নির্যাতনের দুঃস্বপ্নে ঘুম ভাঙে স্বর্ণার by মরিয়ম চম্পা
স্বর্ণা।
বয়স ২০ বছর। বাবা- মা আদর করে স্বর্ণামণি বলে ডাকেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে
স্বর্ণা বড়। ছোট ভাই সুমন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। স্বর্ণার বাড়ি ঢাকার
কেরানীগঞ্জের উত্তরবালুচরে। বাবা কৃষিকাজ করেন। মা গৃহিণী।
ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন স্বর্ণা। হঠাৎ করে ইচ্ছে হয়েছে বিদেশ যাবেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে পছন্দ করেন স্বর্ণা। সৌদি আরবে মেডিকেল ভিসায় গেলে কাজের পাশাপাশি হয়তো অনেক ঘোরাঘুরি করতে পারবেন- এমনটাই ভেবেছিলেন তিনি। পরিবারের সকলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেকটা জোর জবরদস্তি করে বিদেশে যান স্বর্ণা। মেয়ের বিদেশ যাওয়া নিয়ে বাবা- মায়ের আক্ষেপের শেষ ছিল না। মা একা একা কাঁদতেন। আর বাবা তো বাসার বাইরে প্রায় বের হওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
স্বর্ণা মানবজমিনকে বলেন, বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজনরা আমাকে বারবার নিষেধ করেছিল। কিন্তু কারো কথাই আমি শুনিনি। অনেকটা জেদ করেই বিদেশ যাই। যেমন জেদ করে গিয়েছি তেমন শাস্তি আমার কপালে জুটেছে। এখান থেকে মেডিকেল ভিসার কথা বলে নিয়ে গেলেও ওখানে আমাকে বাসাবাড়ির কাজে দেয়া হয়। প্রথমে রাগে-দুঃখে মন খারাপ হলেও সব মেনে নিয়ে বাসার কাজ শুরু করি। ফজরের আজানের পর কাজ শুরু করে রাত ২টা পর্যন্ত কাজ করতাম। কখনো ভোররাত পর্যন্ত কাজ করতে হতো। কিন্তু ঠিকমতো খেতে দিতো না। খালি মারধর করতো। কারণে-অকারণে মার দেয়ার অজুহাত খুঁজতো। গলা টিপে ধরতো। যখন দমটা বেরিয়ে যাবে অবস্থা ঠিক তখন ছেড়ে দিতো। কিছুদিন পরে ওই বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে নতুন বাসায় কাজ নেই। আবার তারা ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
এরপর একদিন সকালে আবারো পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ধরা পড়ে যাই। নিয়োগকর্তার নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে নিচে নামতে গিয়ে পা ভেঙে যায়। পরে পুলিশ এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে প্রায় ১ মাস চিকিৎসাধীন ছিলাম। বাসার মালিক আমার ফোন ও সঙ্গে থাকা নগদ টাকা রেখে দেয়। তারা একদিনের জন্যও আমাকে হাসপাতালে দেখতে আসে নি। ওই হাসপাতালে ক্লিনারের কাজ করতো কয়েকজন বাংলাদেশি নারী। তাদের একজনকে ডেকে বলি- আপা আপনার ফোনটা একটু দেবেন। আব্বুর সঙ্গে কথা বলবো। তারা অনেক চিন্তা করছেন। এরপর ওই আপুর ফোন দিয়ে আব্বুর সঙ্গে যোগাযোগ করে সব খুলে বলি। আব্বুকে এসএমএস করি। তখন শ্রম মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পুরো বিষয়টা খুলে বললে বাংলাদেশের স্যারদের সহায়তায় দেশে ফিরে আসি।
বর্তমানে নানু বাড়ি আছি। এখানে স্থানীয় একটি আধা-সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছি। বিদেশ যাওয়ার আগে এখানে মাঝে মধ্যে ক্লাস নিতাম। তখন থেকেই স্যারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। দেশে ফিরে আসার পরে স্কুলটিতে পাকাপাকি ভাবে যোগদান করি। ক্লাস আর টিউশনি করে স্কুলের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সারাদিন কেটে যায়। আমি এখন অনেক ভালো আছি। কিন্তু বিদেশের স্মৃতিগুলো আজও আমাকে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়ায়। বিদেশ থেকে আসার পরে গ্রামের লোকজন অনেক বাজে কথা বলেছে। কলেজের বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। বলে, কিরে বিদেশ কেমন, খুব মজা তাই না। এসব কথা একদম সহ্য হয় না। আবার আমি ঘুরে দাঁড়াবো। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাটা দিতে চাই। কিন্তু আগের কলেজ থেকে টিসি তুলে নানু বাড়ির কাছে একটি কলেজে ভর্তি হবো। নতুন কলেজে কেউ আমার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি জানবে না। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকি জীবনটা মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে হেসে-খেলে কাটিয়ে দিতে চাই।
ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন স্বর্ণা। হঠাৎ করে ইচ্ছে হয়েছে বিদেশ যাবেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে পছন্দ করেন স্বর্ণা। সৌদি আরবে মেডিকেল ভিসায় গেলে কাজের পাশাপাশি হয়তো অনেক ঘোরাঘুরি করতে পারবেন- এমনটাই ভেবেছিলেন তিনি। পরিবারের সকলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেকটা জোর জবরদস্তি করে বিদেশে যান স্বর্ণা। মেয়ের বিদেশ যাওয়া নিয়ে বাবা- মায়ের আক্ষেপের শেষ ছিল না। মা একা একা কাঁদতেন। আর বাবা তো বাসার বাইরে প্রায় বের হওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
স্বর্ণা মানবজমিনকে বলেন, বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজনরা আমাকে বারবার নিষেধ করেছিল। কিন্তু কারো কথাই আমি শুনিনি। অনেকটা জেদ করেই বিদেশ যাই। যেমন জেদ করে গিয়েছি তেমন শাস্তি আমার কপালে জুটেছে। এখান থেকে মেডিকেল ভিসার কথা বলে নিয়ে গেলেও ওখানে আমাকে বাসাবাড়ির কাজে দেয়া হয়। প্রথমে রাগে-দুঃখে মন খারাপ হলেও সব মেনে নিয়ে বাসার কাজ শুরু করি। ফজরের আজানের পর কাজ শুরু করে রাত ২টা পর্যন্ত কাজ করতাম। কখনো ভোররাত পর্যন্ত কাজ করতে হতো। কিন্তু ঠিকমতো খেতে দিতো না। খালি মারধর করতো। কারণে-অকারণে মার দেয়ার অজুহাত খুঁজতো। গলা টিপে ধরতো। যখন দমটা বেরিয়ে যাবে অবস্থা ঠিক তখন ছেড়ে দিতো। কিছুদিন পরে ওই বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে নতুন বাসায় কাজ নেই। আবার তারা ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
এরপর একদিন সকালে আবারো পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ধরা পড়ে যাই। নিয়োগকর্তার নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে নিচে নামতে গিয়ে পা ভেঙে যায়। পরে পুলিশ এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে প্রায় ১ মাস চিকিৎসাধীন ছিলাম। বাসার মালিক আমার ফোন ও সঙ্গে থাকা নগদ টাকা রেখে দেয়। তারা একদিনের জন্যও আমাকে হাসপাতালে দেখতে আসে নি। ওই হাসপাতালে ক্লিনারের কাজ করতো কয়েকজন বাংলাদেশি নারী। তাদের একজনকে ডেকে বলি- আপা আপনার ফোনটা একটু দেবেন। আব্বুর সঙ্গে কথা বলবো। তারা অনেক চিন্তা করছেন। এরপর ওই আপুর ফোন দিয়ে আব্বুর সঙ্গে যোগাযোগ করে সব খুলে বলি। আব্বুকে এসএমএস করি। তখন শ্রম মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পুরো বিষয়টা খুলে বললে বাংলাদেশের স্যারদের সহায়তায় দেশে ফিরে আসি।
বর্তমানে নানু বাড়ি আছি। এখানে স্থানীয় একটি আধা-সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছি। বিদেশ যাওয়ার আগে এখানে মাঝে মধ্যে ক্লাস নিতাম। তখন থেকেই স্যারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। দেশে ফিরে আসার পরে স্কুলটিতে পাকাপাকি ভাবে যোগদান করি। ক্লাস আর টিউশনি করে স্কুলের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সারাদিন কেটে যায়। আমি এখন অনেক ভালো আছি। কিন্তু বিদেশের স্মৃতিগুলো আজও আমাকে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়ায়। বিদেশ থেকে আসার পরে গ্রামের লোকজন অনেক বাজে কথা বলেছে। কলেজের বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। বলে, কিরে বিদেশ কেমন, খুব মজা তাই না। এসব কথা একদম সহ্য হয় না। আবার আমি ঘুরে দাঁড়াবো। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাটা দিতে চাই। কিন্তু আগের কলেজ থেকে টিসি তুলে নানু বাড়ির কাছে একটি কলেজে ভর্তি হবো। নতুন কলেজে কেউ আমার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি জানবে না। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকি জীবনটা মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে হেসে-খেলে কাটিয়ে দিতে চাই।
No comments