলিক গবেষণা তো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করবে; তাতে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এগোবে, ত্বরান্বিত হবে উন্নয়ন।
শুধু পিএইচডি চাই না, মানসম্পন্ন পিএইচডি চাই। শুধু গবেষণার খাতিরে গবেষণা চাই না; এমন গবেষণা চাই, যাতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য ও চিত্রকলা এগিয়ে যেতে পারে। কেননা, এখন অনেক ছাত্রছাত্রী, এমনকি শিক্ষকের মধ্যেও এমন প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে যে তারা শুধু নামের আগে ডক্টর জুড়ে দেওয়ার জন্য পিএইচডি করতে চান। মৌলিক কোনো গবেষণা বা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করার জন্য তাঁরা পিএইচডি করতে চান না। সরকারি অনেক কর্মকর্তা, এমনকি পুলিশ কর্মকর্তা পর্যন্ত এখন পিএইচডির দিকে ঝুঁকছেন। আর ‘অতি সহজে’ পিএইচডি করে যাঁরা নামের আগে ডক্টর জুড়ে দিতে চান, তাঁরা ‘সহজ ও সস্তা’ সুপারভাইজার খোঁজেন। যে সুপারভাইজার খুব বেশি খাটাবেন না, যাঁর অধীনে খুব একটা পড়াশোনা না করেই ডক্টর হয়ে যাওয়া যাবে, অধিকাংশ সম্ভাব্য পিএইচডিধারী সে ধরনের সুপারভাইজারের সন্ধানে থাকেন এবং পেয়েও যান। ফলে শত সীমাবদ্ধতার পরও প্রতিবছর কিছু কিছু ডক্টরের সংখ্যা বাড়ে; কিন্তু মৌলিক গবেষণা হয় না, নতুন জ্ঞানও বাড়ে না।
এত এত বিশ্ববিদ্যালয়, এত এত ডক্টর, অথচ অজপাড়াগাঁয়ের অশিক্ষিত আরজ আলী মাতব্বরের মতো একটু যুক্তিবোধও যখন তাঁদের মধ্যে দেখতে পাই না, তখন খুবই লজ্জিত হই। সে জন্য প্রত্যাশা করি, রাষ্ট্র গবেষণার গুরুত্ব বুঝে তাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিক, যাতে মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হতে পারে। আর যুক্তিবোধসম্পন্ন, শিক্ষা-অনুরাগী ও কর্মঠ গবেষকেরাই যেন মৌলিক গবেষণার মধ্য দিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন। নইলে আমাদের মৌলিক গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির দৈন্য কোনোভাবেই ঘুচবে না।
শেখ হাফিজুর রহমান: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
hrkarzon@yahoo.com
ধন্যবাদ যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে তার দৈন্যের চিত্রটি তুলে ধরেছেন। তিনি উল্লেখ করতে ভোলেননি যে এ দৈন্যের মূল কারণ শিক্ষার গুরুত্বের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় উপলব্ধি ও সরকারি বরাদ্দের অভাব। ভারত শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নানা ক্ষেত্রে সক্ষমতার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য তারা শিক্ষাকে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেই ভারত তার জিডিপির চার শতাংশ শিক্ষার জন্য খরচ করছে, অথচ বাংলাদেশ করছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। জাফর ইকবাল যথার্থই নির্দেশ করেছেন, গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকার কারণেই গবেষণা হচ্ছে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেটা অন্যতম প্রধান কাজ, অর্থাৎ নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা, তা আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না।
২০১০ সালের ২৬ জুন প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘মৌলিক গবেষণাশূন্য ১৫ গবেষণাকেন্দ্র’। গবেষণাকেন্দ্রগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ১৫টি গবেষণাকেন্দ্রের জন্য এক শিক্ষাবর্ষে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ২৪ লাখ টাকা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ১৫টি গবেষণাকেন্দ্রের মানসম্পন্ন গবেষণার জন্য এক বছরে সাড়ে ২৪ লাখ টাকা কি পর্যাপ্ত? গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রাপ্ত বরাদ্দ ও ব্যয়ের ব্যাপারে দু-একটি উদাহরণ এখানে প্রাসঙ্গিক হবে। জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় (Washington University in St. Louis) ২০০৬ অর্থনৈতিক বর্ষে গবেষণা করার জন্য ফেডারেল রিসার্চ ফান্ড থেকে ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার লাভ করে। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বার্ষিক বরাদ্দ (Endowment) হচ্ছে ১৪৪ কোটি সিঙ্গাপুর ডলার।
বাংলাদেশের সঙ্গে আমি যুক্তরাষ্ট্র বা সিঙ্গাপুরের মতো ধনী দেশের তুলনা দিচ্ছি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ যে খুবই দরকার, সেটা বোঝার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ করলাম। আর জাফর ইকবাল তো উল্লেখই করেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পিএইচডি শিক্ষার্থীকে মাসে ১২ হাজার রুপি করে বৃত্তি দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে গবেষণা করার জন্য আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু বাংলাদেশে, প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫টি গবেষণাকেন্দ্রের জন্য বার্ষিক বরাদ্দ সাড়ে ২৪ লাখ টাকা। তাহলে একটি গবেষণাকেন্দ্রের ভাগে দেড় লাখ টাকাও পড়ে না। এই টাকা দিয়ে গবেষণা করাই তো সম্ভব নয়, মানসম্পন্ন ও মৌলিক গবেষণা তো দূরের কথা! যাঁরা গবেষণার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা স্বীকার করবেন যে মানবিক বা সামাজিক বিজ্ঞানবিষয়ক কোনো একটি গবেষণাকেন্দ্রের মানসম্পন্ন গবেষণার জন্য বছরে ২৪ লাখ টাকা কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়। সেখানে ১৫টি গবেষণাকেন্দ্রের জন্য কীভাবে সাড়ে ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়? আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণার জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরিসহ যে সুযোগ-সুবিধা দরকার, তার জন্য প্রয়োজন কোটি কোটি টাকা।
বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ, এ জন্য গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। এ কথা বলে গবেষণার মতো মৌলিক বিষয় এড়ানো যাবে না। এ বছর এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার বিশাল বাজেট দেওয়া হয়েছে এবং রাজস্ব বাজেটের প্রায় ৫৮ শতাংশ ব্যয় হবে সিভিল প্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খাতের মতো অনুৎপাদনশীল খাতে। এসব অনুৎপাদনশীল খাতের ব্যয় কমিয়ে ৫০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা কি শুধু গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা যায় না? মৌলিক গবেষণা তো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করবে; তাতে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এগোবে, ত্বরান্বিত হবে উন্নয়ন।
শুধু পিএইচডি চাই না, মানসম্পন্ন পিএইচডি চাই। শুধু গবেষণার খাতিরে গবেষণা চাই না; এমন গবেষণা চাই, যাতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য ও চিত্রকলা এগিয়ে যেতে পারে। কেননা, এখন অনেক ছাত্রছাত্রী, এমনকি শিক্ষকের মধ্যেও এমন প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে যে তারা শুধু নামের আগে ডক্টর জুড়ে দেওয়ার জন্য পিএইচডি করতে চান। মৌলিক কোনো গবেষণা বা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করার জন্য তাঁরা পিএইচডি করতে চান না। সরকারি অনেক কর্মকর্তা, এমনকি পুলিশ কর্মকর্তা পর্যন্ত এখন পিএইচডির দিকে ঝুঁকছেন। আর ‘অতি সহজে’ পিএইচডি করে যাঁরা নামের আগে ডক্টর জুড়ে দিতে চান, তাঁরা ‘সহজ ও সস্তা’ সুপারভাইজার খোঁজেন। যে সুপারভাইজার খুব বেশি খাটাবেন না, যাঁর অধীনে খুব একটা পড়াশোনা না করেই ডক্টর হয়ে যাওয়া যাবে, অধিকাংশ সম্ভাব্য পিএইচডিধারী সে ধরনের সুপারভাইজারের সন্ধানে থাকেন এবং পেয়েও যান। ফলে শত সীমাবদ্ধতার পরও প্রতিবছর কিছু কিছু ডক্টরের সংখ্যা বাড়ে; কিন্তু মৌলিক গবেষণা হয় না, নতুন জ্ঞানও বাড়ে না।
এত এত বিশ্ববিদ্যালয়, এত এত ডক্টর, অথচ অজপাড়াগাঁয়ের অশিক্ষিত আরজ আলী মাতব্বরের মতো একটু যুক্তিবোধও যখন তাঁদের মধ্যে দেখতে পাই না, তখন খুবই লজ্জিত হই। সে জন্য প্রত্যাশা করি, রাষ্ট্র গবেষণার গুরুত্ব বুঝে তাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিক, যাতে মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হতে পারে। আর যুক্তিবোধসম্পন্ন, শিক্ষা-অনুরাগী ও কর্মঠ গবেষকেরাই যেন মৌলিক গবেষণার মধ্য দিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন। নইলে আমাদের মৌলিক গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির দৈন্য কোনোভাবেই ঘুচবে না।
শেখ হাফিজুর রহমান: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
hrkarzon@yahoo.com
No comments