দিনে ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছে চার শতাধিক মানুষ by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
দেশে
আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বছরে দেশে এক লাখ
৫০ হাজার লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। মারা যায় এক লাখ ৮ হাজার। বাংলাদেশে
১৬ থেকে ১৭ লাখ ক্যানসার রোগী রয়েছেন বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। প্রতিবছর
নতুনভাবে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয় ২৬ হাজার ৭৯২ জন। এরমধ্যে
১১ হাজার ৯৫৬ জন মহিলা জরায়ুমুখ ক্যানসারে এবং ১৪ হাজার ৮৩৬ জন মহিলা স্তন
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। মারা যায় প্রায় ১৪ হাজার। এ হিসাবে দিনে আক্রান্ত
হচ্ছে কমপক্ষে ৪১০ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিমাত্রায় তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস ক্যানসারে।
আবার অনিরাপদ খাদ্যগ্রহণকেও চিকিৎসকরা ক্যানসারের একটি অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন। কৃষিতে রাসায়নিক ও কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আমাদের খাদ্যদ্রব্যকে করে তুলছে অনিরাপদ। এর উপর রয়েছে ফলমূল ও মাছে ফরমালিনের ব্যবহার। বায়ুদূষণকেও ক্যানসার বিস্তারের আরো একটি কারণ বলে মনে করেন তারা। বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি ক্যানসারের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। গবেষণা বলছে, ক্যানসার আক্রান্ত প্রতি ২ লাখ মানুষের জন্য দুটি রেডিও থেরাপি সেন্টার প্রয়োজন। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি রেডিও থেরাপি সেন্টার আছে ১৫টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এর মধ্যে সরকারি আছে ৯টি ও বেসরকারি ৬টি। যার সবগুলোর মেশিন আবার সমভাবে সচল নয়। জানা গেছে, মোট ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৬০ শতাংশই পুরুষ। পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৩ শতাংশ আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস ক্যানসারে, লিপ অ্যান্ড ওরাল ক্যানসারে ১২ শতাংশ, অন্ননালির ক্যানসারে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া আছে পাকস্থলী, হস্কিন লিম্ফোমা, মূত্রনালি, লিভার ও লিউকোমিয়া ক্যানসার। অন্যদিকে নারীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশই ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা জানান, ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সীরাই ক্যানসারে আক্রান্ত হন সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে থেমে নেই শিশুরাও। শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত লিউকোমিয়ায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভেজাল খাবার, শস্য উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, ধূমপানসহ নানা কারণে মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। জরায়ু ও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে অনেক মা-বোন মারা যান। তারা জানেনই না যে, তাদের জরায়ু বা স্তনে ক্যানসার হয়েছে। এ জন্য এই প্রাণঘাতী রোগের বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ প্রতিরোধের দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। বিএসএমএমইউ’র সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান এক অনুষ্ঠানে বলেন, ক্যানসারের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সত্যিই উদ্বেগজনক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৭ সালে প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০১২ সালে ৩০২০ জন এবং মারা গেছেন ৬৫ জন, ২০১৩ সালে ৩০৪৫ জন এবং মারা গেছেন ১১৮ জন, ২০১৪ সালে ৪০৫৭ জন এবং মারা গেছেন ১২৮ জন, ২০১৫ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭২৮৫ জনে এবং মারা গেছেন ১৭৪ জন। ২০১৬ সালে হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩৬৫ জন। মারা গেছেন ২৩০ জন। হাসপাতালটিতে বহির্বিভাগ দিয়ে সেবা নেয়া রোগীর সংখ্যা ২০১২ সালে ছিল ৫৯ হাজার ২২১ জন এবং পাঁচ বছর বয়সের নিচে এমন শিশুর সংখ্যা ১৮০৩ জন। এই সংখ্যা ২০১৬ সালে এসে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার এবং পাঁচ বছর বয়সের নিচে এমন শিশুর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৮৭ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। হঠাৎ করে গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, শরীরের যেকোনো জায়গায় চাকা হলে তা বৃদ্ধি পাওয়া। অস্বাভাবিক রক্তপাত। যেকোনো ঘা না সারা। পায়খানা ও প্রস্রাবের অভ্যাসের পরিবর্তন। দীর্ঘদিন ধরে খুসখুসে কাশি থাকা। দীর্ঘদিনের জ্বর। কারণ ছাড়া ওজন অতিরিক্ত পরিমাণে হ্রাস পাওয়া। এসব লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ অনকোলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, সারা বিশ্বে ক্যানসার রোগী বাড়ছে। বাংলাদেশেও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০৩০ সালে এটা ১২ শতাংশে ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য খাত এ জন্য প্রস্তুত না। সচেতনতার অভাবে রোগের একেবারে শেষ পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে আসে মানুষ। ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রোগীর রেডিয়েশন থেরাপি দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আনুমানিক ১৬ থেকে ১৭ লাখ ক্যানসার আক্রান্ত রোগী আছে। জনগণের চাহিদার তুলনায় যন্ত্রপাতিসহ সব কিছুই অপ্রতুল। সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। কিছু লোক বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেলেও অনেকে আধুনিক মাত্রার চিকিৎসা পাচ্ছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। দেশে স্বাস্থ্য বীমাও নেই। সরকারকে এদিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যানসার ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন তার এক প্রবন্ধে বলেন, বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে ৪০ লাখ ঘটে অকালমৃত্যু, ৩০ থেকে ৬৯ বছরের মধ্যে। ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে কিছু কাজ সম্মিলিতভাবে সফল করতে পারি। আবার ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকেই পারি ক্যানসারের বোঝা লাঘবে ভূমিকা রাখতে। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের ওপর ক্যানসারের ক্ষতিকর প্রভাব লাঘবে সবারই সুযোগ আছে ব্যবস্থা নেয়ার। বাংলাদেশের বর্তমান ক্যানসার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (আইএআরসি)’র অনুমিত নতুন হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, মারা যায় এক লাখ ৮ হাজার। এর আগে সংস্থাটির দেয়া বাংলাদেশের ক্যানসার সম্পর্কে পুরনো হিসাব ছিল- প্রতি বছর এক লাখ ২২ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, মারা যায় ৯১ হাজার।
যেকোনো দেশে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য দরকার ক্যানসারে আক্রান্তের হার, মৃত্যুর হার, কারা কোন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে সেই সম্পর্কে সঠিক পরিসংখ্যান। এর জন্য প্রয়োজন জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন। ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন তদারকির জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের ‘জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল’ প্রায় অকার্যকর। দীর্ঘদিন এই পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ক্যানসার নিয়ন্ত্রণের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। প্রাথমিক প্রতিরোধ, সূচনায় ক্যানসার নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রশমন সেবা বা পেলিয়েটিভ চিকিৎসা। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে ক্যানসারের জন্য বরাদ্দের সিংহভাগ ব্যয় হয় অবকাঠামো ও চিকিৎসা সরঞ্জামের পেছনে। ক্যানসার নির্ণয় ও স্ক্রিনিং খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। প্রাথমিক প্রতিরোধের প্রধান উপাদান ক্যানসারের ঝুঁকি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা ও টিকা সহ সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। এ ক্ষেত্রটি সবচেয়ে অবহেলিত। সরকারের কিছু উদ্যোগ আছে বিভিন্ন প্রোগ্রামের মধ্যে ছড়িয়ে, সমন্বয়ের অভাবে তা দৃশ্যমান প্রভাব ফেলতে পারছে না। বেসরকারি সংগঠনগুলো মূলত সচেতনতা কার্যক্রমকে জনগণের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশেও নানা উদ্যোগে ক্যানসার দিবসটি পালন করা হবে। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ক্যানসারের বিরুদ্ধে আমি আছি, আমি থাকবো।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিমাত্রায় তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস ক্যানসারে।
আবার অনিরাপদ খাদ্যগ্রহণকেও চিকিৎসকরা ক্যানসারের একটি অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন। কৃষিতে রাসায়নিক ও কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আমাদের খাদ্যদ্রব্যকে করে তুলছে অনিরাপদ। এর উপর রয়েছে ফলমূল ও মাছে ফরমালিনের ব্যবহার। বায়ুদূষণকেও ক্যানসার বিস্তারের আরো একটি কারণ বলে মনে করেন তারা। বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি ক্যানসারের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। গবেষণা বলছে, ক্যানসার আক্রান্ত প্রতি ২ লাখ মানুষের জন্য দুটি রেডিও থেরাপি সেন্টার প্রয়োজন। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি রেডিও থেরাপি সেন্টার আছে ১৫টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এর মধ্যে সরকারি আছে ৯টি ও বেসরকারি ৬টি। যার সবগুলোর মেশিন আবার সমভাবে সচল নয়। জানা গেছে, মোট ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৬০ শতাংশই পুরুষ। পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৩ শতাংশ আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস ক্যানসারে, লিপ অ্যান্ড ওরাল ক্যানসারে ১২ শতাংশ, অন্ননালির ক্যানসারে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া আছে পাকস্থলী, হস্কিন লিম্ফোমা, মূত্রনালি, লিভার ও লিউকোমিয়া ক্যানসার। অন্যদিকে নারীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশই ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা জানান, ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সীরাই ক্যানসারে আক্রান্ত হন সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে থেমে নেই শিশুরাও। শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত লিউকোমিয়ায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভেজাল খাবার, শস্য উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, ধূমপানসহ নানা কারণে মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। জরায়ু ও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে অনেক মা-বোন মারা যান। তারা জানেনই না যে, তাদের জরায়ু বা স্তনে ক্যানসার হয়েছে। এ জন্য এই প্রাণঘাতী রোগের বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ প্রতিরোধের দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। বিএসএমএমইউ’র সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান এক অনুষ্ঠানে বলেন, ক্যানসারের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সত্যিই উদ্বেগজনক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৭ সালে প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০১২ সালে ৩০২০ জন এবং মারা গেছেন ৬৫ জন, ২০১৩ সালে ৩০৪৫ জন এবং মারা গেছেন ১১৮ জন, ২০১৪ সালে ৪০৫৭ জন এবং মারা গেছেন ১২৮ জন, ২০১৫ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭২৮৫ জনে এবং মারা গেছেন ১৭৪ জন। ২০১৬ সালে হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩৬৫ জন। মারা গেছেন ২৩০ জন। হাসপাতালটিতে বহির্বিভাগ দিয়ে সেবা নেয়া রোগীর সংখ্যা ২০১২ সালে ছিল ৫৯ হাজার ২২১ জন এবং পাঁচ বছর বয়সের নিচে এমন শিশুর সংখ্যা ১৮০৩ জন। এই সংখ্যা ২০১৬ সালে এসে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার এবং পাঁচ বছর বয়সের নিচে এমন শিশুর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৮৭ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। হঠাৎ করে গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, শরীরের যেকোনো জায়গায় চাকা হলে তা বৃদ্ধি পাওয়া। অস্বাভাবিক রক্তপাত। যেকোনো ঘা না সারা। পায়খানা ও প্রস্রাবের অভ্যাসের পরিবর্তন। দীর্ঘদিন ধরে খুসখুসে কাশি থাকা। দীর্ঘদিনের জ্বর। কারণ ছাড়া ওজন অতিরিক্ত পরিমাণে হ্রাস পাওয়া। এসব লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ অনকোলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, সারা বিশ্বে ক্যানসার রোগী বাড়ছে। বাংলাদেশেও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০৩০ সালে এটা ১২ শতাংশে ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য খাত এ জন্য প্রস্তুত না। সচেতনতার অভাবে রোগের একেবারে শেষ পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে আসে মানুষ। ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রোগীর রেডিয়েশন থেরাপি দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আনুমানিক ১৬ থেকে ১৭ লাখ ক্যানসার আক্রান্ত রোগী আছে। জনগণের চাহিদার তুলনায় যন্ত্রপাতিসহ সব কিছুই অপ্রতুল। সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। কিছু লোক বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেলেও অনেকে আধুনিক মাত্রার চিকিৎসা পাচ্ছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। দেশে স্বাস্থ্য বীমাও নেই। সরকারকে এদিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যানসার ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন তার এক প্রবন্ধে বলেন, বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে ৪০ লাখ ঘটে অকালমৃত্যু, ৩০ থেকে ৬৯ বছরের মধ্যে। ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে কিছু কাজ সম্মিলিতভাবে সফল করতে পারি। আবার ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকেই পারি ক্যানসারের বোঝা লাঘবে ভূমিকা রাখতে। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের ওপর ক্যানসারের ক্ষতিকর প্রভাব লাঘবে সবারই সুযোগ আছে ব্যবস্থা নেয়ার। বাংলাদেশের বর্তমান ক্যানসার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (আইএআরসি)’র অনুমিত নতুন হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, মারা যায় এক লাখ ৮ হাজার। এর আগে সংস্থাটির দেয়া বাংলাদেশের ক্যানসার সম্পর্কে পুরনো হিসাব ছিল- প্রতি বছর এক লাখ ২২ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, মারা যায় ৯১ হাজার।
যেকোনো দেশে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য দরকার ক্যানসারে আক্রান্তের হার, মৃত্যুর হার, কারা কোন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে সেই সম্পর্কে সঠিক পরিসংখ্যান। এর জন্য প্রয়োজন জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন। ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন তদারকির জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের ‘জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল’ প্রায় অকার্যকর। দীর্ঘদিন এই পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ক্যানসার নিয়ন্ত্রণের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। প্রাথমিক প্রতিরোধ, সূচনায় ক্যানসার নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রশমন সেবা বা পেলিয়েটিভ চিকিৎসা। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে ক্যানসারের জন্য বরাদ্দের সিংহভাগ ব্যয় হয় অবকাঠামো ও চিকিৎসা সরঞ্জামের পেছনে। ক্যানসার নির্ণয় ও স্ক্রিনিং খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। প্রাথমিক প্রতিরোধের প্রধান উপাদান ক্যানসারের ঝুঁকি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা ও টিকা সহ সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। এ ক্ষেত্রটি সবচেয়ে অবহেলিত। সরকারের কিছু উদ্যোগ আছে বিভিন্ন প্রোগ্রামের মধ্যে ছড়িয়ে, সমন্বয়ের অভাবে তা দৃশ্যমান প্রভাব ফেলতে পারছে না। বেসরকারি সংগঠনগুলো মূলত সচেতনতা কার্যক্রমকে জনগণের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশেও নানা উদ্যোগে ক্যানসার দিবসটি পালন করা হবে। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ক্যানসারের বিরুদ্ধে আমি আছি, আমি থাকবো।’
No comments