উপেক্ষিত ভাষাসৈনিক মঞ্জুর হোসেন -স্মরণ by এম আর মাহবুব
ভাষা আন্দোলনের অনেক ইতিহাসই চাপা পড়ে যাচ্ছে। অনেক ভাষাসৈনিকই থেকে যাচ্ছেন দৃষ্টির আড়ালে। এদিকে ফেব্রুয়ারি এলেই ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যমে নতুন নতুন ভাষাসৈনিকদের দেখতে পাচ্ছি আমরা। এত দিন তাঁরা কোথায় ছিলেন, কীভাবেই বা তাঁরা ভাষাসৈনিক, প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া কঠিন। ঐতিহাসিকভাবে যাঁদের অবদান স্বীকৃত, কিন্তু এখন যাঁদের নিয়ে আলোচনা হয় না, তাঁদেরই একজন মঞ্জুর হোসেন। তাঁকে নিয়েই আজ কথা বলব।
মঞ্জুর হোসেনের জন্ম ১৯২৮ সালের ১৫ জুন, নওগাঁ জেলার সুলতানপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মোবারক আলী, মায়ের নাম নুরুন নাহার। তিনি ১৯৪৩ সালে নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৪৫ সালে কলকাতা থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। চিকিত্সাবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করা সত্ত্বেও সরকারি চাকরির মোহ ত্যাগ করে তিনি আজীবন সাধারণ মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। এমবিবিএস পাস করে জন্মভূমি নওগাঁয় এসে চিকিত্সক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের চিকিত্সাসেবা দিয়েছেন। গরিব রোগীদের বিনা পয়সায় চিকিত্সা করতেন, এমনকি তাদের ওষুধ পর্যন্ত কিনে দিতেন। কথিত আছে, তিনি ঘোড়ার গাড়িতে গ্রামেগঞ্জে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে রোগীর সেবা করতেন। অনেক জটিল রোগীকে ঢাকা পাঠিয়ে তাদের চিকিত্সার সব ব্যবস্থা করে দিতেন ‘গরিবের ডাক্তার’ বলে খ্যাত মঞ্জুর হোসেন। চিকিত্সার পাশাপাশি সাংবাদিকতার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। তাঁর বাবার উদ্যোগ ও সম্পাদনায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক দেশ বাণীর সম্পাদনার দায়িত্ব নেন ১৯৬০ সালে। পত্রিকা প্রকাশ করতে গিয়ে তাঁকে বিভিন্ন সময় কারাবরণসহ নানা নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তিনি আবৃত্তি, সংগীতচর্চা ও লেখালেখি করতেন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন একজন নির্লোভ, ত্যাগী, সত্ ও আদর্শ মানুষ। সারা জীবন সংসার ও নিজের জন্য কিছুই সঞ্চয় করেননি। নিজের শক্তি, শ্রম ও মেধা বিলিয়ে দিয়েছেন নওগাঁবাসী তথা দেশ ও জাতির জন্য। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) রাজশাহী জেলার সভাপতি পদে আসীন ছিলেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দালনে অত্যন্ত সাহসী ও সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছিলেন মঞ্জুর হোসেন। তখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৃশেষ বর্ষের ছাত্র। ভাষা আন্দোলনে সরকারবিরোধী বিপ্লবী নেতা হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজে তিনি ‘বিপ্লব দা’ নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪৯ সালে সরকারি স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দিবসে মঞ্জুর হোসেন বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি হলে সেদিন সন্ধ্যায় তিনি সাহসী ও দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘চুয়াল্লিশ ধারা ভাঙবই ভাঙব।’ অন্যদিকে মেডিকেল ব্যারাকের এক স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে এর প্রতিবাদে বক্তব্য দেন। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে গোলাম মাওলার কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায়ও তিনি ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। তা ছাড়া গভীর রাতে ফজলুল হক হলের পুকুরপাড়ে ১১ জন ছাত্রনেতার ১৪৪ ধারা ভাঙার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের একমাত্র প্রতিনিধি মঞ্জুর হোসেন। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি আমতলার সভায় ছাত্র জমায়েত ও সভা সফল করতে ঢাকা মেডিকেলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। তিনি সভায় উপস্থিত থেকে ১৪৪ ধারা ভাঙার মিছিলেও অংশ নেন। একুশের আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি কারাভোগ করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের অন্যতম কারিগর হলেন মঞ্জুর হোসেন। ভাষা আন্দোলন ছাড়াও পরবর্তীকালে সংঘটিত এ দেশের বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ছিলেন তিনি।
তত্কালীন সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার কারণে তাঁকে ১৭ বার গ্রেপ্তার করা হয়। এই মহান ত্যাগী ভাষাকর্মী ১৯৬৮ সালের ৪ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল ছিল তাঁর মৃত্যুদিবস।
মৃত্যুকালেও তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। ভাষাসংগ্রামে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ২০০২ সালে ‘একুশে পদক’ (মরণোত্তর) দেওয়া হয়।
মঞ্জুর হোসেনের জন্ম ১৯২৮ সালের ১৫ জুন, নওগাঁ জেলার সুলতানপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মোবারক আলী, মায়ের নাম নুরুন নাহার। তিনি ১৯৪৩ সালে নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৪৫ সালে কলকাতা থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। চিকিত্সাবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করা সত্ত্বেও সরকারি চাকরির মোহ ত্যাগ করে তিনি আজীবন সাধারণ মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। এমবিবিএস পাস করে জন্মভূমি নওগাঁয় এসে চিকিত্সক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের চিকিত্সাসেবা দিয়েছেন। গরিব রোগীদের বিনা পয়সায় চিকিত্সা করতেন, এমনকি তাদের ওষুধ পর্যন্ত কিনে দিতেন। কথিত আছে, তিনি ঘোড়ার গাড়িতে গ্রামেগঞ্জে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে রোগীর সেবা করতেন। অনেক জটিল রোগীকে ঢাকা পাঠিয়ে তাদের চিকিত্সার সব ব্যবস্থা করে দিতেন ‘গরিবের ডাক্তার’ বলে খ্যাত মঞ্জুর হোসেন। চিকিত্সার পাশাপাশি সাংবাদিকতার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। তাঁর বাবার উদ্যোগ ও সম্পাদনায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক দেশ বাণীর সম্পাদনার দায়িত্ব নেন ১৯৬০ সালে। পত্রিকা প্রকাশ করতে গিয়ে তাঁকে বিভিন্ন সময় কারাবরণসহ নানা নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তিনি আবৃত্তি, সংগীতচর্চা ও লেখালেখি করতেন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন একজন নির্লোভ, ত্যাগী, সত্ ও আদর্শ মানুষ। সারা জীবন সংসার ও নিজের জন্য কিছুই সঞ্চয় করেননি। নিজের শক্তি, শ্রম ও মেধা বিলিয়ে দিয়েছেন নওগাঁবাসী তথা দেশ ও জাতির জন্য। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) রাজশাহী জেলার সভাপতি পদে আসীন ছিলেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দালনে অত্যন্ত সাহসী ও সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছিলেন মঞ্জুর হোসেন। তখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৃশেষ বর্ষের ছাত্র। ভাষা আন্দোলনে সরকারবিরোধী বিপ্লবী নেতা হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজে তিনি ‘বিপ্লব দা’ নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪৯ সালে সরকারি স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দিবসে মঞ্জুর হোসেন বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি হলে সেদিন সন্ধ্যায় তিনি সাহসী ও দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘চুয়াল্লিশ ধারা ভাঙবই ভাঙব।’ অন্যদিকে মেডিকেল ব্যারাকের এক স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে এর প্রতিবাদে বক্তব্য দেন। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে গোলাম মাওলার কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায়ও তিনি ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। তা ছাড়া গভীর রাতে ফজলুল হক হলের পুকুরপাড়ে ১১ জন ছাত্রনেতার ১৪৪ ধারা ভাঙার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের একমাত্র প্রতিনিধি মঞ্জুর হোসেন। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি আমতলার সভায় ছাত্র জমায়েত ও সভা সফল করতে ঢাকা মেডিকেলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। তিনি সভায় উপস্থিত থেকে ১৪৪ ধারা ভাঙার মিছিলেও অংশ নেন। একুশের আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি কারাভোগ করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের অন্যতম কারিগর হলেন মঞ্জুর হোসেন। ভাষা আন্দোলন ছাড়াও পরবর্তীকালে সংঘটিত এ দেশের বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ছিলেন তিনি।
তত্কালীন সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার কারণে তাঁকে ১৭ বার গ্রেপ্তার করা হয়। এই মহান ত্যাগী ভাষাকর্মী ১৯৬৮ সালের ৪ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল ছিল তাঁর মৃত্যুদিবস।
মৃত্যুকালেও তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। ভাষাসংগ্রামে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ২০০২ সালে ‘একুশে পদক’ (মরণোত্তর) দেওয়া হয়।
No comments