কালের কণ্ঠের সেমিনার- এইচআইভি/এইডস্:প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা ও মানবাধিকার
গত ২৪ নভেম্বর ২০১০ কালের কণ্ঠ, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম, বাংলাদেশ (এইচইজেএফবি)-এর যৌথ আয়োজনে 'এইচআইভি/এইডস্ : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা ও মানবাধিকার' শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কালের কণ্ঠের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এ গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য কিছুটা সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হলো
আবেদ খান : আজকের এ গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা। 'এইচআইভি/এইডস্ : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা ও মানবাধিকার'_এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে আপনাদের অভিমত সুনিশ্চিতভাবে একটি সুপারিশমালা তৈরিতে, আমাদের চিন্তা-ভাবনায়, জনমানুষের কাছে এর বার্তা পেঁৗছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি। আমরা কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে অনুভব করি, আমাদের একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। এ দায়বদ্ধতা শুধু সংবাদপত্রের কর্মী হিসেবে নয়, সামাজিক কর্মী হিসেবেও। প্রত্যেক মানুষের দায়বদ্ধতা কোনো না কোনোভাবে থাকে এবং এর প্রতিফলন ঘটে। এটি আরো সুবিন্যস্ত ও সুন্দর হয়, যদি কোনো সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ও কাঠামোর ভেতর দিয়ে এর প্রতিফলন ঘটানো যায়। আমি মনে করি, আজকের এ বিষয়টি নিয়ে আমরা সুদীর্ঘ আলোচনা করতে এবং এর জন্য একটি সুপারিশমালা তৈরি করতে পারব। আজকের এ আয়োজনে কালের কণ্ঠের সঙ্গে আছে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম, বাংলাদেশ (এইচইজেএফবি)। এ দুটি সংগঠনই এইডস্ প্রতিরোধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। আবার ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস। অর্থাৎ আমরা মানবাধিকারের সঙ্গে এ মারণব্যাধিকে কিভাবে সম্পর্কযুক্ত করছি সেটা ভাবার বিষয়। অনেকে মনে করেন, এটি হয়তো মানবাধিকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। কিন্তু আমরা তা মনে করি না। এটি অবশ্যই সম্পর্কযুক্ত। কারণ মানুষের যে অধিকার তৈরি হয়, তা তার জন্মগত। আমি একটি স্মৃতিচারণ থেকে বিষয়টি তুলে ধরছি। বাংলাদেশে প্রথম যখন একটি লোককে এইডস্ রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হলো, তখন তাকে অত্যন্ত সংগোপনে যে হাসপাতালে রাখা হয়েছিল, ধানমণ্ডির একটি হাসপাতালে, তা জানতে পেরে মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত হাসপাতালটি তছনছ করে দেওয়া হয়। একটি মানুষ যখন মর্মান্তিকভাবে এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, তখন আমাদের সামাজিক আচরণ কত নির্দয় ও নিষ্ঠুর হয়ে পড়ে_ওই ঘটনাটি তার প্রমাণ।
আমাদের যে অন্ধকারাচ্ছন্ন সামাজিকব্যবস্থা, চিন্তা-ভাবনা, জীবন ও মূল্যবোধ_সব কিছুর ভেতর দিয়ে আমরা দেখি, এ ব্যাধিকে আমরা মমতার সঙ্গে নিতে পারি না। আরো দেখি, আমাদের ভেতরে একইভাবে যে অমানবিক দিকটি কাজ করে, তা হলো, আমাদের যেকোনো পরিবারে যদি কেউ মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী হয় তবে মুহূর্তের মধ্যে তার প্রতি পরিবারের সবার আচরণ কখনো করুণার, কখনো নিষ্ঠুরতার হয়ে পড়ে। একই ব্যাপার ঘটে এইডস্ রোগীর ক্ষেত্রে এবং সেটা হয় আরো মর্মান্তিক। যখন প্রথম এইডসে আক্রান্তের বিষয়টি একজন বিখ্যাত নায়ক প্রকাশ্যে জানালেন, তখন সারা পৃথিবী মুহূর্তের মধ্যে ওই লোকটির প্রতি আঙুল তুলে দাঁড়াল। আজকের এ পৃথিবীটা কিন্তু সে রকম নেই, পাল্টে যাচ্ছে। এখন মানবাধিকারের বিষয়টি ক্রমান্বয়ে অধিকারে রূপান্তরিত হচ্ছে।
সমকামিতার বিষয়টিকে একসময় যেভাবে দেখা হতো, আন্তর্জাতিকভাবে আজ কিন্তু সেভাবে দেখা হয় না। যাদের আমরা বৃহন্নলা বলি, তাদের বিষয়টিও কিন্তু সমাজে ক্রমান্বয়ে স্বীকৃতি লাভ করছে। অর্থাৎ আমরা একটি জাগ্রত সময়ের সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছি। পরিপ্রেক্ষিতটা যদি আমরা এভাবে বিবেচনা করি, একে সামনে রেখে অগ্রসর হই, আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা, আমাদের আলোচনা, বিবেচনা, আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে একটি প্রকোষ্ঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের পথ খুঁজে পাবো।
এ প্রসঙ্গে আর একটি কথা বলা যৌক্তিক হবে। সেটা হচ্ছে, পৃথিবীতে সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন। এসব কাজে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অর্থ এসেছে বা আসছে এনজিওর মাধ্যমে। এ অর্থের যথাযথ ব্যবহার কতটা হচ্ছে তা আমি জানি না। সেই অর্থ কিভাবে আসছে তা-ও কিন্তু আমরা স্বচ্ছভাবে জানতে পারছি না। এটা হচ্ছে একটা দুর্বল দিক। অনেকেই নিজেদের নাম গোপন করে এ সাহায্য বা দান করছে, তাদের সেই দান আমরা কতটা হৃদয়ে ধারণ এবং মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারছি_সেটাও কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে। এখানে সরকারের প্রতিনিধি আছেন, বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধি আছেন, সমাজকর্মী আছেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিভাবান মানুষ আছেন। প্রশ্ন জাগে, এইডস্ নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে, কিন্তু সেগুলো কতটা সমন্বি্বতভাবে হয়েছে, এর সুফল তৃণমূল পর্যায়ে কতটা পেঁৗছেছে? যারা এইডস্ আক্রান্ত আমরা সত্যিকার অর্থে তাদের কাছে এটিকে নিয়ে যেতে পারছি কি না, তাদের সহায়তা করতে পারছি কি না_এটা কিন্তু নির্ভর করবে আমাদের কার্যক্রম ও চিন্তা-ভাবনার ওপর।
এ গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন অঙ্গন থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ জানাই এবং আপনাদের দায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি। আমি বিশ্বাস করি, আজকে আমরা নিশ্চয় এমন কিছু চিন্তা-ভাবনা উপহার দিতে পারব, যার দ্বারা দেশের মানুষ ও সমাজ উপকৃত হবে, পৃথিবীকে একটি নতুন পথ দেখাবে।
যত ক্ষুদ্র রাষ্ট্রই হোক বাংলাদেশ কিন্তু ক্রমান্ব্বয়ে জাগছে, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাগছে। অন্ধকার যুগকে ক্রমান্ব্বয়ে অপসারণ করার জন্য আমরা উদ্যোগী হচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষ এখন অত্যন্ত সচেতন। রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে এমন সচেতন মানুষ পৃথিবীর কম দেশেই আছে।
শেষে একটি কথা বলি, আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে ভালো মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু তাঁরা সংগঠিত নন। অন্যদিকে কমসংখ্যক অসৎ মানুষ কিন্তু সংগঠিত। এ জন্যই তারা সৎ-ভালো মানুষদের নানাভাবে প্রতারিত করতে পারছে, তাঁদের বোধকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারছে। কাজেই আমরা এ বৈঠক থেকে, আমাদের নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্র থেকে ওই অন্ধকার অপসারণের কাজটি শুরু করব। এ আয়োজনে আপনাদের অংশগ্রহণের জন্য আমি আবারও কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং শুভ কামনা করছি। আমাদের এ বৈঠক সফল হোক, সুন্দর হোক। আমি সঞ্চালকের দায়িত্বটি অর্পণ করছি ন্যাশনাল এইডস্/এসটিডি প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. হাসান মাহমুদের কাছে।
ডা. হাসান মাহমুদ : সবাইকে স্বাগত। আজকের গোলটেবিল বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম হিরুকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার অনুরোধ করছি।
আনিসুল ইসলাম হিরু : সবাইকে শুভেচ্ছা। আমরা বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটিতে ১৯৯৬ সাল থেকে কাজ শুরু করেছি এমএসএম ও হিজড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে। আমরা প্রায়ই দেখি, এ জনগোষ্ঠী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে নানাভাবে সুবিধাবঞ্চিত। এদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। আমরা অনেকেই এমএসএম ও হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য দোষারোপ করি। কিন্তু এরা কেন এ রকম_আমরা কি তা ভেবে দেখেছি? দেখিনি। এ জনগোষ্ঠীকে আমরা এ পথে নামতে বাধ্য করেছি। ছোটবেলা থেকেই পরিবার যদি এদের যত্ন নিত, সমাজ যদি এদের ভালো একটা অবস্থায় নিয়ে যেতে চাইত তাহলে ব্যাপারটা এ রকম হতো না। এদের শিক্ষা দিতে পারিনি, কিছুই দিতে পারিনি। যার জন্য এরা পরিবার, সমাজ ও দেশের প্রতিটি জায়গায় বঞ্চিত হয়েছে। আমি আশা করব, আজকের এ বৈঠক থেকে তাদের কথা আমরা সমাজের সবার কাছে ইতিবাচকভাবে বলব। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব কিছু যেন আমরা নিশ্চিত করতে পারি_এটুকুই আপনাদের কাছে আমার বিশেষ চাওয়া।
আজকের এ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো, মিডিয়ার সঙ্গে বিষয়টির সম্পৃক্ততা আরো বাড়ানো এবং এমএসএম ও হিজড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আমরা যে কাজ করছি, তাদের কথা ভাবছি_তা সিভিল সোসাইটি যাতে পজিটিভভাবে নেয় সে প্রচেষ্টা চালানো। আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি কালের কণ্ঠ ও হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম, বাংলাদেশ (এইচইজেএফবি)-কে, যারা আমাদের সঙ্গে এ আয়োজনে যুক্ত হয়েছে। এ আয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মানুষের জন্য এবং ইউনেসকোকেও।
ডা. হাসান মাহমুদ : এখন ইউএনএইডস-বাংলাদেশের সামাজিক আন্দোলন বিভাগের উপদেষ্টা ডা. মনির আহমেদকে বক্তব্য রাখার অনুরোধ করছি।
ডা. মনির আহমেদ : এমএসএম, টিজি বা ট্রান্সজেন্ডার (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর সেবা ও মানবাধিকার_এ দুটি দিক নিয়ে আমি এখানে কথা বলতে চাই, যা কি না এ বছরের বিশ্ব এইডস্ দিবসের থিমের সঙ্গেও মিলে যায়। আমরা জানি, বিশ্ব এইডস্ দিবসের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে এইচআইভি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া, এ রোগে যারা মারা গেছে তাদের স্মরণ করা এবং ভবিষ্যতে এইচআইভির বিভিন্ন প্রোগ্রামকে সক্রিয় করা। সে হিসেবে আজকের বৈঠকটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও অর্থপূর্ণ।
২০০৪ সালের একটি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ এমএসএম আছে এবং টিজি জনগোষ্ঠী ১০ থেকে ১৫ হাজার। আমরা জানি, বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেশি না হলেও এর ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার অনেক বেশি। আমরা বিশেষ জনগোষ্ঠী, যাদের মধ্যে এ রোগের ঝুঁকি আছে, তাদের নিয়ে প্রোগ্রাম করছি। এটা সত্যিকার অর্থেই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কাছে বেশি অর্থ নেই। যতটুকু অর্থ ও সম্পদ আছে তা দিয়ে ফোকাস প্রোগ্রাম করাটা বিশেষ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে টিজিসহ এমএসএম জনগোষ্ঠী অবশ্যই অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ। এ জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে আগে সরকারের অর্থ কম ছিল এবং আমরা এ-ও জানি, বাংলাদেশের সেক্টর প্রোগ্রাম যেটা, সেটা মুখথুবড়ে পড়ে আছে। সেটা সচল করার জন্য সরকার ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক চেষ্টা করছে। এ জনগোষ্ঠীকে সেই প্রোগ্রামের আওতায় আনার বিশেষ প্রয়োজন আছে। আর গ্লোবাল ফান্ডের আওতায় আইসিডিডিআর,বি সম্প্রতি যে প্রোগ্রামটি চালু করেছে সেটাই আসলে বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীকে কভার করার দায়িত্ব নিয়েছে। সেদিক থেকে ২০০৪ সালে যেখানে কভারেজ ছিল ১৭ শতাংশ, তা এখন প্রায় ৩০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে এটাও ইউনিভার্সাল অ্যাকসেসের তুলনায় যথেষ্ট নয়।
আর অধিকার নিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান পরিষ্কারভাবে বলেছে, আমাদের যেকোনো ওরিয়েন্টেশনই থাকুক না কেন_ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সরকার সবার জন্য সব রকমের অধিকার নিশ্চিত করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে এটা কোনোভাবেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সে অধিকার ভোগ করতে পারেনি। এটা নিয়ে সিভিল সোসাইটি ও মিডিয়াগুলোর কাজ করার প্রয়োজন আছে। পাশ্চাত্যে কিন্তু এ ব্যাপারে মানুষের অনেক বেশি আন্ডারস্ট্যান্ডিং বেড়েছে। আমাদের দেশে সেটা বাড়েনি বরং গত ছয় মাসে এমএসএম প্রোগ্রাম বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন রকম লেখালেখি আমরা পড়েছি!
ডা. হাসান মাহমুদ : এবার কথা বলবেন আইসিডিডিআর,বির গবেষক ডা. তাসনিম আজিম।
ডা. তাসনিম আজিম : আমি ডা. মনিরের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলার চেষ্টা করব। ২০০৪ সালে যে এস্টিমেট করা হয়েছিল, সেটার ভিত্তি ছিল খুবই ক্ষুদ্র জরিপ। এমএসএম ও হিজড়ার ওপর বাংলাদেশে জরিপ কিন্তু খুবই কম। এই প্রথম এ বছর আমরা দেশব্যাপী একটা জরিপ করার চেষ্টা করেছি। কেননা প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যাদের নিয়ে আমরা কাজ করব, আগে ধারণা দরকার যে তারা কতজন আছে, কোথায় আছে, ঝুঁকিগুলো কী, আমাদের কোথায় যাওয়া উচিত? কারণ আমাদের আর্থিক ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। এ জরিপে আমরা বাংলাদেশের সব জেলায় এবং কিছু উপজেলায়ও যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা অবশ্য মাঠপর্যায়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে, এলাকা খুঁজে বের করে এটা করি। তবে মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে তো দেখতে পারি না যে কয়জন আছে! এ ক্ষেত্রে এখানে প্রচুর সীমাবদ্ধতা আছে। তাই এ হিসাবের বাইরেও আরো এমএসএম থাকা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। এ জরিপের এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী সারা বাংলাদেশে এমএসএম আছে প্রায় এক লাখ ৪৩ হাজার আর হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার।
আইসিডিডিআর,বি মূলত পার্টনারের সহযোগিতায় এ কাজটি করছে। আমাদের মূল পার্টনার হচ্ছে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ও লাইট হাউস। তাদের সহযোগিতায় আমরা বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা কভার করব। এ প্রোগ্রামের প্রায় পুরোটাই স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। এইচআইভি প্রতিরোধ ও সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা। প্রায় ২৮ হাজার ৯০০ এমএসএম ও চার হাজার হিজড়াকে আমরা এইডস্ প্রতিরোধে চিকিৎসা, এসটিআই চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করব_এটাই আমাদের লক্ষ্য।
ডা. হাসান মাহমুদ : এবার আমি যাচ্ছি বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমেদের কাছে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এমএসএম ও হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছেন।
সালেহ আহমেদ : ধন্যবাদ। আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে এমএসএম ও হিজড়াদের নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তখন আমাদের কোনো সাপোর্ট ছিল না। ওই সময়টা আমরা দুজন স্টাফ নিয়ে শুরু করি, এখন প্রায় ৬০০ স্টাফ কাজ করছেন। এ মুহূর্তে আমরা যথেষ্ট খুশি যে গ্লোবাল ফান্ডের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছি। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি মানবাধিকারের বিষয়টিও যুক্ত করা জরুরি। কারণ তথ্য ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য যে মাঠকর্মীরা মাঠে যাবেন, তাঁরাই নানা হয়রানি ও প্রতিবন্ধকতার জন্য ভালোমতো কাজ করতে পারছেন না। তাই মানবাধিকার যদি নিশ্চিত না করা যায় তবে স্বাস্থ্যসেবাটা আমরা যথাযথভাবে দিতে পারব না। আপনারা হয়তো জানেন, ইউএনএইডস ২০০৬-০৭ সালে একটা স্টাডি করেছে এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নের ২০টি রাষ্ট্রে। স্টাডিতে তারা দেখেছে, যেখানে এমএসএম বা হিজড়াদের সুন্দর অনুকূল সামাজিক পরিবেশ রয়েছে, সেখানে এ জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশই স্বাস্থ্যসেবা নিতে গেছে। কিন্তু যেখানে অনুকূল সামাজিক পরিবেশ নেই, বৈষম্য আছে, সেখানে ২০ শতাংশও যায়নি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারটা তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যসেবা ও মানবাধিকার তাই সমান্তরালভাবে যেতে হবে।
আরেকটা বিষয় বলতে চাই, আলোচকরা বলেছেন, অনেক ফান্ড আসছে এবং কাজ করার সুযোগ আছে। আমি শুধু এটুকুই বলব, যে প্রোগ্রামটা আমরা করছি সেখানে এক লাখ ৪০ হাজার এমএসএমের মাত্র ২২ শতাংশ কভার করছি। আর হিজড়াদের ক্ষেত্রে সেটা ৭০ শতাংশের মতো। আমরা যদি ইউনিভার্সাল অ্যাকসেসের কথা চিন্তা করি সে ক্ষেত্রে এটা ৬০ শতাংশের মতো হওয়া দরকার। তাই এখনো আমাদের অনেক বেশি কাজ করার সুযোগ ও অবকাশ রয়ে গেছে।
ডা. হাসান মাহমুদ : আমি এ মুহূর্তে সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নীর কাছে যেতে চাই।
শাহনাজ মুন্নী : আমি আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই। আমি মিডিয়ায় প্রায় ১৫ বছর ধরে কাজ করছি। যাদের আপনারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বলছেন, আমাদের সমাজে পুরুষ সমকামী, হিজড়া_এ টার্মগুলো ব্যবহার করতেই মনে হয় আমরা এক ধরনের সংকোচ ও দ্বিধাবোধ করি। এ সমাজের অস্তিত্ববান মানুষ হিসেবে আমরা তাদের কতটা মূল্যায়ন করি? মনে হয় যেন এইডসের কথা বললেই আসবে এমএসএম বা হিজড়া জনগোষ্ঠীর কথা, যৌনকর্মীদের কথা। এইডসের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়া যেন তাদের জীবনের আর কোনো দিক নেই। এ রকম একটা ব্যাপার কিন্তু আমাদের মিডিয়া, শিল্প-সাহিত্য বা আমাদের চিন্তা-ভাবনার জায়গাগুলোয় আছে। একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে তাদের যে সামাজিক অধিকার, তা থেকে বঞ্চনার জায়গাগুলো নিয়ে বেশি কাজ হয়েছে কি না তা দেখতে হবে। এখানে আরো কাজ করার বিষয় আছে বলে আমি মনে করি। আমরা স্বীকারই করতে চাই না, সমাজে এ ধরনের জনগোষ্ঠী আছে বা থাকলেও আমরা যেন অনেকটা উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে থাকি, চারদিকে তাকাই না, যেন তাদের অবজ্ঞা করি। এ মনোভাবের পরিবর্তন করতে হবে। দ্বিতীয়ত বলব, আমাদের মিডিয়াগুলো এখনো খুব বেশি রাজনীতি ও অপরাধমূলক বিষয়কেন্দ্রিক। এ জনগোষ্ঠীর কথা তখনই আসে, যখন তাদের কোনো অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়। আলাদাভাবে তাদের যে অধিকার_স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা কর্মসংস্থান_তা নিয়ে কিন্তু আমরা খুব একটা কথা বলি না। মানবাধিকার সবার জন্যই সমান থাকা উচিত। মিডিয়ার তো অবশ্যই এ ব্যাপারে একটা ভূমিকা আছে। জনমত ও সচেতনতা তৈরিতে মিডিয়া সাহায্য করে। আমি আমার জায়গা থেকে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরো কাজ করার চেষ্টা করব।
ডা. হাসান মাহমুদ : এ পর্যায়ে ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার ডা. নাদিয়া ফারহিন রহমানের কাছে কিছু শুনতে চাই।
ডা. নাদিয়া ফারহিন রহমান : এইচআইভি প্রতিরোধে আমরা প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করছি বন্ধুর সঙ্গে। আমরা চার হাজার ৮৫০ জনকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। গত বছর এদের মধ্যে এক হাজার ৬৮৯ জনকে আমরা টেস্ট করিয়েছি। এর মধ্যে আটজন এইডস্ আক্রান্ত পাওয়া গেছে। যার শতকরা হার মাত্র শূন্য দশমিক ৪৮ ভাগ। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে যেখানে এত বেশি রোগ আছে সেখানে কেন আমরা মাত্র শূন্য দশমিক ৪৮ ভাগকে নিয়ে কাজ করব? তার মানে আমরা দেড় লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র তিন শতাংশকে নিয়ে কাজ করতে পেরেছি, বাকি রয়ে গেছে ৯৭ শতাংশ; যাদের আমরা দেখতে পারিনি যে তারা আক্রান্ত কি না। এ ৯৭ শতাংশের মধ্যেও এমএসএম আচরণ রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা কিন্তু যৌন আচরণ দিয়ে তাদের সংজ্ঞায়িত করি। আমরা তাদের মানুষ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করি না। আর তাদের সঙ্গে জড়িত আরো অনেকের কথা, যেমন তাদের রেগুলার সেঙ্ পার্টনার যারা আছে, তাদের কথা কিন্তু ভুলে যাই। তাই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বলতে আমরা খুব সীমাবদ্ধ সংখ্যায় চলে আসছি। এর ফলে বেশ বড় একটা সংখ্যা এইচআইভি প্রতিরোধের আওতার বাইরে রয়ে যাচ্ছে।
আরেকটি কথা, আমরা যারা ডোনার হিসেবে কাজ করছি, তারা কী করছি? আমাদের চিন্তার আওতা কিন্তু আজ থেকে তিন বা পাঁচ বছরের মধ্যে। তার পরে কী? আজ কেউ যদি টেস্টে নেগেটিভ হয়, এর অর্থ এই নয় যে পাঁচ বছর পরও সে টেস্টে নেগেটিভ হবে। পজিটিভও হতে পারে। তাহলে আমরা আমাদের চিন্তা-ভাবনা বা প্রোগ্রামগুলো কি সেইভাবে সাজাচ্ছি যে আসলেই পাঁচ বছর পরের অবস্থা কী হবে?
ডা. হাসান মাহমুদ : এবার আমি বাঁধন হিজড়া সংঘের নির্বাহী পরিচালক পিংকি সিকদারের কাছে তাঁর সামাজিক অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইছি।
পিংকি সিকদার : এইচআইভি/এইডস্ আসার পর এ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সবাই ভাবছে, কাজ করার চেষ্টা করছে। আমি বলব, এ জনগোষ্ঠী কিভাবে তার পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাবে_এটা নিয়ে কাজ করা দরকার। হিজড়া হওয়ায় তারা মা-বাবার কাছে স্বীকৃতি পায় না, পরিবারের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। ডাক্তারের কাছে গেলে সম্মানজনকভাবে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। টাকা দিয়ে চিকিৎসা করানোর পরও ভালো আচরণ ও চিকিৎসা পাওয়া যায় না। হিজড়া হলে কেউ বাড়ি ভাড়াও দিতে চায় না। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা, আমাদের অফিস নেওয়ার জন্য এক জায়গায় সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে ছিল, কিন্তু হিজড়া শোনার পরই তারা প্রত্যাখ্যান করল। হিজড়াদের প্রতি সমাজের এ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সরকার বা এনজিওগুলোর কাজ করা দরকার। যেখানে আমার নিজের স্বীকৃতিই নেই সেখানে এইডস্্ হলে আমরা কী করব, কী করে ঠেকাব? কিছু লোক যাদের পজিটিভ আমরা ধরতে পারছি, তাদের সঙ্গে যখন কাউন্সেলিং করছি তখন তারা বলেছে, আমার তো স্বীকৃতিই নেই, আমার এইডস্ হলেই কি, না হলেই বা কি! আমি বলব, এইচআইভি প্রতিরোধের পাশাপাশি আমরা যে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি_তা নিয়েও আপনাদের কাজ করা দরকার।
ডা. হাসান মাহমুদ : এ পর্যায়ে আমি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রাইটস) মহুয়া লেয়াকে কিছু বলার অনুরোধ করব। পিংকি সিকদার তাঁর যেসব অভিজ্ঞতার কথা বললেন সে বিষয়ে আপনাদের কোনো কার্যক্রম বা চিন্তা-ভাবনা আছে কি না?
মহুয়া লেয়া : মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে অধিকার ও সুশাসন নিয়ে কাজ করে। সে অধিকার মানুষের অধিকার, সে মানুষ যাই হোক না কেন, তার জন্ম যেখানেই হোক না কেন, তার ধর্মবিশ্বাস, যৌন আচরণ, ভাষা, জাতীয়তা যা-ই হোক না কেন, তারই অংশ হিসেবে আমরা বন্ধু, বাঁধন হিজড়া সংঘ_এ রকম আরো অনেক কমিউনিটি বেইজড অর্গানাইজেশনের সঙ্গে কাজ করছি। মানুষকে এ কথাটাই বোঝানোর জন্য যে তারাও (হিজড়া, সমকামী) মানুষ এবং পাশাপাশি আমরা প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতার জায়গায় কাজ করি। কারণ যখনই আমি অধিকার বলব, অধিকার ইজ এ অবলিগেশন_একটা দায়বদ্ধতা। দায়বদ্ধতা না থাকলে অধিকারের জায়গায়, চর্চার জায়গায় আমরা সুফল পাবো না। একইভাবে মানুষকে সচেতন করা_অধিকার কী, কাদের অধিকার, কেন অধিকার ইত্যাদি। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের জায়গা থেকে কতটা দায়বদ্ধ_সেই জায়গাগুলোয় কাজ করা।
আসলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কী? সমাজতত্ত্ব বা সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় এটা একটা প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু মানুষকে অথবা একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে সমাজের একটা প্রান্তে ঠেলে দেওয়া হয়। আমি কিন্তু কথাটা স্পষ্ট করে বলছি, 'ঠেলে দেওয়া হয়'। অর্থাৎ এটার জন্য দায়ী আমরা সবাই। এ প্রক্রিয়ার ফলে আমরা তাদের এমন একটা জায়গায় ফেলে দিচ্ছি যেখানে তারা সামাজিক কোনো সুবিধা পাচ্ছে না, এমনকি তারা দেশের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছে না। আমরা সামাজিক বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাদের আমন্ত্রণ জানাতে পারি না, অংশগ্রহণ করতে দিই না।
আমরা প্রত্যেকেই যদি তার আচরণ, তার সামাজিক বা তার ফিজিক্যাল অবস্থা_তা যাই হোক না কেন_স্বীকৃতি দিই যে তারা সমাজের একটা অংশ, তারা মানুষ। অর্থাৎ এই যে সম্মানটা, রেসপেক্টের জায়গা থেকে দেখা। এর পাশাপাশি আমাদের যে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা আছে তার মধ্যে তাদের জন্য স্পেশাল নিডসগুলো অন্তর্ভুক্ত করা। আর সেটা যদি আমরা করতে না পারি তাহলে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে ট্রান্সজেন্ডাররা একটা সার্টেইন পিরিয়ড থেকে মানে বয়ঃসন্ধিকালে ড্রপআউট হয়ে যায় স্কুল থেকে। কারণ সঙ্গী-সাথি তাদের মেনে নেয় না, শিক্ষকরাও তাদের প্রতি সেই অ্যাটেনশনটা দেন না। তার মানে, তাদের স্পেশাল নিডটার কথা বিবেচনা করে প্রকৃত অ্যাটেনশনটা নীতিমালার মধ্যে আনতে হবে; যেন তারা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়, কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়।
ডা. হাসান মাহমুদ : এবার আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহ্ এহসান হাবিবকে আহ্বান জানাচ্ছি।
ড. শাহ্ এহসান হাবিব : আমাদের দেশে বর্তমানে যত ডিজিজ হয়েছে, ইনফেকশাস ডিজিজ, তার মধ্যে এইডস্কে সবচেয়ে বেশি মেটাফোরিক্যালি দেখা হয়েছে। আপনারা দেখবেন, এইডস্কে দেখা হয়েছে যে এইডস্ ইজ অ্যান ইনভিজিবল কনটেজিয়ান, এইডস্ অ্যান মোর্যাল পানিশমেন্ট। আমাদের বাংলাদেশে এ ধরনের সোসাইটির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ধরনের বাধাটি হচ্ছে, আমরা মোর্যালিটির ওপর বেসিস করে এ ডিজিজটাকে দেখছি। এমএসএম এবং হিজড়া_এ দুটোর ক্ষেত্রে মূল কথা হচ্ছে, হিজড়া হচ্ছে এক ধরনের সিচুয়েশনাল সেঙ্ুয়ালিটি। আমাদের সোসাইটির দিক থেকে 'ম্যাসকিউলিন আইডেনটিটিটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে'_এটাকে আমরা অ্যাকসেপ্ট করতে পারছি না। এইচআইভি/এইডসের বিষয়টা তো পরে। সবচেয়ে বড় কথা কালচারাল দিক থেকে এ জনগোষ্ঠীকে আমরা অ্যাকসেপ্ট করতে পারছি না। কারণ আমরা হিউম্যান সেঙ্ুয়ালিটিকে একটা পারস্পেকটিভ থেকে শুধু দেখেছি। এ ওয়েস্টার্ন সেঙ্ুয়ালিটি যেটি বাংলাদেশে এখন এসেছে_এটাকে কোনোক্রমেই আমরা গ্রহণ করতে পারছি না। আমরা মনে করছি, ক্রসজেন্ডার আইডেনটিটি কোনোক্রমেই সোসাইটিতে অ্যাকসেপ্টেড নয়। বিশ্বের মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইউনাইটেড নেশনস স্পেশাল সেশন ডাকল এবং সেখানে বলা হলো, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের মধ্যে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এইচআইভিকে কন্ট্রোল করে ফেলতে হবে ২০১৫ সালের মধ্যে। ২০১০ সালের মধ্যে আমাদের ইউনিভার্সাল অ্যাকসেস তৈরি করতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর বাইরেও দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের ৮৬টা দেশ এমএসএম এবং মেল টু মেল সেঙ্ অ্যাক্টকে ক্রিমিনালাইজ করছে। বাংলাদেশ কনটেঙ্টে এ মুহূর্তে লেজিসলেটিভ রিফর্ম করে স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োগ করা একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। যেটি আমরা এখন দেখতে পাই, থাইল্যান্ডে যেমন বলা হচ্ছে সেখানে প্রস্টিটিউশন ইন স্টিল ইলিগ্যাল। কিন্তু তার পরও গভর্নমেন্ট সাইলেন্ট থাকছে এবং সেই ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যেই সেখানে স্বাস্থ্যসেবা পেঁৗছে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা তড়িঘড়ি করে লেজিসলেটিভ রিফর্ম নিয়ে আসতে পারব না। যেহেতু পলিটিক্যাল লিডারশিপের দিক থেকে একটা বড় ধরনের কমিটমেন্টের অভাব রয়েছে। এই যে মার্জিনালাইজ গ্রুপ বলছি এমএসএম, গে আইডেনটিটি_এগুলোকে আমরা একটা সাবকালচার হিসেবে দেখছি। এটাকে মেইনস্ট্রিমে নিয়ে আসার জন্য আমাদের অনেক সময়ের প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বিশ্বে এইচআইভি/এইডস্ ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে এমএসএমরা একটা বড় ধরনের গ্রুপ। এশিয়ান রিজিয়নের মধ্যে আমরা দেখতে পাই থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ফিলিপিন্স_এসব দেশে এখন এইচআইভি ট্রান্সমিশন হেটারাল সেঙ্ুয়াল বিহেভিয়ার থেকে হচ্ছে না, মূলত সেম সেঙ্ বিহেভিয়ার থেকে হচ্ছে। বাংলাদেশে যদি কেউ এমএসএম কালচার তাৎক্ষণিক বন্ধ করার চেষ্টা করে বা এটাকে যদি এলিমিনেট করার চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে সেটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত হবে। কারণ এটি সোসাইটির মধ্যে তৈরি হয়েছে
বিভিন্ন কারণে। এটার অনেক ধরনের ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু মূল কথাটা হচ্ছে, তাদের মধ্যে রিস্ক বিহেভিয়ারটা খুব বেশি এবং রিস্ক বিহেভিয়ারের জায়গায় আমাদের অ্যাড্রেস করতে হবে।
ডা. হাসান মাহমুদ : এসটিআই/এইডস্ নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশের মহাসচিব এ কে এম মাকসুদ এখানে উপস্থিত আছেন। নেটওয়ার্কের এ পর্যায়ের ভূমিকা একটু জানতে চাচ্ছি।
এ কে এম মাকসুদ : ধন্যবাদ ড. হাসান মাহমুদকে। মুনির ভাই তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, অর্থাৎ যে এসটিআই নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশ, ইউএনএইডস, আইসিডিডিআর,বি, বন্ধু, লাইট হাউস_এ ধরনের অনেক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা কিছুদিন আগেই সমকামিতার বিষয়ে আলোচনার জন্য দুদিনের একটা আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল এইচআইভি/এইডসের পরিপ্রেক্ষিতে সমকামিতা বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসা, খোলামেলা একটা পরিবেশ তৈরি করা। যেটা এর আগে এত বেশি খোলামেলাভাবে আলোচনার সুযোগ হয়নি।
আইনগত বাধা দূর করার কথা অনেকে বলেছেন, যেহেতু আমরা পেনাল কোডের কথা জানি বা সাপ্রেশন অব মোর্যাল অ্যাক্টের কথা জানি; এ ছাড়া মেট্রোপলিটন অ্যাক্টের কথা জানি। এসব জায়গায় অনেক বাধা আছে এমএসএম নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে। অথবা যদি কোরআন শরিফের কথা বলেন, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। ওখানেও অনেক বাধার কথা বলা আছে সমকামিতার বিষয়ে। কিন্তু আমার প্রশ্ন এবং আমার ও নেটওয়ার্কের চিন্তাটা হলো_মানুষ হিসেবে একজন সমকামী এবং একজন হিজড়ার মানবাধিকার কিভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাকে কিভাবে আইনের সুরক্ষা দেওয়া যায়। সমকামী একজন মানুষের দোরগোড়ায় কিভাবে সেবা পেঁৗছে দেওয়া যায় এবং আইনের যে এঙ্িিস্টং বিধানগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ১৯ ধারায় সুযোগের সমতার যে কথা বলা আছে, অসাম্য বিলোপের যে কথা বলা আছে_তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে। এখানে সুনির্দিষ্টভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা নিতে বা যেকোনো সামাজিক সেবা নিতে কেউ যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় এবং এ জন্য যদি বৈষম্য কেউ করে সেটা দূর করার জন্য আইন প্রণয়নও জরুরি।
ডা. হাসান মাহমুদ : এ পর্যায়ে আমি হাসাবের টিম লিডার সেলিনা পারভিনকে কিছু বলার অনুরোধ করছি।
সেলিনা পারভিন : হাসাব কাজ করছে ইয়ুথ ফ্রেন্ডলি হেলথ সার্ভিসে, যেখানে ইয়ং পপুলেশনকে ফোকাস করা হয়, যাতে ইয়ুথরা আসতে পারে। তা ছাড়া আমরা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার নিয়েও কাজ করছি। যেখানে এমএসএম আছে, ট্রান্সজেন্ডার আছে, সেঙ্ওয়ার্কার, পিএলএইচএ এবং ড্রাগ ইউজার আছে। আমাদের দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা বলে যে আসলে কর্নার তৈরি করার চেয়ে মেইনস্ট্রিম করাটাই বেশি জরুরি। আমরা শুধু স্বাস্থ্যসেবা না; একটা সামগ্রিক মানুষের যে অধিকার, সেগুলো প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা কাজ করছি। একটু আগে কেউ কেউ বলেছেন, ডাক্তাররা সেবা দিতে চান না, রাইটস ভায়োলেশন হচ্ছে। এখানে কিন্তু সরকারকে দোষারোপ বা ব্লেমিংয়ের চেয়ে আমার কাছে যেটা মনে হয় স্টিগমা ডিসক্রিমিনেশনটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। আমরা যখন স্পটগুলোতে গভর্নমেন্টের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট যেমন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্ট, মহিলা অধিদপ্তর; তারপর যুব মন্ত্রণালয়, পুলিশ এবং মিডিয়া নিয়ে কাজ করছি, কাজ করার পর যখন আমরা ওরিয়েন্টেশন করছি_সবাই কিন্তু সিমপ্যাথাইজড হয়েছেন এবং তাঁরা মনে করেছেন যে_হ্যাঁ, এটা তাঁদের রেসপনসিবিলিটি। কারণটা হচ্ছে তাঁরা অ্যাওয়ার ছিলেন না। তো এই যে প্রথাগত দীর্ঘদিনের একটা স্টিগমা আমাদের সমাজের মধ্যে রয়ে গেছে, হয়তো আমি এ প্রোগ্রামে কাজ না করলে বুঝতাম না। এ জন্য আমাদেরও সচেতনতা দরকার। দরকার সিভিল সোসাইটি, গভর্নমেন্ট, মিডিয়া_সবার একযোগে কাজ করা।
ডা. হাসান মাহমুদ : আমি এখন যাচ্ছি সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদারের কাছে। আমরা এ ক্ষেত্রে সংগীতের ভূমিকাটা আলোচনা করতে চাচ্ছি।
বাপ্পা মজুমদার : আমার মনে হয়, আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। আমার যেগুলো জানার ছিল, যেগুলো জানতে চেয়েছিলাম, তার প্রায় সব কথাই শুনেছি। ইনফ্যাক্ট আমি কিছু কাজও করেছি এ বিষয়ে। আমি ছোট্ট করেই বলতে চাই, হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা যারা মিউজিকে আছি, কালচারাল অ্যাকটিভিটিজের সঙ্গে জড়িত আছি, আমাদের অনেক সুযোগ আছে এ বিষয়ে কাজ করার। এটা আমাদের রেসপনসিবিলিটি। আমাদের ওপর আসলে অনেক ধরনের রেসপনসিবিলিটি থাকে, এটাও তার মধ্যে একটি। আমি আগেও কাজ করেছি এবং ভবিষ্যতেও এটা নিয়ে কাজ করতে চাই।
আরেকটা কথা একটু বলতে চাই, আমরা আসলে অনেক কথা বলে ফেলি। কিন্তু আমরা যারা কালচারাল অ্যাকটিভিটিজের সঙ্গে জড়িত আছি, আমার মনে হয় বাস্তব জীবনের সঙ্গেও সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন। শুধু গান করে নয়, গান লিখে নয়; আমাদের সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়াটা অনেক বেশি জরুরি। তাহলে হয় কি, আমরা যেটা করতে চাচ্ছি সেটা আরো বেশি প্রাণবন্ত হয় বলে আমার মনে হয়।
ডা. হাসান মাহমুদ : আমরা এখন অডপাপের নির্বাহী পরিচালক বায়েজিদ আহমেদের অভিজ্ঞতাটা শুনতে চাই।
বায়েজিদ আহমেদ : আমরা শুরুতেই আলোচকদের মুখে শুনেছি, আমরা অনেক সফল হয়েছি। এ সফলতাটা কিসের ওপর বেইজ করে? এটা যদি আমরা একটু চিন্তা করি, শুধু অনুদাননির্ভর হয়ে যদি ১৫ বছর বা আরো ২০ বছর প্রোগ্রাম চালাই তাহলে সেটাকে সফল বলব কি না? যেখানে সক্রিয় পলিটিক্যাল ও ডেমোক্রেটিক গভর্নমেন্ট রয়েছে। অনুদানের বাইরেও গভর্নমেন্টের বিভিন্ন মেকানিজম রয়েছে। তাদের কাছ থেকে কোনো ফিন্যানশিয়াল কন্ট্রিবিউশন আমরা এ পর্যন্ত লক্ষ করছি না। আরেকটা জিনিস বলছি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করছি। তো এই দীর্ঘদিন আমরা অনুদাননির্ভর হয়েই কাজ করছি। যখনই আমরা মানবাধিকার ও স্টিগমার কথা বলব, স্টিগমাটা কোত্থেকে আসে? মানে সমাজ থেকে। মানবাধিকার দেবে তো মানুষ, তার মধ্যেই তারা বাস করবে। এরা এনজিওগুলোকে সেনসিটাইজ করতে চায় না এবং খুব প্রাউড ফিল করে ডোনাররা যে আমরা সিভিও নিয়ে কাজ করছি, যাদের নিয়ে কেউ কথা বলে না তাদের কাজ করছি, তাদেরই আমরা কন্ট্রিবিউট করছি, পার্টনার করছি। তো সেদিক থেকে আমি বলব, শুধু সিভিও এবং সেলফ হেলপ গ্রুপকে নিয়ে কাজ করে মানবাধিকার ও স্টিগমা থেকে আমাদের এ পপুলেশনকে বাঁচানো যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে এনজিও এবং সিভিল সোসাইটিতে যাঁরা অ্যাকটিভ আছেন, তাঁদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
ডা. হাসান মাহমুদ : এবার ডা. এজাজুল হককে বলব কিছু বলতে।
ডা. এজাজুল হক : যেসব দেশে এইচআইভি এবং মানবাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন এবং যাঁরা সফল হয়েছেন, তাঁদের কার্যপরিধির একটা উদাহরণ দিচ্ছি। সেটা হচ্ছে যারা এমএসএম, যারা বয়ঃসন্ধিকালে আছে এবং যারা ট্রান্সজেন্ডার আর যারা হাইরিস্ক পপুলেশন_তাদের এক ধরনের ট্রেনিং দেওয়া হয়। সেটা হচ্ছে পার্লামেন্টারিয়ান যাঁরা আছেন তাঁদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলবেন, পলিটিশিয়ানদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলবেন এবং তাঁদের অধিকার নিয়ে কিভাবে কথা বলতে হবে এবং তাঁরা অধিকারগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপগুলো বের করে নিয়ে আসতে পারবেন এসব থিওরিটিক্যালি ডিসকাশন না, একেবারে প্র্যাকটিক্যালি এগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে যে বাস্তব পদক্ষেপগুলো নেওয়া দরকার, সেগুলোর ক্ষেত্রে কন্ট্রিবিউট করতে পারবে, এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কথাটা আমি এ জন্য বললাম যে আসলে মানবাধিকার বিষয়ের কিন্তু দুটো আঙ্গিক আছে। একটা হচ্ছে আদায় করে নেওয়ার ব্যাপার, আরেকটা অর্জনের। যেমন এ অর্জন ও আদায় একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আজকে যাদের মানবাধিকার নিয়ে আমরা কথা বলছি, তাদেরও কিন্তু এগিয়ে আসার একটা ব্যাপার আছে। আমি তাদের কিন্তু আন্ডারমাইন্ড করে কথাগুলো বলছি না। যথেষ্ট রেসপেক্ট নিয়ে কথাগুলো বলছি। কারণ আমরা ২০০৬ সাল থেকে 'বন্ধু'র সঙ্গে কাজ করছি। তাদের মানবাধিকারের বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন রকম ল এনফোর্সিং এজেন্সির সঙ্গে কাজ চলছে, যাতে তাদের কাছ থেকে অধিকারগুলো পাওয়া যায়।
পার্লামেন্টের সর্বোচ্চ পর্যায়েও আমরা চেষ্টা করেছি এ ইস্যুগুলোকে তুলে আনার জন্য। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা এটাও বিশ্বাস করি, জিনিসটা রাতারাতি সম্ভব নয়। এটা সেনসিটিভ ও স্পর্শকাতর ইস্যু। সমাজ, ধর্ম_সব কিছুকে ব্যালান্স করেই কিন্তু আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারের যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো সমুন্নত রাখতে হবে। তবে আমাদের একটু সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। কারণ গভর্নমেন্টের নিজস্ব পলিসি আছে। এখানে সংবিধান আছে, মিনিস্ট্রি লেভেলের বিভিন্ন রকমের কার্যপরিধি আছে এবং তাদের অনেক রকম মতবিরোধ-মতবাদ আছে। এগুলোকে সামলেই কিন্তু আমাদের কাজ করতে হয়।
ডা. হাসান মাহমুদ : আমি এখন অনন্যা হিজড়াকে বক্তব্য রাখার আহ্বান জানাব। আপনার কি মনে হচ্ছে যে ভবিষ্যতে এমএসএম বা হিজড়াদের জন্য রাস্তা আরো সহজ হবে কি না, চলার পথ, পারিবারিক বন্ধন, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া_এসব ক্ষেত্রে?
অনন্যা হিজড়া : আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বন্ধুর প্রতি। বন্ধু ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, বাঁধন, সুস্থজীবন_এরা সবাই আমাদের একটা জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। যেখান থেকে ভাবতে পারছি যে আমরা মানুষ। আমরা ভাবতে পারছি আমাদের অধিকার আছে। অনেকেই একটা কথা বলেন_প্রতিবন্ধী, সমাজে অবহেলিত। আমি আসলে এ মুহূর্তে বলব, কথাগুলো ঠিক। তবে এর পাশাপাশি এ কথাটাও বলব, আমি প্রতিবন্ধী বা অবহেলিত কথাটা ঠিক নয়। আজকে আমরা যারা কাজ করছি, আমরা যারা বিভিন্ন ফোরামে যাচ্ছি, বিভিন্ন অফিসে বসে কাজ করতে পারছি, যারা আমাদের কাজ করতে পারার এ অবস্থানে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন এবং আমরাও তাদের সহযোগিতা করেছি আমাদের যুগোপযোগী করে তোলার জন্য। এ রকম আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের দরকার, যারা আমাদের নিয়ে ভাববে। শুধু ভাবনা নয়, ভাবনাটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের সাহায্য করবে এবং আমরাও আমাদের দিক থেকে, আমাদের অবস্থান থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। শুধু সমাজ-পরিবার নয়, এ রাষ্ট্রকে কিছু দেওয়া যায় কি না, এ দেশের জন্য কিছু করা যায় কি না। আমরা অবহেলিত, আমরা প্রতিবন্ধী_এসব কথা শুনতে একঘেয়েমি লাগে। এখন বোধ হয় আমাদের ভাবতে হবে, আমরা সমাজের জন্য কিছু করব। যাঁরা বন্ধুতে যাচ্ছেন বা যাঁরা বন্ধুতে যান বা বন্ধুর কার্যক্রম দেখেন, তাঁরা দেখবেন বন্ধুর বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত। সেখানে আমরা অন্য অনেকের মতো কাজ করছি এবং আমি আমার ভাষায় বলব, আমি ধাপে ধাপে কাজ করছি। আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাউথ এশিয়ার ট্রান্সজেন্ডারদের সঙ্গে কমিউনিকেট করছি। আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফরমারদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে নাচ করছি। এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। আমি এ কথাটা এ জন্য এখানে বলছি যে অনেকেরই এগিয়ে আসতে হবে আমাদের প্রত্যেককে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে তৈরি করার জন্য।
ডা. হাসান মাহমুদ : এবার আহ্বান জানাব পপুলেশন কাউন্সিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওবায়েদুর রবকে।
ওবায়েদুর রব : আমাদের মনে রাখতে হবে, আগামীতে মানে ১০০, ২০০, ৩০০ বছর পরে হিজড়া এবং এমএসএম দুনিয়া থেকে চলে যাবে না। এ পপুলেশন তিন হাজার বছর আগে ছিল এবং এটা তিন হাজার বছর পরও থাকবে। এ পপুলেশনটাকে সার্ভিস দেওয়ার জন্য যে সাজেশনগুলো এখানে আসছে, আমরা সবাই টার্গেট করছি পাবলিক সেক্টরকে। মানে আমাদের সরকারকে করতে হবে, সরকারকে করতে হবে, সরকারকেই করতে হবে। পাবলিক সেক্টর ছাড়াও যে এখানে প্রাইভেট সেক্টর আছে এবং আমাদের দেশে আপনারা জানেন সেভেনটি পারসেন্ট সার্ভিসেস আর প্রোভাইডেড বাই দ্য প্রাইভেট সেক্টর, নট দ্য পাবলিক সেক্টর। তো সে হিসাবে প্রাইভেট সেক্টরটাকে কিভাবে এখানে ইনভলভ করা যায়, সেটা আমাদের চেষ্টায় আনতে হবে। আমি কুইকলি এখানে ক্যালকুলেশন করে দেখেছি আমাদের যদি এক লাখ ৪০ হাজার এমএসএম পপুলেশন এবং ১০ হাজার হিজড়া পপুলেশন হয়, তাহলে এই দুটো পপুলেশনকে যদি আমাদের সার্ভিস প্রোভাইড করতে হয় তাহলে বছরে আমাদের ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার বেশি লাগে না। এ বছর আমাদের হেলথ বাজেট হলো আট হাজার কোটি টাকা। সেখানে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা কি ইয়ার মার্ক করা যায় না? যায় কী যায় না সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু করা সহজ। আমাদের মেইন টার্গেট হলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া। সেই স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার একটা পথ হলো আমাদের পাবলিক সেক্টরের ফ্যাসিলিটিগুলোতে সার্ভিস অ্যাভেইলেবল করা। যেটা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে এবং ডেফিনিটলি দেখলেন যে আমরা অ্যাটিচিউট অব দ্য সার্ভিস প্রোভাইডারের সিগনিফিকেন্টলি ইমপ্রুভ ওভার দ্য ইয়ার অব ডিউ টাইম। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়াচ্ছি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শুধু এই গ্রুপ নায়, আরো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আছে। চা-বাগানের শ্রমিকরা একটা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। একজন চা-বাগানের শ্রমিক যদি একটা হাসপাতালে যায় তাহলে তাকে সার্ভিস দেওয়া হয় না। বলা হয়, তুমি কুলি। মানে এই যে 'নিগ্রো'দের মতো বাজে একটা ওয়ার্ড ইউজ করা হয় 'কুলি'। এদের জন্য আমার দুটো স্পেসিফিক সাজেশন রয়েছে। একটা হলো, আমরা যদি পরবর্তী বাজেটে এ ব্যাপারে কোনো স্পেসিফিক অ্যালোকেশন নিতে পারি তবে সেই অ্যালোকেশনটা স্পেসিফিক হতে হবে এ পার্টিকুলার গ্রুপের জন্য। এটা করা যাবে কি না তা ডিসকাশনের ব্যাপার। এই ৯ বা ১০ হাজার হিজড়ার জন্য। আর এমএসএমটা কিন্তু টোটাল পপুলেশনেই মিশে আছে। এ জন্য এমএসএমকে আইডেন্টিফাই করা একটু কষ্টকর। এক লাখ ৪০ হাজারের বাইরেও এমএসএম আছে, যা আমি-আপনি জানি না।
আমাদের সার্ভিস প্রোভাইডারদের অ্যাটিচিউড চেঞ্জের ব্যাপার আছে। এটা এক দিনে করতে পারবেন না। যেটা আমাদের অনেক বক্তাই বলেছেন যে এক বা দুদিনে চেঞ্জ হবে না; এটা সিগনিফিকেন্ট চেঞ্জ করতে হলে গ্র্যাজুয়েল প্রসেসের ব্যাপার আছে। আমাদের দেশে কয়েকটি ইন্টারঅ্যাকটিভ মিনিস্ট্রি আছে, যারা এখানে সিস্টেমের ওপর একটা বাধাস্বরূপ থাকবে। তাদের আস্তে আস্তে নিয়ে আসতে হবে। রিলিজিয়াস মিনিস্ট্রির সঙ্গে গিয়ে যদি আপনি আলাপ করেন, তাহলে প্রথমেই প্রশ্ন উঠবে, এটা তো ইসলামে জায়েজ নয়। তো নাজায়েজ একটা জিনিসকে জায়েজ করার জন্য আপনি কেন আমাদের কাছে আসছেন_প্রথম কোয়েশ্চন হবে। তারপর ইউ ক্যান টক টু দেম যে এটা তো তাদের বায়োলজিক্যাল ইস্যু। সে নিজে তো ইচ্ছা করে এটায় আক্রান্ত হয়নি। আরেকটা লোকের যে ক্যান্সার হয়েছে, সে তো ইচ্ছা করে ক্যান্সার নিয়ে আসেনি। বিষয়টা এভাবে দেখাতে হবে।
ডা. হাসান মাহমুদ : আমি এখন একটা প্রশ্ন করব সেফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মোহাম্মদ ইদ্রিসকে। প্রশ্নটা হচ্ছে, আপনারা যখন রক্ত সংগ্রহ করেন তখন রক্তদাতাকে এমএসএম, হিজড়া বা এ ধরনের কোনো প্রশ্ন করা হয় কি হয় না?
ডা. মোহাম্মদ ইদ্রিস : না, তাদের সেভাবে বিবেচনা করা হয় না। তবে বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে হাইরিস্ক যারা, তাদের আগে থেকেই এলিমিনেট বা ডিসকারেজ করা হচ্ছে।
সেফ ব্লাড ট্রান্সমিশন প্রোগ্রামে যেখানে আমাদের সারা দেশেই টু হানড্রেডের মতো সেন্টারে ব্লাড নেওয়া হচ্ছে, সেখানে এই জিনিসটা উঠে আসেনি। এটাও একটা ভালো দিক। আমরা মনে করি, এটাও আমাদের প্রোগ্রামের একটা অগ্রগতি। আমাদের দেশে বর্তমানে প্রফেশনাল রক্তদানকারী একেবারেই কম, কারণ আমরা স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের উৎসাহী করছি এবং তাতে বেশ সাড়াও পাচ্ছি।
ডা. হাসান মাহমুদ : আমি আমাদের নবাগত ভারপ্রাপ্ত লাইন ডিরেক্টর ডা. এম এ ওয়াহেদের কাছ থেকে সরকারের ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে শুনতে চাই।
ডা. এম এ ওয়াহেদ : এখানে আলোচনায় বিশেষভাবে উঠে এসেছে হিজড়া এবং এমএসএম গ্রুপের প্রসঙ্গ। আসলে আমাদের সরকার শুধু একটা বিশেষ গ্রুপ নিয়ে এ মুহূর্তে চিন্তা করছে না। ১৪ কোটি লোককে নিয়ে আসলে আমাদের চিন্তা-চেতনা। তো যেহেতু এ লোকদের নিয়ে আমাদের প্রোগ্রাম মানে ট্রান্সমিশন এবং সাফারার কারা, হাইরিস্ক গ্রুপ কারা_তাদের চিহ্নিত করার ব্যাপারটা চলে এসেছে এবং সে জন্য হয়তো আজকে এমএসএম এবং হিজড়া সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে। সরকারের চিন্তার আলোকে আমরা বলব, ১৪ কোটি মানুষ নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। যেহেতু সেঙ্ ইজ ইউনিভার্সাল। এটাকে তো আর চেক দেওয়া যাবে না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার নিশ্চিত না হওয়ার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দারিদ্র্র্য কিন্তু একটা বিরাট কারণ। এই বিশেষ জনগোষ্ঠী, হাইরিস্ক গ্রুপ যারা আছে, বিশেষ করে আমাদের কমার্শিয়াল সেঙ্ ওয়ার্কার আছে, আইডিইউ আছে, তার পরে ট্রান্সজেন্ডার আছে, হিজড়া আছে, তারপর আরো যারা আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আছে তাদের ভেতরে এইচআইভি/এইডস্ রোগটা এ মুহূর্তে বেশি মনে হচ্ছে। এ জন্য তাদের মধ্যে আমাদের সমন্বিত কার্যক্রম চলছে। আমি শুধু এটুকুই বলব, নেঙ্ট একটা প্রোগ্রামে আমাদের এইচআইভি/এইডস্ নিয়ে একটা সুন্দর পরিকল্পনা আছে। আর আজকের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা হোয়াট ক্যান উই ডু? এটা শুধু হলো উপজেলা লেভেলের হসপিটাল এবং জেনারেল হসপিটালে আমরা চিন্তা করব। তবে একটা কথা আছে এই যে আসলে আমরা যদি রুট কজ অব দ্য ডিজিজ জানি, তখন কিন্তু স্টিগমা থাকবে না। যেমন একসময় কলেরা বা টিবি বা কুষ্ঠ নিয়েও নানা ধরনের স্টিগমা ছিল। যখন আমরা ট্রিটমেন্ট বের করতে পারছি, টিকা বের হয়ে গেছে, তখন কিন্তু স্টিগমা থাকেনি। এখন আমরা কলেরা নিয়ে চিন্তা করি না। এইডস্ বা এইচআইভি সম্পর্কে যখন আমরা জানব, ট্রিটমেন্ট যখন বের হয়ে যাবে, টিকা যখন বের হয়ে যাবে, তখন এ ডিসক্রিমিনেশন কিন্তু থাকবে না।
তখন অটোমেটিক্যালি তাদের প্লেসমেন্ট হয়ে যাবে সোসাইটিতে।
ডা. হাসান মাহমুদ : আর অল্প কিছু কথা বলেই আমরা অনুষ্ঠান শেষ করব। আমরা সবাই জানি, ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস্ দিবস। এইডস্ দিবস নিয়ে আমরা যথেষ্ট আলোচনা করেছি। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে, আমরা যাঁদের নিমন্ত্রণ করেছি তাঁরা সবাই আজকে এখানে এসেছেন। প্রত্যেকেই আমরা এ ব্যাপারে সংবেদনশীল ও দায়বদ্ধ। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমরা এদের (এমএসএম, হিজড়া) মূলধারার জনগোষ্ঠী হিসেবেই দেখব।
এ ধরনের একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য বিশেষ করে কালের কণ্ঠ ও এর সম্পাদক আবেদ খানকে ধন্যবাদ। তাঁরা নানা ক্ষেত্রে যেসব উদ্যোগ নেন তাতে সফল হন। আমরা পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি। নির্দিষ্ট কোনো ইস্যুতে সমাধান খুঁজতে আলোচনার বিকল্প নেই। আমি এখন এইচইজেএফবির সভাপতি সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফিকে তাঁর সমাপনী বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করছি।
মুস্তাফিজ শফি : আসলে আমার কাজ হলো সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করা। এ জন্য খুব বেশি কিছু বলব না। কালের কণ্ঠ, বন্ধু এবং এইচইজেএফবি_এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে সাড়া দিয়ে আপনারা আমাদের সময় দিয়েছেন, এ জন্য সবার প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমি কালের কণ্ঠে কাজ করি, আবার যেহেতু সাংবাদিক, সে হিসেবে সাংবাদিকদের সংগঠন এইচইজেএফবিতেও আছি। সেদিক থেকে আমাদের মিডিয়ার কিছু সমস্যা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। এইচআইভি/এইডস্ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো আমরা দেখি, আপনারা এখানে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা ও এনজিও প্রতিনিধি যাঁরা আছেন তাঁদের বলছি, এ ক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকাটা কী হওয়া উচিত, তা কিন্তু মিডিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে আপনারা করেন না। এটাকে ঠিক অভিযোগ হিসেবে নেবেন না। আপনারা কাজ করছেন আপনাদের মতো, আর আমরা কাজ করছি আমাদের মতো। আমি মনে করি, এ দুইয়ের সমন্বয় হওয়া দরকার এবং অবশ্যই আজকের আলোচনা এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আপনারা জানেন, আমাদের জাতীয় এইডস্ কমিটির অধীনে, সম্ভবত ২০০৩ সালের শেষ দিকে বা ২০০৪ সালের শুরুতে, তখন একটা এইডস্ মিডিয়া কমিটি হয়েছিল। আমিও সেই মিডিয়া কমিটির সদস্য ছিলাম। কমিটি হওয়ার মাসদুয়েকের মধ্যে একটা বৈঠক ডাকা হলো। এরপর সেই কমিটি আছে কী নেই, সেই কমিটির কী হলো_আমি কিন্তু জানি না, অন্য সাংবাদিক সদস্যরাও জানেন না।
কেউ কোনো যোগাযোগ করেনি। এখন বলুন, কাজটা কিভাবে এগোবে? একজন মিডিয়া পিপল বা একটি পত্রিকা-টেলিভিশনকে সচেতন করলেই কিন্তু তাদের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ সচেতন হয়ে যায়। সেই জায়গায় মিডিয়ার রুল কী হওয়া উচিত সে পরিকল্পনা যদি মিডিয়ার লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে, তাঁদের সঙ্গে নিয়ে করা যায়
তাহলে কিন্তু উপকারে আসতে পারে। আশা করছি, ভবিষ্যতে আমরা সেভাবেই এগোতে পারব। সবার সম্মিলিত
প্রচেষ্টায় এইডস্ প্রতিরোধ এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে_এ স্বপ্ন সামনে রেখেই আজকের মতো শেষ করছি। তবে আমার মনে হয়, এ আলোচনাকে সঙ্গে নিয়েই আমরা চলব, অন্যত্র ছড়িয়ে দেব।
==================================
উইকিলিকসঃ জুলিয়ান চে গুয়েভারা! তিন কালের সাক্ষী বাবর আলীর ইশকুল এ মাটির মায়ায় মধ্যবিত্তের উত্থান, না ভোক্তাশ্রেণীর উদ্ভব হিমালয়ের পায়ের কাছেঃ গোধূলির ছায়াপথে পতিত স্বৈরাচারের আস্ফালন ও আওয়ামী লীগের নীরবতা ৪০ বছর পড়ে থাকা লাশটার সৎকার করতে চাই এই কি আমাদের মানবাধিকার? ঐতিহ্যের মধ্যে সমকাল কেমন দেখতে চাইঃ ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা দ্রীপ প্রতিভার দ্যুতিময় স্মারক গল্প- বৃষ্টি শহীদুল্লা কায়সারঃ রাজনৈতিক সৃষ্টিশীলতা আনোয়ার পাশাঃ জাতিরাষ্ট্রের অংশ ও প্রেরণা মুনীর চৌধুরীঃ তাঁর নাটক জেগে ওঠার গল্প এখন শুনবেন বিশ্ব-সংবাদ বাঘ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১০ তাঁরা সমালোচিত, আমরা বিব্রত মুজিবকে নিয়ে সিরাজের একমাত্র লেখা ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্তির উদ্যোগ মহাস্থানগড়ের ধ্বংস-পরিস্থিতিঃ পর্যবেক্ষণ ওয়ান-ইলেভেনের চেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ আসছে! ডিসেম্বরঃ গৌরব ও গর্বের মাস উইকিলিকস বনাম যুক্তরাষ্ট্র দুর্নীতি বেড়েছে দুনিয়াজুড়ে উইকিলিকসঃ বাঘের ঘরে ঘোগ আইন অপূর্ণাঙ্গঃ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার কঠিন ১০০ কোটি ডলারে ঋণঃ ভারতের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত ট্রেন দুর্ঘটনাঃ চালকের ভুল নাশকতারও গন্ধ! ‘যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা উইকিলিকস সমর্থকদের কানকুনঃ মুমূর্ষু পৃথিবীর নিষ্ঠুর মানুষ নারীর হার-নারীর জিত, বেগম রোকেয়া প্রাসঙ্গিক
দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
No comments