সন্তানের জন্য মায়ের আইনি লড়াই by রাশিম মোল্লা
মোসাম্মৎ
আনিকা। দশম শ্রেণীর ছাত্রী। প্রস্তুতি চলছে তার মাধ্যমিক পরীক্ষায়
অংশ্রগ্রহণের। ঠিক ওই সময় ২০০৮ সালের ১৩ই জানুয়ারি উওর আদাবরের যুবক সুমনের
সঙ্গে বিয়ে হয় আনিকার। বিয়ের পর ৫ ভরি গহনা ও বিভিন্ন সময়ে ১৫ লাখ টাকার
যৌতুক এনে দেন স্বামী সুমনকে। এরপর প্রতি রাতেই সুমন ঘরেই শুরু করে নেশা।
মানা করলেই স্ত্রীকে করতো মারধর। এতকিছুর পরও একদিন সুমন তার স্ত্রীর কাছে
ভবন নির্মাণের জন্য ২৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। কিন্তু টাকা এনে দিতে
অস্বীকার করে আনিকা। শুরু হয় ঝগড়া আর মারধর। এক পর্যায়ে স্ত্রী আনিকা ও তার
মেয়েকে বাসা থেকে বের করে দেয় সুমন। বাপের বাড়িতে গিয়ে আনিকা মেয়েকে
স্কুলে ভর্তি করেন। এরপর হঠাৎ একদিন কারো কাছে না বলেই সুমন মেয়ে মায়মুনাকে
নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজার পরে মায়মুনার সন্ধান মিলে সুমনের
বাড়িতে। মায়মুনাকে ফেরত দিতে অস্বীকার করে সুমন। কিন্তু আনিকা মেয়েকে
পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। সামাজিক ভাবে অনেক চেষ্টা চলে। কিন্তু কোনো
কাজ হয়নি। অবশেষে আদালতের দারস্থ হন আনিকা। গত ১৯শে আগস্ট পারিবারিক আদালতে
মামলা করেন আনিকা।
আনিকা তার বিয়ে সম্পর্কে বলেন, হঠাৎ একদিন তাকে দেখতে আসে পাত্র পক্ষ। পাত্রের সামনে যেতে অসম্মতি জানান তিনি। তবু পিতার অনুরোধে পাত্র পক্ষের সামনে যান তিনি। পাত্র সুমন তাকে দেখে মুগদ্ধ হন। তবে আনিকা বিয়ে করতে অসম্মতি জানান। পড়ালেখা করে নিজে কিছু করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী। তাই পিতাকে সাফ জানিয়ে দেন, এখন তিনি বিয়ে করতে চান না। কিন্তু পাত্র সুমন যে কোনো শর্তে বিয়ে করতে রাজি। বিয়ের পর লেখাপড়ার সুযোগ দেয়া হবে তাকে। সুমনের এমন মিষ্টি কথায় ও পরিবারের কারণে রাজি হন আনিকা। অবশেষে ২০০৮ সালের ১৩ই জানুয়ারি ঢাকার উওর আদাবরের যুবক সুমনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর কিছুদিন ভালোই চলছিল তাদের সংসার। বিয়ের আগের দেয়া কথা মতো আনিকা পড়ালেখার অনুমতি চান। দিন যায় মাস যায়। কিন্তু তাকে পড়ার সুযোগ দেয়া হয়না। পুরোদমে শুরু হয় সংসার জীবন। কোনো কাজ, শাশুড়ি-ননদের মন মতো কাজ করতে না পারলেই চলে বকাঝকা। বাদ থাকে না মারধরও। স্বামীর সামনেই ননদ মারধর করত। তবু স্বামী কোনো প্রতিবাদ করত না। উল্টো সুমনও বকাঝকা করত। যখন স্বামী বাসার বাইরে থাকত, তখন আনিকার উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যেত বহুগুণ। স্বামী আসার পর মা বোনের কথা মতো ফের মারধর করত।
কাঁদতে কাঁদতে আনিকা বলেন, এত কিছুর পরেও মা বাবাকে কোন কিছুই জানায়নি। বিয়ের পর আমার গলা কান খালি। তাই আমার বাবা ৫ ভরি গহনা কিনে দেন আমাকে। ওই গহনা আমার স্বামীর নির্দেশে তার বোন স্বপ্না ছিনিয়ে নেয়। কিছু দিন পর গহনা ফেরত চাইলে তাকে মারধর করে। এত কিছুর পরেও স্বামীর কথা মতো পিতার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ১৫ লাখ টাকা যৌতুক এনে দেই। এরপর তিনি ফের ভবন নির্মাণের জন্য ২৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। কিন্তু আমি যৌতুকের টাকা এনে দিতে অস্বীকার করি। একদিন প্রচন্ড মারধর করে আমাকে। পরে আমাকে ও আমার মেয়ে মায়মুনাকে বাসায় থেকে বের করে দেয়। সেই থেকে আমার বাবার বাসায় থাকি।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৩০শে মার্চ জন্ম নেয় তাদের ফুটফুটে এক কন্যা শিশু। আদর করে মেয়ের নাম রাখেন মায়মুনা। সন্তানকে ঘিরে কাটতে থাকে তার সময়। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে মেয়ে। বয়স চার বছর । মেয়েকে ভর্তি করা হয় স্কুলে। হঠাৎ চলতি বছরের ২৮শে মে সুমন মেয়ে মায়মুনাকে কারো কাছে কিছু না বলেই নিয়ে যায়। কোথাও খোঁজ মিলে না মায়মুনার। অবশেষে জানতে পারেন, মায়মুনার বাবা মায়মুনাকে নিয়ে গেছে। মেয়েকে আনার জন্য সুমনের বাসায় যায় আনিকা। কিন্তু মায়মুনাকে তারা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। আজ চার মাস ধরে আদরের সন্তান মায়মুনার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ নেই আনিকার।
আনিকা বলেন, মেয়েকে পেতে সুমনের পরিবারের কাছে গেছি। সামাজিকভাবেও অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সর্বশেষ পুলিশের কাছে গেছি। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। পরিশেষে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আনিকার আইনজীবী এডভোকেট মাহবুব হাসান রানা বলেন, পারিবারিক আইন অনুযায়ী স্বামী স্ত্রী আলাদা হলে কণ্যা শিশু ১৯ বছর পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে এবং এই সময়ে যাবতীয় খরচ পিতাই বহন করবে।
অপরদিকে, এমন আরো একটি ঘটনায় গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি মা জরিনা মুহাম্মদ নাবালক সন্তান জাওয়াদ ইসলামের (৩) অভিবাবক্তের দাবিতে মামলা করেন। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৮ই মার্চ গুলশানের নাহিদুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বিয়ে হয় জরিনা মুহাম্মদের। এরপর ২০১৪ সালের ২৯শে জুন জন্ম হয় পুত্র সন্তানের। বনিবনা না হওয়ায় ২০১৭ সালের ৮ই মে তাদের তালাক হয়ে যায়। ফলে প্রতিমাসেই আদালতে আসতে হচ্ছে মা- বাবাকে। একইসঙ্গে আসতে হচ্ছে নাবালক সন্তানকেও। আবেদনে ১৯৮৫ সনের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশের ৫(ই) ধারার বিধান মোতাবেক বাদীনীর বরাবরে নাবালক মো. জাওয়াদ ইসলামের হেফাজতকারী ( কাষ্টডিয়ান) নিযুক্ত হওয়ায় এবং পূর্ন হেফাজতে দেয়ার জন্য বিচারকের আদেশ চাওয়া হয়েছে। আইনজীবী শ্রেষ্ঠ আহমেদ রতন বলেন, মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, ছেলের ৭ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। এমনকি আদালত তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে আদালত যদি মনে করেন ছেলেটিকে মায়ের তত্ত্বাবধানে রাখলে ছেলের মানুষিক বিকাশ ও শিক্ষা অর্জনে সহায়ক, তাহলে আদালত ৭ বছর হওয়ার পরেও মায়ের হেফাজতে দিতে পারে। তবে এই সময়ে ছেলের ভরণ পোষণ পিতাকেই বহন করতে হবে।
আনিকা তার বিয়ে সম্পর্কে বলেন, হঠাৎ একদিন তাকে দেখতে আসে পাত্র পক্ষ। পাত্রের সামনে যেতে অসম্মতি জানান তিনি। তবু পিতার অনুরোধে পাত্র পক্ষের সামনে যান তিনি। পাত্র সুমন তাকে দেখে মুগদ্ধ হন। তবে আনিকা বিয়ে করতে অসম্মতি জানান। পড়ালেখা করে নিজে কিছু করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী। তাই পিতাকে সাফ জানিয়ে দেন, এখন তিনি বিয়ে করতে চান না। কিন্তু পাত্র সুমন যে কোনো শর্তে বিয়ে করতে রাজি। বিয়ের পর লেখাপড়ার সুযোগ দেয়া হবে তাকে। সুমনের এমন মিষ্টি কথায় ও পরিবারের কারণে রাজি হন আনিকা। অবশেষে ২০০৮ সালের ১৩ই জানুয়ারি ঢাকার উওর আদাবরের যুবক সুমনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর কিছুদিন ভালোই চলছিল তাদের সংসার। বিয়ের আগের দেয়া কথা মতো আনিকা পড়ালেখার অনুমতি চান। দিন যায় মাস যায়। কিন্তু তাকে পড়ার সুযোগ দেয়া হয়না। পুরোদমে শুরু হয় সংসার জীবন। কোনো কাজ, শাশুড়ি-ননদের মন মতো কাজ করতে না পারলেই চলে বকাঝকা। বাদ থাকে না মারধরও। স্বামীর সামনেই ননদ মারধর করত। তবু স্বামী কোনো প্রতিবাদ করত না। উল্টো সুমনও বকাঝকা করত। যখন স্বামী বাসার বাইরে থাকত, তখন আনিকার উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যেত বহুগুণ। স্বামী আসার পর মা বোনের কথা মতো ফের মারধর করত।
কাঁদতে কাঁদতে আনিকা বলেন, এত কিছুর পরেও মা বাবাকে কোন কিছুই জানায়নি। বিয়ের পর আমার গলা কান খালি। তাই আমার বাবা ৫ ভরি গহনা কিনে দেন আমাকে। ওই গহনা আমার স্বামীর নির্দেশে তার বোন স্বপ্না ছিনিয়ে নেয়। কিছু দিন পর গহনা ফেরত চাইলে তাকে মারধর করে। এত কিছুর পরেও স্বামীর কথা মতো পিতার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ১৫ লাখ টাকা যৌতুক এনে দেই। এরপর তিনি ফের ভবন নির্মাণের জন্য ২৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। কিন্তু আমি যৌতুকের টাকা এনে দিতে অস্বীকার করি। একদিন প্রচন্ড মারধর করে আমাকে। পরে আমাকে ও আমার মেয়ে মায়মুনাকে বাসায় থেকে বের করে দেয়। সেই থেকে আমার বাবার বাসায় থাকি।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৩০শে মার্চ জন্ম নেয় তাদের ফুটফুটে এক কন্যা শিশু। আদর করে মেয়ের নাম রাখেন মায়মুনা। সন্তানকে ঘিরে কাটতে থাকে তার সময়। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে মেয়ে। বয়স চার বছর । মেয়েকে ভর্তি করা হয় স্কুলে। হঠাৎ চলতি বছরের ২৮শে মে সুমন মেয়ে মায়মুনাকে কারো কাছে কিছু না বলেই নিয়ে যায়। কোথাও খোঁজ মিলে না মায়মুনার। অবশেষে জানতে পারেন, মায়মুনার বাবা মায়মুনাকে নিয়ে গেছে। মেয়েকে আনার জন্য সুমনের বাসায় যায় আনিকা। কিন্তু মায়মুনাকে তারা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। আজ চার মাস ধরে আদরের সন্তান মায়মুনার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ নেই আনিকার।
আনিকা বলেন, মেয়েকে পেতে সুমনের পরিবারের কাছে গেছি। সামাজিকভাবেও অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সর্বশেষ পুলিশের কাছে গেছি। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। পরিশেষে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আনিকার আইনজীবী এডভোকেট মাহবুব হাসান রানা বলেন, পারিবারিক আইন অনুযায়ী স্বামী স্ত্রী আলাদা হলে কণ্যা শিশু ১৯ বছর পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে এবং এই সময়ে যাবতীয় খরচ পিতাই বহন করবে।
অপরদিকে, এমন আরো একটি ঘটনায় গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি মা জরিনা মুহাম্মদ নাবালক সন্তান জাওয়াদ ইসলামের (৩) অভিবাবক্তের দাবিতে মামলা করেন। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৮ই মার্চ গুলশানের নাহিদুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বিয়ে হয় জরিনা মুহাম্মদের। এরপর ২০১৪ সালের ২৯শে জুন জন্ম হয় পুত্র সন্তানের। বনিবনা না হওয়ায় ২০১৭ সালের ৮ই মে তাদের তালাক হয়ে যায়। ফলে প্রতিমাসেই আদালতে আসতে হচ্ছে মা- বাবাকে। একইসঙ্গে আসতে হচ্ছে নাবালক সন্তানকেও। আবেদনে ১৯৮৫ সনের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশের ৫(ই) ধারার বিধান মোতাবেক বাদীনীর বরাবরে নাবালক মো. জাওয়াদ ইসলামের হেফাজতকারী ( কাষ্টডিয়ান) নিযুক্ত হওয়ায় এবং পূর্ন হেফাজতে দেয়ার জন্য বিচারকের আদেশ চাওয়া হয়েছে। আইনজীবী শ্রেষ্ঠ আহমেদ রতন বলেন, মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, ছেলের ৭ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। এমনকি আদালত তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে আদালত যদি মনে করেন ছেলেটিকে মায়ের তত্ত্বাবধানে রাখলে ছেলের মানুষিক বিকাশ ও শিক্ষা অর্জনে সহায়ক, তাহলে আদালত ৭ বছর হওয়ার পরেও মায়ের হেফাজতে দিতে পারে। তবে এই সময়ে ছেলের ভরণ পোষণ পিতাকেই বহন করতে হবে।
No comments