বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রকল্প by সুবীর ভৌমিক
অর্থনীতির
মোড় ঘোরানো এবং স্বাস্থ্য সেবায় আওয়ামীলীগ সরকারের সাফল্যকে অবশ্যই
উপেক্ষা করা চলবে না। বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া এবং
উগাণ্ডা হলো নয়া ‘স্বৈরতন্ত্র’, এই মত দিয়েছে জার্মানির বার্টলসম্যান
ফাউণ্ডেশন। তাদের ট্রান্সফরমেশন সূচক ২০১৮ অনুসারে ১২৯টি উন্নয়নশীল দেশের
মধ্যে ৫৮টিকে তারা স্বৈরতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তারা তাদের রিপোর্টে বলেছে, ‘‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের অবনতিশীল অবস্থার কারণে পঞ্চম বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটি পনুরায় স্বৈরতান্ত্রিক অভিধায় ভুষিত হয়েছে। এই পরিবর্তন নাগরিকদের জন্য উদ্বেগজনক। কারণ দুর্নীতি, সামাজিক বিভক্তি এবং সুষ্ঠ অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা সৃষ্টিতে বাধা, স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোতে অব্যাহত থাকতে দেখা যাচ্ছে।’’ বিটিআই ২০০৬ সাল থেকে ১২৯টি উন্নয়নশীল ও র’পান্তরকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা দেশের গণতন্ত্রের মান, বাজার অর্থনীতি যাচাই করছে। অবশ্য প্রত্যাশিতভাবেই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ওই সমীক্ষার ফলাফলকে ভিত্তিহীন হিসেবে প্রত্যাখান করেছে। এমনকি তারা দাবি করছে দেশটিতে ‘শতকার ১০০ ভাগ গণতন্ত্র’ চলছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলেছে, এই সমীক্ষায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটেছে।
বিটিআইতে কর্মরত একজন প্রজেক্ট ম্যানেজারের দাবি অনুযায়ী, তাদের প্রতিবেদনটি ভারসাম্যপূর্ণ। কারণ তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ম্যাক্রো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাজারভিত্তিক প্রতিযোগিতা, বেসরকারি খাতের বিকাশের প্রশংসার পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের মতো রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে তারা তা তুলে ধরেছে।
একটি দীর্ঘ যাত্রা
১৯৯০ সালে জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারি সরকারের পতনের পরে গণতন্ত্রে পনুরূজ্জীবনের পর থেকে বাংলাদেশ প্রতি ৫ বছর অন্তর সরকারের পরিবর্তন দেখেছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবহার করে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে।
এর প্রয়োজন পড়েছিল কারণ সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে সরকারের সংক্ষিপ্ত মেয়াদ রক্ষা করেনি। অনতিবিলম্বে তারা নির্বাচন দেয়নি। এর পরিবর্তে বরং তারা কোনো ম্যাণ্ডেট ছাড়াই দুবছর দেশ পরিচালনা করেছে। সেটা ছিল একটা গণতন্ত্র হত্যা। সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার একইসঙ্গে দেশের দুই শীর্ষ রাজণীতিবিদ শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াকে তাদের মাইনাস টু এজেণ্ডার আওতায় রাজনৈতিক ক্যরিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল; যেন বাংলাদেশের সংঘাতের জন্য এই দুই মহিলার ব্যক্তিগত ইগোই দায়ী। পশ্চিমা মিডিয়া এবং সুশীল সমাজ শুধু যে, দুই প্রতিদ্বন্বী মতাদর্শের ব্যবধানকে (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্ত্র দ্বারা পরিচালিত একটি সেক্যুলার ও গণতান্ত্রিক র’পকল্প বনাম পাকিস্তানি ধর্মতাড়িত রাজনীতির দর্শন) খাটো করে দেিখেয়েছে তাই নয়, তারা একই সঙ্গে সামরিক বাহিনী পরিচালিত এই প্রচারণাও উস্কে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের সামনে আরো উজ্জল ভবিষ্যত যদি দেশটিকে একদল টেকনোক্র্যাট, মাইক্রো এবং ম্যাক্রো ব্যাংকার , জেনারেল এবং গোয়েন্দা প্রধানদের দিয়ে চালানো হয়।
আওয়ামী শাসন
আওয়ামীলীগের গত আট বছরের শাসন প্রমাণ করেছে যে, এই স্বঘোষিত পণ্ডিতগণ ভ্রান্ত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাপকভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। জেণ্ডার ক্ষমতায়ন এবং সরকারি স্বাস্থ্য সেবা খাতের মতো সামাজিক ও মানব উন্নয়নে অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন লাভ করেছে। কিন্তু নোবেল পুরষ্কার জয়ী মোহাম্মদ ইউনূসের উচ্চাভিলাষকে অবাধে পূরণ করতে না দেওয়ার কারণে পশ্চিমা বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়া তত্বাবধায়ক প্রশাসন বিলোপ করার প্রতিবাদে নির্বচিন বয়কট করেছেন। তবে ২০০১ সালের গোড়ার দিকে বিএনপি যে সহিংসতার রাজত্ব কায়েম করেছিল তা বিস্মৃত হওয়ার নয়। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রমের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামীলীগের বির’দ্ধে পরিচালিত ওই ক্যাম্পেনকে পাশ্চত্য ‘গণতন্ত্র হত্যা’ হিসেবে গণ্য করেনি। কিন্তু যেইমাত্র সহিংসতায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জামায়াত নেতৃবৃন্দকে কারাবাস দেওয়া হলো, তখনই পাশ্চত্য দেখলো বাংলাদেশে গণত্যা হত্যা ঘটেছে। একজন শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কাউন্টারটেরোরিজম এক্সপার্ট বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমন প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। ২০১৪ সালের পরবর্তী ইসলামি রেডিক্যালিজম ছড়িয়ে পড়তে না পড়তেই তাকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছিল। ওই ক্যাম্পেনের টার্গেট ছিল ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, এবং লোকশিল্পী, যারা সেক্যুল্যার বাংলাদেশের আত্মা, তাদের হুমকিগ্রস্ত করা।
ঢাকায় একটি বন্ধুভাবাপান্ন সরকার রাখাটা ভারতের স্ট্রেটেজিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে বিরাট বাজি রয়েছে। এশিয়ায় আমাদের গণতান্ত্রিক রাস্ট্রগুলোর অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু তাই বলে পাশ্চত্যকে তাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা বা ধ্বংস করার সুযোগ করে দেওয়ার অনুকূলে কোনো যুক্তি নেই।
২ জুন প্রকাশিত দি হিন্দুতে প্রকাশিত নিবন্ধের তরজমা।
তারা তাদের রিপোর্টে বলেছে, ‘‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের অবনতিশীল অবস্থার কারণে পঞ্চম বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটি পনুরায় স্বৈরতান্ত্রিক অভিধায় ভুষিত হয়েছে। এই পরিবর্তন নাগরিকদের জন্য উদ্বেগজনক। কারণ দুর্নীতি, সামাজিক বিভক্তি এবং সুষ্ঠ অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা সৃষ্টিতে বাধা, স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোতে অব্যাহত থাকতে দেখা যাচ্ছে।’’ বিটিআই ২০০৬ সাল থেকে ১২৯টি উন্নয়নশীল ও র’পান্তরকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা দেশের গণতন্ত্রের মান, বাজার অর্থনীতি যাচাই করছে। অবশ্য প্রত্যাশিতভাবেই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ওই সমীক্ষার ফলাফলকে ভিত্তিহীন হিসেবে প্রত্যাখান করেছে। এমনকি তারা দাবি করছে দেশটিতে ‘শতকার ১০০ ভাগ গণতন্ত্র’ চলছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলেছে, এই সমীক্ষায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটেছে।
বিটিআইতে কর্মরত একজন প্রজেক্ট ম্যানেজারের দাবি অনুযায়ী, তাদের প্রতিবেদনটি ভারসাম্যপূর্ণ। কারণ তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ম্যাক্রো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাজারভিত্তিক প্রতিযোগিতা, বেসরকারি খাতের বিকাশের প্রশংসার পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের মতো রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে তারা তা তুলে ধরেছে।
একটি দীর্ঘ যাত্রা
১৯৯০ সালে জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারি সরকারের পতনের পরে গণতন্ত্রে পনুরূজ্জীবনের পর থেকে বাংলাদেশ প্রতি ৫ বছর অন্তর সরকারের পরিবর্তন দেখেছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবহার করে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে।
এর প্রয়োজন পড়েছিল কারণ সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে সরকারের সংক্ষিপ্ত মেয়াদ রক্ষা করেনি। অনতিবিলম্বে তারা নির্বাচন দেয়নি। এর পরিবর্তে বরং তারা কোনো ম্যাণ্ডেট ছাড়াই দুবছর দেশ পরিচালনা করেছে। সেটা ছিল একটা গণতন্ত্র হত্যা। সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার একইসঙ্গে দেশের দুই শীর্ষ রাজণীতিবিদ শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াকে তাদের মাইনাস টু এজেণ্ডার আওতায় রাজনৈতিক ক্যরিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল; যেন বাংলাদেশের সংঘাতের জন্য এই দুই মহিলার ব্যক্তিগত ইগোই দায়ী। পশ্চিমা মিডিয়া এবং সুশীল সমাজ শুধু যে, দুই প্রতিদ্বন্বী মতাদর্শের ব্যবধানকে (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্ত্র দ্বারা পরিচালিত একটি সেক্যুলার ও গণতান্ত্রিক র’পকল্প বনাম পাকিস্তানি ধর্মতাড়িত রাজনীতির দর্শন) খাটো করে দেিখেয়েছে তাই নয়, তারা একই সঙ্গে সামরিক বাহিনী পরিচালিত এই প্রচারণাও উস্কে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের সামনে আরো উজ্জল ভবিষ্যত যদি দেশটিকে একদল টেকনোক্র্যাট, মাইক্রো এবং ম্যাক্রো ব্যাংকার , জেনারেল এবং গোয়েন্দা প্রধানদের দিয়ে চালানো হয়।
আওয়ামী শাসন
আওয়ামীলীগের গত আট বছরের শাসন প্রমাণ করেছে যে, এই স্বঘোষিত পণ্ডিতগণ ভ্রান্ত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাপকভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। জেণ্ডার ক্ষমতায়ন এবং সরকারি স্বাস্থ্য সেবা খাতের মতো সামাজিক ও মানব উন্নয়নে অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন লাভ করেছে। কিন্তু নোবেল পুরষ্কার জয়ী মোহাম্মদ ইউনূসের উচ্চাভিলাষকে অবাধে পূরণ করতে না দেওয়ার কারণে পশ্চিমা বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়া তত্বাবধায়ক প্রশাসন বিলোপ করার প্রতিবাদে নির্বচিন বয়কট করেছেন। তবে ২০০১ সালের গোড়ার দিকে বিএনপি যে সহিংসতার রাজত্ব কায়েম করেছিল তা বিস্মৃত হওয়ার নয়। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রমের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামীলীগের বির’দ্ধে পরিচালিত ওই ক্যাম্পেনকে পাশ্চত্য ‘গণতন্ত্র হত্যা’ হিসেবে গণ্য করেনি। কিন্তু যেইমাত্র সহিংসতায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জামায়াত নেতৃবৃন্দকে কারাবাস দেওয়া হলো, তখনই পাশ্চত্য দেখলো বাংলাদেশে গণত্যা হত্যা ঘটেছে। একজন শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কাউন্টারটেরোরিজম এক্সপার্ট বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমন প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। ২০১৪ সালের পরবর্তী ইসলামি রেডিক্যালিজম ছড়িয়ে পড়তে না পড়তেই তাকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছিল। ওই ক্যাম্পেনের টার্গেট ছিল ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, এবং লোকশিল্পী, যারা সেক্যুল্যার বাংলাদেশের আত্মা, তাদের হুমকিগ্রস্ত করা।
ঢাকায় একটি বন্ধুভাবাপান্ন সরকার রাখাটা ভারতের স্ট্রেটেজিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে বিরাট বাজি রয়েছে। এশিয়ায় আমাদের গণতান্ত্রিক রাস্ট্রগুলোর অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু তাই বলে পাশ্চত্যকে তাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা বা ধ্বংস করার সুযোগ করে দেওয়ার অনুকূলে কোনো যুক্তি নেই।
২ জুন প্রকাশিত দি হিন্দুতে প্রকাশিত নিবন্ধের তরজমা।
No comments