ভুল স্বীকার করলেও দলে ফিরবেন না রাজ্জাক
দল
থেকে সদ্য পদত্যাগী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার
আবদুর রাজ্জাক বিবিসির ফেসবুক লাইভে বলেছেন, দল ভুল স্বীকার করলেও তিনি আর
ফিরবেন না। আর নতুন কোনো দল গঠনও করছেন না। তবে যেখানেই থাকুন মানুষের
জন্য কাজ করবেন। লন্ডনস্থ বিবিসি বাংলার স্টুডিওতে মাসুদ হাসান খানকে দেয়া
প্রায় পঁচিশ মিনিটের সাক্ষাৎকারে তিনি তার পদত্যাগের পূর্বাপর ব্যাখ্যা
করেছেন।
শুরুতেই প্রশ্ন ছিল- বাংলাদেশের যে রাজনীতি তাতে জামায়াতে ইসলামী এখন একটা অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে আছে। দলের এই চরম অবস্থার মধ্যে আপনি দল ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?
রাজ্জাক: আমি দীর্ঘ ৩০ বছর জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। এবং আমি দুটো অঙ্গনে বেশি কাজ করেছি। একটি হচ্ছে আইনের অঙ্গনে আরেকটি হচ্ছে কূটনৈতিক অঙ্গনে। ১৯৯২ সালে গোলাম আজমের যে নাগরিকত্ব মামলা হয়, সেই মামলায় আমি জুনিয়র আইনজীবী ছিলাম।
সাঈদী সাহেবের মামলা লড়েছি। ২০০৭-০৮ সালের ইমার্জেন্সির সময় নিজামী, মুজাহিদ সাহেবের বিরুদ্ধে মামলায় আমি প্রধান কৌশলীর দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১০-১৩ সাল পর্যন্ত ১০ জন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে করা মামলায় প্রধান কৌশলী হিসেবে আমি মামলা পরিচালনা করেছি। সুতরাং আমার যেটা কাজ ছিল, জামায়াতকে আইনগতভাবে রক্ষা করা, সেটা আমি সততার সঙ্গে পালন করেছি। আমি কিছু ডিপ্লোম্যাটিক কাজও করেছি। আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পাশে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সে আমি বেশ কিছু ডিপ্লোম্যাটিক কাজ করেছি। আমার পদত্যাগপত্রে বলেছি, ৩০ বছর আগে যখন আমি জয়েন করি, জয়েন করার পর আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল যে আমি জামায়াতকে পুনর্গঠন করবো। সেই পুনর্গঠনে আমি ব্যর্থ হয়েছি। আরেকটা আমার উদ্দেশ্য ছিল যে, আজকের জামায়াত জনগণ থেকে কেন বিচ্ছিন্ন, আজকে কেন জামায়াতকে একটি গ্লানি বহন করতে হচ্ছে। ’৭১ সালে যে শিশু জন্ম নিয়েছে, সে তো ৭১-এর যুদ্ধ দেখেওনি, সে তো এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত না। কিন্তু আজকে তাকেও এই দায়ভার বহন করতে হচ্ছে।
আমি আমার পদত্যাগপত্রে আইটেমাইজ বলেছি, ২০০১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আমি কী করেছি। জামায়াতকে বোঝামুক্ত করার জন্য, জামায়াতকে যেন ’৭১-এর বোঝা বহন করতে না হয়, সে জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমি যখন দেখলাম, আমি পথের শেষপ্রান্তে পৌঁছে গেছি, আমার এখন আর কিছু করার নেই, জামায়াতকে আমার তেমন আর কিছু দেয়ার নেই, তখনই আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিই।
প্রশ্ন: পদত্যাগপত্রে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে যে ভূমিকা রেখেছে, তার জন্য তাদের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। এই কথাটা আপনি বুঝছেন, কিন্তু জামায়াতের অন্যান্য নেতারা কেন বুঝছেন না?
রাজ্জাক: আমি চেষ্টা করেছি। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি, ইতিহাস থেকে উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, স্বাধীনতার বিরোধিতা করে কোনো দেশের কোনো দল সে দেশের নেতৃত্ব দিতে পারেনি। আমি চেষ্টা করেছি এবং সেখানে মতামতটা বিভক্ত ছিল। সবাই যে বিরোধিতা করেছে, তা নয়। কিছু লোক পক্ষে ছিল, কিছু লোক বিপক্ষে ছিল। আর জামায়াতের একটা সংস্কৃতি আছে। তা হলো, জামায়াত পার্টির ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা করে। ৫০ জনের একটা মিটিং যদি হয় আর ২৬ জন যদি বলে আমরা এটার পক্ষে নই, তাহলে বাধ্য হয়েই তাদের ২৬ জনের মতামত মেনে নিতে হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের কারণেই আমি দেখলাম জামায়াত সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে একটি কথা আমি এখানে বলবো। আমি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে বলেছি যে, দেখুন সংখ্যাগরিষ্ঠের মত যাই হোক না কেন, আপনারা লিডারশিপ দিচ্ছেন, আমরা লিডারশিপ দিচ্ছি, অবশ্য আমি এখন আর লিডারশিপে নেই। আমি নেলসন মেন্ডেলার উদাহরণ দিয়েছিলাম, যে শেতাঙ্গদের সঙ্গে তিনি শেষ পর্যন্ত আপসে গেলেন। যদিও তার দলের লোক বলছিল যে, না আমরা যুদ্ধ করবো। সুতরাং এটা আমি বুঝানোর চেষ্টা করেছি, সবাই যে বোঝেননি তা নয়, তবে এটা করতে তারা অপারগ হয়েছেন এবং এটা তাদের ব্যর্থতা বলেই আমি মনে করি।
প্রশ্ন: এজন্যই আপনি চাইছেন যে, দলটিকেই বিলুপ্ত করে দেয়া হোক, কারণ তাদের একটি ’৭১-এর কালি রয়েছে।
রাজ্জাক: শুধু তাই নয়, তা তো আছেই, দুই নম্বর বিষয় হচ্ছে, ২০১১ সাল থেকে জামায়াতের বাহ্যিক কার্যক্রম সব বন্ধ। বাংলাদেশের ৬৫টা জেলার যতটা অফিস আছে, প্রায় সবই বন্ধ। এছাড়া জামায়াতের নিবন্ধন নেই। জামায়াতের নির্বাচনী প্রতীক নেই। জামায়াত কোনো মিটিং করতে পারে না, মিছিল করতে পারে না, কোনো সম্মেলন করতে পারছে না। এটা সরকার করতে দিচ্ছে না। যেহেতু পারছে না, সেহেতু জামায়াতের নতুন কৌশলে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: জামায়াত রাজনৈতিকভাবে মৃত, এ ব্যাপারে আপনি একমত হবেন?
রাজ্জাক: জামায়াতকে সরকার কোনো ফাংশন করতে দিচ্ছে না। যদিও আইনগতভাবে জামায়াত এখনো বেআইনি নয়। কার্যত সরকার জামায়াতকে বেআইনি করেই রেখেছে।
প্রশ্ন: তাহলে কি বলা যায় যে, আপনি এক ধরনের চাপে পড়েই এ ধরনের কথা বলছেন, আপনি দলে থাকবেন না, নতুন দল গড়ে তুলবেন। আপনার ওপর কোনো চাপ আছে কি?
রাজ্জাক: একেবারেই না। ২০০১ সালে আমি কি চাপে ছিলাম? ওই সময় আমি এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলাম।
প্রশ্ন: আচ্ছা ধরুন, আপনি এখন জামায়াতে ইসলামী দলে আছেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত আপনার পক্ষে। আপনি জাতির কাছে ক্ষমা চাইলে কী বলতেন?
রাজ্জাক: আমি স্পষ্ট বলতাম, আমরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার বিরাধিতা করেছি। এটা আমাদের একটা রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। আমরা জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনি যখন বলবেন, ’৭১ সালে আমরা যা করেছি তা ভুলে যান, ক্ষমা করে দিন। এর মধ্য দিয়ে জামায়াতের রাজনীতির একটি বড় অংশকে আপনি মুছে ফেলছেন। জামায়াতের ভেতরের যারা আপনার পক্ষে না তারা তো এভাবেই দেখতে পারেন, যে একটি বড় অংশকে আপনি উড়িয়ে দিচ্ছেন।
রাজ্জাক: মাসুদ, আমরা একটি পরিবর্তনশীল বিশে^ বাস করছি। ১৯৪০ সালের জামায়াত, ১৯৪৭-এর জামায়াত, ১৯৭১-এর জামায়াত এবং একবিংশ শতাব্দীর জামায়াত এক হতে পারে না। আপনাকে স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করতে হবে। আমরা তুরস্কে দেখেছি, তিউনিশিয়াতে দেখেছি স্ট্র্যাটেজির পরিবর্তন এনেছে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি পেছনে তাকিয়ে দেখে আমরা ভুল করেছি, তাহলে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে কোনো সংকোচ থাকা উচিত নয়।
প্রশ্ন: আপনি অন্য কোনো দলে যোগদান করবেন?
রাজ্জাক: আমি বলেছি, আমি আমার পেশায় ফিরে যাব এবং একজন নাগরিক হিসেবে আমার যে অবদান রাখা দরকার সেটাই আমি করবো। অন্য কোনো দলের যোগ দেয়া আবশ্যক নয়।
প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামীকে যদি বিলুপ্ত করা হয়, তাহলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যারা দলে কাজ করেছে তাদের কী হবে?
রাজ্জাক: যুবকদের আমি বলবো, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে ধারণা ছিল, সেটা নিয়ে একটু চিন্তাভাবনা করতে হবে। ইসলামী কনসেপ্ট অবশ্যই একটি কনসেপ্ট। তবে নতুনভাবে এই কনসেপ্ট নিয়ে তরুণদের চিন্তা করা উচিত। বাংলাদেশে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান রয়েছে। এর অধীনে সাম্য ন্যায়ের ভিত্তিতে কীভাবে একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠন করা যায়, সেটা ভাবতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি জামায়াত বিলুপ্তির প্রস্তাব করেছেন। জামায়াতের বিরোধী যারা জামায়াত নিয়ে এতদিন রাজনীতি করেছে, জামায়াত বিলুপ্ত হলে তারা কি একটি সংকটের মধ্যে পড়তে পারে?
রাজ্জাক: সময় এসেছে জামায়াতকে বিলুপ্ত করার। এটা দেশের জন্য কল্যাণকর, জামায়াতের জন্য কল্যাণকর, জাতির জন্য কল্যাণকর।
প্রশ্ন: জামায়াত ভুল স্বীকার করলে আপনি দলে ফিরে যাবেন?
রাজ্জাক: এ ধরনের কোনো সম্ভাবনাই দেখছি না।
প্রশ্ন: আপনি বললেন, কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন না, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনও করছেন না, দেশেও হয়তো আপাতত ফিরছেন না, তাহলে আপনি করবেন কী?
রাজ্জাক: আমি একজন আইনজীবী, আমি প্র্যাকটিস করছি। দেশের সেবা করার জন্য অনেক ক্ষেত্র আছে। অবশ্যই আমি সেই ক্ষেত্রগুলোতে অবদান রাখবো।
শুরুতেই প্রশ্ন ছিল- বাংলাদেশের যে রাজনীতি তাতে জামায়াতে ইসলামী এখন একটা অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে আছে। দলের এই চরম অবস্থার মধ্যে আপনি দল ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?
রাজ্জাক: আমি দীর্ঘ ৩০ বছর জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। এবং আমি দুটো অঙ্গনে বেশি কাজ করেছি। একটি হচ্ছে আইনের অঙ্গনে আরেকটি হচ্ছে কূটনৈতিক অঙ্গনে। ১৯৯২ সালে গোলাম আজমের যে নাগরিকত্ব মামলা হয়, সেই মামলায় আমি জুনিয়র আইনজীবী ছিলাম।
সাঈদী সাহেবের মামলা লড়েছি। ২০০৭-০৮ সালের ইমার্জেন্সির সময় নিজামী, মুজাহিদ সাহেবের বিরুদ্ধে মামলায় আমি প্রধান কৌশলীর দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১০-১৩ সাল পর্যন্ত ১০ জন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে করা মামলায় প্রধান কৌশলী হিসেবে আমি মামলা পরিচালনা করেছি। সুতরাং আমার যেটা কাজ ছিল, জামায়াতকে আইনগতভাবে রক্ষা করা, সেটা আমি সততার সঙ্গে পালন করেছি। আমি কিছু ডিপ্লোম্যাটিক কাজও করেছি। আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পাশে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সে আমি বেশ কিছু ডিপ্লোম্যাটিক কাজ করেছি। আমার পদত্যাগপত্রে বলেছি, ৩০ বছর আগে যখন আমি জয়েন করি, জয়েন করার পর আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল যে আমি জামায়াতকে পুনর্গঠন করবো। সেই পুনর্গঠনে আমি ব্যর্থ হয়েছি। আরেকটা আমার উদ্দেশ্য ছিল যে, আজকের জামায়াত জনগণ থেকে কেন বিচ্ছিন্ন, আজকে কেন জামায়াতকে একটি গ্লানি বহন করতে হচ্ছে। ’৭১ সালে যে শিশু জন্ম নিয়েছে, সে তো ৭১-এর যুদ্ধ দেখেওনি, সে তো এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত না। কিন্তু আজকে তাকেও এই দায়ভার বহন করতে হচ্ছে।
আমি আমার পদত্যাগপত্রে আইটেমাইজ বলেছি, ২০০১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আমি কী করেছি। জামায়াতকে বোঝামুক্ত করার জন্য, জামায়াতকে যেন ’৭১-এর বোঝা বহন করতে না হয়, সে জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমি যখন দেখলাম, আমি পথের শেষপ্রান্তে পৌঁছে গেছি, আমার এখন আর কিছু করার নেই, জামায়াতকে আমার তেমন আর কিছু দেয়ার নেই, তখনই আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিই।
প্রশ্ন: পদত্যাগপত্রে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে যে ভূমিকা রেখেছে, তার জন্য তাদের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। এই কথাটা আপনি বুঝছেন, কিন্তু জামায়াতের অন্যান্য নেতারা কেন বুঝছেন না?
রাজ্জাক: আমি চেষ্টা করেছি। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি, ইতিহাস থেকে উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, স্বাধীনতার বিরোধিতা করে কোনো দেশের কোনো দল সে দেশের নেতৃত্ব দিতে পারেনি। আমি চেষ্টা করেছি এবং সেখানে মতামতটা বিভক্ত ছিল। সবাই যে বিরোধিতা করেছে, তা নয়। কিছু লোক পক্ষে ছিল, কিছু লোক বিপক্ষে ছিল। আর জামায়াতের একটা সংস্কৃতি আছে। তা হলো, জামায়াত পার্টির ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা করে। ৫০ জনের একটা মিটিং যদি হয় আর ২৬ জন যদি বলে আমরা এটার পক্ষে নই, তাহলে বাধ্য হয়েই তাদের ২৬ জনের মতামত মেনে নিতে হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের কারণেই আমি দেখলাম জামায়াত সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে একটি কথা আমি এখানে বলবো। আমি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে বলেছি যে, দেখুন সংখ্যাগরিষ্ঠের মত যাই হোক না কেন, আপনারা লিডারশিপ দিচ্ছেন, আমরা লিডারশিপ দিচ্ছি, অবশ্য আমি এখন আর লিডারশিপে নেই। আমি নেলসন মেন্ডেলার উদাহরণ দিয়েছিলাম, যে শেতাঙ্গদের সঙ্গে তিনি শেষ পর্যন্ত আপসে গেলেন। যদিও তার দলের লোক বলছিল যে, না আমরা যুদ্ধ করবো। সুতরাং এটা আমি বুঝানোর চেষ্টা করেছি, সবাই যে বোঝেননি তা নয়, তবে এটা করতে তারা অপারগ হয়েছেন এবং এটা তাদের ব্যর্থতা বলেই আমি মনে করি।
প্রশ্ন: এজন্যই আপনি চাইছেন যে, দলটিকেই বিলুপ্ত করে দেয়া হোক, কারণ তাদের একটি ’৭১-এর কালি রয়েছে।
রাজ্জাক: শুধু তাই নয়, তা তো আছেই, দুই নম্বর বিষয় হচ্ছে, ২০১১ সাল থেকে জামায়াতের বাহ্যিক কার্যক্রম সব বন্ধ। বাংলাদেশের ৬৫টা জেলার যতটা অফিস আছে, প্রায় সবই বন্ধ। এছাড়া জামায়াতের নিবন্ধন নেই। জামায়াতের নির্বাচনী প্রতীক নেই। জামায়াত কোনো মিটিং করতে পারে না, মিছিল করতে পারে না, কোনো সম্মেলন করতে পারছে না। এটা সরকার করতে দিচ্ছে না। যেহেতু পারছে না, সেহেতু জামায়াতের নতুন কৌশলে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: জামায়াত রাজনৈতিকভাবে মৃত, এ ব্যাপারে আপনি একমত হবেন?
রাজ্জাক: জামায়াতকে সরকার কোনো ফাংশন করতে দিচ্ছে না। যদিও আইনগতভাবে জামায়াত এখনো বেআইনি নয়। কার্যত সরকার জামায়াতকে বেআইনি করেই রেখেছে।
প্রশ্ন: তাহলে কি বলা যায় যে, আপনি এক ধরনের চাপে পড়েই এ ধরনের কথা বলছেন, আপনি দলে থাকবেন না, নতুন দল গড়ে তুলবেন। আপনার ওপর কোনো চাপ আছে কি?
রাজ্জাক: একেবারেই না। ২০০১ সালে আমি কি চাপে ছিলাম? ওই সময় আমি এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলাম।
প্রশ্ন: আচ্ছা ধরুন, আপনি এখন জামায়াতে ইসলামী দলে আছেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত আপনার পক্ষে। আপনি জাতির কাছে ক্ষমা চাইলে কী বলতেন?
রাজ্জাক: আমি স্পষ্ট বলতাম, আমরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার বিরাধিতা করেছি। এটা আমাদের একটা রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। আমরা জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনি যখন বলবেন, ’৭১ সালে আমরা যা করেছি তা ভুলে যান, ক্ষমা করে দিন। এর মধ্য দিয়ে জামায়াতের রাজনীতির একটি বড় অংশকে আপনি মুছে ফেলছেন। জামায়াতের ভেতরের যারা আপনার পক্ষে না তারা তো এভাবেই দেখতে পারেন, যে একটি বড় অংশকে আপনি উড়িয়ে দিচ্ছেন।
রাজ্জাক: মাসুদ, আমরা একটি পরিবর্তনশীল বিশে^ বাস করছি। ১৯৪০ সালের জামায়াত, ১৯৪৭-এর জামায়াত, ১৯৭১-এর জামায়াত এবং একবিংশ শতাব্দীর জামায়াত এক হতে পারে না। আপনাকে স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করতে হবে। আমরা তুরস্কে দেখেছি, তিউনিশিয়াতে দেখেছি স্ট্র্যাটেজির পরিবর্তন এনেছে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি পেছনে তাকিয়ে দেখে আমরা ভুল করেছি, তাহলে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে কোনো সংকোচ থাকা উচিত নয়।
প্রশ্ন: আপনি অন্য কোনো দলে যোগদান করবেন?
রাজ্জাক: আমি বলেছি, আমি আমার পেশায় ফিরে যাব এবং একজন নাগরিক হিসেবে আমার যে অবদান রাখা দরকার সেটাই আমি করবো। অন্য কোনো দলের যোগ দেয়া আবশ্যক নয়।
প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামীকে যদি বিলুপ্ত করা হয়, তাহলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যারা দলে কাজ করেছে তাদের কী হবে?
রাজ্জাক: যুবকদের আমি বলবো, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে ধারণা ছিল, সেটা নিয়ে একটু চিন্তাভাবনা করতে হবে। ইসলামী কনসেপ্ট অবশ্যই একটি কনসেপ্ট। তবে নতুনভাবে এই কনসেপ্ট নিয়ে তরুণদের চিন্তা করা উচিত। বাংলাদেশে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান রয়েছে। এর অধীনে সাম্য ন্যায়ের ভিত্তিতে কীভাবে একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠন করা যায়, সেটা ভাবতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি জামায়াত বিলুপ্তির প্রস্তাব করেছেন। জামায়াতের বিরোধী যারা জামায়াত নিয়ে এতদিন রাজনীতি করেছে, জামায়াত বিলুপ্ত হলে তারা কি একটি সংকটের মধ্যে পড়তে পারে?
রাজ্জাক: সময় এসেছে জামায়াতকে বিলুপ্ত করার। এটা দেশের জন্য কল্যাণকর, জামায়াতের জন্য কল্যাণকর, জাতির জন্য কল্যাণকর।
প্রশ্ন: জামায়াত ভুল স্বীকার করলে আপনি দলে ফিরে যাবেন?
রাজ্জাক: এ ধরনের কোনো সম্ভাবনাই দেখছি না।
প্রশ্ন: আপনি বললেন, কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন না, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনও করছেন না, দেশেও হয়তো আপাতত ফিরছেন না, তাহলে আপনি করবেন কী?
রাজ্জাক: আমি একজন আইনজীবী, আমি প্র্যাকটিস করছি। দেশের সেবা করার জন্য অনেক ক্ষেত্র আছে। অবশ্যই আমি সেই ক্ষেত্রগুলোতে অবদান রাখবো।
No comments