গর্ভের সন্তান বিক্রি না অন্য কিছু? by মরিয়ম চম্পা
১০৬
নং ওয়ার্ড। ম্যাট-০৬। বেড নং-৩৭। দুপুর পৌনে ১২টা। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি
বিভাগ। ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেই দরজার সঙ্গে লাগোয়া এক নবজাতকের মা হাতের
ইশারায় জ্যোৎস্নার বেডটি দেখিয়ে দিলেন। ওয়ার্ডে ঢুকে মনে হলো একটি শিশু
কানন। গোটা রুমটিই দখল করে আছে নবজাতক শিশু আর তাদের মায়েরা ।
একত্রে ৪ থেকে ৫ জন শিশুর কান্নায় চারপাশ মুখরিত। মায়েরা কেউ বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছেন। কেউ প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। কারো দাদি-নানী তাদের নাতনীকে সামলাচ্ছেন।
নার্সদের পেছনে কর্নারে একটি বেডে সদ্য জন্ম নেয়া সন্তানকে কোলে নিয়ে বসে আছেন জ্যোৎস্না। মুখ দেখে মনে হয়েছে গত কয়েকদিন ধরে তার ওপর বেশ ধকল গেছে। নবজাতকের গায়ে কমলা রং-এর সোয়েটার। মাথার কানটুপিতে ছোপ ছোপ শুকনো রক্ত লেগে আছে। কেমন আছেন? ভালো আছি, ‘হ’। বাচ্চা কেমন আছে? বাচ্চাও ভালো আছে ‘হ’। থাকেন কোথায়? বস্তিতে থাকি। রাস্তায় থাকি। গ্রামের বাড়ি? গ্রামের বাড়ি নাই। কথার ফাঁকে ফাঁকে জ্যোৎস্নার চোখে কিছুটা আতঙ্কের ছাপ দেখা গেছে। বার বার পেছনে তাকাচ্ছেন। বলেন, এই ব্যাডারে নিয়া দুইজন ব্যাডা।
আরেকজন প্রতিবন্ধী। হেরে একটা এতিমখানায় পড়তে দিয়েছি। স্বামী ভিক্ষা করে। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তোলে। আমি আগে বাসাবাড়িতে কাজ করতাম। কমলাপুরে থাকতাম। সন্তান বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যোৎস্না বলেন, পেটের সন্তানকে কেউ বিক্রি করে বলেন? ঠ্যাকায় পইরা কিছু ট্যাকা নিছিলাম। হে জন্য কি পেডের ব্যাডারে (পেটের সন্তানকে) মানসেরে দিমু নাকি।
এক পর্যায়ে জ্যোৎস্না চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করেন। এসময় তিনি নার্সদের ডেকে বলেন, আমার স্বামীরে ফোন দেন। আমি এইহানে থাকমু না। হে আইসা হাসপাতালের বিল মিডাইয়া আমারে নিয়া যাক। আমার বাচ্চা কইলাম আবার নিয়া যাইবো।
মাতৃগর্ভে থাকাবস্থায়ই দু’দিন বয়সী এক শিশু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেই নবজাতককে নিতে আসা সোনিয়া (২৮) নামের এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের ১০৬ নং গাইনি ওয়ার্ড থেকে সোনিয়াকে আটক করা হয়। জ্যোৎস্নার স্বামীর নাম টুকু মিয়া। তারা গাজীপুর টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ফুটপাথে থাকেন। জ্যোৎস্না এক সময় কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় দোকানে দোকানে পানি দেয়ার কাজ করতেন। তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাবস্থায় সেখানে সোনিয়া নামের এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
জ্যোৎস্না বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গরিব মানুষ। সোনিয়া ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার পেটের সন্তানকে কেনার জন্য প্রস্তাব দেয়। গরিব বিধায় টাকার বিনিময়ে সন্তান বিক্রি করতে রাজি হই। অগ্রিম হিসেবে সোনিয়া আমাকে তিন হাজার টাকাও দেয়। মঙ্গলবার সিজারের (অপারেশন) মাধ্যমে আমার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ‘বুধবার রাতেই সোনিয়া ঢামেক হাসপাতালে আমার সন্তানকে নিতে আসে। এসময় তাকে সন্তান না দেয়ার কথা বলে অগ্রিম তিন হাজার টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলি। কিন্তু সোনিয়া তারপরও জোর করে আমার সন্তান নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে হাসপাতালের লোকজন তাকে আটক করে।’
আটক সোনিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারের নাসির উদ্দিন সরদার লেনের একটি বাসায় থাকেন। জ্যোৎস্না এক সময় তার বাসায় কাজ করতেন। তার অন্তঃসত্ত্বার সময় চিকিৎসার জন্য ৩ হাজার টাকা দেন। বুধবার জ্যোৎস্নাকে ফোন করে আসতে বলায় তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। সকাল থেকে সারা দিনই জ্যোৎস্নার পাশে ছিলেন তিনি। সন্ধ্যায় ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ওয়ার্ডে জ্যোৎস্নার ২য় স্বামী টুকু মিয়ার অভিযোগে আনসার সদস্যরা তাকে আটক করেছে।
ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্স কামরুন নাহার ও টুম্পা হাওলাদার বলেন, হঠাৎ সোনিয়া নামের ওই নারী নবজাতকটিকে কোলে নিয়ে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যায়। হাসপাতালের মূল গেটের দিকে যেতে থাকলে আমরা তাকে আটক করি। এসময় আমরা তার কাছে ‘ডিওআরবি’ বা আনুষ্ঠানিক অনুমতিপত্র দেখতে চাই। কারণ অনেক নিয়মকানুন সম্পন্ন করে নবজাতক নিয়ে হাসপাতাল ছাড়তে হয়। এসব কিছু না করেই সোনিয়া নবজাতককে নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগের চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়।
ঢামেক হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের ওয়ার্ড মাস্টার মোহাম্মদ রিয়াজ জানান, সোনিয়াকে আটক করার পরপরই শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, যতোদূর জেনেছি তাদের দু’পক্ষের মধ্যে টাকা পয়সার কিছু একটা লেনদেন আছে। ঘটনার পরপরই আমরা অভিযুক্ত নারীকে পুলিশে সোপর্দ করি। পাশাপাশি নবজাতক ও মা জ্যোৎস্না বেগমকে আরো কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখতে চাই। কারণ জ্যোৎস্না বেগম এখনো শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নয়। তাকে আরো দু-তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। যদিও বাচ্চা নিয়ে তারা এখন চলে যেতে চায়। এক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছায় তারা যেতে চাইলে ‘স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছি’ এই মর্মে পেপারে বন্ড স্বাক্ষর করে অতঃপর যেতে হবে।
শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) ভজন বিশ্বাস বলেন, জ্যোৎস্না বেগম নিজে বাদী হয়ে বাচ্চা চুরির একটি মামলা দায়ের করেছে। মানবপাচার ২০১২ সালের ১০/২ খ ধারা অনুযায়ী মামলা হয়েছে। আসামি সোনিয়াকে ইতিমধ্যে আদালতে পাঠানো হয়েছে। উভয়ের মধ্যে টাকা পয়সার লেনদেনের কথা কতোটা সত্যি তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে আসামি সোনিয়া জ্যোৎস্না বেগমকে কিছু টাকা দিয়েছে। কি উদ্দেশ্যে দিয়েছে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়।
একত্রে ৪ থেকে ৫ জন শিশুর কান্নায় চারপাশ মুখরিত। মায়েরা কেউ বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছেন। কেউ প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। কারো দাদি-নানী তাদের নাতনীকে সামলাচ্ছেন।
নার্সদের পেছনে কর্নারে একটি বেডে সদ্য জন্ম নেয়া সন্তানকে কোলে নিয়ে বসে আছেন জ্যোৎস্না। মুখ দেখে মনে হয়েছে গত কয়েকদিন ধরে তার ওপর বেশ ধকল গেছে। নবজাতকের গায়ে কমলা রং-এর সোয়েটার। মাথার কানটুপিতে ছোপ ছোপ শুকনো রক্ত লেগে আছে। কেমন আছেন? ভালো আছি, ‘হ’। বাচ্চা কেমন আছে? বাচ্চাও ভালো আছে ‘হ’। থাকেন কোথায়? বস্তিতে থাকি। রাস্তায় থাকি। গ্রামের বাড়ি? গ্রামের বাড়ি নাই। কথার ফাঁকে ফাঁকে জ্যোৎস্নার চোখে কিছুটা আতঙ্কের ছাপ দেখা গেছে। বার বার পেছনে তাকাচ্ছেন। বলেন, এই ব্যাডারে নিয়া দুইজন ব্যাডা।
আরেকজন প্রতিবন্ধী। হেরে একটা এতিমখানায় পড়তে দিয়েছি। স্বামী ভিক্ষা করে। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তোলে। আমি আগে বাসাবাড়িতে কাজ করতাম। কমলাপুরে থাকতাম। সন্তান বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যোৎস্না বলেন, পেটের সন্তানকে কেউ বিক্রি করে বলেন? ঠ্যাকায় পইরা কিছু ট্যাকা নিছিলাম। হে জন্য কি পেডের ব্যাডারে (পেটের সন্তানকে) মানসেরে দিমু নাকি।
এক পর্যায়ে জ্যোৎস্না চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করেন। এসময় তিনি নার্সদের ডেকে বলেন, আমার স্বামীরে ফোন দেন। আমি এইহানে থাকমু না। হে আইসা হাসপাতালের বিল মিডাইয়া আমারে নিয়া যাক। আমার বাচ্চা কইলাম আবার নিয়া যাইবো।
মাতৃগর্ভে থাকাবস্থায়ই দু’দিন বয়সী এক শিশু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেই নবজাতককে নিতে আসা সোনিয়া (২৮) নামের এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের ১০৬ নং গাইনি ওয়ার্ড থেকে সোনিয়াকে আটক করা হয়। জ্যোৎস্নার স্বামীর নাম টুকু মিয়া। তারা গাজীপুর টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ফুটপাথে থাকেন। জ্যোৎস্না এক সময় কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় দোকানে দোকানে পানি দেয়ার কাজ করতেন। তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাবস্থায় সেখানে সোনিয়া নামের এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
জ্যোৎস্না বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গরিব মানুষ। সোনিয়া ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার পেটের সন্তানকে কেনার জন্য প্রস্তাব দেয়। গরিব বিধায় টাকার বিনিময়ে সন্তান বিক্রি করতে রাজি হই। অগ্রিম হিসেবে সোনিয়া আমাকে তিন হাজার টাকাও দেয়। মঙ্গলবার সিজারের (অপারেশন) মাধ্যমে আমার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ‘বুধবার রাতেই সোনিয়া ঢামেক হাসপাতালে আমার সন্তানকে নিতে আসে। এসময় তাকে সন্তান না দেয়ার কথা বলে অগ্রিম তিন হাজার টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলি। কিন্তু সোনিয়া তারপরও জোর করে আমার সন্তান নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে হাসপাতালের লোকজন তাকে আটক করে।’
আটক সোনিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারের নাসির উদ্দিন সরদার লেনের একটি বাসায় থাকেন। জ্যোৎস্না এক সময় তার বাসায় কাজ করতেন। তার অন্তঃসত্ত্বার সময় চিকিৎসার জন্য ৩ হাজার টাকা দেন। বুধবার জ্যোৎস্নাকে ফোন করে আসতে বলায় তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। সকাল থেকে সারা দিনই জ্যোৎস্নার পাশে ছিলেন তিনি। সন্ধ্যায় ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ওয়ার্ডে জ্যোৎস্নার ২য় স্বামী টুকু মিয়ার অভিযোগে আনসার সদস্যরা তাকে আটক করেছে।
ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্স কামরুন নাহার ও টুম্পা হাওলাদার বলেন, হঠাৎ সোনিয়া নামের ওই নারী নবজাতকটিকে কোলে নিয়ে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যায়। হাসপাতালের মূল গেটের দিকে যেতে থাকলে আমরা তাকে আটক করি। এসময় আমরা তার কাছে ‘ডিওআরবি’ বা আনুষ্ঠানিক অনুমতিপত্র দেখতে চাই। কারণ অনেক নিয়মকানুন সম্পন্ন করে নবজাতক নিয়ে হাসপাতাল ছাড়তে হয়। এসব কিছু না করেই সোনিয়া নবজাতককে নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগের চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়।
ঢামেক হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের ওয়ার্ড মাস্টার মোহাম্মদ রিয়াজ জানান, সোনিয়াকে আটক করার পরপরই শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, যতোদূর জেনেছি তাদের দু’পক্ষের মধ্যে টাকা পয়সার কিছু একটা লেনদেন আছে। ঘটনার পরপরই আমরা অভিযুক্ত নারীকে পুলিশে সোপর্দ করি। পাশাপাশি নবজাতক ও মা জ্যোৎস্না বেগমকে আরো কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখতে চাই। কারণ জ্যোৎস্না বেগম এখনো শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নয়। তাকে আরো দু-তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। যদিও বাচ্চা নিয়ে তারা এখন চলে যেতে চায়। এক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছায় তারা যেতে চাইলে ‘স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছি’ এই মর্মে পেপারে বন্ড স্বাক্ষর করে অতঃপর যেতে হবে।
শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) ভজন বিশ্বাস বলেন, জ্যোৎস্না বেগম নিজে বাদী হয়ে বাচ্চা চুরির একটি মামলা দায়ের করেছে। মানবপাচার ২০১২ সালের ১০/২ খ ধারা অনুযায়ী মামলা হয়েছে। আসামি সোনিয়াকে ইতিমধ্যে আদালতে পাঠানো হয়েছে। উভয়ের মধ্যে টাকা পয়সার লেনদেনের কথা কতোটা সত্যি তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে আসামি সোনিয়া জ্যোৎস্না বেগমকে কিছু টাকা দিয়েছে। কি উদ্দেশ্যে দিয়েছে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়।
No comments