প্লাস্টিকের দূষণে বছরে মারা যায় ১০ কোটি সামুদ্রিক প্রাণী by সঞ্চিতা সীতু ও সাদ্দিভ অভি
বাংলাদেশে
প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য নদী-নালা, খাল-বিল ও উন্মুক্ত
স্থানে ফেলা হচ্ছে। এরমধ্যে আবার এক কোটি ৩০ লাখ টন প্লাস্টিক আবর্জনা
সমুদ্রে পড়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এতে প্রতিবছর ১০ কোটি
সামুদ্রিক প্রাণী প্লাস্টিক দূষণের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। এমন উদ্বেগজনক
পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে আজ (৫ জুন) পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব
পরিবেশ দিবস।
১৯৭২ সালের ৫ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের কনফারেন্স অব হিউম্যান এনভায়রনমেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসে প্রথম পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়। এবার ‘প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করি, না পারলে বর্জন করি’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ বাণী দিয়েছেন।
জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার হয় প্যাকেজিংয়ে। এ খাতে প্রায় ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ, বিল্ডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনে ব্যবহার হয় ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ, অটোমোবাইলে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ইলেকট্রনিক্সে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং কৃষিতে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। বছরে বিশ্বে ৫০ হাজার কোটি প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদন করা হয়। দুনিয়াজুড়ে প্রতি মিনিটে ১০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি হয়। প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে প্রতিবছর এক কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল তেল ব্যবহার করা হয়।
পরিবেশ অধিদফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক কাঁচামাল আমদানি করে। এ থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। এরমধ্যে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ প্লাস্টিক, যার পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৭০০ টন। বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ৫০ শতাংশ রিসাইকেল করা হয়।
প্লাস্টিক ব্যাগের কারণে দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এই ব্যাগ কখনও মাটিতে মিশে যায় না। আর যত্রতত্র ফেলে দেওয়ার ফলে এটি তৈরি করে জলাবদ্ধতা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসেবে শুধু ঢাকাতেই প্রতিদিন দুই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। এগুলো দিয়ে ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়ছে।
বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৩৫ লাখের বেশি টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। এসব ব্যাগ পলিথিনের হলেও কাপড়ের ব্যাগ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, কাপড়ের দোকান, জুতার দোকান, ফ্যাশন হাউস, বিভিন্ন কোম্পানিসহ সারাদেশের বাণিজ্যিক বিতানগুলো টিস্যু ব্যাগ ব্যবহার করছে। নিষিদ্ধ পলিথিন ও টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ফলে কাগজ, পাট ও কাপড়ের ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এতে হাজার হাজার ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ শ্রমিক, বিশেষ করে নারী-শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে।
যে প্লাস্টিক রিসাইকেল করা যাবে, তা ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেছেন, এখানে রি-ইউজ কিংবা রিসাইকেলের কথা বলা হয়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য। এমন নয় যে, ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। প্লাস্টিক এখন সব জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। প্যাকেজিং থেকে শুরু বাড়ির দরজা পর্যন্ত প্লাস্টিকের ব্যবহার। তাই আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে আগে। আমি সেই প্লাস্টিক ব্যবহার করবো না যে প্লাস্টিক রি-ইউজ কিংবা রিসাইকেল করা যায় না।
পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পলিথিনের ব্যাগ তৈরির পদ্ধতি এতটাই ভ্রাম্যমাণ যে, এদের ধরা খুব মুশকিল। ছোট ঘরের মধ্যে মেশিন বসিয়ে ইচ্ছামত প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরি করছে। আবার সামগ্রিকভাবে যে বন্ধ করে দেবো উৎপাদন, সেটাও সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে আমাদের এগোতে হবে। অন্যান্য দেশ পলিথিনের যে বিকল্প ব্যবহার করে, তা দেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।’
একই ভাষায় কথা বলছেন পরিবেশবাদীরাও। তারা বলছেন, প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের প্রচার-প্রসার বাড়াতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করতে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘পলিথিনের বিকল্প যেসব জিনিস রয়েছে, সেগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এগুলো নিয়ে কোনও প্রচারণা হচ্ছে না, মানুষকে জানানো যাচ্ছে না। পাটের তৈরি সামগ্রী আছে, কাগজের তৈরি নানা সামগ্রী আছে। এগুলো ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করতে হবে। মানুষ যদি সচেতন হয়, পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় সম্পর্কে ধারণা পায়, তাহলে পলিথিনের ব্যবহার কমে আসবে। তখন উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যাবে।’
এদিকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ১০০টি ঐতিহাসিক স্থান পরিচ্ছন্ন করার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু ফেলে দেওয়া জিনিসকে ময়লা না বলার প্রচারণায় কাজ করছে। রাস্তার পাশের সংগৃহীত প্লাস্টিক সামগ্রী দিয়ে তারা ব্যাগ তৈরি করছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।
দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। পরিবেশ অধিদফতর ও বন অধিদফতর থেকে স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। এর পাশাপাশি র্যালি, সচেতনতামূলক কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর।
পরিবেশ দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে ২৬ জুন। পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সরোয়ার ইমতিয়াজ হাসমী বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দিবসটিতে আমাদের র্যালি, প্রচারণাসহ বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে। মূল অনুষ্ঠান হবে ২৬ জুন আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে। পরিবেশ মেলা হবে, সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে পরিবেশ খাতে অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে গুণীজনদের সম্মাননা পদক দেওয়া হবে।’
এর আগে দিবসটি উপলক্ষে গত ৩০ মে শিশু একাডেমিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে পরিবেশ অধিদফতর। এছাড়া, পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, লিফলেট তৈরি করে মানুষকে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
১৯৭২ সালের ৫ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের কনফারেন্স অব হিউম্যান এনভায়রনমেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসে প্রথম পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়। এবার ‘প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করি, না পারলে বর্জন করি’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ বাণী দিয়েছেন।
জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার হয় প্যাকেজিংয়ে। এ খাতে প্রায় ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ, বিল্ডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনে ব্যবহার হয় ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ, অটোমোবাইলে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ইলেকট্রনিক্সে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং কৃষিতে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। বছরে বিশ্বে ৫০ হাজার কোটি প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদন করা হয়। দুনিয়াজুড়ে প্রতি মিনিটে ১০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি হয়। প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে প্রতিবছর এক কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল তেল ব্যবহার করা হয়।
পরিবেশ অধিদফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক কাঁচামাল আমদানি করে। এ থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। এরমধ্যে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ প্লাস্টিক, যার পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৭০০ টন। বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ৫০ শতাংশ রিসাইকেল করা হয়।
প্লাস্টিক ব্যাগের কারণে দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এই ব্যাগ কখনও মাটিতে মিশে যায় না। আর যত্রতত্র ফেলে দেওয়ার ফলে এটি তৈরি করে জলাবদ্ধতা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসেবে শুধু ঢাকাতেই প্রতিদিন দুই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। এগুলো দিয়ে ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়ছে।
বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৩৫ লাখের বেশি টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। এসব ব্যাগ পলিথিনের হলেও কাপড়ের ব্যাগ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, কাপড়ের দোকান, জুতার দোকান, ফ্যাশন হাউস, বিভিন্ন কোম্পানিসহ সারাদেশের বাণিজ্যিক বিতানগুলো টিস্যু ব্যাগ ব্যবহার করছে। নিষিদ্ধ পলিথিন ও টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ফলে কাগজ, পাট ও কাপড়ের ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এতে হাজার হাজার ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ শ্রমিক, বিশেষ করে নারী-শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে।
যে প্লাস্টিক রিসাইকেল করা যাবে, তা ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেছেন, এখানে রি-ইউজ কিংবা রিসাইকেলের কথা বলা হয়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য। এমন নয় যে, ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। প্লাস্টিক এখন সব জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। প্যাকেজিং থেকে শুরু বাড়ির দরজা পর্যন্ত প্লাস্টিকের ব্যবহার। তাই আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে আগে। আমি সেই প্লাস্টিক ব্যবহার করবো না যে প্লাস্টিক রি-ইউজ কিংবা রিসাইকেল করা যায় না।
পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পলিথিনের ব্যাগ তৈরির পদ্ধতি এতটাই ভ্রাম্যমাণ যে, এদের ধরা খুব মুশকিল। ছোট ঘরের মধ্যে মেশিন বসিয়ে ইচ্ছামত প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরি করছে। আবার সামগ্রিকভাবে যে বন্ধ করে দেবো উৎপাদন, সেটাও সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে আমাদের এগোতে হবে। অন্যান্য দেশ পলিথিনের যে বিকল্প ব্যবহার করে, তা দেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।’
একই ভাষায় কথা বলছেন পরিবেশবাদীরাও। তারা বলছেন, প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের প্রচার-প্রসার বাড়াতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করতে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘পলিথিনের বিকল্প যেসব জিনিস রয়েছে, সেগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এগুলো নিয়ে কোনও প্রচারণা হচ্ছে না, মানুষকে জানানো যাচ্ছে না। পাটের তৈরি সামগ্রী আছে, কাগজের তৈরি নানা সামগ্রী আছে। এগুলো ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করতে হবে। মানুষ যদি সচেতন হয়, পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় সম্পর্কে ধারণা পায়, তাহলে পলিথিনের ব্যবহার কমে আসবে। তখন উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যাবে।’
এদিকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ১০০টি ঐতিহাসিক স্থান পরিচ্ছন্ন করার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু ফেলে দেওয়া জিনিসকে ময়লা না বলার প্রচারণায় কাজ করছে। রাস্তার পাশের সংগৃহীত প্লাস্টিক সামগ্রী দিয়ে তারা ব্যাগ তৈরি করছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।
দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। পরিবেশ অধিদফতর ও বন অধিদফতর থেকে স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। এর পাশাপাশি র্যালি, সচেতনতামূলক কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর।
পরিবেশ দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে ২৬ জুন। পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সরোয়ার ইমতিয়াজ হাসমী বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দিবসটিতে আমাদের র্যালি, প্রচারণাসহ বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে। মূল অনুষ্ঠান হবে ২৬ জুন আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে। পরিবেশ মেলা হবে, সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে পরিবেশ খাতে অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে গুণীজনদের সম্মাননা পদক দেওয়া হবে।’
এর আগে দিবসটি উপলক্ষে গত ৩০ মে শিশু একাডেমিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে পরিবেশ অধিদফতর। এছাড়া, পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, লিফলেট তৈরি করে মানুষকে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
No comments