প্লিজ, এম্বুলেন্সকে যেতে দিন by শাহনেওয়াজ বাবলু
এম্বুলেন্স
চলছে না এক চুলও। অবিরাম বেজে চলছে সাইরেন। কেউ শুনছে না। সামনের গাড়িও
দাঁড়িয়ে আছে ঠাঁই। সিগন্যাল পাহারায় থাকা ট্রাফিক পুলিশও নিরুপায়।
এম্বুলেন্সের ভেতরে রোগীর অবস্থা যায় যায়। আর অপেক্ষা করতে পারছে না
স্বজনরা। কিন্তু কিছু যে করারও নেই।
সামনের গাড়ির চাকা বন্ধ। সিগন্যালে একের পর এক লাল, নীল বাতি জ্বলছে। কিন্তু গাড়ি চলছে না। আর চলবেই বা কীভাবে? সিগন্যালের সামনে গাড়ি চলার জায়গা নেই। যানজটে কলাপস হয়ে আছে রাজপথ। শনিবার বিকাল ৫টা। কাওরান বাজার মোড় থেকে পান্থপথ সিগন্যাল পর্যন্ত গাড়ির লম্বা লাইন। আধা ঘণ্টা পরেও সিগন্যাল ছাড়ার নাম নেই। এই জটে আটকা পড়েছে দুটি এম্বুলেন্স। অনেকক্ষণ সাইরেন বাজিয়েও কাজ হয়নি। কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। ফের বাজতে থাকে এম্বুলেন্সের সাইরেন। এক সময় একটি এম্বুলেন্স থেকে ভেসে আসে কান্নার শব্দ। স্বজনরা কাঁদছেন। মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে নেয়ার পথে যানজট বড় বাধা। সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিতে না পারায় পথেই মৃত্যু হয় অনেক রোগীর। তাই তো হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তারদের বলতে শোনা যায়-বড্ড দেরি করে ফেলেছেন।
এখন আর কিছুই করার নেই। অথচ রাজধানীর যানজট এড়াতে এম্বুলেন্সের জন্য আলাদা লেন থাকলে চোখের সামনে রোগীদের এভাবে মরতে হতো না। অন্ততপক্ষে স্বজনরা বলতে পারতেন, চেষ্টা করেছি। ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু যানজটের কারণে সান্ত্বনার এ বক্তব্যটুকুও রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
ট্রাফিক পুলিশের কথা- কখনও কখনও সিগন্যালের সামনের দিকে এম্বুলেন্স থাকলে আগে যাওয়ার সুযোগ করে দেন তারা। কিন্তু মাঝে পড়লে তাদের সে সুযোগ হয় না। কখনো কখনো উল্টো পথেও যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয় এম্বুলেন্সগুলোকে। যানজটের কারণে কত মানুষ সঠিক সময়ে হাসপাতালে না যেতে পেরে মারা গেছেন? তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে কখনো কখনো রাস্তায় রোগীর মৃত্যু হলেই আলোচনায় উঠে আসে।
গত বছর ২রা নভেম্বর রাজধানীর ওয়ারী ও শ্যামলী থেকে পৃথক দুই রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। দুপুর ২টার দিকে ওয়ারীর আর কে মিশন রোড এলাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন এনামুল হক। তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে বাসা থেকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ছুটেন মেয়ে এলিনা আক্তারসহ স্বজনরা। সেদিন যানজটে গুলিস্তানেই কেটে যায় আড়াই ঘণ্টা। গাড়ি থেকে নেমে বাবাকে কাঁধে-কোলে করে হাসপাতালে পৌঁছেন বিকাল সোয়া ৫টায়। চিকিৎসক জানান, কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
একই দিনে শ্যামলীর রিং রোডে লেগুনার ধাক্কায় আবদুল নামের এক ব্যক্তি আহত হলে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান তারই চাচাতো ভাই মাহফুজুল আলমসহ কয়েকজন। সেখানে অবস্থা গুরুতর দেখে প্রাথমিক ব্যান্ডেজ শেষে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। এম্বুলেন্সে করে আহত ভাইকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটেন মাহফুজুল আলম। যানজটের কারণে সাড়ে তিনঘণ্টা পর পৌঁছেন দোয়েল চত্বর এলাকা পর্যন্ত। যানজটে আর এগুতে না পেরে রোগীকে একটা স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে ছুটেন তারা। কিন্তু ততক্ষণে আবদুল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন পরপারে। ডাক্তার এসে এ কথাই জানালেন। স্বজনদের চিৎকারে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে উঠে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন মানবজমিনকে বলেন, রাস্তায় এম্বুলেন্স আটকে থাকার জন্য বিশেষ করে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হলো- অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অশিক্ষিত ড্রাইভার। আমি মনে করি অন্যান্য গাড়ির ড্রাইভারের চেয়ে এম্বুলেন্স চালকদের আরো প্রাপ্তবয়স্ক এবং ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। দেখা যায় এম্বুলেন্স ড্রাইভাররা রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় তাদের দায়িত্ববোধের বিষয়টা পুরোপুরি ভুলেই যায়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, গাড়িতে রোগী না থাকলেও অনেক সময় ড্রাইভাররা সামান্য জ্যাম হলেও সাইরেন বাজায়। যা আস্তে আস্তে মানুষের চোখে পড়ে। আর এখন রোগী থাকলেও অন্যান্য গাড়িগুলো এম্বুলেন্সকে সাইড দেয় না। আমি মনে করি এসব বিষয়ে আগে এম্বুলেন্স মালিক সমিতির লোকদের কারণগুলো মনিটরিং করে সমাধান করা উচিত।
বাংলাদেশ এম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমাদের হিসাব মতে সারা দেশে বৈধ নম্বরের এম্বুলেন্স রয়েছে ১০ হাজার। এ ছাড়া আরো হাজার দুয়েক রয়েছে মাইক্রোবাস।
ওইগুলোও এম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যানজটের কারণে রাস্তায় প্রতিদিন অনেক রোগী মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকায় যানজটের মাত্রা অনেকটাই বেশি। এ কারণে প্রতিদিন বহু এম্বুলেন্স আটকে থাকে। যদিও রাস্তায় অন্যান্য যানবাহনের মধ্যে এম্বুলেন্সগুলোকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এই সুযোগ নিয়ে রোগী না থাকলেও চালকরা খালি রাস্তায় অথবা জ্যামে পড়লে সাইরেন বাজায়। তাই এখন অন্যান্য গাড়িগুলো এম্বুলেন্সকে সাইড দেয় না। আর ট্রাফিক পুলিশও সিগন্যাল দেয়া বা ছাড়ার সময় এম্বুলেন্সগুলোকে অগ্রাধিকার দেয় না। মহাসড়কগুলোতে খালি এম্বুলেন্স পেলে পুলিশ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করে। কখনো কখনো মামলা দেয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক) যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, যানজট রোধে পুলিশ নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। তবে রাস্তায় রোগী বহনকারী এম্বুলেন্স থাকলে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। আমাদের সব পয়েন্টে বলা আছে, যদি সিরিয়াস রোগীবাহী এম্বুলেন্স থাকে, সোজা পথে ছাড়া গেলে সোজাভাবে ছাড়তে হবে। প্রয়োজনে উল্টো পথে হলেও হাসপাতালে দ্রুত যেতে সহায়তা করতে হবে। বাস্তবে সেভাবেই আমরা কাজ করি। দ্রুত রোগী হাসপাতালে নিতে সহায়তা করতে আমাদের অফিসাররা খুবই মানবিক। এ ছাড়া বেশি সমস্যা হলে ৯৯৯ নম্বরে কল দিলেও তারা পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে সব ধরনের সুবিধার ব্যবস্থা পাবে। আর বেশি জ্যামের মধ্যে থাকলে তো কিছুটা কষ্ট করতেই হয়।
এম্বুলেন্স চালক আবদুর রহিম বলেন, রোগী গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নেয়ার পথে যানজট হলে তো সমস্যাই হয়। কিন্তু তার আগে রোগীর পরিবারের ফোন পেয়ে তাদের ঠিকানা পর্যন্ত যেতেও যানজটে পড়তে হয়। যানজটে রোগী হাসপাতালে নিতে রাস্তায় দুই-তিন ঘণ্টা পার হয়ে যায়। এখন একজন লোক স্ট্রোক করার পর কত সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন সে কথা ডাক্তাররা ভালো বলতে পারবেন। অনেক সময় দেখি অসুস্থ রোগী এম্বুলেন্সে বেঁচে আছেন কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার বলেন রোগী বেঁচে নেই।
এ প্রসঙ্গে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের ডাক্তার লেলিন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, নানা সমস্যা নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসেন। একজন মুমূর্ষু রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা দেয়া জরুরি। এক্ষেত্রে দেরি হলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের উচিত নির্দিষ্ট কোনো হাসপাতালের কথা চিন্তা না করে কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। এতে অন্তত রোগীর জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত হবে।
সামনের গাড়ির চাকা বন্ধ। সিগন্যালে একের পর এক লাল, নীল বাতি জ্বলছে। কিন্তু গাড়ি চলছে না। আর চলবেই বা কীভাবে? সিগন্যালের সামনে গাড়ি চলার জায়গা নেই। যানজটে কলাপস হয়ে আছে রাজপথ। শনিবার বিকাল ৫টা। কাওরান বাজার মোড় থেকে পান্থপথ সিগন্যাল পর্যন্ত গাড়ির লম্বা লাইন। আধা ঘণ্টা পরেও সিগন্যাল ছাড়ার নাম নেই। এই জটে আটকা পড়েছে দুটি এম্বুলেন্স। অনেকক্ষণ সাইরেন বাজিয়েও কাজ হয়নি। কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। ফের বাজতে থাকে এম্বুলেন্সের সাইরেন। এক সময় একটি এম্বুলেন্স থেকে ভেসে আসে কান্নার শব্দ। স্বজনরা কাঁদছেন। মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে নেয়ার পথে যানজট বড় বাধা। সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিতে না পারায় পথেই মৃত্যু হয় অনেক রোগীর। তাই তো হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তারদের বলতে শোনা যায়-বড্ড দেরি করে ফেলেছেন।
এখন আর কিছুই করার নেই। অথচ রাজধানীর যানজট এড়াতে এম্বুলেন্সের জন্য আলাদা লেন থাকলে চোখের সামনে রোগীদের এভাবে মরতে হতো না। অন্ততপক্ষে স্বজনরা বলতে পারতেন, চেষ্টা করেছি। ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু যানজটের কারণে সান্ত্বনার এ বক্তব্যটুকুও রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
ট্রাফিক পুলিশের কথা- কখনও কখনও সিগন্যালের সামনের দিকে এম্বুলেন্স থাকলে আগে যাওয়ার সুযোগ করে দেন তারা। কিন্তু মাঝে পড়লে তাদের সে সুযোগ হয় না। কখনো কখনো উল্টো পথেও যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয় এম্বুলেন্সগুলোকে। যানজটের কারণে কত মানুষ সঠিক সময়ে হাসপাতালে না যেতে পেরে মারা গেছেন? তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে কখনো কখনো রাস্তায় রোগীর মৃত্যু হলেই আলোচনায় উঠে আসে।
গত বছর ২রা নভেম্বর রাজধানীর ওয়ারী ও শ্যামলী থেকে পৃথক দুই রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। দুপুর ২টার দিকে ওয়ারীর আর কে মিশন রোড এলাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন এনামুল হক। তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে বাসা থেকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ছুটেন মেয়ে এলিনা আক্তারসহ স্বজনরা। সেদিন যানজটে গুলিস্তানেই কেটে যায় আড়াই ঘণ্টা। গাড়ি থেকে নেমে বাবাকে কাঁধে-কোলে করে হাসপাতালে পৌঁছেন বিকাল সোয়া ৫টায়। চিকিৎসক জানান, কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
একই দিনে শ্যামলীর রিং রোডে লেগুনার ধাক্কায় আবদুল নামের এক ব্যক্তি আহত হলে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান তারই চাচাতো ভাই মাহফুজুল আলমসহ কয়েকজন। সেখানে অবস্থা গুরুতর দেখে প্রাথমিক ব্যান্ডেজ শেষে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। এম্বুলেন্সে করে আহত ভাইকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটেন মাহফুজুল আলম। যানজটের কারণে সাড়ে তিনঘণ্টা পর পৌঁছেন দোয়েল চত্বর এলাকা পর্যন্ত। যানজটে আর এগুতে না পেরে রোগীকে একটা স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে ছুটেন তারা। কিন্তু ততক্ষণে আবদুল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন পরপারে। ডাক্তার এসে এ কথাই জানালেন। স্বজনদের চিৎকারে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে উঠে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন মানবজমিনকে বলেন, রাস্তায় এম্বুলেন্স আটকে থাকার জন্য বিশেষ করে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হলো- অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অশিক্ষিত ড্রাইভার। আমি মনে করি অন্যান্য গাড়ির ড্রাইভারের চেয়ে এম্বুলেন্স চালকদের আরো প্রাপ্তবয়স্ক এবং ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। দেখা যায় এম্বুলেন্স ড্রাইভাররা রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় তাদের দায়িত্ববোধের বিষয়টা পুরোপুরি ভুলেই যায়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, গাড়িতে রোগী না থাকলেও অনেক সময় ড্রাইভাররা সামান্য জ্যাম হলেও সাইরেন বাজায়। যা আস্তে আস্তে মানুষের চোখে পড়ে। আর এখন রোগী থাকলেও অন্যান্য গাড়িগুলো এম্বুলেন্সকে সাইড দেয় না। আমি মনে করি এসব বিষয়ে আগে এম্বুলেন্স মালিক সমিতির লোকদের কারণগুলো মনিটরিং করে সমাধান করা উচিত।
বাংলাদেশ এম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমাদের হিসাব মতে সারা দেশে বৈধ নম্বরের এম্বুলেন্স রয়েছে ১০ হাজার। এ ছাড়া আরো হাজার দুয়েক রয়েছে মাইক্রোবাস।
ওইগুলোও এম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যানজটের কারণে রাস্তায় প্রতিদিন অনেক রোগী মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকায় যানজটের মাত্রা অনেকটাই বেশি। এ কারণে প্রতিদিন বহু এম্বুলেন্স আটকে থাকে। যদিও রাস্তায় অন্যান্য যানবাহনের মধ্যে এম্বুলেন্সগুলোকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এই সুযোগ নিয়ে রোগী না থাকলেও চালকরা খালি রাস্তায় অথবা জ্যামে পড়লে সাইরেন বাজায়। তাই এখন অন্যান্য গাড়িগুলো এম্বুলেন্সকে সাইড দেয় না। আর ট্রাফিক পুলিশও সিগন্যাল দেয়া বা ছাড়ার সময় এম্বুলেন্সগুলোকে অগ্রাধিকার দেয় না। মহাসড়কগুলোতে খালি এম্বুলেন্স পেলে পুলিশ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করে। কখনো কখনো মামলা দেয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক) যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, যানজট রোধে পুলিশ নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। তবে রাস্তায় রোগী বহনকারী এম্বুলেন্স থাকলে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। আমাদের সব পয়েন্টে বলা আছে, যদি সিরিয়াস রোগীবাহী এম্বুলেন্স থাকে, সোজা পথে ছাড়া গেলে সোজাভাবে ছাড়তে হবে। প্রয়োজনে উল্টো পথে হলেও হাসপাতালে দ্রুত যেতে সহায়তা করতে হবে। বাস্তবে সেভাবেই আমরা কাজ করি। দ্রুত রোগী হাসপাতালে নিতে সহায়তা করতে আমাদের অফিসাররা খুবই মানবিক। এ ছাড়া বেশি সমস্যা হলে ৯৯৯ নম্বরে কল দিলেও তারা পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে সব ধরনের সুবিধার ব্যবস্থা পাবে। আর বেশি জ্যামের মধ্যে থাকলে তো কিছুটা কষ্ট করতেই হয়।
এম্বুলেন্স চালক আবদুর রহিম বলেন, রোগী গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নেয়ার পথে যানজট হলে তো সমস্যাই হয়। কিন্তু তার আগে রোগীর পরিবারের ফোন পেয়ে তাদের ঠিকানা পর্যন্ত যেতেও যানজটে পড়তে হয়। যানজটে রোগী হাসপাতালে নিতে রাস্তায় দুই-তিন ঘণ্টা পার হয়ে যায়। এখন একজন লোক স্ট্রোক করার পর কত সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন সে কথা ডাক্তাররা ভালো বলতে পারবেন। অনেক সময় দেখি অসুস্থ রোগী এম্বুলেন্সে বেঁচে আছেন কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার বলেন রোগী বেঁচে নেই।
এ প্রসঙ্গে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের ডাক্তার লেলিন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, নানা সমস্যা নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসেন। একজন মুমূর্ষু রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা দেয়া জরুরি। এক্ষেত্রে দেরি হলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের উচিত নির্দিষ্ট কোনো হাসপাতালের কথা চিন্তা না করে কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। এতে অন্তত রোগীর জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত হবে।
No comments