একটি ভাদ্র মাসের গল্প' by আতাউর রহমান
মিসেস খান একজন ষাটোর্ধ্ব বিধবা মহিলা। থাকেন ঢাকার সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ গার্ডেন সিটি হাউজিং কমপ্লেক্সের একটি বহুতল ভবনের চতুর্থ তলার এক হাজার বর্গফুটের একটি অ্যাপার্টমেন্টে। বয়স ষাটের ঊর্ধ্বে হলেও মিসেস খান সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, বেশ শক্ত-সমর্থ মহিলা। থাকেনও অ্যাপার্টমেন্টটিতে একা।
মিস্টার ও মিসেস খান ছিলেন নিঃসন্তান দম্পতি। মিস্টার খান ছিলেন খুব মজার মানুষ। একবার কে যেন টেলিফোনে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আপনি কি খান?’ উত্তরে তিনি কণ্ঠে যতটা সম্ভব গাম্ভীর্য ফুটিয়ে জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমি কী খাই মানে? আমি হালাল সবই খাই, হারাম খাই না।’ অপর প্রান্ত থেকে তখন বলা হলো, ‘সরি, আমি জানতে চেয়েছিলাম আপনি জনাব শরীফ খান কি না।’
সে যা হোক, শরীফ খান সাহেব ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। আজকাল সত্ সরকারি কর্মকর্তা বলতে গেলে চোখেই পড়ে না; ওঁরা অনেকটা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি। কিন্তু মিস্টার খান ছিলেন পুরোদস্তুর সত্। তা কথায় বলে, ‘ভালোর উফা (দীর্ঘায়ু) নেই, আর কমবখেতর মৃত্যু নেই।’ শরীফ খানও বেশি দিন বাঁচলেন না, হঠাত্ করে একদিন হার্ট অ্যাটাক তথা করোনারি থ্রম্বসিস রোগে পটল তুললেন।
অবশ্য নিঃসন্তান মিস্টার খান মিসেস খানকে একেবারে রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে যাননি। তিনি প্রভিডেন্ট ফান্ডে যে টাকা ও পোস্ট অফিসে যে সেভিংস সার্টিফিকেট রেখে গিয়েছিলেন, সেগুলো একত্র করে মিসেস খান বছর পাঁচেক আগের সস্তা দরে অ্যাপার্টমেন্ট কিনে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন, এখনকার দরে হলে সেটা সম্ভব হতো না। বাকি রইল খাওয়া-পরার সমস্যা। সেটার সমাধান করে দিয়েছেন সদাশয় সরকার—সরকারের সর্বশেষ বিধি-বিধান অনুসারে স্বামী চাকরিকালে মারা গেলে তাঁর বেতনের ৮০ শতাংশ স্ত্রী আমৃত্যু ভোগ করেন। এ বাবদ পাওয়া টাকা দিয়ে মিসেস খান কোনো রকমে দুই প্রান্ত মেলান। স্থায়ী কোনো কাজের লোক তিনি রাখেন না, একটি পার্টটাইম ‘বুয়া’ এসে দিনের বেলায় কাজ করে চলে যায়।
তা মিসেস খানের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, আকস্মিক বাথরুমে স্লিপ খেয়ে পড়ে বাম পা-টা হাঁটুর নিচে ভেঙে ফেললেন। চিকিত্সক এসে পা প্লাস্টার করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গেলেন এবং বললেন ছয় সপ্তাহ পরে এসে তিনি প্লাস্টার খুলে দিয়ে যাবেন। মিসেস খানকে মাঝেমধ্যে কেনাকাটার জন্য নিচে যেতে হতো, ভবনটির লিফট প্রায়ই নষ্ট থাকে; আর তিনি চারতলায় বাস করেন বিধায় অধিকাংশ সময়ই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতেন। তাই চিকিত্সক বিদায় নেওয়ার আগে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, বাম পায়ে প্লাস্টার বাঁধা অবস্থায় তিনি সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারবেন কি না। চিকিত্সক সংক্ষিপ্তভাবে জবাব দিলেন, কখনো না।
এই বিরাট শহরে, এ জনারণ্যে মিসেস খানের তেমন কোনো আত্মীয়স্বজন নেই বিধায় কেউ তাঁকে দেখতে আসে না। পার্টটাইম বুয়ার বদৌলতে তিনি সারা দিনে একবার পূর্ণমাত্রায় আহার করেন ও অন্য সময় এটা-ওটা খান, আর সারা দিন আপাতদৃষ্টিতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে পত্র-পত্রিকা পড়ে ও ঘুমিয়ে কাটান। একমাত্র ব্যতিক্রম—তাঁর পাশের অ্যাপার্টমেন্টের মিসেস আহমেদ, যাঁর কাছে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশের জন্য আলাদা চাবি দেওয়াই আছে, মাঝেমধ্যে এসে খানিকক্ষণ বসে গল্পগুজব করে যান। এগুলোর অধিকাংশই থাকে গসিপ।
এই যেমন—মিসেস আহমেদ একদিন এসে গল্প শোনালেন: বারিধারার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের বাসিন্দা এক ভদ্রলোককে অফিস থেকে আলুথালু বেশে বাসায় ফিরতে দেখে তাঁর স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? তোমাকে আলুথালু ও খুব পেরেশান দেখাচ্ছে কেন? ‘আর বলো না’, স্বামীপ্রবর দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বললেন, ‘নিচে গ্রাউন্ড ফ্লোরের রিসিপশনে আমাদের ভবনের মাস্তান টাইপ কেয়ারটেকারের সঙ্গে ঝগড়া ও ঘুষাঘুষি করে এলাম। সে বলে কী জানো? এই বিল্ডিংয়ের একজন ব্যতিরেকে প্রতিটি মহিলার সঙ্গে নাকি তার স্পেশাল খাতির!’ স্বামীর মুখের কথা শেষ হতে না হতেই স্ত্রী বলে উঠলেন। ‘তাহলে ওটা তিনতলার বাঁদিকের ফ্ল্যাটের এই দেমাগি মহিলাই হবেন।’
অবশ্য গল্পটা শুনে মিসেস খান সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমাদের দেশ এখনো অতটা ফরওয়ার্ড হয়নি। এটা নিশ্চয়ই ইউরোপ কিংবা আমেরিকার গল্প। গসিপওয়ালারা আমাদের দেশের বলে চালিয়ে দিচ্ছে।’
আরেক দিন মিসেস আহমেদ এসে বললেন, ‘শুনেছেন আপা! ঢাকায় লোডশেডিং হয়ে ঘন ঘন যে বিদ্যুত্ থাকে না, সেটারও নাকি একটা মজার দিক আছে। আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ে জেনারেটর নেই। তো সেই বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা এক ভদ্রলোক গভীর রাতে বাইরে থেকে ফিরে দেখেন বিদ্যুত্ নেই, বিল্ডিংয়ে একেবারে নিশ্চিদ্র অন্ধকার। তিনি থাকেন আটতলায়, তাঁর ঠিক নিচে সাততলায় এক মহিলা তাঁর ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে বাস করেন, আর ওঁর স্বামী থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ভদ্রলোক অন্ধকারে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে সাততলা অবধি উঠে ওটাই তাঁর বাসা মনে করে এবং দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে প্রবেশপূর্বক সারা রাত ওখানে কাটিয়ে পরদিন সকালে সূর্যের আলোয় প্রকৃত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পালিয়ে বাঁচেন।’
মিসেস খান গল্পটি শুনে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেন ও কেবলই হাসতে লাগলেন।
দিন যায়, ক্ষণ যায়, মিসেস খান তারিখ হিসাব করেন—কবে ছয় সপ্তাহ পূর্ণ হবে; আর কবে তিনি এই গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত হবেন।
ইতিমধ্যে চার সপ্তাহ চলে গেছে। মিসেস আহমেদ একদিন এসে বললেন, ‘আপা আজকে সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম, একটা মজার দৃশ্য দেখে এলাম—বাচ্চা ছেলে ডাক্তার সাহেবের আঙুল কামড় দিয়ে ধরে রেখেছে। ডাক্তার চিত্কার করে বলছেন, ‘ওরে বাবারে...মারে;’ আর বাচ্চার মা বাচ্চাকে আদর করে বলছেন, ‘ছোট্ট সোনা খোকন আমার, দাঁতটা একটু খুলে দাও। ডাক্তার সাহেব আর কখ্খনো তোমার মুখের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে তোমার টনসিল দেখবেন না।’ উপযুক্ত মায়ের উপযুক্ত ছেলেই বটে!
যাকগে, ইংরেজি ভাষায় একটা কথা আছে, ‘টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েটস ফর নান, অর্থাত্ সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। অতএব, প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে একদিন ছয় সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলো। চিকিত্সক এসে মিসেস খানের পায়ের প্লাস্টার খুলে দিলেন। অতঃপর পরীক্ষান্তে বললেন, ‘ভাঙা পা ঠিক মতোই জোড়া লেগেছে, আর কোনো ভয় নেই।’
‘আমি কি তাহলে এখন সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারি?’ মিসেস খান প্রশ্ন করলেন।
‘কেন নয়? অবশ্যই পারেন।’ চিকিত্সক জবাব দিলেন।
‘যাক তাহলে বাঁচা গেল ডাক্তার সাহেব’, মিসেস খান এবারে বললেন, ‘আপনি সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে নিষেধ করেছিলেন। ওই দেখুন আমার বেডরুমের জানালার গ্রিল খুলে আমার খাটের নিচে রেখে দিয়েছি এবং জানালার পাশ দিয়ে যে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পাইপ বাইরের দেয়ালের সঙ্গে লম্বালম্বি সাঁটানো, সেটা বেয়েই আমি এযাবত্ ওঠানামা করছিলাম। তবে ওটা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল বৈকি!’
সে যা হোক, শরীফ খান সাহেব ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। আজকাল সত্ সরকারি কর্মকর্তা বলতে গেলে চোখেই পড়ে না; ওঁরা অনেকটা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি। কিন্তু মিস্টার খান ছিলেন পুরোদস্তুর সত্। তা কথায় বলে, ‘ভালোর উফা (দীর্ঘায়ু) নেই, আর কমবখেতর মৃত্যু নেই।’ শরীফ খানও বেশি দিন বাঁচলেন না, হঠাত্ করে একদিন হার্ট অ্যাটাক তথা করোনারি থ্রম্বসিস রোগে পটল তুললেন।
অবশ্য নিঃসন্তান মিস্টার খান মিসেস খানকে একেবারে রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে যাননি। তিনি প্রভিডেন্ট ফান্ডে যে টাকা ও পোস্ট অফিসে যে সেভিংস সার্টিফিকেট রেখে গিয়েছিলেন, সেগুলো একত্র করে মিসেস খান বছর পাঁচেক আগের সস্তা দরে অ্যাপার্টমেন্ট কিনে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন, এখনকার দরে হলে সেটা সম্ভব হতো না। বাকি রইল খাওয়া-পরার সমস্যা। সেটার সমাধান করে দিয়েছেন সদাশয় সরকার—সরকারের সর্বশেষ বিধি-বিধান অনুসারে স্বামী চাকরিকালে মারা গেলে তাঁর বেতনের ৮০ শতাংশ স্ত্রী আমৃত্যু ভোগ করেন। এ বাবদ পাওয়া টাকা দিয়ে মিসেস খান কোনো রকমে দুই প্রান্ত মেলান। স্থায়ী কোনো কাজের লোক তিনি রাখেন না, একটি পার্টটাইম ‘বুয়া’ এসে দিনের বেলায় কাজ করে চলে যায়।
তা মিসেস খানের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, আকস্মিক বাথরুমে স্লিপ খেয়ে পড়ে বাম পা-টা হাঁটুর নিচে ভেঙে ফেললেন। চিকিত্সক এসে পা প্লাস্টার করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গেলেন এবং বললেন ছয় সপ্তাহ পরে এসে তিনি প্লাস্টার খুলে দিয়ে যাবেন। মিসেস খানকে মাঝেমধ্যে কেনাকাটার জন্য নিচে যেতে হতো, ভবনটির লিফট প্রায়ই নষ্ট থাকে; আর তিনি চারতলায় বাস করেন বিধায় অধিকাংশ সময়ই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতেন। তাই চিকিত্সক বিদায় নেওয়ার আগে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, বাম পায়ে প্লাস্টার বাঁধা অবস্থায় তিনি সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারবেন কি না। চিকিত্সক সংক্ষিপ্তভাবে জবাব দিলেন, কখনো না।
এই বিরাট শহরে, এ জনারণ্যে মিসেস খানের তেমন কোনো আত্মীয়স্বজন নেই বিধায় কেউ তাঁকে দেখতে আসে না। পার্টটাইম বুয়ার বদৌলতে তিনি সারা দিনে একবার পূর্ণমাত্রায় আহার করেন ও অন্য সময় এটা-ওটা খান, আর সারা দিন আপাতদৃষ্টিতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে পত্র-পত্রিকা পড়ে ও ঘুমিয়ে কাটান। একমাত্র ব্যতিক্রম—তাঁর পাশের অ্যাপার্টমেন্টের মিসেস আহমেদ, যাঁর কাছে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশের জন্য আলাদা চাবি দেওয়াই আছে, মাঝেমধ্যে এসে খানিকক্ষণ বসে গল্পগুজব করে যান। এগুলোর অধিকাংশই থাকে গসিপ।
এই যেমন—মিসেস আহমেদ একদিন এসে গল্প শোনালেন: বারিধারার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের বাসিন্দা এক ভদ্রলোককে অফিস থেকে আলুথালু বেশে বাসায় ফিরতে দেখে তাঁর স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? তোমাকে আলুথালু ও খুব পেরেশান দেখাচ্ছে কেন? ‘আর বলো না’, স্বামীপ্রবর দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বললেন, ‘নিচে গ্রাউন্ড ফ্লোরের রিসিপশনে আমাদের ভবনের মাস্তান টাইপ কেয়ারটেকারের সঙ্গে ঝগড়া ও ঘুষাঘুষি করে এলাম। সে বলে কী জানো? এই বিল্ডিংয়ের একজন ব্যতিরেকে প্রতিটি মহিলার সঙ্গে নাকি তার স্পেশাল খাতির!’ স্বামীর মুখের কথা শেষ হতে না হতেই স্ত্রী বলে উঠলেন। ‘তাহলে ওটা তিনতলার বাঁদিকের ফ্ল্যাটের এই দেমাগি মহিলাই হবেন।’
অবশ্য গল্পটা শুনে মিসেস খান সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমাদের দেশ এখনো অতটা ফরওয়ার্ড হয়নি। এটা নিশ্চয়ই ইউরোপ কিংবা আমেরিকার গল্প। গসিপওয়ালারা আমাদের দেশের বলে চালিয়ে দিচ্ছে।’
আরেক দিন মিসেস আহমেদ এসে বললেন, ‘শুনেছেন আপা! ঢাকায় লোডশেডিং হয়ে ঘন ঘন যে বিদ্যুত্ থাকে না, সেটারও নাকি একটা মজার দিক আছে। আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ে জেনারেটর নেই। তো সেই বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা এক ভদ্রলোক গভীর রাতে বাইরে থেকে ফিরে দেখেন বিদ্যুত্ নেই, বিল্ডিংয়ে একেবারে নিশ্চিদ্র অন্ধকার। তিনি থাকেন আটতলায়, তাঁর ঠিক নিচে সাততলায় এক মহিলা তাঁর ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে বাস করেন, আর ওঁর স্বামী থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ভদ্রলোক অন্ধকারে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে সাততলা অবধি উঠে ওটাই তাঁর বাসা মনে করে এবং দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে প্রবেশপূর্বক সারা রাত ওখানে কাটিয়ে পরদিন সকালে সূর্যের আলোয় প্রকৃত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পালিয়ে বাঁচেন।’
মিসেস খান গল্পটি শুনে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেন ও কেবলই হাসতে লাগলেন।
দিন যায়, ক্ষণ যায়, মিসেস খান তারিখ হিসাব করেন—কবে ছয় সপ্তাহ পূর্ণ হবে; আর কবে তিনি এই গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত হবেন।
ইতিমধ্যে চার সপ্তাহ চলে গেছে। মিসেস আহমেদ একদিন এসে বললেন, ‘আপা আজকে সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম, একটা মজার দৃশ্য দেখে এলাম—বাচ্চা ছেলে ডাক্তার সাহেবের আঙুল কামড় দিয়ে ধরে রেখেছে। ডাক্তার চিত্কার করে বলছেন, ‘ওরে বাবারে...মারে;’ আর বাচ্চার মা বাচ্চাকে আদর করে বলছেন, ‘ছোট্ট সোনা খোকন আমার, দাঁতটা একটু খুলে দাও। ডাক্তার সাহেব আর কখ্খনো তোমার মুখের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে তোমার টনসিল দেখবেন না।’ উপযুক্ত মায়ের উপযুক্ত ছেলেই বটে!
যাকগে, ইংরেজি ভাষায় একটা কথা আছে, ‘টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েটস ফর নান, অর্থাত্ সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। অতএব, প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে একদিন ছয় সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলো। চিকিত্সক এসে মিসেস খানের পায়ের প্লাস্টার খুলে দিলেন। অতঃপর পরীক্ষান্তে বললেন, ‘ভাঙা পা ঠিক মতোই জোড়া লেগেছে, আর কোনো ভয় নেই।’
‘আমি কি তাহলে এখন সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারি?’ মিসেস খান প্রশ্ন করলেন।
‘কেন নয়? অবশ্যই পারেন।’ চিকিত্সক জবাব দিলেন।
‘যাক তাহলে বাঁচা গেল ডাক্তার সাহেব’, মিসেস খান এবারে বললেন, ‘আপনি সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে নিষেধ করেছিলেন। ওই দেখুন আমার বেডরুমের জানালার গ্রিল খুলে আমার খাটের নিচে রেখে দিয়েছি এবং জানালার পাশ দিয়ে যে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পাইপ বাইরের দেয়ালের সঙ্গে লম্বালম্বি সাঁটানো, সেটা বেয়েই আমি এযাবত্ ওঠানামা করছিলাম। তবে ওটা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল বৈকি!’
============================
আলোচনা- 'কবিতার জন্মকথা' by আবদুল মান্নান সৈয়দ কিশোর উপন্যাস- 'জাদুর পাখি' by সোলায়মান আহসান সম্পূর্ণ কিশোর উপন্যাস- 'হলুদ পিশাচ' by রকিব হাসান কিশোর উপন্যাস- 'সূর্যোদয়ের দিনে' by জুবাইদা গুলশান আরা কিশোর উপন্যাস- 'জোলা পালোয়ান' by আতা সরকার কিশোর উপন্যাস- 'আমাদের টম কে জানো' by আবদুল হাই শিকদার মানসভ্রমণ- 'বেলবটম, পা ইত্যাদি' by আফজাল হোসেন স্মরণ- 'আবদুল মান্নান সৈয়দ এক প্রসন্ন কল্লোল' পল্লীভ্রমণ: 'দ্বীপ মনপুরার টানে' by মৃত্যুঞ্জয় রায় তিনটি কবিতা by ওমর শামস কবিতাত্রয়ী by টোকন ঠাকুর ও কামরুজ্জামান কামু কবিতা- 'নিরাকারের মুখ' by সৈয়দ তারিক ছয়টি কবিতা' by গোলাম কিবরিয়া পিনু কবিতা- 'স্বর্ণজল্লাদ' by পিয়াস মজিদ
আলোচনা- 'কবিতার জন্মকথা' by আবদুল মান্নান সৈয়দ কিশোর উপন্যাস- 'জাদুর পাখি' by সোলায়মান আহসান সম্পূর্ণ কিশোর উপন্যাস- 'হলুদ পিশাচ' by রকিব হাসান কিশোর উপন্যাস- 'সূর্যোদয়ের দিনে' by জুবাইদা গুলশান আরা কিশোর উপন্যাস- 'জোলা পালোয়ান' by আতা সরকার কিশোর উপন্যাস- 'আমাদের টম কে জানো' by আবদুল হাই শিকদার মানসভ্রমণ- 'বেলবটম, পা ইত্যাদি' by আফজাল হোসেন স্মরণ- 'আবদুল মান্নান সৈয়দ এক প্রসন্ন কল্লোল' পল্লীভ্রমণ: 'দ্বীপ মনপুরার টানে' by মৃত্যুঞ্জয় রায় তিনটি কবিতা by ওমর শামস কবিতাত্রয়ী by টোকন ঠাকুর ও কামরুজ্জামান কামু কবিতা- 'নিরাকারের মুখ' by সৈয়দ তারিক ছয়টি কবিতা' by গোলাম কিবরিয়া পিনু কবিতা- 'স্বর্ণজল্লাদ' by পিয়াস মজিদ
প্রথম আলোর সৌজন্যে
লেখকঃ আতাউর রহমান
এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
লেখকঃ আতাউর রহমান
এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
No comments