পুরুষের দুশ্চিন্তার রকমফের
ঝক্কি
ঝামেলার জীবনে দুশ্চিন্তা যেন শরীরে অঙ্গের মতো সেঁটে থাকে। ঘরে বসে থাকুন
বা ঘর থেকে বের হন, দুশ্চিন্তা নির্দ্বিধায় আপনার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে চলাচল
করবে। এমন জীবনে ঘুমিয়েও শান্তি নেই, ঘুমের মধ্যেও দুশ্চিন্তা দুঃস্বপ্নের
রূপে তাড়া করে ফেরে। সেই তাড়া এমনই ঊর্ধ্বগতির যে ঘুম ভেঙে গেলেই স্বস্তি
মেলে বেশি। নির্ঝঞ্ঝাট জীবনেও দুশ্চিন্তা এসে যে ভর করে না তা নয়। প্রকৃতি
ভেদে তা হালকা ও গাঢ়, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ, সাময়িক বা দীর্ঘস্থায়ী আকারের হয়।
নারী ও পুরুষেও দুশ্চিন্তার ধরন ভিন্ন। মোদ্দা কথা, মানুষ মাত্রই
দুশ্চিন্তা ছাড়া জীবন কাটানো প্রায় অসম্ভব।
তবে এই নিবন্ধে শুধু পুরুষের দুশ্চিন্তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। পুরুষের দুশ্চিন্তা নিয়ে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পুরুষের দুশ্চিন্তার রকমফের আছে। এ সমস্যা একেক পুরুষের ক্ষেত্রে একেক রকমভাবে দেখা দেয়। যখন কেউ দুশ্চিন্তা নিয়ে ভাবেন, তখন মাত্রাতিরিক্ত খারাপ অবস্থার একটি চিত্র তাঁর সামনে ভেসে ওঠে এবং আতঙ্কাবস্থা এড়ানোর চেষ্টা আরও বেশি ভোগায়। মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে দিনে দিনে এই ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে এ ক্ষেত্রে পুরুষেরা মাথাব্যথা, ঘুমের ব্যাঘাত, পেশিব্যথাসহ অন্যান্য ব্যথার অভিযোগ বেশি করেন। তাঁরা দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতে ওষুধ ও অ্যালকোহলে ঝুঁকে পড়েন। অনেক পুরুষের অ্যালকোহল গ্রহণের প্রবণতার পেছনে রয়েছে দুশ্চিন্তা রোগ। অনেক ক্ষেত্রে রাগ এবং ক্রোধ আকারে এই দুশ্চিন্তার প্রকাশ ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের রাজ্য কেনটাকির লুইসভিলে শহরের ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী কেভিন চ্যাপম্যানের ভাষায়, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পুরুষের তুলনায় আক্রমণাত্মক আচরণের পুরুষ এই সমাজে বেশি গ্রহণযোগ্য।
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন জীবনে দুশ্চিন্তা রোগে আক্রান্ত হন। নারীর ক্ষেত্রে এ সংখ্যা তিনজনে একজন।
তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গবেষণাগুলোতে দুশ্চিন্তার সঙ্গে আত্মহত্যার বিষয়টিও জড়িত হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ২০১০ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, হতাশার মতো মানসিক অসুস্থতা আত্মহত্যার ভাবনাকে জাগিয়ে তোলে। তবে বিষয়টি এমন নয় যে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তিমাত্রই আত্মহত্যার দিকে ঝোঁকেন। দুশ্চিন্তা রোগের চেয়ে বরং আচরণগত সমস্যা ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যায় ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্রের তথ্যে অনুসারে, দেশটিতে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। নারীর তুলনায় পুরুষের আত্মহত্যার হার তিন গুণ বেশি।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং এ গবেষণার গবেষক ম্যাথিউ কে নক বলেন, যে ধরনের মানুষেরা আতঙ্কগ্রস্ত হন এবং যাঁরা পরিস্থিতিকে অসহনীয় মনে করে পালাতে চান, তাঁদের মধ্যে আত্মহত্যার ভাবনাগুলো বারুদের মতো জ্বলে উঠতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ম্যাসাচুসেটসের ওয়ারসেস্টার শহরের ক্লার্ক ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং পুরুষের ভালো থাকা নিয়ে গবেষণা গ্রুপের পরিচালক মাইকেল আদ্দিস বলেন, মানসিক অসুস্থতার বিষয়ে পুরুষদের খুব কমই চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। ছোট বেলা থেকে তাঁদের সামাজিকভাবে একটি ধারণা দেওয়া হয় যে নিজের আবেগসংক্রান্ত দুরবস্থা প্রকাশ করা দুর্বলতা। এ ব্যাপারে অপরের সাহায্য চাওয়াকেও দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়।
দুশ্চিন্তা মানুষের অন্যান্য আবেগের মতোই একটি অবস্থা। তবে এটা তখনই রোগের পর্যায়ে পড়ে, যখন তা মাত্রা ছাড়িয়ে যায় এবং অব্যাহতভাবে চলতে থেকে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন, কাজ ও সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করে। দুশ্চিন্তা রোগ আর হতাশা অনেক সময় একসঙ্গে আসে। এ ধরনের ব্যক্তিদের অবশ্যই আচরণগত থেরাপি নেওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের থেরাপি দুশ্চিন্তা উদ্রেক করে এমন চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকা শেখায়।
নিবন্ধটিতে দুশ্চিন্তা রোগে আক্রান্ত বেশ কয়েকজনের উদাহরণ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে অ্যারন ক্যালিফোর্নিয়া (৩১) নামের এক যুবকের কথা বলা হয়েছে। অ্যারন তাঁর ১৯ বছর বয়সের তরুণ জীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, পরীক্ষার আগে আগে তাঁর বেশ দুশ্চিন্তা হতো। ব্যাপারটি এমন দাঁড়িয়েছিল যে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিশতেন না। এক সময় তিনি অনুভব করলেন, দুশ্চিন্তা তাঁর জীবনকে ‘ধ্বংস করে ফেলছে’। তিনি কলেজ থেকে ছিটকে পড়েন। চাকরিও ছেড়েছেন। কারণ, কী না কী ভুল হয়ে যায়, এ নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। এরপরও অন্যরা তাঁকে নিয়ে কী ভাবে এই চিন্তা থেকে তিনি চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতেও নিরুৎসাহিত হতেন।
তবে দুশ্চিন্তার দাওয়াই নিতে পুরুষেরা একেবারেই যে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন না, তা কিন্তু নয়। কর্মস্থলে সংকটে পড়লে বা সঙ্গীর চাপে পড়ে অনেকেই মনোবিজ্ঞানীদের কাছে হাজির হন। তবে জোরজবরদস্তি করে চিকিৎসকের কাছে পাঠানোর বিষয়টি ঠিক নয় বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা। নিউইয়র্কের ফোর্ডহাম ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক ডিন ম্যাককে বলেন, এতে ফল উল্টো হয়। ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, চিকিৎসা নিতে অনীহা আরও বাড়ে। বরং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসকের কাছে যেতে উৎসাহিত করার সবচেয়ে ভালো পন্থা হচ্ছে তাঁকে বোঝানো যে দুশ্চিন্তা তাঁর জীবনের সুন্দর সময়গুলো কীভাবে নষ্ট করছে, কীভাবে গুণগত জীবনকে দুর্ভোগে ফেলছে। দুশ্চিন্তাকে দূরে ঠেলতে পারলে কীভাবে প্রিয়জনের সঙ্গে সুন্দর মুহূর্তগুলোকে কাছে টানা যায়, জীবন আরও উপভোগ করা যায়।
এ ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে চিকিৎসারও রকমফের আছে। একেকজন একেক চিকিৎসায় স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কাউকে কাউকে কর্মস্থলের দুশ্চিন্তার বিষয়টিকে আলোকপাত করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হয়। কেউ কেউ তাঁদের দুশ্চিন্তা, হতাশা, আবেগ নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসেন। তাঁদের ক্ষেত্রে আচরণসংক্রান্ত থেরাপি কার্যকর হয়।
জন বর্ডারস নামের ৫৪ বছর বয়সী এক আইনজীবী স্ত্রীর চাপে পড়ে কয়েক বছর আগে মনোবিজ্ঞানীর দ্বারস্থ হন। তিনি খুব আতঙ্কে ভুগতেন। বিশেষ করে রাস্তায় গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে তাঁর ভয়াবহ আতঙ্ক ছিল। তিনি বলেন, ‘আমার মনের ভেতর কী চলত তা বুঝতাম না। আমার হৃৎপিণ্ড ধকধক করত। মনে হতো আমি রাস্তা ছেড়ে অন্যদিকে চলে যাব।’ তাঁর সমস্যার কথা জেনে চিকিৎসক তাঁকে নিয়ে হাইওয়েতে গাড়ি চালাতে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর উদ্বেগের লক্ষণগুলো আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য কফি পান করিয়েছিলেন। এতে তিনি বেশ উপকৃত হয়েছিলেন বলে জানান বর্ডারস।
যে দুশ্চিন্তার কারণে পড়াশোনা ও চাকরি থেকে ছিটকে পড়েছিলেন অ্যারন ক্যালিফোর্নিয়া, দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত তিনিও মনোবিজ্ঞানীর কাছে গিয়েছিলেন। থেরাপি ও ওষুধ নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে তিনি আবার কলেজে ভর্তি হন। শিক্ষাবিষয়ক মনোবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করেন। তিনি বলেন, ‘কারও সঙ্গে কথা বলতে পারার সক্ষমতাও দুশ্চিন্তা কমায় এবং এতে নিজেকে একা মনে হয় না।’
>>>সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
তবে এই নিবন্ধে শুধু পুরুষের দুশ্চিন্তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। পুরুষের দুশ্চিন্তা নিয়ে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পুরুষের দুশ্চিন্তার রকমফের আছে। এ সমস্যা একেক পুরুষের ক্ষেত্রে একেক রকমভাবে দেখা দেয়। যখন কেউ দুশ্চিন্তা নিয়ে ভাবেন, তখন মাত্রাতিরিক্ত খারাপ অবস্থার একটি চিত্র তাঁর সামনে ভেসে ওঠে এবং আতঙ্কাবস্থা এড়ানোর চেষ্টা আরও বেশি ভোগায়। মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে দিনে দিনে এই ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে এ ক্ষেত্রে পুরুষেরা মাথাব্যথা, ঘুমের ব্যাঘাত, পেশিব্যথাসহ অন্যান্য ব্যথার অভিযোগ বেশি করেন। তাঁরা দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতে ওষুধ ও অ্যালকোহলে ঝুঁকে পড়েন। অনেক পুরুষের অ্যালকোহল গ্রহণের প্রবণতার পেছনে রয়েছে দুশ্চিন্তা রোগ। অনেক ক্ষেত্রে রাগ এবং ক্রোধ আকারে এই দুশ্চিন্তার প্রকাশ ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের রাজ্য কেনটাকির লুইসভিলে শহরের ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী কেভিন চ্যাপম্যানের ভাষায়, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পুরুষের তুলনায় আক্রমণাত্মক আচরণের পুরুষ এই সমাজে বেশি গ্রহণযোগ্য।
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন জীবনে দুশ্চিন্তা রোগে আক্রান্ত হন। নারীর ক্ষেত্রে এ সংখ্যা তিনজনে একজন।
তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গবেষণাগুলোতে দুশ্চিন্তার সঙ্গে আত্মহত্যার বিষয়টিও জড়িত হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ২০১০ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, হতাশার মতো মানসিক অসুস্থতা আত্মহত্যার ভাবনাকে জাগিয়ে তোলে। তবে বিষয়টি এমন নয় যে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তিমাত্রই আত্মহত্যার দিকে ঝোঁকেন। দুশ্চিন্তা রোগের চেয়ে বরং আচরণগত সমস্যা ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যায় ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্রের তথ্যে অনুসারে, দেশটিতে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। নারীর তুলনায় পুরুষের আত্মহত্যার হার তিন গুণ বেশি।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং এ গবেষণার গবেষক ম্যাথিউ কে নক বলেন, যে ধরনের মানুষেরা আতঙ্কগ্রস্ত হন এবং যাঁরা পরিস্থিতিকে অসহনীয় মনে করে পালাতে চান, তাঁদের মধ্যে আত্মহত্যার ভাবনাগুলো বারুদের মতো জ্বলে উঠতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ম্যাসাচুসেটসের ওয়ারসেস্টার শহরের ক্লার্ক ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং পুরুষের ভালো থাকা নিয়ে গবেষণা গ্রুপের পরিচালক মাইকেল আদ্দিস বলেন, মানসিক অসুস্থতার বিষয়ে পুরুষদের খুব কমই চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। ছোট বেলা থেকে তাঁদের সামাজিকভাবে একটি ধারণা দেওয়া হয় যে নিজের আবেগসংক্রান্ত দুরবস্থা প্রকাশ করা দুর্বলতা। এ ব্যাপারে অপরের সাহায্য চাওয়াকেও দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়।
দুশ্চিন্তা মানুষের অন্যান্য আবেগের মতোই একটি অবস্থা। তবে এটা তখনই রোগের পর্যায়ে পড়ে, যখন তা মাত্রা ছাড়িয়ে যায় এবং অব্যাহতভাবে চলতে থেকে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন, কাজ ও সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করে। দুশ্চিন্তা রোগ আর হতাশা অনেক সময় একসঙ্গে আসে। এ ধরনের ব্যক্তিদের অবশ্যই আচরণগত থেরাপি নেওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের থেরাপি দুশ্চিন্তা উদ্রেক করে এমন চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকা শেখায়।
নিবন্ধটিতে দুশ্চিন্তা রোগে আক্রান্ত বেশ কয়েকজনের উদাহরণ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে অ্যারন ক্যালিফোর্নিয়া (৩১) নামের এক যুবকের কথা বলা হয়েছে। অ্যারন তাঁর ১৯ বছর বয়সের তরুণ জীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, পরীক্ষার আগে আগে তাঁর বেশ দুশ্চিন্তা হতো। ব্যাপারটি এমন দাঁড়িয়েছিল যে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিশতেন না। এক সময় তিনি অনুভব করলেন, দুশ্চিন্তা তাঁর জীবনকে ‘ধ্বংস করে ফেলছে’। তিনি কলেজ থেকে ছিটকে পড়েন। চাকরিও ছেড়েছেন। কারণ, কী না কী ভুল হয়ে যায়, এ নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। এরপরও অন্যরা তাঁকে নিয়ে কী ভাবে এই চিন্তা থেকে তিনি চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতেও নিরুৎসাহিত হতেন।
তবে দুশ্চিন্তার দাওয়াই নিতে পুরুষেরা একেবারেই যে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন না, তা কিন্তু নয়। কর্মস্থলে সংকটে পড়লে বা সঙ্গীর চাপে পড়ে অনেকেই মনোবিজ্ঞানীদের কাছে হাজির হন। তবে জোরজবরদস্তি করে চিকিৎসকের কাছে পাঠানোর বিষয়টি ঠিক নয় বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা। নিউইয়র্কের ফোর্ডহাম ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক ডিন ম্যাককে বলেন, এতে ফল উল্টো হয়। ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, চিকিৎসা নিতে অনীহা আরও বাড়ে। বরং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসকের কাছে যেতে উৎসাহিত করার সবচেয়ে ভালো পন্থা হচ্ছে তাঁকে বোঝানো যে দুশ্চিন্তা তাঁর জীবনের সুন্দর সময়গুলো কীভাবে নষ্ট করছে, কীভাবে গুণগত জীবনকে দুর্ভোগে ফেলছে। দুশ্চিন্তাকে দূরে ঠেলতে পারলে কীভাবে প্রিয়জনের সঙ্গে সুন্দর মুহূর্তগুলোকে কাছে টানা যায়, জীবন আরও উপভোগ করা যায়।
এ ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে চিকিৎসারও রকমফের আছে। একেকজন একেক চিকিৎসায় স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কাউকে কাউকে কর্মস্থলের দুশ্চিন্তার বিষয়টিকে আলোকপাত করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হয়। কেউ কেউ তাঁদের দুশ্চিন্তা, হতাশা, আবেগ নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসেন। তাঁদের ক্ষেত্রে আচরণসংক্রান্ত থেরাপি কার্যকর হয়।
জন বর্ডারস নামের ৫৪ বছর বয়সী এক আইনজীবী স্ত্রীর চাপে পড়ে কয়েক বছর আগে মনোবিজ্ঞানীর দ্বারস্থ হন। তিনি খুব আতঙ্কে ভুগতেন। বিশেষ করে রাস্তায় গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে তাঁর ভয়াবহ আতঙ্ক ছিল। তিনি বলেন, ‘আমার মনের ভেতর কী চলত তা বুঝতাম না। আমার হৃৎপিণ্ড ধকধক করত। মনে হতো আমি রাস্তা ছেড়ে অন্যদিকে চলে যাব।’ তাঁর সমস্যার কথা জেনে চিকিৎসক তাঁকে নিয়ে হাইওয়েতে গাড়ি চালাতে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর উদ্বেগের লক্ষণগুলো আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য কফি পান করিয়েছিলেন। এতে তিনি বেশ উপকৃত হয়েছিলেন বলে জানান বর্ডারস।
যে দুশ্চিন্তার কারণে পড়াশোনা ও চাকরি থেকে ছিটকে পড়েছিলেন অ্যারন ক্যালিফোর্নিয়া, দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত তিনিও মনোবিজ্ঞানীর কাছে গিয়েছিলেন। থেরাপি ও ওষুধ নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে তিনি আবার কলেজে ভর্তি হন। শিক্ষাবিষয়ক মনোবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করেন। তিনি বলেন, ‘কারও সঙ্গে কথা বলতে পারার সক্ষমতাও দুশ্চিন্তা কমায় এবং এতে নিজেকে একা মনে হয় না।’
>>>সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
No comments