জনতার অতিমূল্যে শেয়ার ছাড়ার চেষ্টা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপত্তি by ফখরুল ইসলাম
পুঁজিবাজার থেকে এক হাজার কোটি টাকা তুলতে চাইছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক লিমিটেড। তবে ব্যাংকটি এ জন্য বাজারে ১০০ কোটি টাকার শেয়ার ছাড়তে চায়। বাকি ৯০০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে যে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে ব্যাংকটি ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের (ফেস ভ্যালু) প্রতি শেয়ারে প্রিমিয়াম দাবি করেছে ৯০০ টাকা। অর্থাত্ জনগণকে ১০০ টাকা মূল্যের একটি শেয়ার কিনতে হবে এক হাজার টাকা করে।
অবশ্য গত ২১ ডিসেম্বর জনতা ব্যাংকের এ আবেদনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত জানতে চায় এসইসি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে মতামত পাঠিয়েছে, তাতে এত উঁচু হারে প্রিমিয়াম দেওয়ার বিরোধিতা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এক হাজার টাকা করে (প্রিমিয়ামসহ) জনতা ব্যাংককে শেয়ার ছাড়তে দেওয়া যথাযথ হবে না। কারণ কাল্পনিক হিসাবের ওপর ভিত্তি করে মাত্রাতিরিক্ত প্রিমিয়াম দাবি করেছে জনতা ব্যাংক, যা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী।
রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক সরকারকে শতভাগ মালিকানা দিয়ে ২০০৭ সালে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাংকটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ছিল ৮৮৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, হিসাববিজ্ঞানের নিয়মনীতি না মেনে এই লোকসানকে সুনাম হিসেবে বিবেচনা করেছে জনতা ব্যাংক। কারণ, হিসাববিজ্ঞানের মান অনুযায়ী ক্রয় প্রতিদান ছাড়া সুনামকে হিসাবভুক্ত করার নিয়ম নেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলছে, জনতা ব্যাংক তা ‘অন্যান্য সম্পদ’ হিসাবের অধীনে ‘মূল্যায়ন সমন্বয়’ (ভ্যালুয়েশন অ্যাডজাস্টমেন্ট) নামে হিসাবভুক্ত করেছে। আর্থিক বিবরণীতে এও উল্লেখ করা হয়েছে যে ওই হিসাবের স্থিতি ১০ বছরে অবলোপন করা হবে।
২০০৮ সালে ৮৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা অবলোপন করাও হয়। অবলোপনের পর ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ওই হিসাবের স্থিতি দাঁড়ায় ৮০০ কোটি তিন লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত হলো, জনতা ব্যাংকের এই হিসাব একটি কাল্পনিক হিসাব। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছাড়ার আগে যখন শেয়ারপ্রতি অন্তর্নিহিত মূল্য বা নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) নির্ণয় করা হবে, তখন সুনাম বাবদ ধরে নেওয়া কাল্পনিক হিসাবের অঙ্কটি বাদ যাবে।
২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জনতা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন, অবণ্টিত মুনাফা এবং সঞ্চিতির (রিজার্ভস) পরিমাণ ৯১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ থেকে মূল্যায়ন সমন্বয় হিসাবের নিট স্থিতি ৮০০ কোটি তিন লাখ টাকা বাদ দেওয়া হলে নিট শেয়ারহোল্ডারস ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়াবে মাত্র ১১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
জনতা ব্যাংকের মোট শেয়ারের সংখ্যা দুই কোটি ৫৯ লাখ। বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এতে শেয়ারপ্রতি অন্তর্নিহিত মূল্য দাঁড়ায় ৪৩ টাকা ১২ পয়সা। এই অঙ্ক অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা থেকে ৫৬ টাকা ৮৮ পয়সা আর প্রস্তাবিত ইস্যুমূল্য এক হাজার টাকা থেকে ৯৫৬ টাকা ৮৮ পয়সা কম। অর্থাত্ প্রস্তাবিত ইস্যুমূল্য অন্তর্নিহিত মূল্যের ২৩ গুণ এবং অভিহিত মূল্যের ১০ গুণ বেশি। প্রস্তাবিত মূল্যের সঙ্গে অন্তর্নিহিত মূল্য ব্যাপক অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, পুঞ্জীভূত লোকসান থাকা অবস্থায় জনতা ব্যাংককে এত বেশি মূল্যে শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দেওয়া বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী হবে।
তা ছাড়া অতীত লোকসান অবলোপনের কারণে আগামী বছরগুলোতে ব্যাংকের লাভ-ক্ষতি হিসাবে সংশ্লিষ্ট বছরের পরিচালন মুনাফার সঠিক চিত্র প্রতিফলিত হবে না।
আর ভবিষ্যতের মুনাফা থেকে পুঞ্জীভূত লোকসান অবলোপন করা হবে বলে এর ভার গিয়ে পড়বে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর। এমতাবস্থায় শেয়ার ইস্যু করা কিছুতেই যথাযথ ও ন্যায়ানুগ হবে না বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, জনতা ব্যাংকের মালিকানা কাঠামোতে পরিবর্তন হয়েছে, মালিকানায় পরিবর্তন হয়নি।
জনতা ব্যাংক লিমিটেড যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ক্রয় করেছে, তাতে ক্রয় প্রতিদান এবং সম্পদ ও দায়ের মূল্য নির্ধারণ করে সুনাম নির্ধারণ করা হয়নি।
এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস) নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তা ছাড়া আইএএস অনুযায়ী, প্রতিবছর সুনামের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, অবলোপন করা যাবে না।
তবে যোগাযোগ করলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মেনে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে এসইসিতে শেয়ার ছাড়ার আবেদন করা হয়েছে। এখন এসইসি বিষয়টি বিবেচনা করবে।’
অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকার বলেন, ‘মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত পাওয়া গেছে। বিষয়টি যথাযথ বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে যে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে ব্যাংকটি ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের (ফেস ভ্যালু) প্রতি শেয়ারে প্রিমিয়াম দাবি করেছে ৯০০ টাকা। অর্থাত্ জনগণকে ১০০ টাকা মূল্যের একটি শেয়ার কিনতে হবে এক হাজার টাকা করে।
অবশ্য গত ২১ ডিসেম্বর জনতা ব্যাংকের এ আবেদনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত জানতে চায় এসইসি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে মতামত পাঠিয়েছে, তাতে এত উঁচু হারে প্রিমিয়াম দেওয়ার বিরোধিতা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এক হাজার টাকা করে (প্রিমিয়ামসহ) জনতা ব্যাংককে শেয়ার ছাড়তে দেওয়া যথাযথ হবে না। কারণ কাল্পনিক হিসাবের ওপর ভিত্তি করে মাত্রাতিরিক্ত প্রিমিয়াম দাবি করেছে জনতা ব্যাংক, যা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী।
রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক সরকারকে শতভাগ মালিকানা দিয়ে ২০০৭ সালে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাংকটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ছিল ৮৮৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, হিসাববিজ্ঞানের নিয়মনীতি না মেনে এই লোকসানকে সুনাম হিসেবে বিবেচনা করেছে জনতা ব্যাংক। কারণ, হিসাববিজ্ঞানের মান অনুযায়ী ক্রয় প্রতিদান ছাড়া সুনামকে হিসাবভুক্ত করার নিয়ম নেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলছে, জনতা ব্যাংক তা ‘অন্যান্য সম্পদ’ হিসাবের অধীনে ‘মূল্যায়ন সমন্বয়’ (ভ্যালুয়েশন অ্যাডজাস্টমেন্ট) নামে হিসাবভুক্ত করেছে। আর্থিক বিবরণীতে এও উল্লেখ করা হয়েছে যে ওই হিসাবের স্থিতি ১০ বছরে অবলোপন করা হবে।
২০০৮ সালে ৮৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা অবলোপন করাও হয়। অবলোপনের পর ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ওই হিসাবের স্থিতি দাঁড়ায় ৮০০ কোটি তিন লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত হলো, জনতা ব্যাংকের এই হিসাব একটি কাল্পনিক হিসাব। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছাড়ার আগে যখন শেয়ারপ্রতি অন্তর্নিহিত মূল্য বা নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) নির্ণয় করা হবে, তখন সুনাম বাবদ ধরে নেওয়া কাল্পনিক হিসাবের অঙ্কটি বাদ যাবে।
২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জনতা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন, অবণ্টিত মুনাফা এবং সঞ্চিতির (রিজার্ভস) পরিমাণ ৯১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ থেকে মূল্যায়ন সমন্বয় হিসাবের নিট স্থিতি ৮০০ কোটি তিন লাখ টাকা বাদ দেওয়া হলে নিট শেয়ারহোল্ডারস ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়াবে মাত্র ১১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
জনতা ব্যাংকের মোট শেয়ারের সংখ্যা দুই কোটি ৫৯ লাখ। বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এতে শেয়ারপ্রতি অন্তর্নিহিত মূল্য দাঁড়ায় ৪৩ টাকা ১২ পয়সা। এই অঙ্ক অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা থেকে ৫৬ টাকা ৮৮ পয়সা আর প্রস্তাবিত ইস্যুমূল্য এক হাজার টাকা থেকে ৯৫৬ টাকা ৮৮ পয়সা কম। অর্থাত্ প্রস্তাবিত ইস্যুমূল্য অন্তর্নিহিত মূল্যের ২৩ গুণ এবং অভিহিত মূল্যের ১০ গুণ বেশি। প্রস্তাবিত মূল্যের সঙ্গে অন্তর্নিহিত মূল্য ব্যাপক অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, পুঞ্জীভূত লোকসান থাকা অবস্থায় জনতা ব্যাংককে এত বেশি মূল্যে শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দেওয়া বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী হবে।
তা ছাড়া অতীত লোকসান অবলোপনের কারণে আগামী বছরগুলোতে ব্যাংকের লাভ-ক্ষতি হিসাবে সংশ্লিষ্ট বছরের পরিচালন মুনাফার সঠিক চিত্র প্রতিফলিত হবে না।
আর ভবিষ্যতের মুনাফা থেকে পুঞ্জীভূত লোকসান অবলোপন করা হবে বলে এর ভার গিয়ে পড়বে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর। এমতাবস্থায় শেয়ার ইস্যু করা কিছুতেই যথাযথ ও ন্যায়ানুগ হবে না বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, জনতা ব্যাংকের মালিকানা কাঠামোতে পরিবর্তন হয়েছে, মালিকানায় পরিবর্তন হয়নি।
জনতা ব্যাংক লিমিটেড যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ক্রয় করেছে, তাতে ক্রয় প্রতিদান এবং সম্পদ ও দায়ের মূল্য নির্ধারণ করে সুনাম নির্ধারণ করা হয়নি।
এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস) নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তা ছাড়া আইএএস অনুযায়ী, প্রতিবছর সুনামের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, অবলোপন করা যাবে না।
তবে যোগাযোগ করলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মেনে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে এসইসিতে শেয়ার ছাড়ার আবেদন করা হয়েছে। এখন এসইসি বিষয়টি বিবেচনা করবে।’
অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকার বলেন, ‘মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত পাওয়া গেছে। বিষয়টি যথাযথ বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
No comments