বাজেট জনকল্যাণমূলক: যাদের মানসিক অসুস্থতা থাকে তাদের কিছুই ভালো লাগে না -প্রধানমন্ত্রী
সংসদে
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা পড়ে শোনানোর পর এবার বাজেটোত্তর সংবাদ
সম্মেলনেও কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সংবাদ
সম্মেলনে বাজেট নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জবাব দেন বিভিন্ন
প্রশ্নের। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থতার কারণে বৃহস্পতিবার
পুরো বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করতে পারেননি। শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ
সম্মেলনেও আসতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।
বিকাল তিনটায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক থাকে, যাদের একটা মানসিক অসুস্থতা থাকে, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। আপনি যত ভালো কাজই করেন, তারা কোনো কিছু ভালো খুঁজে পায় না। এটা ভালো না লাগা পার্টির অসুস্থতা।
গতকাল সকালে গবেষণা সংস্থা সিপিডির ‘বাজেট পর্যালোচনা’ অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশের মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের মানুষ নয়, যারা ধনী এবং ‘অর্থনৈতিক অপশাসনের সুবিধাভোগী’, তারাই নতুন অর্থবছরের বাজেট থেকে সুবিধা পাবে। প্রধানমন্ত্রীর বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এই বাজেটে খুশি কি না, বাজেটে তাদের উপকার হচ্ছে কি না- সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জনকল্যাণমুলক বাজেট দিয়েছি।
তিনি বলেন, যখন দেশে একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকে, যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, সাধারণ মানুষের উন্নতি হয়, তখন তারা কোনোকিছুই ভালো দেখে না। সব কিছুতেই কিন্তু খোঁজে। সিপিডি কী গবেষণা করে এবং তারা দেশের জন্য কী আনতে পেরেছে-সেই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও তাদের একটা কিছু বলতে হবে। তো সেটা ভালো এত সমালোচনা করেও আবার বলবে-আমরা কথা বলতে পারি না। এ রোগটাও আছে। এটা অনেকটা অসুস্থতার মত। বাজেট নিয়ে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কথা হচ্ছে, সাধারণ জনগণ খুশি কি না। সাধারণ মানুষ খুশি কি না। সাধারণ মানুষগুলির ভালো করতে পারছি কি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এবার নিয়ে টানা ১১ বারের মত বাজেট দিল। আমরা যা করছি, তার সুফলটা কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। আর এই ভালো না লাগা পার্টি যারা, তাদের কোনো কিছুতেই ভালো লাগবে না। সমালোচকদের জবাব দিতে গিয়ে একটি বাংলা কৌতুকের কথাও মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটা গল্প আছে না, পড়াশোনা করছে ছেলে, বলা হলো পাস করবে না; পাস করার পরে বললো চাকরি পাবে না; চাকরি পাওয়ার পর বললো বেতন পাবে না; বেতন পাওয়ার পরে বললো বেতনের টাকা চলবে না। তো উনাদের সেই অসুস্থতা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সরকার দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে, উন্নত করতে, সমৃদ্ধশালী করতে এবং স্বাধীনতার সুফল যেন দেশের মানুষের ঘরে পৌঁছায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, সেই লক্ষ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এখন বাইরে গেলে আগে যারা মনে করত আমরা ভিক্ষুকের জাত হিসেবে যাচ্ছি, এখন আর কেউ তা মনে করে না। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় অর্জন। যারা সমালোচনা করার তারা করে যাক, ভালো কথা বললে আমরা গ্রহণ করব, মন্দ কথা বললে আমরা ধর্তব্যে নেব না। পরিষ্কার কথা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এবারের বাজেটের বিভিন্ন দিক এবং সরকারের পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বাজেট নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। দেশে ক্রমাগত খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পত্রিকার মালিকরা কে, কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছেন এবং তা শোধ করেছেন কি না- সেই খোঁজ নেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা দয়া করে সমস্ত ব্যাংকগুলো থেকে এ তথ্যটা আগে বের করেন। যত মিডিয়া এখানে আছে, যত পত্রিকায় কাজ করেন, প্রত্যেকে ব্যাংকে গিয়ে বলবেন, আমি অনুরোধ করেছি। আপনাদের প্রশ্নের জবাবে, কোন মালিক, কোন ব্যাংকের কত টাকা ঋণ নিয়ে কত টাকা সুদ দেয়নি বা খেলাপি হয়েছে; এখানে একটা হিসাব বের করলে আমাকে আর প্রশ্ন করতে হবে না।
আর মালিকদের বলেন, তাদের ঋণ খেলাপির টাকাগুলো পরিশোধ করতে, তাহলে আর খেলাপি থাকবে না। বর্তমান সরকারের আমলে অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য থাকলেও ঋণখেলাপিদের কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু আমাদের সুদের হার বেশি, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ হয়, আর যখন হিসাবটা করা হয় তখন চক্রবৃদ্ধি হারে যেটা বলা হলো সেটা ধরে সুদসহ হিসাব দেয়া হয়। ফলে ঋণের পরিমাণটা দেখায় অনেক বড়। প্রকৃত ঋণটা যদি ধরা হয় তাহলে দেখা যাবে ঋণ তত বড় নয়। এর পেছনে নিশ্চয়ই বড় কোনো উদ্দেশ্য আছে যার ফলে চক্রবৃদ্ধি সুদসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ধরা হয়। তবে খেলাপির ঋণের পরিমাণ যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ায় সৎ ব্যক্তিরা হতাশ হবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সুযোগ দেয়া হয়েছে যাতে অর্থপাচার না হয়। অপ্রদর্শিত টাকা অনেকে পাচার করতে চান। সেই টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কালো টাকার স্তুপ যেন না জমে, তা যেন কাজে আসতে পারে, সেজন্য এ সুযোগ। তবে এজন্য যারা সৎ পথে উপার্জন করেন তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
যারা সৎ থাকেন তাদের যাতে সুবিধা হয় তা আমরা দেখব। বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ করা সোনালী যুদ্ধ বলতে কি বোঝাতে চাইছেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে উন্নতির সোপানে পৌঁছে দিতে আমার সরকার কাজ করছে। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার যে যুদ্ধ সেটাই সোনালী যুদ্ধ। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি লোককে কিভাবে কর্মসংস্থান করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি কর্মসংস্থানের কথা আমরা বলেছি, চাকরি দেয়ার কথা বলিনি। ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রেখেছি। বাজেটে শিক্ষার কথা বলেছি; প্রযুক্তিগত শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং। আর আমরা চাই ট্রেনিং নিয়ে শিক্ষিত হয়ে নিজের কাজ নিজে করতে শিখুক। তিনি বলেন, ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। আর আছে বলেই আজ ধান কাটার লোক পাওয়া যায় না। ধান কাটার জন্য এখন লোক পাওয়া যাচ্ছে না কেন? যদি এত বেশি বেকার থাকে; তাহলে ধান কাটার লোকের অভাব হতো না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মানুষ একদিন ধান কাটলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পাবে। আবার তিন বেলা খাবার, দুই বেলা খাবে আর এক বেলা আবার বাড়ি নিয়ে যাবে। এরপরও কৃষক ধান কাটার জন্য লোক খুঁজে পায় না। কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে বলেই এখন ধান কাটার লোকের অভাব হচ্ছে। আমরা কর্মসংস্থানের কথা বলি, আর সবার ধারণা হয়ে যায় চাকরি দেয়া। ১৬ কোটি মানুষকে কি চাকরি দেয়া যায়? পৃথিবীর কোনো দেশ দেয়? কর্মসংস্থান হচ্ছে, মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে, সেই সুযোগটা সৃষ্টি করা।
ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ দেয়ার ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা মেনে চলতে হবে। আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি, যাতে সুদটা সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে সুবিধাও দিয়েছি। কিন্তু অনেক বেসরকারি ব্যাংক সেটা মানেনি। এবার বাজেটে নির্দেশনা দেয়া আছে। এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট নিহতদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্নোত্তরের আগে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট সেই লক্ষ্যমাত্রার পথে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে। কৃষি খাতের উন্নয়নে ২০ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে। গ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রাম হবে আধুনিক শহর। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন আরও গতি পাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুততম সময়ে ফাইভ-জির ব্যবস্থা করা হবে। বাজেট পরবর্তী এই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশেই বসেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এছাড়া শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার।
বিকাল তিনটায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক থাকে, যাদের একটা মানসিক অসুস্থতা থাকে, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। আপনি যত ভালো কাজই করেন, তারা কোনো কিছু ভালো খুঁজে পায় না। এটা ভালো না লাগা পার্টির অসুস্থতা।
গতকাল সকালে গবেষণা সংস্থা সিপিডির ‘বাজেট পর্যালোচনা’ অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশের মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের মানুষ নয়, যারা ধনী এবং ‘অর্থনৈতিক অপশাসনের সুবিধাভোগী’, তারাই নতুন অর্থবছরের বাজেট থেকে সুবিধা পাবে। প্রধানমন্ত্রীর বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এই বাজেটে খুশি কি না, বাজেটে তাদের উপকার হচ্ছে কি না- সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জনকল্যাণমুলক বাজেট দিয়েছি।
তিনি বলেন, যখন দেশে একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকে, যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, সাধারণ মানুষের উন্নতি হয়, তখন তারা কোনোকিছুই ভালো দেখে না। সব কিছুতেই কিন্তু খোঁজে। সিপিডি কী গবেষণা করে এবং তারা দেশের জন্য কী আনতে পেরেছে-সেই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও তাদের একটা কিছু বলতে হবে। তো সেটা ভালো এত সমালোচনা করেও আবার বলবে-আমরা কথা বলতে পারি না। এ রোগটাও আছে। এটা অনেকটা অসুস্থতার মত। বাজেট নিয়ে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কথা হচ্ছে, সাধারণ জনগণ খুশি কি না। সাধারণ মানুষ খুশি কি না। সাধারণ মানুষগুলির ভালো করতে পারছি কি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এবার নিয়ে টানা ১১ বারের মত বাজেট দিল। আমরা যা করছি, তার সুফলটা কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। আর এই ভালো না লাগা পার্টি যারা, তাদের কোনো কিছুতেই ভালো লাগবে না। সমালোচকদের জবাব দিতে গিয়ে একটি বাংলা কৌতুকের কথাও মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটা গল্প আছে না, পড়াশোনা করছে ছেলে, বলা হলো পাস করবে না; পাস করার পরে বললো চাকরি পাবে না; চাকরি পাওয়ার পর বললো বেতন পাবে না; বেতন পাওয়ার পরে বললো বেতনের টাকা চলবে না। তো উনাদের সেই অসুস্থতা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সরকার দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে, উন্নত করতে, সমৃদ্ধশালী করতে এবং স্বাধীনতার সুফল যেন দেশের মানুষের ঘরে পৌঁছায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, সেই লক্ষ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এখন বাইরে গেলে আগে যারা মনে করত আমরা ভিক্ষুকের জাত হিসেবে যাচ্ছি, এখন আর কেউ তা মনে করে না। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় অর্জন। যারা সমালোচনা করার তারা করে যাক, ভালো কথা বললে আমরা গ্রহণ করব, মন্দ কথা বললে আমরা ধর্তব্যে নেব না। পরিষ্কার কথা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এবারের বাজেটের বিভিন্ন দিক এবং সরকারের পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বাজেট নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। দেশে ক্রমাগত খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পত্রিকার মালিকরা কে, কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছেন এবং তা শোধ করেছেন কি না- সেই খোঁজ নেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা দয়া করে সমস্ত ব্যাংকগুলো থেকে এ তথ্যটা আগে বের করেন। যত মিডিয়া এখানে আছে, যত পত্রিকায় কাজ করেন, প্রত্যেকে ব্যাংকে গিয়ে বলবেন, আমি অনুরোধ করেছি। আপনাদের প্রশ্নের জবাবে, কোন মালিক, কোন ব্যাংকের কত টাকা ঋণ নিয়ে কত টাকা সুদ দেয়নি বা খেলাপি হয়েছে; এখানে একটা হিসাব বের করলে আমাকে আর প্রশ্ন করতে হবে না।
আর মালিকদের বলেন, তাদের ঋণ খেলাপির টাকাগুলো পরিশোধ করতে, তাহলে আর খেলাপি থাকবে না। বর্তমান সরকারের আমলে অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য থাকলেও ঋণখেলাপিদের কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু আমাদের সুদের হার বেশি, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ হয়, আর যখন হিসাবটা করা হয় তখন চক্রবৃদ্ধি হারে যেটা বলা হলো সেটা ধরে সুদসহ হিসাব দেয়া হয়। ফলে ঋণের পরিমাণটা দেখায় অনেক বড়। প্রকৃত ঋণটা যদি ধরা হয় তাহলে দেখা যাবে ঋণ তত বড় নয়। এর পেছনে নিশ্চয়ই বড় কোনো উদ্দেশ্য আছে যার ফলে চক্রবৃদ্ধি সুদসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ধরা হয়। তবে খেলাপির ঋণের পরিমাণ যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ায় সৎ ব্যক্তিরা হতাশ হবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সুযোগ দেয়া হয়েছে যাতে অর্থপাচার না হয়। অপ্রদর্শিত টাকা অনেকে পাচার করতে চান। সেই টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কালো টাকার স্তুপ যেন না জমে, তা যেন কাজে আসতে পারে, সেজন্য এ সুযোগ। তবে এজন্য যারা সৎ পথে উপার্জন করেন তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
যারা সৎ থাকেন তাদের যাতে সুবিধা হয় তা আমরা দেখব। বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ করা সোনালী যুদ্ধ বলতে কি বোঝাতে চাইছেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে উন্নতির সোপানে পৌঁছে দিতে আমার সরকার কাজ করছে। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার যে যুদ্ধ সেটাই সোনালী যুদ্ধ। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি লোককে কিভাবে কর্মসংস্থান করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি কর্মসংস্থানের কথা আমরা বলেছি, চাকরি দেয়ার কথা বলিনি। ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রেখেছি। বাজেটে শিক্ষার কথা বলেছি; প্রযুক্তিগত শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং। আর আমরা চাই ট্রেনিং নিয়ে শিক্ষিত হয়ে নিজের কাজ নিজে করতে শিখুক। তিনি বলেন, ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। আর আছে বলেই আজ ধান কাটার লোক পাওয়া যায় না। ধান কাটার জন্য এখন লোক পাওয়া যাচ্ছে না কেন? যদি এত বেশি বেকার থাকে; তাহলে ধান কাটার লোকের অভাব হতো না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মানুষ একদিন ধান কাটলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পাবে। আবার তিন বেলা খাবার, দুই বেলা খাবে আর এক বেলা আবার বাড়ি নিয়ে যাবে। এরপরও কৃষক ধান কাটার জন্য লোক খুঁজে পায় না। কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে বলেই এখন ধান কাটার লোকের অভাব হচ্ছে। আমরা কর্মসংস্থানের কথা বলি, আর সবার ধারণা হয়ে যায় চাকরি দেয়া। ১৬ কোটি মানুষকে কি চাকরি দেয়া যায়? পৃথিবীর কোনো দেশ দেয়? কর্মসংস্থান হচ্ছে, মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে, সেই সুযোগটা সৃষ্টি করা।
ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ দেয়ার ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা মেনে চলতে হবে। আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি, যাতে সুদটা সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে সুবিধাও দিয়েছি। কিন্তু অনেক বেসরকারি ব্যাংক সেটা মানেনি। এবার বাজেটে নির্দেশনা দেয়া আছে। এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট নিহতদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্নোত্তরের আগে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট সেই লক্ষ্যমাত্রার পথে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে। কৃষি খাতের উন্নয়নে ২০ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে। গ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রাম হবে আধুনিক শহর। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন আরও গতি পাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুততম সময়ে ফাইভ-জির ব্যবস্থা করা হবে। বাজেট পরবর্তী এই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশেই বসেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এছাড়া শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার।
No comments