রাজ্যসভা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব

কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ভারতের বিরোধীদলীয় জোট ‘ইন্ডিয়া’ রাজ্যসভার চেয়ারপারসন জগদীপ ধনকরের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছে মঙ্গলবার সকালে। তাতে তারা অভিযোগ করেছে, পক্ষপাতিত্ব করে রাজ্যসভা পরিচালনা করছেন তিনি। এতে স্বাক্ষর করেছেন কংগ্রেসের সদস্যরা, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি, অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি, তামিলনাড়ুর দ্রাভিদা মুন্নেত্রা কাজাগাম (এনডিএমকে) এবং লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের কমপক্ষে ৫০ জন এমপি। প্রস্তাবটি রাজ্যসভার সচিবালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। তবে তা পাস হবে বলে মনে হয় না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জয়রাম রমেশ লিখেছেন, ইন্ডিয়া গ্রুপের সব দলের সামনে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। কারণ, তিনি কাউন্সিল অব স্টেট পরিচালনায় পক্ষপাতিত্ব করছেন। ইন্ডিয়া গ্রুপের দলগুলোর জন্য এমন সিদ্ধান্তে যাওয়া খুবই বেদনার। কিন্তু পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের জন্য এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। তৃণমূলের এমপি সাগরিকা ঘোষ তার বক্তব্যে আরও কড়াভাবে আঘাত করেছেন। সরকার পার্লামেন্টকে ‘হত্যা’ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, আমাদের অধিকারের জন্য পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র সুরক্ষিত রাখার জন্য, আমরা অনাস্থা প্রস্তাবে আমাদের রেজ্যুলুশন দিয়েছি। কারণ, আমাদেরকে জনগণের ইস্যু তুলে ধরতে দেয়া হচ্ছিল না। এখন প্রশ্ন হলো এই প্রস্তাব কি সফল হবে? তৃণমূলের একটি সূত্র এনডিটিভিকে বলেছেন, রাজ্যসভায় এই প্রস্তাব উত্থাপনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বিরোধীদের। তবে তারা সফল হওয়ার চেয়ে নীতিগতভাবে কাজ করেছেন।

নিয়ম অনুযায়ী এই প্রস্তাব পাস করাতে হলে বা ধনকরকে সরাতে হলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে প্রস্তাব পাস করাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন হবে শতকরা ৫০ ভাগ ভোট ও সঙ্গে আরও একজনের ভোট। রাজ্যসভায় এই ভোট হবে। যদি রাজ্যসভায় তা পাস হয়, তবেই তা একই নিয়মে লোকসভায় পাস হতে হবে। যেহেতু বিরোধীদের পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, তাই ধনকরকে পদ থেকে তারা সরাতে পারবেন বলে মনে হয় না। পার্লামেন্টে ভারতীয় জনতা পার্টির এমপি এবং বিরোধী দলের এমপিদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে তীব্র বাদ-প্রতিবাদ হয়। এর মধ্যে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ব্যবসায়ী জর্জ সরোসের মধ্যে কথিত সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য। এরপরই পার্লামেন্টে ওই অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয়া হয়। পরে এদিনের জন্য পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। বিজেপি’র এমপিরা তার বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, বিরোধীরা পার্লামেন্টকে কার্যকর করতে দিচ্ছে না। পাল্টা জবাবে বিরোধীরা বলেন, তাদেরকে পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উত্থাপন করতে দেয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে আছে একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে উত্তর প্রদেশের সাম্বলে জরিপ জয়। তা নিয়ে সহিংসতা অন্যতম ইস্যু। এ ছাড়া আছে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ (এমএসপি) এবং তাদের প্রতিবাদ। কংগ্রেসের অন্যতম নেত্রী প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্র বলেন- প্রতিদিন আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা আলোচনা চায় না। এজন্যই যেকোনো কারণ সামনে এলেই তারা পার্লামেন্টকে মুলতবি করে দেয়। অন্যদিকে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং ঘোষণা করেন যে, কংগ্রেস বাজে আচরণ করছে। তিনি জানতে চান- কেন সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে জর্জ সরোসের সম্পর্কের বিষয়টি পরিষ্কার করছে না তারা? তারা পার্লামেন্টকে চলতেও দিচ্ছে না।

সোমবার রাজ্যসভায় বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। ওইদিন সোনিয়া গান্ধী ও তার ছেলে রাহুল গান্ধীকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতারা। তারা বলেন, ব্যবসায়ী জর্জ সরোসের সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর সম্পর্ক আছে। তবে কী ধরনের সম্পর্ক সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। আরও অভিযোগ করেন যে, জর্জ সরোসের ফাউন্ডেশনের অর্থে গড়ে তোলা হয়েছে কংগ্রেসের একটি দলীয় প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য, জর্জ সরোসের এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশন কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছে। বিজেপি দাবি করে মিসেস সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে এই ডেমোক্রেটিক নেতার সম্পর্ক আছে। বিজেপি’র জেপি নাড্ডা এই অভিযোগ করেন রাজ্যসভায়। তিনি আরও বলেন, তাদের এই সম্পর্ক ভারতের সম্মানহানি করছে। জাতীয় নিরাপত্তায় উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নিয়ে আলোচনা করতে চান নাড্ডা। কিন্তু তার এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দেন কংগ্রেসের প্রধান মল্লিকার্জন খাড়গে। কিন্তু প্রতিপক্ষ এমপিদের চিৎকার-চেঁচামেচির কারণে তাকে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে হয়। অধিবেশন বেশ কয়েকবার মুলতবি করতে হয়। এই অবস্থায় চেয়ারম্যান যেভাবে রাজ্যসভা পরিচালনা করেছেন, তার ফলেই চেয়ারম্যান ধনকরের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে উৎসাহিত করে কংগ্রেস ও বিরোধীদের। মল্লিকার্জুন খাড়গে অভিযোগ করেন, এই ইস্যুতে আলোচনার বিরুদ্ধে ১১টি নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নোটিশ প্রত্যাখ্যান করে সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে অনুমতি দিয়েছেন ধনকর। মল্লিকার্জুন খাড়গে জেপি নাড্ডার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, রাজ্যসভার নেতা যা বলেছেন তা মিথ্যা। যে এমপি উপস্থিত নেই, তার সম্মানহানির জন্য এটা করা হয়েছে।  

এর আগে গত সপ্তাহে রাহুল গান্ধীকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে আখ্যায়িত করে তার কড়া সমালোচনা করে বিজেপি। তার নাম জর্জ সরোস এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু এজেন্সিকে তারা ভারতকে অস্থিতিশীল করার ‘ত্রিভুজ’ ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেন তারা। উত্তর প্রদেশের সাম্বলে একটি মসজিদের বিষয়ে জরিপকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এবং যুক্তরাষ্ট্রে আদানি গ্রুপের আদানি গ্রিন এনার্জির ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন নিয়ে আলোচনার ইস্যু উত্থাপন করার চেষ্টা করতেই বিজেপি এমন পাল্টা আক্রমণ করে বক্তব্য রাখেন। ফরাসি একটি মিডিয়া কোম্পানি মিডিয়াপার্ট- একটি রিপোর্ট প্রকাশ করার পর এমনটা দেখা দেয়। তাতে বলা হয়, ওসিসিআরপি (অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপসন রিপোর্টিং প্রজেক্ট) এবং মার্কিন সরকারের মধ্যে এক গোপন সম্পর্ক আছে। বিজিপি এরপর অভিযোগ করে যে, জর্জ সরোসের অর্থায়নে পরিচালিত ওসিসিআরপি ভারতকে টার্গেট করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তারপর সেই রিপোর্টকে ব্যবহার করেছে কংগ্রেস। তারা ক্ষমতাসীন দল, সরকার এবং ভারতীয় ব্যবসায়ী স্বার্থের সমালোচনা করছে। তবে বিজেপি’র এই দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে কংগ্রেস। তারা বলেছে- আমরা দেশপ্রেমিক। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.