স্থবির সংগীতাঙ্গন: হতাশ সংশ্লিষ্টরা by ফয়সাল রাব্বিকীন
চলতি
বছরের ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, দুই ঈদের মতো বড় উৎসব অতিবাহিত হয়েছে।
কিন্তু এ উৎসবগুলোও গানের বাজারের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। যেখানে
উৎসবে জমে ওঠার কথা, সেখানে স্থবির অবস্থায়ই রয়েছে সংগীতাঙ্গন। বিশেষ করে
নতুন গানের সংখ্যা যেমন এ বছর কমেছে, তেমনি কোনো গানই সেভাবে মাথা তুলে
দাঁড়াতে পারেনি। বছরের নবম মাস চলছে এখন। বাকি মাসগুলোতে গান প্রকাশের
সংখ্যা আরো কমবে। কারণ তেমন কোনো উৎসব নেই এ সময়ে। তাছাড়া অডিও
কোম্পানিগুলোও আগ্রহী হচ্ছে না নতুন গান প্রকাশে। যে কাজগুলো আগে করা ছিল,
কেবলমাত্র সেগুলোই প্রকাশ পাচ্ছে এখন। সর্বশেষ গেল কোরবানির ঈদে গানের
বাজার একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সংখ্যার দিক দিয়ে যেমন গান কম ছিল, তেমনি
আলোচিত গানের সংখ্যা হাতেগোনা। ইউটিউবের টেকনিক্যাল কারণে বড় তারকাদের
গানের ভিউও দেখা গেছে কম। সব মিলিয়ে অডিও কোম্পানিগুলোও হতাশ এখন পর্যন্ত
চলতি বছরের গানের বাজার নিয়ে। বাজার কাটতি থাকা কিছু শিল্পীর বাইরে অন্য
শিল্পীদের গানও এ বছর কম প্রকাশ হয়েছে। সেসব শিল্পী ইন্ডাস্ট্রির এ অবস্থা
নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। চলতি বছর সিনিয়র শিল্পীদের মধ্যে কুমার
বিশ্বজিৎ, ফাহমিদা নবী, এসডি রুবেল, ডলি সায়ন্তনী, আঁখি আলমগীরের বেশকিছু
গান প্রকাশ হয়েছে। তবে সর্বাধিক গান এখন পর্যন্ত প্রকাশ হয়েছে সংগীত তারকা
আসিফ আকবরের। অন্যদিকে হাবিব ওয়াহিদ এবং ইমরানও এ বছর নিয়মিত গান প্রকাশ
করেছেন। এদিকে ন্যান্সি, কনা, এফ এ সুমন, কাজী শুভ, সালমা, পূজা, কর্ণিয়া,
ঐশী, লিজা, ঝিলিক, মাহতিম সাকিবদের গান প্রকাশ হয়েছে নিয়মিত। তবে বেশির
ভাগ শিল্পীই চলতি বাজারের অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সন্তুষ্ট নন অডিও
কোম্পানি থেকে শুরু করে সংগীতসংশ্লিষ্টরা। দেশের সংগীতাঙ্গনে বর্তমানে সব
থেকে বাজে অবস্থায় পড়েছেন নতুন শিল্পীরা। কারণ তাদের গান গাঁটের অর্থ খরচ
করে করে রিস্ক নিতে চাচ্ছে না কোম্পানিগুলো। গানের বাজারের চলতি অবস্থা
নিয়ে এমআইবি সভাপতি ও লেজারভিশনের চেয়ারম্যান এ কে এম আরিফুর রহমান বলেন, এ
বছর গানের অবস্থা একেবারেই ভালো যাচ্ছে না। সত্যি বলতে আমরা হতাশ। আমার
মনে হয় কোম্পানি থেকে শুরু করে শিল্পীরাও হতাশ বিষয়টি নিয়ে। আমরা ভেবেছিলাম
অন্তত কোনো না কোনো উৎসবে গানের বাজার ঘুরে দাড়াবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং
ওয়েলকাম টিউন থেকে আয় আরো কমেছে। ইউটিউব ভিউ যেহেতু কমেছে, আয়ও কমেছে। সব
মিলিয় নতুন গান প্রকাশে বিনিয়োগ করারই অবস্থা নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা
করেছি কিছু নতুন গান প্রকাশের। প্রতিটি উৎসবেই অল্প হলেও গান প্রকাশ করে
গেছি। কারণ গানকে ভালোবেসেইতো এখনও চালিয়ে যাচ্ছি আমাদের কার্যক্রম। তাই
আশা ছাড়তে চাই না। আমরা চেষ্টা করছি চলতি অবস্থা থেকে উত্তরণের। বিভিন্ন
বিষয় নিয়ে এমআইবিও আলোচনায় বসছে। আশা করছি সামনে অবস্থা ভালো হবে। এদিকে
বিষয়টি নিয়ে সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী বলেন, গানের অবস্থা অনেক দিন থেকেই
ভালো না। এখন অবস্থা আরো খারাপ। আসলে কোনো কিছুই নিয়মের মধ্যে নেই। যে
গাইতে পারে না সেও গাইছে। আবার সেই গান ভাইরালও হচ্ছে। তাছাড়া মেধাবী
শিল্পীদের থেকে ভাইরাল শিল্পীদের প্রমোশনটাই বেশি হচ্ছে। সব মিলিয়ে
শ্রোতারাও দ্বিধায় আছেন। সত্যি বলতে এক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প নেই। শিল্পী
থেকে শুরু করে শ্রোতাদেরও সচেতন হতে হবে। তাছাড়া একটি অভাব সব সময় অনুভব
করি। সেটা হচ্ছে একতার অভাব। শিল্পী, সংগীতসংশ্লিষ্ট ও অডিও কোম্পানিগুলো
যদি আলোচনার মাধ্যমে এক হয়ে কাজ করে তবে আমি মনে করি যেকোনো সমস্যা থেকে
উত্তরণ সম্ভব। বিষয়টি নিয়ে চলতি প্রজন্মের সংগীতশিল্পী কাজী শুভ বলেন, দিন
দিন যেভাবে গানের সংখ্যা কমছে সেটা হতাশাজনক। কারণ আমরা যারা গানকে পেশা
হিসেবে নিয়েছি তাদের আর্থিক বিষয়টি কিন্তু নির্ভর করে ইন্ডাস্ট্রির ওপরই। এ
বছর গানের সংখ্যা কেবল ক্রমাগতভাবে কমেছে। আমি মনে করি ইন্ডাস্ট্রির সবাই
মিলে বসে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি।
No comments