ছাত্র বিক্ষোভে অচল রাজধানী: সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আজ
রাজধানীজুড়ে
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। অচল সবকিছু। বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর
প্রতিবাদ এবং নয় দফা দাবিতে ঢাকার স্কুল-কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী
গতকাল নেমে আসে রাজপথে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সারা দেশের সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রাতে মন্ত্রণালয়ে
জরুরি বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা
বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন। ওদিকে শিক্ষার্থীরা আজ সারা দেশের সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এদিকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভের কারণে বন্ধ ছিল গণপরিবহন চলাচল। এতে কর্মমুখী মানুষকে দিনভরই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। দুর্ভোগ হলেও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। রোববার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বেপরোয়া বাস চাপায় প্রাণ হারান শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী। ঘটনার পর থেকে ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরের দিন বিক্ষোভে যোগ দেয় আশপাশের আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাজধানীতে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তাৎক্ষণিক নোটিশে বন্ধ রাখা হয় বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চতুর্থ দিনে গতকালের বিক্ষোভ ছিল রাজধানীজুড়ে। সকাল থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। শহরজুড়ে শিক্ষার্থীদের মুখে ছিল অভিন্ন স্লোগান, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’। নগরজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় তা থামাতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতাই কাজে আসেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন মন্ত্রীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বিষয়ে সদস্যদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। গতকাল বিক্ষোভ ছড়িয়েছে ঢাকার বাইরেও। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ সড়কের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে ৯ দফা দাবির পাশপাশি নৌপরিবহন মন্ত্রী ও শ্রমিক পরিবহন নেতা শাজাহান খানের পদত্যাগ চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শাহবাগে বিক্ষোভকারীরা নৌ-মন্ত্রীর কুশপুত্তলিকাও পুড়িয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীরা বৈধ কাগজপত্র, চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। বৈধ কাগজ না পেলেই যানবাহনে ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। তবে এম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের যানবাহন নিরাপদে চলাচলের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভের সময় উল্টো পথে আসা একজন সিনিয়র মন্ত্রীর গাড়িও ফিরিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া চালকের কাছে লাইসেন্স না থাকায় পুলিশের একটি গাড়ি আটকে রাখার ঘটনাও ঘটে। এদিকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চালকালে শনির আখড়া এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানের কাগজ দেখতে চাইলে চালক না দেখিয়ে এক শিক্ষার্থীর ওপর দিয়ে পিকাপ চালিয়ে পালিয়ে যায়।
অবরোধ ও বিক্ষোভের কারণে সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর থেকে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে রামপুরা, বিমানবন্দর থেকে বনানী হয়ে শাহবাগ, গাবতলী থেকে নিউ মার্কেট, বেগম রোকেয়া সরণি, শাহবাগ থেকে মতিঝিল হয়ে শনির আখড়া সড়কে সারা দিনই কোনো গণপরিবহন চলেনি। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও ছিল কম। স্থানে স্থানে বিক্ষোভ হওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা হেঁটে বা রিকশায় করে যার যার গন্তব্যে যান। সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে চলা কর্মসূচিতে ভোগান্তি হলেও সাধারণ মানুষকে বিরক্ত দেখা যায়নি খুব একটা। বিকাল সোয়া চারটায় মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে বেগম রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া এলাকায় সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করছিলেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।
সড়ক নিরাপত্তা ও নৌ-মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এসময় সড়কের দুপাশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকানো ছিল। বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে দিনের কর্মসূচি স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে পরের দিনও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সকাল থেকেই এ সড়কে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে দিনভর সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এদিকে গতকাল বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী জাবালে নূর পরিবহনের মালিক শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ঘাতক বাসের চালক মাসুম বিল্লাহকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। দায়ী পরিবহনের দুটি বাসের রুট পারমিট বাতিল করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অর্থরিটি।
উত্তরা থেকে বিমানবন্দর সড়ক জুড়ে বিক্ষোভ: সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং ও জসিম উদ্দিন রোডে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে স্লোগানে তারা পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে। চতুর্থ দিনের এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন উত্তরা রাজউক মডেল কলেজ, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কলাস্টিকা, বিজেএমইএ ইউনিভার্সিটি, উত্তরা কমার্স কলেজ, উত্তরা ইউনাইটেড কলেজসহ আরো অনেক কলেজ।
এসময় শিক্ষার্থীরা উত্তরা থেকে মহাখালী পর্যন্ত কোন যানবাহন চলাচল করতে দেয়নি। যে কয়েকটা যানবাহন চলাচল করেছে তার চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে হয়েছে। যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না সেই যানবাহনের চালকদের কিছুক্ষণ আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাউজ বিল্ডিং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিকাল ৫টার দিকে ওই এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান থেকে সরে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিমানবন্দর, খিলক্ষেত এলাকায়ও একই পরিস্থিতি বিরাজ করে। প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সড়কে গুটিকয়েক যানবাহন ছাড়া আর কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। বিশেষ কারণ দেখিয়ে অনেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাড় পায়নি। মোটরসাইকেলচালকদের মধ্যে যাদের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল তাদেরকে চলে যেতে বলা হয়। তবে অসুস্থ রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে চলাচল করতে দেয়া হয়। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, রেডিসন ব্লু ও এমইএস এলাকায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, বিএফ শাহিন কলেজ, ক্যামব্রিয়ান কলেজ বিক্ষোভ করেন। পরে তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন রাজউক, মাইলস্টোন, উত্তরা কমার্স কলেজসহ আরো অনেক কলেজের শিক্ষার্থীরা।
যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এমইএসের জিয়া কলোনি এমপি চেকপোস্টের সামনে কিছু শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়। বাকিরা দুপাশের সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ওই সড়ক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ও শিক্ষার্থীদের গাড়ি ছাড়া আর কোনো গাড়ি চলতে দেয়া হয়নি। যারা ভুল করে ওই সড়ক দিয়ে প্রবেশ করেছে তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাত থেকে বাধ যায়নি পুলিশের গাড়িও। পুলিশকে বহনকারী কিছু গাড়িকে ভাঙচুর করা হয়। আর মোটরসাইকেল চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে হেঁটে হেঁটে যেতে হয়। কাকলী মোড়েও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন নর্দান ইউনিভার্সিটি, প্রাইমেশিয়া ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, বনানী বিদ্যা নিকেতনসহ আরো বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রধান সড়কে অবরোধ করায় ওই এলাকা দিয়ে কোনো যানবাহন চলতে দেয়া হয়নি। যানবাহন চলতে না দেয়ায় ওই এলাকায় সাধারণ যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
হেঁটে অনেককে গন্তব্য পৌঁছাতে দেখা গেছে। তবে রামপুরা-বাড্ডা এলাকায় ঢাকা কমার্স কলেজ, ইমপেরিয়াল কলেজ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা কলেজ, রাজউক উত্তরা কলেজ, আইডিয়াল কলেজসহ আরো কিছু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। রামপুরা ব্রিজের ওপরে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা আশপাশের সবকটি রাস্তা বন্ধ করে দেন। এতে করে আশপাশের এলাকা থেকে আসা যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অনেক যানবাহনকে। ব্রিজের ওপরে শিক্ষার্থীরা বসে দাঁড়িয়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে থাকেন। বিকাল চারটার পরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ বন্ধ করেন। পরে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়। এছাড়া বসুন্ধরা এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ভিকারুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন। মহাখালী-গুলশান এলাকায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন।
যাত্রাবাড়ী এলাকা: রাজধানীর চট্টগ্রাম রোড, শনির আখড়া, কাজলা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সকাল থেকে জমায়েত হয় আশপাশের বিভিন্ন কলেজের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা। সেখানে ওই এলাকার কিছু স্কুল ছাত্রকেও যোগ দিতে দেখা গেছে। নারায়ণগঞ্জ প্রবেশের রাস্তার মাথা থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত কয়েক দল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নিলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিলে সকাল ৯টার পর থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে দূরপাল্লার বাস দীর্ঘক্ষণ ধরে আর রাজধানীতে ঢুকতে পারেনি। ঠাঁই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামের দিকে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার যানজট পড়তে দেখা গেছে। আবার এই যানজট এড়াতে বহু গাড়ি রাস্তা পরিবর্তন করে ডেমরা দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে।
ফার্মগেট থেকে শাহবাগ: রাজধানীর ফার্মগেট থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এ অবস্থায় পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল দিনভর। বেলা ১ টা ৪০ মিনিটের দিকে বাংলামটর এলাকায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি উল্টোপথ দিয়ে যাওয়ায় তা আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তার গাড়িকে উল্টো পথে না গিয়ে শাহবাগ হয়ে ঘুরে যাবার পরামর্শ দেয়। পরে তিনি শাহবাগের দিকে চলে যান। শাহবাগ এলাকায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের কুশপত্তলিকা পোড়ায়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, সিটি কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে রাস্তা অবরোধ করে। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শাহবাগ ও বাংলামটর এলাকায় পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ তাদের বার বার বলেছে সড়ক ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু, তারা পুলিশের কোনো কথা শুনেনি। একপর্যায়ে দুপুর পৌনে ১টার দিকে শাহবাগ ও বাংলামটর এলাকায় পুলিশের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা মূল সড়কের একপাশে দাঁড়ায়। তখন গাড়িগুলো কিছুটা ধীরে ধীরে চলতে থাকে। কিন্তু, শিক্ষার্থীরা সড়কের প্রত্যেকটি গাড়ির লাইসেন্স দেখতে চান। এতে গাড়ির চালকের সঙ্গে তাদের তর্কাতর্কি হয়। যেসব গাড়ির চালক তাদের ব্যক্তিগত ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারেননি সেইসব গাড়ির চাবি তারা কেড়ে নেয়। ওইসব গাড়িগুলো সড়কের একপাশে রেখে দেয় চালকেরা। লাইন ধরে প্রত্যেক চালকের গাড়ির ব্যক্তিগত লাইসেন্স দেখার কারণে আবারো প্রচণ্ড যানজট দেখা দেয়। এদিকে, বাংলামটর এলাকায় প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে। সেখানে তারা সকল গাড়ির চালকের লাইসেন্স দেখতে চান। যারা লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয় তাদের গাড়ি আটকায়। তবে বাংলামটর থেকে মগবাজারগামী সড়কটি তারা অবরোধ না করার কারণে পুলিশ সকল গাড়িগুলো ওই সড়কের পাঠিয়ে দেয়।
আন্দোলনরত একদল ছাত্র ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ করে বাস ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা শেষে মিছিল করে। এ সময় সড়কে সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ ছিল। মিছিল নিয়ে সার্ক ফোয়ারা মোড়ে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে আসে। তারা সেখানে স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসের চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করছিল। শাহবাগের দিক থেকে আসা বাসটিতে আগে থেকেই সাদা ইউনিফর্ম পরা কিছু ছাত্র ছিল। তারাই গাড়িটি কারওয়ান বাজার সিগনালে থামায়। এ সময় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর বাসটি চালাচ্ছিলো। কিশোর চালকের কোনো লাইসেন্স না থাকায় ছাত্ররা যাত্রীদের বলে, ‘আপনারা নেমে যান, আমরা গাড়ির কোনো ক্ষতি করবো না। এই গাড়ি নিরাপদ না।
নীল রংয়ের স্কুল ড্রেস পরা প্রায় দুই-আড়াইশ’ ছাত্র এ সময় গাড়িটিকে ঘিরে থাকে। এ সময় হঠাৎ ইউনিফর্ম ছাড়া সাদা টি-শার্ট পরা এক যুবক একটি ইট নিয়ে গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে ফেলে। এরপর সে পালাতে চাইলে তড়িঘড়ি করে ছাত্ররা তাকে আটকায়। ছাত্ররা ভাঙচুরকারী যুবককে পাকড়াও করে দূরে দাঁড়ানো পুলিশের কাছে নিয়ে যায়। ছাত্ররা বারবার বলছিল, ‘তুই গাড়ি ভাঙলি ক্যান? আমরা কি ভাঙচুরের আন্দোলন করতেছি?’। পরে তারা যুবকটিকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।
মতিঝিল এলাকা: দুপুর থেকেই উত্তাল হয়ে উঠে মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকা। নৌ পরিবহনমন্ত্রীর পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা মতিঝিল গোলচত্বরসহ আশেপাশের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে। নটরডেম, আইডিয়ালসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধে ওই এলাকার সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মতিঝিলের কেন্দ্রবিন্দু শাপলা চত্বর ঘেরাও করে নটরডেমের শিক্ষার্থীরা।
এসময় তারা নানা স্লোগানে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবি করে। এরপর দুপুর ১২টায় পর নটরডেম কলেজসহ আশেপাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ার পর দল বেঁধে শিক্ষার্থীরা প্রথম ক্যাম্পাসের সামনে পরে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। এতে আশেপাশের সব রাস্তার যানবাহন বন্ধ হয়ে যায়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত তারা সড়কে অবস্থান করে।
সায়েন্স ল্যাব: সকাল থেকেই ধানমন্ডি সাইন্স ল্যাব- সিটি কলেজ মোড়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে ঢাকা সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ আন্দোলন শুরু করলেও, তাদের সঙ্গে একে একে যুক্ত হয় সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ইম্পিরিয়াল কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ধানমন্ডি ল্যাবরেটরি কলেজ, ড্যাফোডিল কলেজসহ আশপাশের আরো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা।
আন্দোলনের শুরুতে রাস্তায় চলাচল করা সকল গাড়িই থামিয়ে দেয় তারা। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ সিটি কলেজের দিকে আগত সকল গাড়িরই বিআরটিএ কর্তৃক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চায়। যাদের কাগজ ঠিক ছিল, তাদের কিছু না বলে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে বলেন তারা। কিন্তু লাইসেন্স দেখাতে না পারায় অনেক গাড়িরই চাবি খুলে নেয় ছাত্ররা। আনুমানিক বেলা ১২টার দিকে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের একটি গাড়ি আন্দোলনরত সামনে আসলে সিটি কলেজের একজন ছাত্র গাড়িটির সামনে গিয়ে বাধা দেয়।
এ সময় পুলিশের গাড়ি ঘিরে ধরে চালকের কাছে লাইসেন্স দেখতে চান শিক্ষার্থীরা। চালক লাইসেন্স দেখাতে না পারায় শুরু হয় বাক-বিতণ্ডা। সিটি কলেজের ইউনিফর্ম পরিহিত এক শিক্ষার্থী জানায়, তারা লাইসেন্স দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পুলিশের গাড়ির চালক তা দেখাতে পারেননি। পুলিশের পোশাক পরিহিত ওই গাড়ির চালকের আসনে থাকা পুলিশ কনস্টেবল অরবিন্দ সমাদ্দার বলেন, ‘আমরা সরকারি চাকরি করি। লাইসেন্স না দেখে তো আর চাকরি দেয়নি।’ তাহলে লাইসেন্স দেখাতে পারছেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি গাড়ি, আমাদের গাড়িতে করে খাবার নেয়া হয়। কাজের সময় আমরা লাইসেন্স নিয়ে বের হই না। কাগজ অফিসে থাকে।’ প্রায় আধা ঘণ্টা একই জায়গায় আটকে থাকার পর আশেপাশের বাড়তি পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ওই পিকআপটি ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
মিরপুর এলাকা: সকাল থেকেই সড়ক অবরোধ করেছে মিরপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। মিরপুর এক, দশ, তের ও শেওড়া পাড়া এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দিনভর সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ। মিরপুর ১০ নম্বরে বিক্ষোভ চলাকালে এক স্কুল শিক্ষার্থীকে মারপিট করে পরিবহন শ্রমিকরা। পরে ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। মিরপুর ১০ গোলচত্বর দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের একটি গাড়িতেও ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। শেওড়া পাড়া এলাকায় গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত অবরোধ করলে সড়কে দিনভর যান চলাচল বন্ধ ছিল।
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন আজ: এদিকে বিমানবন্দর সড়কের দুর্ঘটনাস্থলে প্রেস ব্রিফিং করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলগুলোতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে ‘সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলন’। সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাত দফা দাবির কথা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো-১. বেপরোয়া ড্রাইভারকে অবিলম্বে ফাঁসি দিতে হবে ও ড্রাইভারদের সঙ্গে মালিক পক্ষকেও দুর্ঘটনার দায়ভার নিতে হবে; ২. এই শান্তি অবিলম্বে সংবিধানে সংযোজন করতে হবে, সব ফিটনেসবিহীন গাড়ির রুট পারমিট অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; ৩. সড়কের প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে, সিসি ক্যামেরার সুষ্ঠু তদারকি করতে হবে; ৪. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সামনে স্পিডব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিং রাখতে হবে; ৫. বিআরটিএর অধীনে সব চালক ও হেলপারকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান করতে হবে, বিআরটিএকে সেনাবাহিনীর আওতাভুক্ত করতে হবে; ৬. শুধু ঢাকা নয় সারা দেশেই শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ৭. হাঁটার জন্য উপযুক্ত ফুটপাথ তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে আজকের কর্মসূচি পালিত হবে।
এদিকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভের কারণে বন্ধ ছিল গণপরিবহন চলাচল। এতে কর্মমুখী মানুষকে দিনভরই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। দুর্ভোগ হলেও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। রোববার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বেপরোয়া বাস চাপায় প্রাণ হারান শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী। ঘটনার পর থেকে ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরের দিন বিক্ষোভে যোগ দেয় আশপাশের আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাজধানীতে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তাৎক্ষণিক নোটিশে বন্ধ রাখা হয় বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চতুর্থ দিনে গতকালের বিক্ষোভ ছিল রাজধানীজুড়ে। সকাল থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। শহরজুড়ে শিক্ষার্থীদের মুখে ছিল অভিন্ন স্লোগান, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’। নগরজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় তা থামাতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতাই কাজে আসেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন মন্ত্রীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বিষয়ে সদস্যদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। গতকাল বিক্ষোভ ছড়িয়েছে ঢাকার বাইরেও। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ সড়কের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে ৯ দফা দাবির পাশপাশি নৌপরিবহন মন্ত্রী ও শ্রমিক পরিবহন নেতা শাজাহান খানের পদত্যাগ চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শাহবাগে বিক্ষোভকারীরা নৌ-মন্ত্রীর কুশপুত্তলিকাও পুড়িয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীরা বৈধ কাগজপত্র, চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। বৈধ কাগজ না পেলেই যানবাহনে ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। তবে এম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের যানবাহন নিরাপদে চলাচলের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভের সময় উল্টো পথে আসা একজন সিনিয়র মন্ত্রীর গাড়িও ফিরিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া চালকের কাছে লাইসেন্স না থাকায় পুলিশের একটি গাড়ি আটকে রাখার ঘটনাও ঘটে। এদিকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চালকালে শনির আখড়া এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানের কাগজ দেখতে চাইলে চালক না দেখিয়ে এক শিক্ষার্থীর ওপর দিয়ে পিকাপ চালিয়ে পালিয়ে যায়।
অবরোধ ও বিক্ষোভের কারণে সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর থেকে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে রামপুরা, বিমানবন্দর থেকে বনানী হয়ে শাহবাগ, গাবতলী থেকে নিউ মার্কেট, বেগম রোকেয়া সরণি, শাহবাগ থেকে মতিঝিল হয়ে শনির আখড়া সড়কে সারা দিনই কোনো গণপরিবহন চলেনি। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও ছিল কম। স্থানে স্থানে বিক্ষোভ হওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা হেঁটে বা রিকশায় করে যার যার গন্তব্যে যান। সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে চলা কর্মসূচিতে ভোগান্তি হলেও সাধারণ মানুষকে বিরক্ত দেখা যায়নি খুব একটা। বিকাল সোয়া চারটায় মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে বেগম রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া এলাকায় সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করছিলেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।
সড়ক নিরাপত্তা ও নৌ-মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এসময় সড়কের দুপাশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকানো ছিল। বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে দিনের কর্মসূচি স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে পরের দিনও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সকাল থেকেই এ সড়কে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে দিনভর সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এদিকে গতকাল বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী জাবালে নূর পরিবহনের মালিক শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ঘাতক বাসের চালক মাসুম বিল্লাহকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। দায়ী পরিবহনের দুটি বাসের রুট পারমিট বাতিল করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অর্থরিটি।
উত্তরা থেকে বিমানবন্দর সড়ক জুড়ে বিক্ষোভ: সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং ও জসিম উদ্দিন রোডে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে স্লোগানে তারা পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে। চতুর্থ দিনের এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন উত্তরা রাজউক মডেল কলেজ, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কলাস্টিকা, বিজেএমইএ ইউনিভার্সিটি, উত্তরা কমার্স কলেজ, উত্তরা ইউনাইটেড কলেজসহ আরো অনেক কলেজ।
এসময় শিক্ষার্থীরা উত্তরা থেকে মহাখালী পর্যন্ত কোন যানবাহন চলাচল করতে দেয়নি। যে কয়েকটা যানবাহন চলাচল করেছে তার চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে হয়েছে। যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না সেই যানবাহনের চালকদের কিছুক্ষণ আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাউজ বিল্ডিং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিকাল ৫টার দিকে ওই এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান থেকে সরে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিমানবন্দর, খিলক্ষেত এলাকায়ও একই পরিস্থিতি বিরাজ করে। প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সড়কে গুটিকয়েক যানবাহন ছাড়া আর কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। বিশেষ কারণ দেখিয়ে অনেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাড় পায়নি। মোটরসাইকেলচালকদের মধ্যে যাদের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল তাদেরকে চলে যেতে বলা হয়। তবে অসুস্থ রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে চলাচল করতে দেয়া হয়। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, রেডিসন ব্লু ও এমইএস এলাকায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, বিএফ শাহিন কলেজ, ক্যামব্রিয়ান কলেজ বিক্ষোভ করেন। পরে তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন রাজউক, মাইলস্টোন, উত্তরা কমার্স কলেজসহ আরো অনেক কলেজের শিক্ষার্থীরা।
যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এমইএসের জিয়া কলোনি এমপি চেকপোস্টের সামনে কিছু শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়। বাকিরা দুপাশের সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ওই সড়ক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ও শিক্ষার্থীদের গাড়ি ছাড়া আর কোনো গাড়ি চলতে দেয়া হয়নি। যারা ভুল করে ওই সড়ক দিয়ে প্রবেশ করেছে তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাত থেকে বাধ যায়নি পুলিশের গাড়িও। পুলিশকে বহনকারী কিছু গাড়িকে ভাঙচুর করা হয়। আর মোটরসাইকেল চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে হেঁটে হেঁটে যেতে হয়। কাকলী মোড়েও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন নর্দান ইউনিভার্সিটি, প্রাইমেশিয়া ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, বনানী বিদ্যা নিকেতনসহ আরো বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রধান সড়কে অবরোধ করায় ওই এলাকা দিয়ে কোনো যানবাহন চলতে দেয়া হয়নি। যানবাহন চলতে না দেয়ায় ওই এলাকায় সাধারণ যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
হেঁটে অনেককে গন্তব্য পৌঁছাতে দেখা গেছে। তবে রামপুরা-বাড্ডা এলাকায় ঢাকা কমার্স কলেজ, ইমপেরিয়াল কলেজ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা কলেজ, রাজউক উত্তরা কলেজ, আইডিয়াল কলেজসহ আরো কিছু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। রামপুরা ব্রিজের ওপরে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা আশপাশের সবকটি রাস্তা বন্ধ করে দেন। এতে করে আশপাশের এলাকা থেকে আসা যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অনেক যানবাহনকে। ব্রিজের ওপরে শিক্ষার্থীরা বসে দাঁড়িয়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে থাকেন। বিকাল চারটার পরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ বন্ধ করেন। পরে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়। এছাড়া বসুন্ধরা এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ভিকারুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন। মহাখালী-গুলশান এলাকায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন।
যাত্রাবাড়ী এলাকা: রাজধানীর চট্টগ্রাম রোড, শনির আখড়া, কাজলা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সকাল থেকে জমায়েত হয় আশপাশের বিভিন্ন কলেজের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা। সেখানে ওই এলাকার কিছু স্কুল ছাত্রকেও যোগ দিতে দেখা গেছে। নারায়ণগঞ্জ প্রবেশের রাস্তার মাথা থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত কয়েক দল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নিলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিলে সকাল ৯টার পর থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে দূরপাল্লার বাস দীর্ঘক্ষণ ধরে আর রাজধানীতে ঢুকতে পারেনি। ঠাঁই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামের দিকে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার যানজট পড়তে দেখা গেছে। আবার এই যানজট এড়াতে বহু গাড়ি রাস্তা পরিবর্তন করে ডেমরা দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে।
ফার্মগেট থেকে শাহবাগ: রাজধানীর ফার্মগেট থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এ অবস্থায় পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল দিনভর। বেলা ১ টা ৪০ মিনিটের দিকে বাংলামটর এলাকায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি উল্টোপথ দিয়ে যাওয়ায় তা আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তার গাড়িকে উল্টো পথে না গিয়ে শাহবাগ হয়ে ঘুরে যাবার পরামর্শ দেয়। পরে তিনি শাহবাগের দিকে চলে যান। শাহবাগ এলাকায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের কুশপত্তলিকা পোড়ায়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, সিটি কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে রাস্তা অবরোধ করে। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শাহবাগ ও বাংলামটর এলাকায় পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ তাদের বার বার বলেছে সড়ক ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু, তারা পুলিশের কোনো কথা শুনেনি। একপর্যায়ে দুপুর পৌনে ১টার দিকে শাহবাগ ও বাংলামটর এলাকায় পুলিশের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা মূল সড়কের একপাশে দাঁড়ায়। তখন গাড়িগুলো কিছুটা ধীরে ধীরে চলতে থাকে। কিন্তু, শিক্ষার্থীরা সড়কের প্রত্যেকটি গাড়ির লাইসেন্স দেখতে চান। এতে গাড়ির চালকের সঙ্গে তাদের তর্কাতর্কি হয়। যেসব গাড়ির চালক তাদের ব্যক্তিগত ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারেননি সেইসব গাড়ির চাবি তারা কেড়ে নেয়। ওইসব গাড়িগুলো সড়কের একপাশে রেখে দেয় চালকেরা। লাইন ধরে প্রত্যেক চালকের গাড়ির ব্যক্তিগত লাইসেন্স দেখার কারণে আবারো প্রচণ্ড যানজট দেখা দেয়। এদিকে, বাংলামটর এলাকায় প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে। সেখানে তারা সকল গাড়ির চালকের লাইসেন্স দেখতে চান। যারা লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয় তাদের গাড়ি আটকায়। তবে বাংলামটর থেকে মগবাজারগামী সড়কটি তারা অবরোধ না করার কারণে পুলিশ সকল গাড়িগুলো ওই সড়কের পাঠিয়ে দেয়।
আন্দোলনরত একদল ছাত্র ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ করে বাস ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা শেষে মিছিল করে। এ সময় সড়কে সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ ছিল। মিছিল নিয়ে সার্ক ফোয়ারা মোড়ে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে আসে। তারা সেখানে স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসের চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করছিল। শাহবাগের দিক থেকে আসা বাসটিতে আগে থেকেই সাদা ইউনিফর্ম পরা কিছু ছাত্র ছিল। তারাই গাড়িটি কারওয়ান বাজার সিগনালে থামায়। এ সময় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর বাসটি চালাচ্ছিলো। কিশোর চালকের কোনো লাইসেন্স না থাকায় ছাত্ররা যাত্রীদের বলে, ‘আপনারা নেমে যান, আমরা গাড়ির কোনো ক্ষতি করবো না। এই গাড়ি নিরাপদ না।
নীল রংয়ের স্কুল ড্রেস পরা প্রায় দুই-আড়াইশ’ ছাত্র এ সময় গাড়িটিকে ঘিরে থাকে। এ সময় হঠাৎ ইউনিফর্ম ছাড়া সাদা টি-শার্ট পরা এক যুবক একটি ইট নিয়ে গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে ফেলে। এরপর সে পালাতে চাইলে তড়িঘড়ি করে ছাত্ররা তাকে আটকায়। ছাত্ররা ভাঙচুরকারী যুবককে পাকড়াও করে দূরে দাঁড়ানো পুলিশের কাছে নিয়ে যায়। ছাত্ররা বারবার বলছিল, ‘তুই গাড়ি ভাঙলি ক্যান? আমরা কি ভাঙচুরের আন্দোলন করতেছি?’। পরে তারা যুবকটিকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।
মতিঝিল এলাকা: দুপুর থেকেই উত্তাল হয়ে উঠে মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকা। নৌ পরিবহনমন্ত্রীর পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা মতিঝিল গোলচত্বরসহ আশেপাশের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে। নটরডেম, আইডিয়ালসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধে ওই এলাকার সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মতিঝিলের কেন্দ্রবিন্দু শাপলা চত্বর ঘেরাও করে নটরডেমের শিক্ষার্থীরা।
এসময় তারা নানা স্লোগানে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবি করে। এরপর দুপুর ১২টায় পর নটরডেম কলেজসহ আশেপাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ার পর দল বেঁধে শিক্ষার্থীরা প্রথম ক্যাম্পাসের সামনে পরে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। এতে আশেপাশের সব রাস্তার যানবাহন বন্ধ হয়ে যায়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত তারা সড়কে অবস্থান করে।
সায়েন্স ল্যাব: সকাল থেকেই ধানমন্ডি সাইন্স ল্যাব- সিটি কলেজ মোড়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে ঢাকা সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ আন্দোলন শুরু করলেও, তাদের সঙ্গে একে একে যুক্ত হয় সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ইম্পিরিয়াল কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ধানমন্ডি ল্যাবরেটরি কলেজ, ড্যাফোডিল কলেজসহ আশপাশের আরো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা।
আন্দোলনের শুরুতে রাস্তায় চলাচল করা সকল গাড়িই থামিয়ে দেয় তারা। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ সিটি কলেজের দিকে আগত সকল গাড়িরই বিআরটিএ কর্তৃক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চায়। যাদের কাগজ ঠিক ছিল, তাদের কিছু না বলে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে বলেন তারা। কিন্তু লাইসেন্স দেখাতে না পারায় অনেক গাড়িরই চাবি খুলে নেয় ছাত্ররা। আনুমানিক বেলা ১২টার দিকে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের একটি গাড়ি আন্দোলনরত সামনে আসলে সিটি কলেজের একজন ছাত্র গাড়িটির সামনে গিয়ে বাধা দেয়।
এ সময় পুলিশের গাড়ি ঘিরে ধরে চালকের কাছে লাইসেন্স দেখতে চান শিক্ষার্থীরা। চালক লাইসেন্স দেখাতে না পারায় শুরু হয় বাক-বিতণ্ডা। সিটি কলেজের ইউনিফর্ম পরিহিত এক শিক্ষার্থী জানায়, তারা লাইসেন্স দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পুলিশের গাড়ির চালক তা দেখাতে পারেননি। পুলিশের পোশাক পরিহিত ওই গাড়ির চালকের আসনে থাকা পুলিশ কনস্টেবল অরবিন্দ সমাদ্দার বলেন, ‘আমরা সরকারি চাকরি করি। লাইসেন্স না দেখে তো আর চাকরি দেয়নি।’ তাহলে লাইসেন্স দেখাতে পারছেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি গাড়ি, আমাদের গাড়িতে করে খাবার নেয়া হয়। কাজের সময় আমরা লাইসেন্স নিয়ে বের হই না। কাগজ অফিসে থাকে।’ প্রায় আধা ঘণ্টা একই জায়গায় আটকে থাকার পর আশেপাশের বাড়তি পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ওই পিকআপটি ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
মিরপুর এলাকা: সকাল থেকেই সড়ক অবরোধ করেছে মিরপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। মিরপুর এক, দশ, তের ও শেওড়া পাড়া এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দিনভর সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ। মিরপুর ১০ নম্বরে বিক্ষোভ চলাকালে এক স্কুল শিক্ষার্থীকে মারপিট করে পরিবহন শ্রমিকরা। পরে ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। মিরপুর ১০ গোলচত্বর দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের একটি গাড়িতেও ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। শেওড়া পাড়া এলাকায় গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত অবরোধ করলে সড়কে দিনভর যান চলাচল বন্ধ ছিল।
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন আজ: এদিকে বিমানবন্দর সড়কের দুর্ঘটনাস্থলে প্রেস ব্রিফিং করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলগুলোতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে ‘সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলন’। সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাত দফা দাবির কথা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো-১. বেপরোয়া ড্রাইভারকে অবিলম্বে ফাঁসি দিতে হবে ও ড্রাইভারদের সঙ্গে মালিক পক্ষকেও দুর্ঘটনার দায়ভার নিতে হবে; ২. এই শান্তি অবিলম্বে সংবিধানে সংযোজন করতে হবে, সব ফিটনেসবিহীন গাড়ির রুট পারমিট অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; ৩. সড়কের প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে, সিসি ক্যামেরার সুষ্ঠু তদারকি করতে হবে; ৪. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সামনে স্পিডব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিং রাখতে হবে; ৫. বিআরটিএর অধীনে সব চালক ও হেলপারকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান করতে হবে, বিআরটিএকে সেনাবাহিনীর আওতাভুক্ত করতে হবে; ৬. শুধু ঢাকা নয় সারা দেশেই শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ৭. হাঁটার জন্য উপযুক্ত ফুটপাথ তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে আজকের কর্মসূচি পালিত হবে।
No comments