ছাত্র হত্যার শেষ কোথায় -ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ঢাকা ও রাজশাহীর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যার ঘটনা যেকোনো নাগরিককে উদ্বিগ্ন ও উত্কণ্ঠিত না করে পারে না। বাবা-মা সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন উচ্চশিক্ষার জন্য; লাশ হয়ে ফিরে আসার জন্য নয়। কাকতাল হলেও এই তিনজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন দরিদ্র বাবা-মায়ের ভরসাস্থল। প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ দিতে হলো আবু বকরকে। তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের আঁধারে শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা হত্যা করে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুককে। সবশেষে গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এ এ এম মহিউদ্দিন। তিনি টিউশনি করে শহর থেকে ফিরছিলেন। এ মৃত্যু শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য ও অসুস্থ ছাত্ররাজনীতির কথাই মনে করিয়ে দেয়।
দেশে আইন আছে, সরকার আছে, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আছে বিভিন্ন বাহিনীও। তা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসে একটার পর একটা হত্যাকাণ্ড ঘটে চলেছে। একটি মৃত্যুর ক্ষত না শুকাতেই আরেকটি মৃত্যুর খবর সতীর্থ ও স্বজনদের মর্মাহত করছে। ইসলামী ছাত্রশিবির মহিউদ্দিনকে নিজেদের কর্মী দাবি করে ওই রাতেই শহরে মিছিল বের করেছে। অথচ মহিউদ্দিনের পরিবার থেকে বলা হয়েছে, তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতি না করলেও ছাত্রলীগের সমর্থক ছিলেন। তাঁর পকেটে পাওয়া চিরকুটেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। শুক্রবার শহরে শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষে অনেকে আহত ও গ্রেপ্তার হয়েছেন। পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আগেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। লাশ নিয়ে রাজনীতিও কাম্য নয়।
ক্যাম্পাসে কারা কারা একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে, কারা শিক্ষাঙ্গনকে অশান্ত করে তুলছে—সরকারের উচিত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করা। এ ক্ষেত্রে কারও প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ হলে চলবে না। আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অপরাধ আড়াল করে অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে লাভ হবে না। অপরাধী যে-ই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনার পেছনে না ছুটে আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে এভাবে মেধাবী ছাত্রদের জীবন দিতে হতো না। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা যেমন সরকারের দায়িত্ব, তেমনি তাঁদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়াও। সন্ত্রাসের বিষবৃক্ষ এক দিনে বেড়ে ওঠেনি। অঙ্কুরে তা বিনাশ করা গেলে দেশের উচ্চশিক্ষালয়গুলোতে উপর্যুপরি ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটত না।
দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হঠাত্ অবনতি হওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে। মানুষ শান্তিতে থাকতে চায়। তারা চায়, শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হোক। ছাত্ররাজনীতির নামে সহিংসতা ও বর্বরতা চলতে দেওয়া যায় না। মহিউদ্দিনের ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে।

No comments

Powered by Blogger.