যে কারণে হঠাৎ মর্গে বেড়েছে লাশ by শুভ্র দেব
ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নয়া কিসিমের নির্দেশনায় তোলপাড় চলছে
হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক-কর্মচারীদের মাঝে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে
হাসপাতাল থেকে কারও মৃতদেহ নিয়ে যেতে হলে পুলিশের ছাড়পত্র লাগবে। পুলিশ
প্রয়োজন মনে করলে লাশের পোস্টমর্টেম করতে পারবে।
নতুন এ নির্দেশনা জারির পর এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যায় লাশের পোস্টমর্টেম হচ্ছে বলে মর্গ কর্মীরা দাবি করেছেন। নতুন নির্দেশনায় হাসপাতালে লাশ নিয়ে বিপাকে পড়ছেন স্বজনরা। শোকাতুর স্বজনদের লাশের ছাড়পত্র পেতে ছুটতে হচ্ছে থানা আর মর্গে। এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া গেছে দুই ধরনের বক্তব্য।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, পরবর্তী জটিলতা এড়াতে শুধুমাত্র মৃত অবস্থায় যাদের নিয়ে আসা হয় ওই সব লাশের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা কার্যকর হবে। তবে হাসপাতালের চিকিৎসক ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন ভিন্ন কথা। রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, রোগী নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পরও পুলিশের ছাড়পত্রের জন্য থানায় যেতে হচ্ছে। সরজমিন এ দাবির সত্যতাও পাওয়া গেছে।
হাসপাতালে দায়িত্বরত একজন মেডিকেল অফিসার বলেন, কোন রোগী মারা গেলে সে কোন রোগে মারা গেল তার কারণ শনাক্ত করা এবং বছরে কোন কোন রোগে কত রোগী মারা গেল মৃত্যু সনদ দেখে তার পরিসংখ্যান বের করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ঢামেকে ভর্তি হওয়া অনেক রোগীর সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া যায় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপরাধজনিত কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন অনেক রোগী। যারা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আবার মৃতাবস্থায় অনেক রোগীকে নিয়ে আসে অনেকে। এসব রোগীদের স্বাভাবিক মৃত্যুর সনদ দিয়ে ছেড়ে দিলে পরে ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আইনি ঝামেলা এড়াতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকছে। পুলিশ কেস দিলে পুলিশই তার ভালো মন্দ বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়।
শুক্রবার দুপুরের ঘটনা। শরিয়তপুরের নড়িয়া থেকে হার্টের সমস্যা নিয়ে ঢামেকে আসেন মো. আফজাল আলী বেপারী। চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই তিনি মারা যান। জরুরি বিভাগ থেকে আফজাল বেপারীর মৃত্যুর জন্য পুলিশ কেস দেয়া হয়। তারপর থেকে আফজাল বেপারীর স্বজনদের শুরু হয় একের পর এক ভোগান্তি।
জরুরি বিভাগ থেকে মেডিকেল অফিসার, মর্গ অফিস, থানা পুলিশ হয়ে ঘাটে ঘাটে হয়রানির শিকার হয়ে মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র মিলে। নিহত এই ব্যক্তির ছেলে মো. জাকির হোসেন মানবজমিনকে বলেন, হার্টের সমস্যা থাকার কারণে আমার বাবাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসি। চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই তিনি মারা যান।
এখন কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে এসে মারা যাওয়ার জন্য পুলিশ কেস দিয়েছে। এখন এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে দৌড় ঝাঁপ করছি। মর্গ অফিস থেকে কাগজপত্র দিয়ে বলা হয়েছে শাহবাগ থানায় যাওয়ার জন্য। সেখান থেকে পুলিশের ছাড়পত্র নিয়ে মর্গ অফিসে আসি। সেখান থেকে আবার গেট পাস নিয়ে বাবার মরদেহ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।
জাকির বলেন, এরকম নিয়মে বাড়তি ভোগান্তি হচ্ছে। আমার বাবা মারা গেছে আমার মনের অবস্থা খুবই খারাপ। তার উপর এই বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। একই অবস্থা দেখা যায় ময়মনসিংহের গফরগাওয়ের ওয়াহিদুজ্জামানের স্বজনদের। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে তার স্বজনরা নিয়ে আসেন ঢামেকে।
কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তখন ওয়াহিদুজ্জামানকে মৃত ঘোষণা করেন। ওয়াহিদুজ্জামানের ক্ষেত্রে দেয়া হয় পুলিশ কেস। মৃতদেহ মর্গে রেখে তার স্বজন শাহনাজ পারভিনকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। হাসপাতালের নিয়মনীতি ও থানা পুলিশের ঝামেলা শেষ করে ওয়াহিদুজ্জামানের মৃতদেহ তার স্বজনরা বাড়ি নিয়ে যান।
শাহনাজ পারভিন জানান, নিজের কোনো স্বজন মারা গেলে মন-মানসিকতা একদম ভালো থাকে না। তার ওপর এসব ঝামেলা পোহাতে হয়। হাসপাতালের এ ধরনের নিয়ম মানা যায় না।
শুধু আফজাল আলী বেপারী আর ওয়াহিদুজ্জামানের স্বজনই নয় গত ৬ই সেপ্টেম্বর থেকে ঢামেকে নতুন এই নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক, জরুরি বিভাগ, মর্গ অফিস, মৃত ব্যক্তির স্বজন ও থানা পুলিশকে। ঢামেক সূত্র জানিয়েছে, স্বাভাবিক অসুস্থতায় যদি কেউ মারা যায় আর নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেডিকেলে আনা হয় সেই মৃতদেহের বেলায় পুলিশ কেস দেয়ার বিষয়টি কেউ মেনে নিতে চাইছেন না।
কারণ এমনিতেই রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের স্বাভাবিক কাজকে ঝামেলা মনে করেন। তার ওপর আবার স্বাভাবিক মৃত্যুতে পুলিশ কেস দেয়া হচ্ছে। এটিকে তারা বাড়তি ঝামেলা মনে করছেন। হাসপাতালে আসা কোনো রোগীর মৃত্যু হলে যখন তাকে পুলিশ কেস দেয়া হয় তখন তার স্বজনদের সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করতে হয়।
অনেক সময় থানায় বসে পুলিশ ছাড়পত্র দেয়। আবার অনেক সময় হাসপাতালে এসে মৃতদেহ দেখে পোস্টমর্টেম করার কথা বলছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ভেতরে যদি কোনো রোগী ঢামেকে মারা যান সেক্ষেত্রে ওই রোগীর সংশ্লিষ্ট থানা থেকে ছাড়পত্র আনতে হবে। আর যদি ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীর মৃত্যু হয় তবে এক্ষেত্রে শাহবাগ থানা থেকে ছাড়পত্র আনতে হবে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া মানবজমিনকে বলেন, এই নতুন নিয়মের পক্ষে কেউই না।
রোগীর স্বজনদের পাশাপাশি পুলিশের কাজ বেড়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য সেই ডেমরা, উত্তরা, কদমতলীসহ আরো দূর-দূরান্তের থানা থেকে পুলিশ আসতে হয়।
ঢামেকের মর্গ অফিসের সহকারী মোহাম্মদ নিজাম মানবজমিনকে বলেন, নতুন ঝামেলা শুরু হয়েছে। এতদিন সড়ক দুর্ঘটনা, হত্যা, আত্মহত্যার মৃতদেহগুলো পোস্টমর্টেম করা হতো। কয়েকদিন ধরে স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ কেস দেয়া হচ্ছে। এজন্য আমাদের প্রতিদিনের কাজের সঙ্গে বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে।
রোগীর স্বজনদের ভোগান্তির সঙ্গে সঙ্গে মর্গ অফিসের কর্মচারী ও পুলিশের ভোগান্তি শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মর্গ অফিসের আরেক সহকারী বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন এই নিয়ম করলেন কিছুই বুঝলাম না। আমাদের প্রতিনিয়ত রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। নতুন এই নিয়ম কিছুতেই মানতে চান না স্বজনরা। জ্বর, হার্টঅ্যাটাক, ব্রেনস্টোকের রোগীদের কেন পুলিশ কেস দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. শাহ আলম তালুকদার মানবজমিনকে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ঢামেকে অনেক সময় মৃত অবস্থায় অনেকে রোগী নিয়ে আসে।
এসব ক্ষেত্রে আমরা পুলিশকে তথ্য দিই। কারণ আমরা কোনো রোগী বা তার স্বজনদের চিনি না। ওই ব্যক্তিকে কি কেউ গলা টিপে হত্যা করেছে না অসুস্থতার কারণে মারা গেছে সেটাতো আমরা জানিনা। তাই পরে যদি ওই ব্যক্তির কোনো স্বজন এসে না বলে ঘটনা অন্যরকম ছিল। জানতে চাইলে ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন স্বাভাবিক মৃত্যুতে পুলিশ কেস দেয়া হচ্ছে না বলে জানান।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) অধ্যাপক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যেসব রোগীকে হাসপাতালের আনার পর মৃত ঘোষিত হয় তাদের ক্ষেত্রে পুলিশ কেস দেয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ কেস দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এমনটি তার জানা নেই।
নতুন এ নির্দেশনা জারির পর এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যায় লাশের পোস্টমর্টেম হচ্ছে বলে মর্গ কর্মীরা দাবি করেছেন। নতুন নির্দেশনায় হাসপাতালে লাশ নিয়ে বিপাকে পড়ছেন স্বজনরা। শোকাতুর স্বজনদের লাশের ছাড়পত্র পেতে ছুটতে হচ্ছে থানা আর মর্গে। এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া গেছে দুই ধরনের বক্তব্য।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, পরবর্তী জটিলতা এড়াতে শুধুমাত্র মৃত অবস্থায় যাদের নিয়ে আসা হয় ওই সব লাশের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা কার্যকর হবে। তবে হাসপাতালের চিকিৎসক ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন ভিন্ন কথা। রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, রোগী নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পরও পুলিশের ছাড়পত্রের জন্য থানায় যেতে হচ্ছে। সরজমিন এ দাবির সত্যতাও পাওয়া গেছে।
হাসপাতালে দায়িত্বরত একজন মেডিকেল অফিসার বলেন, কোন রোগী মারা গেলে সে কোন রোগে মারা গেল তার কারণ শনাক্ত করা এবং বছরে কোন কোন রোগে কত রোগী মারা গেল মৃত্যু সনদ দেখে তার পরিসংখ্যান বের করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ঢামেকে ভর্তি হওয়া অনেক রোগীর সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া যায় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপরাধজনিত কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন অনেক রোগী। যারা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আবার মৃতাবস্থায় অনেক রোগীকে নিয়ে আসে অনেকে। এসব রোগীদের স্বাভাবিক মৃত্যুর সনদ দিয়ে ছেড়ে দিলে পরে ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আইনি ঝামেলা এড়াতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকছে। পুলিশ কেস দিলে পুলিশই তার ভালো মন্দ বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়।
শুক্রবার দুপুরের ঘটনা। শরিয়তপুরের নড়িয়া থেকে হার্টের সমস্যা নিয়ে ঢামেকে আসেন মো. আফজাল আলী বেপারী। চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই তিনি মারা যান। জরুরি বিভাগ থেকে আফজাল বেপারীর মৃত্যুর জন্য পুলিশ কেস দেয়া হয়। তারপর থেকে আফজাল বেপারীর স্বজনদের শুরু হয় একের পর এক ভোগান্তি।
জরুরি বিভাগ থেকে মেডিকেল অফিসার, মর্গ অফিস, থানা পুলিশ হয়ে ঘাটে ঘাটে হয়রানির শিকার হয়ে মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র মিলে। নিহত এই ব্যক্তির ছেলে মো. জাকির হোসেন মানবজমিনকে বলেন, হার্টের সমস্যা থাকার কারণে আমার বাবাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসি। চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই তিনি মারা যান।
এখন কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে এসে মারা যাওয়ার জন্য পুলিশ কেস দিয়েছে। এখন এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে দৌড় ঝাঁপ করছি। মর্গ অফিস থেকে কাগজপত্র দিয়ে বলা হয়েছে শাহবাগ থানায় যাওয়ার জন্য। সেখান থেকে পুলিশের ছাড়পত্র নিয়ে মর্গ অফিসে আসি। সেখান থেকে আবার গেট পাস নিয়ে বাবার মরদেহ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।
জাকির বলেন, এরকম নিয়মে বাড়তি ভোগান্তি হচ্ছে। আমার বাবা মারা গেছে আমার মনের অবস্থা খুবই খারাপ। তার উপর এই বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। একই অবস্থা দেখা যায় ময়মনসিংহের গফরগাওয়ের ওয়াহিদুজ্জামানের স্বজনদের। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে তার স্বজনরা নিয়ে আসেন ঢামেকে।
কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তখন ওয়াহিদুজ্জামানকে মৃত ঘোষণা করেন। ওয়াহিদুজ্জামানের ক্ষেত্রে দেয়া হয় পুলিশ কেস। মৃতদেহ মর্গে রেখে তার স্বজন শাহনাজ পারভিনকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। হাসপাতালের নিয়মনীতি ও থানা পুলিশের ঝামেলা শেষ করে ওয়াহিদুজ্জামানের মৃতদেহ তার স্বজনরা বাড়ি নিয়ে যান।
শাহনাজ পারভিন জানান, নিজের কোনো স্বজন মারা গেলে মন-মানসিকতা একদম ভালো থাকে না। তার ওপর এসব ঝামেলা পোহাতে হয়। হাসপাতালের এ ধরনের নিয়ম মানা যায় না।
শুধু আফজাল আলী বেপারী আর ওয়াহিদুজ্জামানের স্বজনই নয় গত ৬ই সেপ্টেম্বর থেকে ঢামেকে নতুন এই নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক, জরুরি বিভাগ, মর্গ অফিস, মৃত ব্যক্তির স্বজন ও থানা পুলিশকে। ঢামেক সূত্র জানিয়েছে, স্বাভাবিক অসুস্থতায় যদি কেউ মারা যায় আর নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেডিকেলে আনা হয় সেই মৃতদেহের বেলায় পুলিশ কেস দেয়ার বিষয়টি কেউ মেনে নিতে চাইছেন না।
কারণ এমনিতেই রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের স্বাভাবিক কাজকে ঝামেলা মনে করেন। তার ওপর আবার স্বাভাবিক মৃত্যুতে পুলিশ কেস দেয়া হচ্ছে। এটিকে তারা বাড়তি ঝামেলা মনে করছেন। হাসপাতালে আসা কোনো রোগীর মৃত্যু হলে যখন তাকে পুলিশ কেস দেয়া হয় তখন তার স্বজনদের সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করতে হয়।
অনেক সময় থানায় বসে পুলিশ ছাড়পত্র দেয়। আবার অনেক সময় হাসপাতালে এসে মৃতদেহ দেখে পোস্টমর্টেম করার কথা বলছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ভেতরে যদি কোনো রোগী ঢামেকে মারা যান সেক্ষেত্রে ওই রোগীর সংশ্লিষ্ট থানা থেকে ছাড়পত্র আনতে হবে। আর যদি ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীর মৃত্যু হয় তবে এক্ষেত্রে শাহবাগ থানা থেকে ছাড়পত্র আনতে হবে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া মানবজমিনকে বলেন, এই নতুন নিয়মের পক্ষে কেউই না।
রোগীর স্বজনদের পাশাপাশি পুলিশের কাজ বেড়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য সেই ডেমরা, উত্তরা, কদমতলীসহ আরো দূর-দূরান্তের থানা থেকে পুলিশ আসতে হয়।
ঢামেকের মর্গ অফিসের সহকারী মোহাম্মদ নিজাম মানবজমিনকে বলেন, নতুন ঝামেলা শুরু হয়েছে। এতদিন সড়ক দুর্ঘটনা, হত্যা, আত্মহত্যার মৃতদেহগুলো পোস্টমর্টেম করা হতো। কয়েকদিন ধরে স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ কেস দেয়া হচ্ছে। এজন্য আমাদের প্রতিদিনের কাজের সঙ্গে বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে।
রোগীর স্বজনদের ভোগান্তির সঙ্গে সঙ্গে মর্গ অফিসের কর্মচারী ও পুলিশের ভোগান্তি শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মর্গ অফিসের আরেক সহকারী বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন এই নিয়ম করলেন কিছুই বুঝলাম না। আমাদের প্রতিনিয়ত রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। নতুন এই নিয়ম কিছুতেই মানতে চান না স্বজনরা। জ্বর, হার্টঅ্যাটাক, ব্রেনস্টোকের রোগীদের কেন পুলিশ কেস দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. শাহ আলম তালুকদার মানবজমিনকে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ঢামেকে অনেক সময় মৃত অবস্থায় অনেকে রোগী নিয়ে আসে।
এসব ক্ষেত্রে আমরা পুলিশকে তথ্য দিই। কারণ আমরা কোনো রোগী বা তার স্বজনদের চিনি না। ওই ব্যক্তিকে কি কেউ গলা টিপে হত্যা করেছে না অসুস্থতার কারণে মারা গেছে সেটাতো আমরা জানিনা। তাই পরে যদি ওই ব্যক্তির কোনো স্বজন এসে না বলে ঘটনা অন্যরকম ছিল। জানতে চাইলে ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন স্বাভাবিক মৃত্যুতে পুলিশ কেস দেয়া হচ্ছে না বলে জানান।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) অধ্যাপক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যেসব রোগীকে হাসপাতালের আনার পর মৃত ঘোষিত হয় তাদের ক্ষেত্রে পুলিশ কেস দেয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ কেস দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এমনটি তার জানা নেই।
No comments