রংপুর ভূমি কর্মকর্তা মোজাহিদের তেলেসমাতি কারবার

মো. মোজাহিদ। বিগত আওয়ামী সরকারের দোসর ও দালাল হিসেবে পরিচিত রংপুর শালবন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা মোজাহিদ একযুগ ধরে প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে তৈরি করেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অপকর্মের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। বৈধ দলিলের তোয়াক্কা না করে খাস খতিয়ানে জমি তুলে শত শত মানুষকে করছেন হয়রানি। আবার সরকারি খাসজমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড করে হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার এ দুর্নীতি ও অপকর্মের সহযোগিতা করেছেন রংপুর রাজস্ব বিভাগের সাবেক হিসাব তত্ত্বাবধায়ক আমজাদ হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা তুষার কান্তি মণ্ডলসহ একাধিক নেতা। বিনিময়ে তারাও নিয়েছেন অবৈধ সুবিধা। জনগণের টাকায় বেতন নেয়া এ চাকরিজীবী ছোট-বড় কাউকে তোয়াক্কা না করে নিজেকে ভাবেন মহারাজা, এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। চাকরির সুবাদে ভূমি বাণিজ্যে অর্জন করেছেন কোটি কোটি টাকা। যা তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। জানা যায়, ভূমি জালিয়াতি সিন্ডিকেট মোজাহিদের নামে আদালতে মামলা রয়েছে। দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ পেলেও বিগত সরকারের নেতাদের ছত্রছায়ায় ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পার পেয়েছেন। সম্প্রতি বেপরোয়া, দুর্নীতিবাজ মোজাহিদের বিরুদ্ধে রংপুর জেলা প্রশাসক, ভূমি মন্ত্রণালয়, দুদক, বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল মানবজমিনকে বলেন, মোজাহিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাড় দেয়া হবে না, আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, রংপুর নগরীর কামাল কাছনার শামসুল হক একসনা মেয়াদে জমি লিজ নিয়ে খাজনা প্রদান করে ৪৭ বছর ধরে ভোগ-দখল করেছেন। সম্প্রতি ভূমি সিন্ডিকেটের ইন্ধনে আব্দুল হাই নামে এক ব্যক্তি ওই জমির মালিকানা দাবি করছেন। তার প্রশ্ন এতদিন কোথায় ছিলেন তিনি। এছাড়াও কামাল কাছনা মৌজার আরএস-৭২৭৩ হাল দাগের সরকারি আট শতক খাসজমি জাল দলিল তৈরি করে দুর্নীতিবাজ মোজাহিদ চক্র রক্ষক ও ভক্ষকের কাজ করছেন। শালবন ভূমি অফিসে খাজনা-খারিজের ভলিউমের পাতা ছেঁড়া, হোল্ডিং নেই, তালিকায় আছে, দীর্ঘদিন খাজনা দেয়া নেই বলে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করে মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছে। রাধাবল্লভ মৌজার ২৭৭৯ দাগের সরকারি জমি, আরএস রেকর্ড সেটেলমেন্ট অফিসে নিজে যোগসাজশ করে নিজের নামে রেকর্ড করে। এছাড়া একই মৌজায় ১৮৮৮ দাগের রংপুর সরকারি কলেজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড করে দেন এবং কামাল কাছনা মৌজার ৩৪৭৩২৬ দাগের জমি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড করে দেন।

 অভিযোগে বলা হয়, এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হলে জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা মোজাহিদ, আমজাদ গংয়ের প্রমাণ বেরিয়ে আসবে। জুম্মাপাড়ার হারুন, শালবনের শাহাবুদ্দিনসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ক্রয়কৃত একই দাগের জমি দুই অংশীদারের একজন রহস্যজনকভাবে খাজনা পরিশোধ করলেও অপরজনের খাজনা নেয়া হচ্ছে না বিভিন্ন অজুহাতে। এ ব্যাপারে ভূমি কর্মকর্তা মোজাহিদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি অপকর্ম করিনি। এটা হয়তো শালবন ভূমি অফিসের সাবেক কর্মকর্তা মেজবাহ ও শাহাজাদা মিয়া করেছে। একই দাগের জমি একজনের খাজনা নিলে, অপরজনের কেন নিচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে বলেন, হয়তো এটা ভুলে হয়েছে। মানবাধিকারকর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খাজনা, নামজারি, খারিজ করতে প্রতিদিন মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। ভূমি অফিসে অসাধু কর্মকর্তা ও দালাল চক্র সিন্ডিকেট বিভিন্ন অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের বদলি করে দিয়ে আরেক জায়গায় দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এটা সঠিক বিচার নয়। দুর্নীতিবাজদের অপসারণ করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.