যৌনমিলনের সময় সব নারীদের কি বীর্যপাত বা ইজাকুলেশন হয়?
'পুসিপিডিয়া' বিশ্বের প্রথম অনলাইন
এনসাইক্লোপিডিয়া যা নারী যৌনাঙ্গকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে। এটি একজন
মার্কিন সাংবাদিক এবং একজন মেক্সিকান চিত্রকরের ধারণা। নির্ভরযোগ্য তথ্যের
অভাবে হতাশ হয়ে এই দুই নারী ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় এই পোর্টাল চালুর
উদ্যোগ নেন যেখানে নারী দেহ সম্পর্কিত মানসম্মত নানা ধরনের প্রবন্ধ রয়েছে।
সব নারীদের কি ইজাকুলেশন হয়?
২০১৬ সালে এই প্রশ্ন মার্কিন
সাংবাদিক জো মেনডেলসন এবং তার বন্ধুর মধ্যে একটি দেয়াল তৈরি করে দেয়। শেষ
পর্যন্ত কোন সন্তোষজনক উত্তরে পৌঁছাতে না পেরে যথারীতি তারা গুগলের
শরণাপন্ন হয়।
"যা পাওয়া গেল তা হলো একগাদা ফালতু তথ্য," জো বলছিলেন
বিবিসিকে, "সুতরাং আমি এসবের পরিবর্তে মেডিকেল জার্নাল দেখার সিদ্ধান্ত
নিলাম।"
কিন্তু তাতেও কোন সমাধান পাওয়া গেল না বলে জানান তিনি।
এর
ফলে দুটি সিদ্ধান্তে পৌঁছান জো, "আমি দেখলাম যে, এ সম্পর্কে রয়েছে হয়
আজেবাজে তথ্য বা অগ্রহণযোগ্য বিষয়- যা খুব বড় একটি সমস্যা। আর দ্বিতীয়ত
আমার উপলব্ধি হলো যে, আমি নিজের শরীর সম্পর্কে কিছুই জানি না।"
এর
পরের দুই বছরের মধ্যে জো তার মেক্সিকান চিত্রকর বন্ধু মারিয়া কোনিজো কে
সাথে নিয়ে চালু করেন 'পুসিপিডিয়া' এটি একটি ফ্রি অনলাইন
এনসাইক্লোপিডিয়া- যেখানে নারী দেহের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য
তথ্য মিলবে।
এই প্রকল্পটির ধারণা আসে 'পুসি' শব্দটিকে কেন্দ্র করে,
শব্দটি নারী দেহের গোপন অঙ্গকে বিকৃত বা গালি অর্থে ব্যবহার করে বলা হয়।
কিন্তু জো এবং মারিয়া এটিকে আরো বৃহত্তর অর্থে ব্যবহার করে আলোচনা করতে
চান।
পুসিপিডিয়ার লেখক বলছেন, অধিকাংশ নারী তাদের শরীর সম্পর্কে খুব একটা জানেন না। |
"যোনি, যোনিমুখ, ভগাঙ্কুর, জরায়ু, মূত্রাশয়, পায়ুপথ এবং কে বলতে পারে একদিন হয়তো আমরা অণ্ডকোষ সম্পর্কেও কথা বলবো।"
কিন্তু
আসলেই কি এ ধরনের প্রকল্পের প্রয়োজন রয়েছে? যেখানে সকলে এই ২১ শতকে এসে
হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে, স্কুলে স্কুলে রয়েছে যৌন শিক্ষা
এবং বেশিরভাগ মানুষের হাতের মুঠোতে রয়েছে ইন্টারনেট।
মারিয়া এর জবাব দিলেন দুইটি বাক্যে: "তথ্য হলো শক্তি" আর বললেন "লজ্জা বিপদজনক।"
জো মনে করেন, লিঙ্গ সমতার বিষয়টি যখন আসে তখন সেটিকে অনেক বেশি বড় করে দেখার চেষ্টা হয়।
"আমরা এখনো এমন একটি জগতে বাস করছি যেখানে নারী দেহ ও যৌনতা নিয়ে ব্যাপক বৈষম্য ও গোপনীয়তা রয়ে গেছে।"
মারিয়া
এর সম্মতিতে বলেন, "আমরা মনে করি যে নিজেদের শরীর সম্পর্কে আমাদের যথেষ্ট
ধারণা রয়েছে, তাই কিছু বিষয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা থেকে আমরা বিরত থেকে
যাই। আমাদের আসলে ধারণা করা উচিৎ যে এখনই আমাদের আরো জানার প্রয়োজন," এমন
দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কথা তিনি বলেন বিবিসিকে।
আরো কয়েকজনের
সহায়তায় জো এবং মারিয়া এ বছরে জুলাইতে 'পুসিপিডিয়া' চালু করেন। ইংরেজি
এবং স্প্যানিশ ভাষার এই অনলাইন পোর্টালটি শুরু পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায়
১৩০,০০০ জনকে আকর্ষণ করতে পেরেছে।
অনলাইন এই এনসাইক্লোপিডিয়ার নিবন্ধগুলোতে মূল উৎসের লিঙ্ক দেয়া থাকে।
'পেনিসপিডিয়া' কি হতে পারে?
যদিও
জো এবং মারিয়া বিশ্বাসযোগ্য সূত্র বা উৎস থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে
বের করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তারপরও কিছু প্রশ্নের জবাব পাওয়া
কঠিন।
কেন? - তাদের জবাব হলো, পুরুষ শারীরবৃত্তীয় বিষয় এবং
কার্যকারিতা তুলনায় নারীদের যৌনাঙ্গ এবং প্রজনন বিষয় নিয়ে কম গবেষণা বা
অধ্যয়ন হয়েছে।
"আমি এখনো আমার মূল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছি," বলছিলেন জো।
"নারী
শরীরত্বত্ত নিয়ে যখন কথা হয় তখন যথেষ্ট কম তথ্য এবং গবেষণার আগ্রহের
অভাব দেখা যায় বৈজ্ঞানিক মহলে। যেমন ধরুন এখন আমরা জানি না যে ভগাঙ্কুর
কোন ধরনের কোষ দিয়ে গঠিত।"
নিজের শরীর সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজতে গিয়ে পুসিপিডিয়া তৈরি করেন জো মেনডেলসন। |
আর এর জন্যেই 'পেনিসপিডিয়া'র আলাদা করে প্রয়োজন দেখছেন না তারা।
"যদি আপনি কোন মেডিকেল জার্নালে বা স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো বইতে 'পেনিস'
বিষয়ে অনুসন্ধান করেন, তবে এ নিয়ে প্রচুর তথ্য এবং কাজ খুঁজে পাবেন।
কিন্তু যদি 'যোনি বা ভেজাইনা' সম্পর্কে এমনটি পাবেন না," বলছিলেন জো।
যদিও মারিয়া উল্লেখ করেন যে তথ্যের প্রাচুর্য সবসময় জ্ঞানের প্রাচুর্য নয়।
তার
মতে, পুরুষরা বরং কম জানেন। যদিও তাদের 'লিঙ্গ' সম্পর্কে প্রচুর তথ্য
রয়েছে তারপরও পুরুষত্বের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তারা নিজেদের শরীর সম্পর্কে
খুব বেশি অনুসন্ধানে আগ্রহী নয়।
কিন্তু নারীরা কৌতূহলী। এমন
বাস্তবতায় মারিয়া এবং জো যখন 'পুসিপিডিয়া' শুরুর জন্যে তহবিল সংগ্রহে
সর্বসাধারণের কাছে প্রচার শুরু করেন, মাত্র তিন দিনে তাদের অর্থ জমা হয়
২২,০০০ মার্কিন ডলার। তাদের মূল লক্ষ্যমাত্রার তিনগুণ ছিল তা।
শুরুর
সময় এ অর্থ তাদের কাজে লেগেছিল। দুই বছর 'বিনা বেতনে' কাজ করার পর মারিয়া
এবং জো এখন 'পুসিপিডিয়া'র মাধ্যমে কিছু অর্থ উপার্জন করতে চান যা দিয়ে
সেখানে যারা কাজ করছেন বা লিখছেন তাদের পারিশ্রমিক দেয়া সম্ভব হবে।
ওয়েবসাইটটি পাঠকদের কোন নিবন্ধকে স্পন্সরের সুযোগ দেয়। একই সাথে তারা মারিয়া অঙ্কিত ও চিত্রিত বিভিন্ন পণ্যও বিক্রির সুযোগ দেয়।
মারিয়া
বলেন, "আমি পাঁচ বছর ধরে নারী দেহকে বিভিন্নভাবে চিত্রিত করে তুলে ধরার
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়। আমি একজন
নারীর শরীর ও তার যৌনতাকে অন্বেষণ করে দেখাতে চাই, যাতে করে নগ্ন
নারীদেহের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসে।"
আর এই ওয়েবসাইটটিই তার সমস্ত শিক্ষার বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম হয়েছে বলে জানান মারিয়া।
জো
এই কাজটিকে আরো বিস্তৃত করতে চান। আরো গবেষণা ও নিবন্ধ যুক্ত করতে চান।
বিশেষ করে হিজড়াদের যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে আর্টিকেল যোগ করতে চান- যা নিয়ে
তেমন কাজ হয়নি।
এরইমধ্যে এখনো তার আশা যে শীঘ্রই তেমন একটি প্রবন্ধ
তিনি এখান যোগ করতে পারবেন যেখানে তার মূল প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া
যাবে- আর তা হলো- সব নারীর কি বীর্যপাত বা ইজাকুলেশন হয়?
মারিয়া কোনিজো তার আঁকা ছবির মাধ্যমে নারীদেহ সম্পর্কে ধারণা বদলে দিতে চান। |
No comments