কোটা বাতিল: আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঝুঁকি?
বাংলাদেশে
শিক্ষার্থীদের কোটা-বিরোধী আন্দোলনের মুখে, বুধবার জাতীয় সংসদে দেয়া এক
ঘোষণায় পুরো কোটা ব্যবস্থাটি বাতিল করে দিয়েছেন বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী। কোটা বাতিলে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা
খুশী হলেও, ক্ষুব্ধ হয়েছেন এতদিন কোটা সুবিধা পাওয়া ব্যক্তিরা।
প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের প্রক্রিয়া যখন চলছে, তখন এর
বিরুদ্ধে আন্দোলনও শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকালে ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনে
কোটা সুবিধার দাবিতে সমাবেশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরা। তাদের
হাতে থাকা ব্যানার, প্ল্যাকার্ডে কোটা সুবিধা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে
নানা শ্লোগান লেখা ছিলো। 'আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান' নামের একটি সংগঠনের
নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দরকার হলে তারা
আদালতেও যাবেন। তিনি বলছেন, "আমরা আইন অনুযায়ী আন্দোলন চালিয়ে যাবো,
যতদিন না কোটা সুবিধা পুনর্বহাল করা হয়। আমাদের কোটা দিতেই হবে। আমরা
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা সবাই মিলে এজন্য আন্দোলন করবো।"
কোটা সুবিধার আওতায় জেলা, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীরা থাকলেও, বড় অংশটি, ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা নাতি-নাতনিদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ফলে কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে কোটা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত, তা এখানেই শেষ হচ্ছে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আর এমন সময়ে এই বিষয়টি আলোচনায় এলো, যার মাত্র কয়েকমাস পরেই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ সময় এমন একটি সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে কতটা রাজনৈতিক ঝুঁকিতে ফেলছে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাদেকা হালিম বলছেন, "সবসময়েই নির্বাচনের বছরে নানা মহল তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে সক্রিয় হয়। কোটা নিয়ে আন্দোলনটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এটা যদি রাজনৈতিক ঝুঁকি হিসাবেও বলেন, আওয়ামী লীগ সেই ঝুঁকি নিতে জানে।" "তবে আমার মনে হয় না তারা বড় কোন ঝুঁকি নিয়েছে। বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাই আওয়ামী লীগের পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী যে ডাক দিয়েছেন, সেখানে আমরা বিপুল সমর্থন দেখেছি। কেউ হয়তো তাদের ক্ষোভ দেখাতেই পারেন, সেই অধিকার তাদের আছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবেন বলে আমি মনে করি।"
অধ্যাপক সাদেকা হালিম এখানে কোন রাজনৈতিক ঝুঁকি দেখছেন না, তবে সেরকম কিছু হলে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবেই সেটা মোকাবেলা করার সামর্থ্য রাখে বলেই তিনি মনে করেন। কোটা সংস্কারের দাবি অনেকদিন ধরে চললেও, কয়েকমাস আগেও সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের অবস্থান ছিল এর বিপরীতে। সেখান থেকে হঠাৎ করেই সরকারের অবস্থানের নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।
পরিস্থিতির কারণেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন আরেকজন রাজনীতি পর্যবেক্ষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলছেন, "সরকারের জন্য সবচাইতে অস্বস্তির যেটা হয়েছে, এত বড় একটি আন্দোলন যেখানে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা অংশগ্রহণ করেছে এবং এটা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, এটা একটা ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন ছিল। কিন্তু এখানে রাজনৈতিক দলগুলো খুব একটা সরব ছিল, সেটা আমরা দেখিনি। ছাত্র সংগঠনগুলোরও তেমন একটা সংশ্লিষ্টতা ছিল না, বরং ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অনেকটা পুলিশের মতোই।"
"একটি আন্দোলনের মুখে সরকার যখন দাবি মেনে নেয়, অনেকে এটাকে মনে করতে পারেন সরকার হেরে গেলো। কিন্তু এটা হারজিতের কোন ব্যাপার না। আসলে জনগণ কি চায়, তরুণরা কি চাইছে, সেটা আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে।" কোটা বাতিলে যারা ক্ষুব্ধ হয়েছে, তাদের শক্তি খুব একটা প্রভাব ফেলার মতো না বলেই মনে করেন মি. আহমেদ। তিনি বলছেন, "বিভিন্ন কোটা থাকলেও, সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কোটা নিয়ে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়েও তো নানা সময়ে বিতর্ক হয়েছে। অতীতের সরকারগুলোর সময় যারা এই তালিকার সুবিধা নিয়েছেন, এখন নিচ্ছেন, তাদের অনেককে নিয়েও নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই সুযোগ সুবিধার কারণে যারা মুক্তিযোদ্ধা নন, তারাও মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগাড় করে এর অপব্যবহার করছেন। ফলে পুরো বিষয়টি একটু গোলমেলে হয়ে গেছে।"
"কিন্তু তারা যে সবাই আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত বা ভোট ব্যাংক, সেটা বলা যাবে না। কারণ অনেকেই আছে সুযোগ সন্ধানী। এ কারণে আমার মনে হয় না এটাতে বড় কোন সমস্যা হবে আওয়ামী লীগের জন্য," বলেন তিনি।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, যেভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটি দানা বেঁধে উঠছিল, তা ঠিক সময়ে এভাবে সামাল দেয়া না গেলে, অন্য কোন গোষ্ঠী হয়তো এর সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করতো। ফলে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তারা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসাবেও দেখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করেন না যে সামনের নির্বাচনে এটি কোন ইস্যু তৈরি করবে। তিনি বলছেন, "প্রথমে সরকার হয়তো এই বিষয়টি নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি, কারণ নির্বাচনের বছরে তারা বড় কোন বিতর্কে জড়াতে চায়নি। কিন্তু আন্দোলন যখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা অনুধাবন করে হয়তো প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।"
তিনি ধারণা করেন, আগামী একমাসে এটা নিয়ে হয়তো অনেক আলোচনা হবে। "ভোটের হিসাবে খুব বড় একটা প্রভাব এখানে ফেলবে না। বরং যদি কোটা আন্দোলনটা বড় হতো, তাতে বিএনপি অনেক বেশি উপকৃত হতে পারতো। বিএনপির নেতারা বলেছেন, কোটা সংস্কারে তাদের সম্পূর্ণ সমর্থন থাকবে। ফলে পাল্লা তো তাদের দিকেই চলে যাচ্ছিল। সেদিক থেকে আওয়ামী লীগ পাল্লাটা তাদের দিকে আনতে না পারলেও, পাল্লাটা একটা নিরপেক্ষ অবস্থানে চলে গেছে," বলেন মি. ইসলাম। তবে বিষয়টি আদালতে গড়ালে আরেকটি জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে তিনি আশংকা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন, পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার কথাও বলেছেন। আবার আন্দোলনকারীরাও সীমিত আকারে কোটার পক্ষে। তাই বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে এই পদ্ধতির সংস্কার হয়ে ভিন্ন আদলে কিছু কোটা সুবিধা হয়তো থেকে যেতে পারে। একসময় কোটার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়ার পরেও, আওয়ামী লীগের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তনের কারণ কি?
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জন্য নয়, কোটা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে দলের ভেতরেও কথাবার্তা চলছিল। তিনি বলছেন, "যদি লক্ষ্য করে দেখি, স্বাধীনতার সময় আসলে যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের সন্তানদের কোটা সুবিধা পাওয়ার সময়টা অনেকটা পেরিয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধা পদ্ধতি চলে আসুক। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আর প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথাও বলেছেন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হয়ে গেছে, এই সময়ের মধ্যে সারা দেশে যে একটা সমান্তরাল অবস্থান তৈরি করার যে উদ্যোগ ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর, সেটা মনে হয় এখন অনেকাংশেই পূর্ণ হয়েছে। নারীরাও অনেক এগিয়ে এসেছে। এখন মেধা তালিকা আসতে পারে।" প্রধানমন্ত্রীর সংসদে দেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে কি দলের মধ্যে আগে কোন আলোচনা হয়েছে -জানতে চাইলে মি. হানিফ বলেন, "এটা তো আসলে দলের বিষয় না। এটা হচ্ছে একটা সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকারের মধ্যে সেটা নিশ্চয়ই আলাপ আলোচনা করেই হয়েছে।" কোটা ব্যবস্থা নিয়ে এখনো তর্কবিতর্ক চললেও, রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা মনে করেন না এই বিষয়টি পরবর্তী দিনগুলো বা সামনের সাধারণ নির্বাচনে বড় কোন ইস্যু হয়ে উঠবে। কারণ তাদের মতে, নির্বাচনের বিষয়ে এখনো এমন অনেক বিতর্কিত বিষয় রয়ে গেছে, যেগুলোর চাপে এই বিষয়টি হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই গৌণ হয়ে পড়বে।
সূত্র: বিবিসি
কোটা সুবিধার আওতায় জেলা, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীরা থাকলেও, বড় অংশটি, ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা নাতি-নাতনিদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ফলে কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে কোটা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত, তা এখানেই শেষ হচ্ছে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আর এমন সময়ে এই বিষয়টি আলোচনায় এলো, যার মাত্র কয়েকমাস পরেই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ সময় এমন একটি সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে কতটা রাজনৈতিক ঝুঁকিতে ফেলছে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাদেকা হালিম বলছেন, "সবসময়েই নির্বাচনের বছরে নানা মহল তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে সক্রিয় হয়। কোটা নিয়ে আন্দোলনটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এটা যদি রাজনৈতিক ঝুঁকি হিসাবেও বলেন, আওয়ামী লীগ সেই ঝুঁকি নিতে জানে।" "তবে আমার মনে হয় না তারা বড় কোন ঝুঁকি নিয়েছে। বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাই আওয়ামী লীগের পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী যে ডাক দিয়েছেন, সেখানে আমরা বিপুল সমর্থন দেখেছি। কেউ হয়তো তাদের ক্ষোভ দেখাতেই পারেন, সেই অধিকার তাদের আছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবেন বলে আমি মনে করি।"
অধ্যাপক সাদেকা হালিম এখানে কোন রাজনৈতিক ঝুঁকি দেখছেন না, তবে সেরকম কিছু হলে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবেই সেটা মোকাবেলা করার সামর্থ্য রাখে বলেই তিনি মনে করেন। কোটা সংস্কারের দাবি অনেকদিন ধরে চললেও, কয়েকমাস আগেও সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের অবস্থান ছিল এর বিপরীতে। সেখান থেকে হঠাৎ করেই সরকারের অবস্থানের নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।
পরিস্থিতির কারণেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন আরেকজন রাজনীতি পর্যবেক্ষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলছেন, "সরকারের জন্য সবচাইতে অস্বস্তির যেটা হয়েছে, এত বড় একটি আন্দোলন যেখানে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা অংশগ্রহণ করেছে এবং এটা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, এটা একটা ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন ছিল। কিন্তু এখানে রাজনৈতিক দলগুলো খুব একটা সরব ছিল, সেটা আমরা দেখিনি। ছাত্র সংগঠনগুলোরও তেমন একটা সংশ্লিষ্টতা ছিল না, বরং ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অনেকটা পুলিশের মতোই।"
"একটি আন্দোলনের মুখে সরকার যখন দাবি মেনে নেয়, অনেকে এটাকে মনে করতে পারেন সরকার হেরে গেলো। কিন্তু এটা হারজিতের কোন ব্যাপার না। আসলে জনগণ কি চায়, তরুণরা কি চাইছে, সেটা আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে।" কোটা বাতিলে যারা ক্ষুব্ধ হয়েছে, তাদের শক্তি খুব একটা প্রভাব ফেলার মতো না বলেই মনে করেন মি. আহমেদ। তিনি বলছেন, "বিভিন্ন কোটা থাকলেও, সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কোটা নিয়ে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়েও তো নানা সময়ে বিতর্ক হয়েছে। অতীতের সরকারগুলোর সময় যারা এই তালিকার সুবিধা নিয়েছেন, এখন নিচ্ছেন, তাদের অনেককে নিয়েও নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই সুযোগ সুবিধার কারণে যারা মুক্তিযোদ্ধা নন, তারাও মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগাড় করে এর অপব্যবহার করছেন। ফলে পুরো বিষয়টি একটু গোলমেলে হয়ে গেছে।"
"কিন্তু তারা যে সবাই আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত বা ভোট ব্যাংক, সেটা বলা যাবে না। কারণ অনেকেই আছে সুযোগ সন্ধানী। এ কারণে আমার মনে হয় না এটাতে বড় কোন সমস্যা হবে আওয়ামী লীগের জন্য," বলেন তিনি।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, যেভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটি দানা বেঁধে উঠছিল, তা ঠিক সময়ে এভাবে সামাল দেয়া না গেলে, অন্য কোন গোষ্ঠী হয়তো এর সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করতো। ফলে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তারা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসাবেও দেখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করেন না যে সামনের নির্বাচনে এটি কোন ইস্যু তৈরি করবে। তিনি বলছেন, "প্রথমে সরকার হয়তো এই বিষয়টি নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি, কারণ নির্বাচনের বছরে তারা বড় কোন বিতর্কে জড়াতে চায়নি। কিন্তু আন্দোলন যখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা অনুধাবন করে হয়তো প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।"
তিনি ধারণা করেন, আগামী একমাসে এটা নিয়ে হয়তো অনেক আলোচনা হবে। "ভোটের হিসাবে খুব বড় একটা প্রভাব এখানে ফেলবে না। বরং যদি কোটা আন্দোলনটা বড় হতো, তাতে বিএনপি অনেক বেশি উপকৃত হতে পারতো। বিএনপির নেতারা বলেছেন, কোটা সংস্কারে তাদের সম্পূর্ণ সমর্থন থাকবে। ফলে পাল্লা তো তাদের দিকেই চলে যাচ্ছিল। সেদিক থেকে আওয়ামী লীগ পাল্লাটা তাদের দিকে আনতে না পারলেও, পাল্লাটা একটা নিরপেক্ষ অবস্থানে চলে গেছে," বলেন মি. ইসলাম। তবে বিষয়টি আদালতে গড়ালে আরেকটি জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে তিনি আশংকা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন, পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার কথাও বলেছেন। আবার আন্দোলনকারীরাও সীমিত আকারে কোটার পক্ষে। তাই বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে এই পদ্ধতির সংস্কার হয়ে ভিন্ন আদলে কিছু কোটা সুবিধা হয়তো থেকে যেতে পারে। একসময় কোটার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়ার পরেও, আওয়ামী লীগের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তনের কারণ কি?
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জন্য নয়, কোটা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে দলের ভেতরেও কথাবার্তা চলছিল। তিনি বলছেন, "যদি লক্ষ্য করে দেখি, স্বাধীনতার সময় আসলে যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের সন্তানদের কোটা সুবিধা পাওয়ার সময়টা অনেকটা পেরিয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধা পদ্ধতি চলে আসুক। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আর প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথাও বলেছেন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হয়ে গেছে, এই সময়ের মধ্যে সারা দেশে যে একটা সমান্তরাল অবস্থান তৈরি করার যে উদ্যোগ ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর, সেটা মনে হয় এখন অনেকাংশেই পূর্ণ হয়েছে। নারীরাও অনেক এগিয়ে এসেছে। এখন মেধা তালিকা আসতে পারে।" প্রধানমন্ত্রীর সংসদে দেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে কি দলের মধ্যে আগে কোন আলোচনা হয়েছে -জানতে চাইলে মি. হানিফ বলেন, "এটা তো আসলে দলের বিষয় না। এটা হচ্ছে একটা সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকারের মধ্যে সেটা নিশ্চয়ই আলাপ আলোচনা করেই হয়েছে।" কোটা ব্যবস্থা নিয়ে এখনো তর্কবিতর্ক চললেও, রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা মনে করেন না এই বিষয়টি পরবর্তী দিনগুলো বা সামনের সাধারণ নির্বাচনে বড় কোন ইস্যু হয়ে উঠবে। কারণ তাদের মতে, নির্বাচনের বিষয়ে এখনো এমন অনেক বিতর্কিত বিষয় রয়ে গেছে, যেগুলোর চাপে এই বিষয়টি হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই গৌণ হয়ে পড়বে।
সূত্র: বিবিসি
No comments