সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিরাই বাংলাদেশিদের ক্ষতির কারণ! by মিজানুর রহমান
সিঙ্গাপুরে
বাংলাদেশিরাই বাংলাদেশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন! শ্রমিক কিংবা
মেডিকেলসহ নানা কারণে ভ্রমণকারী বাংলাদেশিরা ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছেন। তবে
অপরাধীদের সংখ্যা বা ঘটনাগুলো এখনো সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। পুলিশি রেকর্ড তাই
বলছে। আইনের কঠোর প্রয়োগে বিশ্বাসী সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিদের যথেষ্ট সুনাম
রয়েছে। সরকারি হিসাব মতে, এখানে প্রায় সোয়া লাখ বাংলাদেশির বসবাস। যাদের
বেশির ভাগই সাধারণ শ্রমিক। তারা মূলত ৩টি সেক্টরে কাজ করেন। কন্সট্রাকশন বা
নির্মাণ কাজ, ল্যান্ড স্ক্যাপিং অ্যান্ড কনজারভেন্সি বা বাগানের কাজ এবং
মেরিন বা শিপিং সেক্টর।
তবে পড়াশোনা ও হাতে কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেকে সাধারণ শ্রমিক থেকে ক্রমে দক্ষ শ্রমিকে রূপান্তর, ছোট, বড় ব্যবসা এবং পেশাদার বাংলাদেশিদের সংখ্যাও সামপ্রতিক সময়ে বাড়ছে। বেশ ক’দিন অবস্থান, রাত-দিন খবরের সন্ধানে ঘুরাঘুরি, দেশি- বিদেশিদের সঙ্গে আড্ডা এমনকি স্থানীয় পুলিশের বয়ানেও শোনা গেল বাংলাদেশিদের প্রশংসা। সিঙ্গাপুর প্রাচ্যের একমাত্র নগরী যেখানে পুরোপুরি পশ্চিমা ফ্লেভার রয়েছে। এখানে রাত- দিন সমান। পার্থক্য শুধু একটাই রাত পৌনে ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মেজর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অর্থাৎ মেট্রোরেল বা এমআরটি এবং সিটি বাস আর রাত ১০টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ব্র্যান্ডের দোকান ও মেগা শপিংমলগুলো বন্ধ থাকে। বাকি সব খোলা।
এমনকি বাংলাদেশিদের বহুল পরিচিত মোস্তাফা সেন্টার, সেভেন ইলেভেনও। নিরাপদ এই নগরীতে বাংলাদেশি নারী-পুরুষ নির্বিঘ্নে দিন-রাত কাজ করেন। তাদের কাজের প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা। সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজারে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়ার অবস্থান অনেকটাই পোক্ত। ওই দেশগুলোর সঙ্গে সিঙ্গাপুরের বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্কও সুদৃঢ়। দেশগুলো তাদের শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় ব্যবসায়িক সম্পর্ককে টুলস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। দেনদরবারও করার সুযোগ রয়েছে। এ দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারের প্রয়াস রয়েছে। তবে এই ক’বছরে পেশাদার কূটনৈতিক কার্যক্রম এবং উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ে ঢাকা-সিঙ্গাপুর রাজনৈতিক সম্পর্ক বেশ ভালো বোঝাপড়ার মধ্যেই রয়েছে। যা শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থানের স্থিতিশীলতা ধরে রাখার পাশাপাশি সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর সুযোগ অবারিত করেছে। সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকরা তা-ই বলছিলেন। তাদের মতে, এখানে থাকা বেশির ভাগ বাংলাদেশিরই সফলতার বা গর্ব করে বলার মতো গল্প আছে। কিন্তু কতিপয় দুষ্কৃতকারী, যারা দালাল বা ভায়া মিডিয়ায় বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে সিঙ্গাপুরে আসে, কিংবা এখানে আসার পর অবৈধ বা শটকাট পথে অর্থ উপার্জনকারী স্বজাতির কুমন্ত্রণায় বা নিজে থেকে উৎসাহী হয়ে বাঁকা পথে অর্থ কামাইয়ের জন্য অস্থির হয়ে যায়; তারাই সাধারণ বাংলাদেশি তথা বাংলাদেশের বিপদ ডেকে আনছেন। তাদের ধান্ধা বহুমুখী। চুরি, লুট, জুয়া-ক্যাসিনো, লটারি, নারী কেলেঙ্কারি, স্বর্ণ ও মোবাইল চোরাচালান, মানবপাচার, হুন্ডি-মানিলন্ডারিংসহ গুরুতর অপরাধের সঙ্গে বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততার প্রবণতায় প্রায়শই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সাধারণ বাংলাদেশিদের। বাজে কাজে বাংলাদেশিরা ধরা পড়লেও কনস্যুলার একসেস বা আইনি সহায়তা দিতে হয় হাইকমিশনকে। জেনেভা কনভেনশন মতে হোস্ট কান্ট্রির তরফে সংশ্লিষ্ট দেশের মিশনকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়। তখন ওই দেশের তাৎক্ষণিক সাড়া দিতে হয়, কনভেনশনে এর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একজন বাংলাদেশির জন্য হলেও পেশাদার কূটনীতিককে তখন ছোট হতে হয়। যা সিঙ্গাপুরের মতো আইনের শাসনের কঠোর বাস্তবায়নকারী দেশে বড়ই লজ্জার!
বাংলাদেশিদের প্রসঙ্গে কথা বলতে যেয়ে এক কূটনীতিক বারবার বলছিলেন, এখানে যে পরিমাণ বাংলাদেশি রয়েছেন বা ভ্রমণ করেন, সেই তুলনায় অপরাধে ধরা পড়া বাংলাদেশির সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য, পয়েন্ট এক পারসেন্ট হবে। কিন্তু সিঙ্গাপুর এমন একটা দেশ এখানে সংখ্যা বা ঘটনা বিবেচ্য নয়, ভাবমূর্তিই আসল। ৩ বছর আগে ৮ জন বাংলাদেশি উগ্রবাদের মতাদর্শে প্রভাবিত হতে যাচ্ছেন সন্দেহে ধরা পড়েছেন। তাদের বিচার হয়েছে। দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ওই ঘটনার কাছাকাছি সময়ে জঙ্গি অর্থায়নের দায়ে দু’জন সিঙ্গাপুরিয়ানেরও জেল হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের খাতায় কেবল ওই ৮ ব্যক্তি নয়, বাংলাদেশের নামও রয়ে গেছে। এ জন্য বহুদিন ভুগতে হবে। সিঙ্গাপুরে শ্রমিকদের স্বার্থ দেখভাল কাজে যুক্ত বাংলাদেশি জিয়া বলছিলেন, এখানে বাংলাদেশিদের সুনাম নানা কারণে। প্রথমত এরা বিশ্বস্ত, দ্বিতীয়ত এরা কর্মঠ। তৃতীয়ত তারা সরল এবং কষ্ট করে স্কেল বা উন্নতির পথে থাকে। কিন্তু কতিপয় বিভ্রান্ত মানুষ ওই সরল কর্মঠ বিশ্বাসীদের প্রতিনিয়ত প্ররোচনায় ব্যস্ত। তাদের আহ্বানে সাড়া দিলেই সর্বনাশ। কিন্তু এর মধ্যে সবাই ঠিক থাকতে পারে না। তারা বিভ্রান্ত হয়ে যায়। অপরাধে যুক্ত হয়ে যায়, কিন্তু আবার ভালো পথে ফিরেও আসে। তাছাড়া বড় অপরাধে শ্রমিকদের সম্পৃক্ত হাতেগোনা ঘটনা। যা হেড লাইন হয় বছরে ২-৩ বার! তার মতে, সিঙ্গাপুর সরকার এবং পুলিশও জানে বেশির ভাগ বাংলাদেশি সরল, নির্ভেজাল। নিরিবিলি জীবন ও কর্ম করতে চায়। আর কতিপয় দুষ্ট রয়েছে, এরা অতিমাত্রায় চালাক। ঘুরেফিরে তারাই ধড়া পড়ে, শাস্তি পায়, ফের অপরাধে যুক্ত হয়।
আজব কাণ্ড ঘটিয়ে খবরের শিরোনাম: এক বাংলাদেশি আজব কাণ্ড ঘটিয়ে শিরোনাম হয়েছেন গত আগস্টে। স্টেইট টাইমসসহ গোটা পূর্ব এশিয়ায় খবরটি প্রচার পেয়েছে। হামিদ মাতব্বর চুন্নু নামের ওই বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াই গোপনে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর ছেড়ে যাচ্ছিলেন। তার এ কাজে সহযোগী ছিলেন দু’জন মালয়েশিয়ান নারী। একজন নারী প্রাইভেটকার ড্রাইভ করছিলেন, অন্যজন যাত্রী। চুন্নু ছিলেন গাড়ির পেছনের সিটের নিচে, পাপোশের নিচে। ইমিগ্রেশন পুলিশ গাড়িটি সার্চ করতে গিয়ে চুন্নুকে খুঁজে পায় এবং সহযোগীদেরসহ আটক করে। পাসপোর্ট দেখাতে না পারায় ইমিগ্রেশন আইনের ৩টি ধারায় চুন্নুর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের বিদ্যমান আইনে চুন্নুর বিচার হবে এবং শাস্তি কার্যকর হওয়ার পর তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন- চুন্নুর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা হাতেনাতে প্রমাণিত। তার জেল-জরিমানা নিশ্চিত। দেখার বিষয় সিঙ্গাপুরের আইনে বৃটিশ আমল থেকে বেত্রাঘাতের শাস্তির যে বিধান চালু রয়েছে সেটা তার বেলায় হতে পারে। এমন কঠোর শাস্তি খুব কম বাংলাদেশি পেয়েছেন। সামপ্রতিককালে তো নয়ই। পুলিশি রেকর্ড মতে, ২৯ বছর বয়সী চুন্নু ২০১৬ সালে অপরাধের জন্য সিঙ্গাপুর থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তিনি এখানে নিষিদ্ধ ছিলেন।
ফলে অবৈধ পথেই তাকে দেশটিতে ঢুকতে হয়েছে এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। কাছাকাছি আরো দু’জন বাংলাদেশি আটক হয়েছেন এক সেক্সওয়ার্কারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে। গেলানের একটি হোটেলের ওই ঘটনাটি পুলিশ অভিযুক্তদের ডরমিটরি থেকে আটক করেছে, তবে তাদের মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। আগস্টেই ইমিগ্রেশন আইন ভাঙার দায়ে ২ সিঙ্গাপুরের নাগরিকসহ ২২ বিদেশি আটক হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জন বাংলাদেশিও রয়েছেন।
হাইকমিশনার যা বললেন: এদিকে বাংলাদেশিদের বিষয়ে জানতে চাইলে সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তুলনামূলক বাংলাদেশের জন্য সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার স্থিতিশীল। কিছু ঘটনা বাদ দিলে বাংলাদেশিরা সুনামের সঙ্গেই আছেন। এখানে ন্যূনতম দৈনিক ১৮ ডলার মজুরিতে তারা কাজ করেন। তাদের ডরমিটরিতে থাকাসহ জীবনযাত্রা মোটামুটি ভালো। মিশনের প্রতিনিধিরা নিয়মিত ডরমিটরি ভিজিট করেন জানিয়ে হাইকমিশনার মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধ পথে টাকা ইনকাম, রেমিটেন্স পাঠানো এবং সিঙ্গাপুরের আইন মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করা হয়। কাউন্সেলিং হয় নিয়মিত। কিন্তু তারপরেও দুষ্টরা অপরাধ করে গোটা দেশকে কালিমাযুক্ত করে দেয়। আমরা হই বিব্রত।
তবে পড়াশোনা ও হাতে কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেকে সাধারণ শ্রমিক থেকে ক্রমে দক্ষ শ্রমিকে রূপান্তর, ছোট, বড় ব্যবসা এবং পেশাদার বাংলাদেশিদের সংখ্যাও সামপ্রতিক সময়ে বাড়ছে। বেশ ক’দিন অবস্থান, রাত-দিন খবরের সন্ধানে ঘুরাঘুরি, দেশি- বিদেশিদের সঙ্গে আড্ডা এমনকি স্থানীয় পুলিশের বয়ানেও শোনা গেল বাংলাদেশিদের প্রশংসা। সিঙ্গাপুর প্রাচ্যের একমাত্র নগরী যেখানে পুরোপুরি পশ্চিমা ফ্লেভার রয়েছে। এখানে রাত- দিন সমান। পার্থক্য শুধু একটাই রাত পৌনে ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মেজর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অর্থাৎ মেট্রোরেল বা এমআরটি এবং সিটি বাস আর রাত ১০টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ব্র্যান্ডের দোকান ও মেগা শপিংমলগুলো বন্ধ থাকে। বাকি সব খোলা।
এমনকি বাংলাদেশিদের বহুল পরিচিত মোস্তাফা সেন্টার, সেভেন ইলেভেনও। নিরাপদ এই নগরীতে বাংলাদেশি নারী-পুরুষ নির্বিঘ্নে দিন-রাত কাজ করেন। তাদের কাজের প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা। সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজারে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়ার অবস্থান অনেকটাই পোক্ত। ওই দেশগুলোর সঙ্গে সিঙ্গাপুরের বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্কও সুদৃঢ়। দেশগুলো তাদের শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় ব্যবসায়িক সম্পর্ককে টুলস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। দেনদরবারও করার সুযোগ রয়েছে। এ দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারের প্রয়াস রয়েছে। তবে এই ক’বছরে পেশাদার কূটনৈতিক কার্যক্রম এবং উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ে ঢাকা-সিঙ্গাপুর রাজনৈতিক সম্পর্ক বেশ ভালো বোঝাপড়ার মধ্যেই রয়েছে। যা শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থানের স্থিতিশীলতা ধরে রাখার পাশাপাশি সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর সুযোগ অবারিত করেছে। সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকরা তা-ই বলছিলেন। তাদের মতে, এখানে থাকা বেশির ভাগ বাংলাদেশিরই সফলতার বা গর্ব করে বলার মতো গল্প আছে। কিন্তু কতিপয় দুষ্কৃতকারী, যারা দালাল বা ভায়া মিডিয়ায় বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে সিঙ্গাপুরে আসে, কিংবা এখানে আসার পর অবৈধ বা শটকাট পথে অর্থ উপার্জনকারী স্বজাতির কুমন্ত্রণায় বা নিজে থেকে উৎসাহী হয়ে বাঁকা পথে অর্থ কামাইয়ের জন্য অস্থির হয়ে যায়; তারাই সাধারণ বাংলাদেশি তথা বাংলাদেশের বিপদ ডেকে আনছেন। তাদের ধান্ধা বহুমুখী। চুরি, লুট, জুয়া-ক্যাসিনো, লটারি, নারী কেলেঙ্কারি, স্বর্ণ ও মোবাইল চোরাচালান, মানবপাচার, হুন্ডি-মানিলন্ডারিংসহ গুরুতর অপরাধের সঙ্গে বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততার প্রবণতায় প্রায়শই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সাধারণ বাংলাদেশিদের। বাজে কাজে বাংলাদেশিরা ধরা পড়লেও কনস্যুলার একসেস বা আইনি সহায়তা দিতে হয় হাইকমিশনকে। জেনেভা কনভেনশন মতে হোস্ট কান্ট্রির তরফে সংশ্লিষ্ট দেশের মিশনকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়। তখন ওই দেশের তাৎক্ষণিক সাড়া দিতে হয়, কনভেনশনে এর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একজন বাংলাদেশির জন্য হলেও পেশাদার কূটনীতিককে তখন ছোট হতে হয়। যা সিঙ্গাপুরের মতো আইনের শাসনের কঠোর বাস্তবায়নকারী দেশে বড়ই লজ্জার!
বাংলাদেশিদের প্রসঙ্গে কথা বলতে যেয়ে এক কূটনীতিক বারবার বলছিলেন, এখানে যে পরিমাণ বাংলাদেশি রয়েছেন বা ভ্রমণ করেন, সেই তুলনায় অপরাধে ধরা পড়া বাংলাদেশির সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য, পয়েন্ট এক পারসেন্ট হবে। কিন্তু সিঙ্গাপুর এমন একটা দেশ এখানে সংখ্যা বা ঘটনা বিবেচ্য নয়, ভাবমূর্তিই আসল। ৩ বছর আগে ৮ জন বাংলাদেশি উগ্রবাদের মতাদর্শে প্রভাবিত হতে যাচ্ছেন সন্দেহে ধরা পড়েছেন। তাদের বিচার হয়েছে। দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ওই ঘটনার কাছাকাছি সময়ে জঙ্গি অর্থায়নের দায়ে দু’জন সিঙ্গাপুরিয়ানেরও জেল হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের খাতায় কেবল ওই ৮ ব্যক্তি নয়, বাংলাদেশের নামও রয়ে গেছে। এ জন্য বহুদিন ভুগতে হবে। সিঙ্গাপুরে শ্রমিকদের স্বার্থ দেখভাল কাজে যুক্ত বাংলাদেশি জিয়া বলছিলেন, এখানে বাংলাদেশিদের সুনাম নানা কারণে। প্রথমত এরা বিশ্বস্ত, দ্বিতীয়ত এরা কর্মঠ। তৃতীয়ত তারা সরল এবং কষ্ট করে স্কেল বা উন্নতির পথে থাকে। কিন্তু কতিপয় বিভ্রান্ত মানুষ ওই সরল কর্মঠ বিশ্বাসীদের প্রতিনিয়ত প্ররোচনায় ব্যস্ত। তাদের আহ্বানে সাড়া দিলেই সর্বনাশ। কিন্তু এর মধ্যে সবাই ঠিক থাকতে পারে না। তারা বিভ্রান্ত হয়ে যায়। অপরাধে যুক্ত হয়ে যায়, কিন্তু আবার ভালো পথে ফিরেও আসে। তাছাড়া বড় অপরাধে শ্রমিকদের সম্পৃক্ত হাতেগোনা ঘটনা। যা হেড লাইন হয় বছরে ২-৩ বার! তার মতে, সিঙ্গাপুর সরকার এবং পুলিশও জানে বেশির ভাগ বাংলাদেশি সরল, নির্ভেজাল। নিরিবিলি জীবন ও কর্ম করতে চায়। আর কতিপয় দুষ্ট রয়েছে, এরা অতিমাত্রায় চালাক। ঘুরেফিরে তারাই ধড়া পড়ে, শাস্তি পায়, ফের অপরাধে যুক্ত হয়।
আজব কাণ্ড ঘটিয়ে খবরের শিরোনাম: এক বাংলাদেশি আজব কাণ্ড ঘটিয়ে শিরোনাম হয়েছেন গত আগস্টে। স্টেইট টাইমসসহ গোটা পূর্ব এশিয়ায় খবরটি প্রচার পেয়েছে। হামিদ মাতব্বর চুন্নু নামের ওই বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াই গোপনে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর ছেড়ে যাচ্ছিলেন। তার এ কাজে সহযোগী ছিলেন দু’জন মালয়েশিয়ান নারী। একজন নারী প্রাইভেটকার ড্রাইভ করছিলেন, অন্যজন যাত্রী। চুন্নু ছিলেন গাড়ির পেছনের সিটের নিচে, পাপোশের নিচে। ইমিগ্রেশন পুলিশ গাড়িটি সার্চ করতে গিয়ে চুন্নুকে খুঁজে পায় এবং সহযোগীদেরসহ আটক করে। পাসপোর্ট দেখাতে না পারায় ইমিগ্রেশন আইনের ৩টি ধারায় চুন্নুর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের বিদ্যমান আইনে চুন্নুর বিচার হবে এবং শাস্তি কার্যকর হওয়ার পর তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন- চুন্নুর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা হাতেনাতে প্রমাণিত। তার জেল-জরিমানা নিশ্চিত। দেখার বিষয় সিঙ্গাপুরের আইনে বৃটিশ আমল থেকে বেত্রাঘাতের শাস্তির যে বিধান চালু রয়েছে সেটা তার বেলায় হতে পারে। এমন কঠোর শাস্তি খুব কম বাংলাদেশি পেয়েছেন। সামপ্রতিককালে তো নয়ই। পুলিশি রেকর্ড মতে, ২৯ বছর বয়সী চুন্নু ২০১৬ সালে অপরাধের জন্য সিঙ্গাপুর থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তিনি এখানে নিষিদ্ধ ছিলেন।
ফলে অবৈধ পথেই তাকে দেশটিতে ঢুকতে হয়েছে এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। কাছাকাছি আরো দু’জন বাংলাদেশি আটক হয়েছেন এক সেক্সওয়ার্কারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে। গেলানের একটি হোটেলের ওই ঘটনাটি পুলিশ অভিযুক্তদের ডরমিটরি থেকে আটক করেছে, তবে তাদের মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। আগস্টেই ইমিগ্রেশন আইন ভাঙার দায়ে ২ সিঙ্গাপুরের নাগরিকসহ ২২ বিদেশি আটক হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জন বাংলাদেশিও রয়েছেন।
হাইকমিশনার যা বললেন: এদিকে বাংলাদেশিদের বিষয়ে জানতে চাইলে সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তুলনামূলক বাংলাদেশের জন্য সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার স্থিতিশীল। কিছু ঘটনা বাদ দিলে বাংলাদেশিরা সুনামের সঙ্গেই আছেন। এখানে ন্যূনতম দৈনিক ১৮ ডলার মজুরিতে তারা কাজ করেন। তাদের ডরমিটরিতে থাকাসহ জীবনযাত্রা মোটামুটি ভালো। মিশনের প্রতিনিধিরা নিয়মিত ডরমিটরি ভিজিট করেন জানিয়ে হাইকমিশনার মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধ পথে টাকা ইনকাম, রেমিটেন্স পাঠানো এবং সিঙ্গাপুরের আইন মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করা হয়। কাউন্সেলিং হয় নিয়মিত। কিন্তু তারপরেও দুষ্টরা অপরাধ করে গোটা দেশকে কালিমাযুক্ত করে দেয়। আমরা হই বিব্রত।
No comments