স্বপ্নজাল: প্রেম ও শূন্যতার মায়াময় অনুবাদ by মাসুদ হাসান উজ্জ্বল
আমার
কাছে পৃথিবীর কঠিনতম কাজের একটি মনে হয় চলচ্চিত্র সমালোচনা। লিখতে গেলেই
মনে হয় চলচ্চিত্র নিয়ে বলার আমি কে! সম্ভবত নিজে নির্মাতা বলেই এমন মনে হয়।
কারণ, নির্মাণের যন্ত্রণা আর চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আমার অল্পবিস্তর ধারণা
রয়েছে! বাংলাদেশে বসে চলচ্চিত্রের জন্য যথেষ্ট প্রতিকূল পরিবেশে একটা
সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলতে পারাই বিরাট ব্যাপার! সুতরাং যে ছবি
দর্শকের সামনে উন্মোচিত হলো, তার নির্মাতাকে ভালোমন্দ বিচারের আগেই একটা
সাধুবাদ দিয়ে আলাপ শুরু করা যেতে পারে।
গতকালকে (৭ এপ্রিল) গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘স্বপ্নজাল’ চলচ্চিত্রটি দেখে এলাম। আমি সাধারণত নির্মাতা বা সমালোচকের দৃষ্টিতে সিনেমা দেখি না, একদম সাধারণ দর্শকের মন নিয়ে কেবল উপভোগের উদ্দেশ্যে চলচ্চিত্র দেখে থাকি। তাছাড়া আমি চলচ্চিত্রের মাস্টারমশাই নাকি যে বলে দিলাম,ওটা ঠিক হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি! সুতরাং আমার চলচ্চিত্র সমালোচনা কতখানি চুলচেরা হয়ে উঠতে পারে সে সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ রেখে দু-চারটি কথা শুরু করছি।
একটা চলচ্চিত্রের কাছে আমার প্রথম প্রত্যাশা থাকে সামষ্টিকভাবে সেই চলচ্চিত্র থেকে আমি কী পেলাম? তো totality’র বিচারে স্বপ্নজাল আমাকে তৃপ্ত করেছে। যদিও যানজটের কারণে আধঘণ্টা পরে হলে ঢুকতে পেরেছিলাম! আমি দেখতে শুরু করেছি শুভ্রার বাবা চরিত্রের রূপদানকারী মিশা সওদাগরের হত্যাদৃশ্য থেকে। অবশ্য গল্পের মধ্যে ভ্রমণ করতে করতে প্রথম আধঘণ্টা ইতিমধ্যে অনুমান করে নিয়েছি। তো এই হত্যাদৃশ্য দিয়েই শুরু করি। নৌকা থেকে ইরেশ যাকের তার দলবল নিয়ে হাতে ধারাল অস্ত্রসহ যখন নামে, ইরেশের চেহারা দেখে আমি ভড়কে যাই–কী হিংস্র চেহারা! এরকম একটা চেহারা নিয়ে হাজির হতে পারলে আর অভিনয় করা লাগে নাকি, চোখের সামনে বাস্তব ছবি এমনিতেই ধরা দিতে থাকে! পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য ইরেশ আট মাস দাড়ি রেখেছেন! সুতরাং যে ধরনের প্রস্তুতি না থাকলে একটা সিনেমা ঠিক সিনেমা হয়ে ওঠে না সেটা সম্পর্কে সচেতন হয়েই যে এটি নির্মিত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ থাকে না। নৌকা থেকে চরে নামার পরে শিল্পীদের অনেক ক্লোজ শট থাকতে পারত, আমরা খুনির জিঘাংসা আর খুন হতে থাকা মানুষের অসহায়ত্ব-আতঙ্ক আরও গভীরভাবে দেখতে পেতাম। কিন্তু পরিচালক অবাক করে দিয়ে একটিমাত্র শটে শিকার এবং শিকারিকে আস্তে আস্তে ক্লোজ থেকে মিড, মিড থেকে মিড লং এবং সবশেষে একদম লংয়ে ঠেলে দিয়ে অদ্ভুত এক Cinematic আবহ সৃষ্টি করলেন, এবং এতে যে তিনি শতভাগ সফল তার প্রমাণ হলো আমি লক্ষ করলাম সরাসরি খুনের দৃশ্য না দেখা সত্ত্বেও খুনের ভয়ে গা ছমছম করছে!
মাস্টার ফিল্মমেকার আকিরা কুরোসাওয়ার বিভিন্ন চলচ্চিত্রে এ ধরনের লেন্সিং টেকনিক দেখা যায়। শুভ্রা আর অপুর প্রেমের উপস্থাপনা একেবারেই স্বাভাবিক ছিল, মানে কোনোভাবেই সেটি অতি প্রেমে জর্জরিত নয়। বড়দের কাছে পাত্তা না পাওয়া Perfect teenage প্রেম বলতে যা বোঝায় আর কী! এবং এটিই সম্ভবত চলচ্চিত্রকে বাস্তবসম্মত হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে। কারণ, অধিকাংশ ঢাকাই ছবিতে দেখা যায় প্রেম দেখাতে গিয়ে সমাজ, সংসার, কর্মজীবন সবকিছু গৌণ হয়ে যায়, সুতরাং সমাজ এবং বাস্তবতা বিবর্জিত সেই প্রেম তেমন কোনও আবেদন রাখতে সক্ষম হয় না! সেই বিচারে শুভ্রা আর অপুর প্রেম smartly told! অপুর বাবা নিয়মিত তার চালের আড়তে যাওয়ার সময়ে ছোট্ট যে কালো ব্যাগটি বগলদাবা করে যান সেই ব্যাগ ৮০’র দশকের আড়ত বা ঠিকাদারি ব্যবসার কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই অর্থে পিরিওডিক্যাল ছবি না হওয়া সত্ত্বেও এই ডিটেইলিং চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে সিরিয়াস হওয়ার বার্তা দেয়। স্বপ্নজালের পরতে পরতে সিনেম্যাটিক ভাষার ছড়াছড়ি। শুভ্রাকে বহনকারী স্টিমার যখন অপুকে ছেড়ে চলে যেতে থাকে তখন গতির বিপরীতে শুভ্রার দৌড়ে এসে দূরত্ব কমানোর তীব্র চেষ্টায় যে প্রগাড় প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং তাতে যে সিনেম্যাটিক দ্যোতনা সৃষ্টি হয়, তা ছিল অতুলনীয়! কলকাতার অংশে কলকাতার শিল্পী ব্যবহার করায়, ঘটি-বাঙাল সংস্কৃতির পার্থক্যটা খুবই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমাদের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্য আচার-আর সংস্কৃতির পার্থক্য তীব্রভাবে ধরা দেয়! মনে পড়ে যায় দেশ বিভাগের আন্তর্জাতিক রাজনীতি অভিন্নধারার রক্তে ধর্মের নামে কীভাবে ছুরি চালিয়েছিল! ফজলুর রহমান বাবু কর্তৃক শুভ্রাদের সম্পত্তির জবরদখল এবং তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করায় এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের করুণ বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। খলচরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু যা করে দেখিয়েছেন তা দর্শক অনেকদিন মনে রাখবে। নানারকম অপারগতায় সীমাবদ্ধ মানুষ নিয়তির ওপর ন্যায় বিচারের দায়িত্ব সঁপে দিয়ে স্বস্তি খুঁজে ফেরে, তেমনি স্বস্তি খুঁজে ফেরার প্রবণতা দেখতে পাই ফজলুর রহমান বাবুর চূড়ান্ত পরিণতিতে। এই অংশটা অবশ্য একটু হলেও এতক্ষণ ধরে ঘটতে থাকা যৌক্তিক গল্প বয়ানে ছন্দপতন ঘটায় বলে আমার মনে হয়, নিয়তির প্রতিশোধ সিনেমার সম্ভাব্য জটিল বাঁকগুলোকে একটু হলেও হালকা করেছে বলে আমি মনে করি। এতো এতো অনাচার চারদিকে, কিন্তু প্রকৃতিকে কদাচিৎ প্রতিশোধ নিতে দেখি আমরা! বরং বাবু যেভাবে বিষ প্রয়োগে নিজের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহচর ইরেশকে হত্যা করে, বা তারই বিশ্বস্ত উকিল যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে সেটার উপস্থাপনা অনেক যৌক্তিক ছিল। শুভ্রা কলকাতায় চলে যাওয়ার পরে তার এবং অপুর পরস্পরের চিঠির অপেক্ষা করা এবং চিঠিতে অভিন্ন অনুভূতির প্রকাশ মনকে চিঠিপত্তরের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে প্রেমময় করে তোলে। কলকাতায় যাওয়ার জন্য অপুর বয়সোচিত Desperateness অধিকাংশ দর্শককেই তার তরুণ বয়সের উত্তাল সরল প্রেমকে মনে যে করিয়ে দিয়েছে, সেকথা হলফ করে বলতে পারি। শুভ্রার সাবলম্বী হওয়ার টানাপড়েনটা আরো একটু জিটেইলিং দাবি করে বলে মনে হয়েছে। আর থিয়েটারের নায়িকা খুঁজতে গেলেই সেটি কোনো না কোনোভাবে রক্তকরবীর নন্দিনীই কেন হতে হয় সেটা আমার মাথায় আসে না! তবে নাটকের পরিচালক কর্তৃক বাঙাল উচ্চারণ শুধরে দেওয়ার ব্যাপারটি শুভ্রার Cultural transformation-এর চমৎকার ইঙ্গিত দেয়। বিসম্বরের মিডলাইফ ক্রাইসিসজনিত উদ্দেশ্য বুঝতে পারা সত্ত্বেও শুভ্রা যেভাবে স্বাভাবিকভাবে বিষয়টিকে হ্যান্ডেল করে সেটা একজন পরিস্থিতির শিকার তরুণীর বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে পরিণত হয়ে ওঠার চমৎকার উদাহরণ সৃষ্টি করে। কারণ, এতটা পরিণত হয়ে না উঠলে পরবর্তীতে পিতৃহত্যার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা বা সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করার মতো দৃঢ় পদক্ষেপ যৌক্তিক হয়ে উঠতো না। গ্রেফতার হওয়ার পরে শারীরিকভাবে ভগ্নপ্রায় বাবু কর্তৃক আশপাশে কোনও সমর্থক না থাকা সত্ত্বেও ভিকটরি সাইন প্রদর্শন করতে গিয়ে পড়ে যাওয়া হাসির উদ্রেক করার পাশাপাশি আমাদের অসৎ রাজনীতিবিদদের অহেতুক আস্ফালনকে দুর্দান্তভাবে স্যাটায়ার করে! অপু-শুভ্রার প্রেম নিয়ে দুই পরিবারের কোনও প্রকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত না দেখানোতে সন্তানের প্রতি উদার এবং ভালোবাসাপূর্ণ পিতামাতাকে দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশের বাস্তবতায় সন্তান অন্তপ্রাণ পিতামাতাকে ধর্মীয় অনুশাসনের অসহায়ত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখিমাত্র, কিন্তু কোনোভাবেই তাদের নিষ্ঠুর পিতামাতা মনে হয় না! ফলে সেই উদার পিতামাতার সন্তান যখন চলন্ত লঞ্চ থেকে প্রেমের কারণে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেয় তখন কষ্টটা দ্বিগুণ হয়ে ওঠে! বাবা শহিদুল আলম সাচ্চুর জন্য মায়া আর অপু-শুভ্রার জন্য সর্বগ্রাসী শূন্যতা তৈরি হয়! মৃত অপুকে খুঁজে ফেরা শুভ্রা যখন মিডলং শটে জলের উপরে থপথপ করে পা ফেলে দৌড়াতে থাকে তখন আবারো আকিরা কুরোসাওয়ার রশমনের কথা মনে পড়ে। কাদা-জল মাড়িয়ে রশমনের গেটের দিকে এগিয়ে যাওয়া আর শুভ্রার দৌড় আদৌ একই রকম নয়, কিন্তু কুরোসাওয়া এই কাজটি খুব করতেন, ক্যামেরা মুভমেন্টে না গিয়ে Movement of nature, wind অথবা movement of artist ব্যবহার করতেন। বোঝা যায় সত্যজিৎ রায়সহ অগণিত বাংলা সিনেমার পরিচালকের মতো গিয়াস উদ্দিন সেলিমকেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কুরোসাওয়া হয়তোবা প্রভাবিত করে থাকবেন এবং নিঃসন্দেহে এই প্রভাব আশীর্বাদস্বরূপ! অপুর মৃত্যুর পরে পাখির সাদা পালকের হাইস্পিড শটটি সমস্ত আত্মাকে খালি করে দেওয়ার পাশাপাশি ব্রেভহার্ট চলচ্চিত্রে উইলিয়াম ওয়ালস চরিত্র রূপদানকারী মেলগিবসনের যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হওয়ার মুহূর্তে হাত থেকে রুমাল খসে পড়ার শটটির কথা মনে করিয়ে দেয়! এই সকল সাদৃশ্য বা অনুপ্রেরণা শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্রতী নির্মাতাকে সামনে নিয়ে আসে।
আমার মনে হয় গল্প বয়ান নিয়ে যথেষ্ট কথা বলে ফেলেছি, এবারে অন্যান্য কারিগরি দিক নিয়ে কিছু কথা বলি। প্রথমে বলতেই হয় একি করলেন কামরুল হাসান খসরু! প্রতিটি শট যেন একেকটা পেইন্টিং! কী অসামান্য লাইট ডিজাইনিং। নিকট অতীতে এমন অসামান্য ক্যামেরা নৈপুণ্য কোনও বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে দেখেছি বলে মনে হয় না! আর সেলিমের ছবিতে জলের ব্যবহার যেন তার সিগনেচারে পরিণত হয়েছে! বিপুল জলরাশিতে প্রেম এবং হাহাকারের তীব্র মিশ্রণ তাকে যেন অনন্য করে তোলে! সংগীতের পরিমিত ব্যবহার স্বপ্নজালকে আরো বেশি পরিপক্বতা দিয়েছে। তবে কিছু কিছু আবহসংগীত খুব চেনা বিদেশি চলচ্চিত্রের অনুরূপ না হলেই পারত! কিন্তু সাউন্ড ডিজাইনে যত্ন সম্পর্কে নিশ্চিত হই তখন যখন দেখি শুভ্রা থিয়েটার পরিচালকের সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে থিয়েটারের বাইরের সিঁড়িতে এসে বসে এবং বিসম্বরের সঙ্গে কথোপকথনের সময় হলে সাউন্ড শোনা যায়। এই ছবির প্রতিটি অভিনয়শিল্পী যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার। অভিনয়ের Ranking করতে গেলে অনেকেরই ওপর অবিচার করা হয়, কারণ প্রত্যেকেই তার চরিত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে ফজলুর রহমান বাবু, ইরেশ যাকের, শিল্পী সরকার অপু, ফারহানা মিঠু, শহিদুল আলম সাচ্চু, শাহেদ আলী, মিশা সওদাগর, পরীমনি বা ইয়াশ রোহানকে মানুষ অনেকদিন মনে রাখবে। বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের নায়িকা পরীমনিকে গিয়াসউদ্দিন সেলিম যেভাবে বদলে ফেলেছেন, সেটা রীতিমত ম্যাজিশিয়ানের কাজ। পরীমনিও তার প্রতি সেলিমের আস্থার প্রতি যথেষ্ট সুবিচার করেছেন। লক্ষ করলাম বেশিরভাগ সমালোচক পরীমনির সংলাপ প্রক্ষেপণের প্রশংসা করছেন। কিন্তু আমি বলব পরীমনির যদি খুব সচেতনভাবে কোনো কিছুর ওপরে কাজ করার থাকে তাহলে সেটা হবে উচ্চারণ এবং বাচনভঙ্গির ওপরে। ঠোঁট খুলে কণ্ঠ প্রসারিত করে কথা বলার প্র্যাকটিস করতে হবে, পরিণত শিল্পীর কণ্ঠ এবং বাচনভঙ্গি অনেক অভিজাত হতে হয়, এটা মাথায় না রাখলে চলবে না। ইয়াশ রোহানের ভালো অভিনেতা হয়ে ওঠার সকল সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু মুখের অভিব্যক্তি চোখে প্রতিফলিত না হলে অভিনয়টা ঠিক জমে ওঠে না। স্বপ্নজালের প্রোডাকশন ডিজাইন, আর্ট ডিরেকশন, কস্টিউম সবকিছু অনবদ্য। তবে কস্টিউমের ক্ষেত্রে প্রাইমারি কালারগুলো এড়িয়ে যেতে পারলে ফ্রেমগুলো আরো বেশি শিল্পসম্মত হয়ে উঠতে সুবিধা হয়। মেকাপ নিয়ে কথা না বললেই নয়। কেবল ফজলুর রহমান বাবু আর পরীমনির মেকাপ দিয়েই চোখ বন্ধ করে বলা যায় বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা মেকাপ হয়েছে স্বপ্নজাল চলচ্চিত্রে। আমি বলবো না আহামরি নতুন গল্পের ছবি স্বপ্নজাল, বরং এটি নির্মাতার প্রথম চলচ্চিত্র মনপুরার আদলেরই একটা গল্প। কিন্তু নির্মাণের দক্ষতায় অনন্য হয়ে উঠেছে স্বপ্নজাল। পরিশেষে স্বপ্নজাল চলচ্চিত্রের পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম, চিত্রগ্রাহক কামরুল হাসান খসরুসহ সকল অভিনয় শিল্পী এবং কলাকুশলীকে ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকে আরো একধাপ এগিয়ে নেওয়ার জন্য ।
লেখক: নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
গতকালকে (৭ এপ্রিল) গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘স্বপ্নজাল’ চলচ্চিত্রটি দেখে এলাম। আমি সাধারণত নির্মাতা বা সমালোচকের দৃষ্টিতে সিনেমা দেখি না, একদম সাধারণ দর্শকের মন নিয়ে কেবল উপভোগের উদ্দেশ্যে চলচ্চিত্র দেখে থাকি। তাছাড়া আমি চলচ্চিত্রের মাস্টারমশাই নাকি যে বলে দিলাম,ওটা ঠিক হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি! সুতরাং আমার চলচ্চিত্র সমালোচনা কতখানি চুলচেরা হয়ে উঠতে পারে সে সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ রেখে দু-চারটি কথা শুরু করছি।
একটা চলচ্চিত্রের কাছে আমার প্রথম প্রত্যাশা থাকে সামষ্টিকভাবে সেই চলচ্চিত্র থেকে আমি কী পেলাম? তো totality’র বিচারে স্বপ্নজাল আমাকে তৃপ্ত করেছে। যদিও যানজটের কারণে আধঘণ্টা পরে হলে ঢুকতে পেরেছিলাম! আমি দেখতে শুরু করেছি শুভ্রার বাবা চরিত্রের রূপদানকারী মিশা সওদাগরের হত্যাদৃশ্য থেকে। অবশ্য গল্পের মধ্যে ভ্রমণ করতে করতে প্রথম আধঘণ্টা ইতিমধ্যে অনুমান করে নিয়েছি। তো এই হত্যাদৃশ্য দিয়েই শুরু করি। নৌকা থেকে ইরেশ যাকের তার দলবল নিয়ে হাতে ধারাল অস্ত্রসহ যখন নামে, ইরেশের চেহারা দেখে আমি ভড়কে যাই–কী হিংস্র চেহারা! এরকম একটা চেহারা নিয়ে হাজির হতে পারলে আর অভিনয় করা লাগে নাকি, চোখের সামনে বাস্তব ছবি এমনিতেই ধরা দিতে থাকে! পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য ইরেশ আট মাস দাড়ি রেখেছেন! সুতরাং যে ধরনের প্রস্তুতি না থাকলে একটা সিনেমা ঠিক সিনেমা হয়ে ওঠে না সেটা সম্পর্কে সচেতন হয়েই যে এটি নির্মিত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ থাকে না। নৌকা থেকে চরে নামার পরে শিল্পীদের অনেক ক্লোজ শট থাকতে পারত, আমরা খুনির জিঘাংসা আর খুন হতে থাকা মানুষের অসহায়ত্ব-আতঙ্ক আরও গভীরভাবে দেখতে পেতাম। কিন্তু পরিচালক অবাক করে দিয়ে একটিমাত্র শটে শিকার এবং শিকারিকে আস্তে আস্তে ক্লোজ থেকে মিড, মিড থেকে মিড লং এবং সবশেষে একদম লংয়ে ঠেলে দিয়ে অদ্ভুত এক Cinematic আবহ সৃষ্টি করলেন, এবং এতে যে তিনি শতভাগ সফল তার প্রমাণ হলো আমি লক্ষ করলাম সরাসরি খুনের দৃশ্য না দেখা সত্ত্বেও খুনের ভয়ে গা ছমছম করছে!
মাস্টার ফিল্মমেকার আকিরা কুরোসাওয়ার বিভিন্ন চলচ্চিত্রে এ ধরনের লেন্সিং টেকনিক দেখা যায়। শুভ্রা আর অপুর প্রেমের উপস্থাপনা একেবারেই স্বাভাবিক ছিল, মানে কোনোভাবেই সেটি অতি প্রেমে জর্জরিত নয়। বড়দের কাছে পাত্তা না পাওয়া Perfect teenage প্রেম বলতে যা বোঝায় আর কী! এবং এটিই সম্ভবত চলচ্চিত্রকে বাস্তবসম্মত হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে। কারণ, অধিকাংশ ঢাকাই ছবিতে দেখা যায় প্রেম দেখাতে গিয়ে সমাজ, সংসার, কর্মজীবন সবকিছু গৌণ হয়ে যায়, সুতরাং সমাজ এবং বাস্তবতা বিবর্জিত সেই প্রেম তেমন কোনও আবেদন রাখতে সক্ষম হয় না! সেই বিচারে শুভ্রা আর অপুর প্রেম smartly told! অপুর বাবা নিয়মিত তার চালের আড়তে যাওয়ার সময়ে ছোট্ট যে কালো ব্যাগটি বগলদাবা করে যান সেই ব্যাগ ৮০’র দশকের আড়ত বা ঠিকাদারি ব্যবসার কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই অর্থে পিরিওডিক্যাল ছবি না হওয়া সত্ত্বেও এই ডিটেইলিং চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে সিরিয়াস হওয়ার বার্তা দেয়। স্বপ্নজালের পরতে পরতে সিনেম্যাটিক ভাষার ছড়াছড়ি। শুভ্রাকে বহনকারী স্টিমার যখন অপুকে ছেড়ে চলে যেতে থাকে তখন গতির বিপরীতে শুভ্রার দৌড়ে এসে দূরত্ব কমানোর তীব্র চেষ্টায় যে প্রগাড় প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং তাতে যে সিনেম্যাটিক দ্যোতনা সৃষ্টি হয়, তা ছিল অতুলনীয়! কলকাতার অংশে কলকাতার শিল্পী ব্যবহার করায়, ঘটি-বাঙাল সংস্কৃতির পার্থক্যটা খুবই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমাদের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্য আচার-আর সংস্কৃতির পার্থক্য তীব্রভাবে ধরা দেয়! মনে পড়ে যায় দেশ বিভাগের আন্তর্জাতিক রাজনীতি অভিন্নধারার রক্তে ধর্মের নামে কীভাবে ছুরি চালিয়েছিল! ফজলুর রহমান বাবু কর্তৃক শুভ্রাদের সম্পত্তির জবরদখল এবং তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করায় এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের করুণ বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। খলচরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু যা করে দেখিয়েছেন তা দর্শক অনেকদিন মনে রাখবে। নানারকম অপারগতায় সীমাবদ্ধ মানুষ নিয়তির ওপর ন্যায় বিচারের দায়িত্ব সঁপে দিয়ে স্বস্তি খুঁজে ফেরে, তেমনি স্বস্তি খুঁজে ফেরার প্রবণতা দেখতে পাই ফজলুর রহমান বাবুর চূড়ান্ত পরিণতিতে। এই অংশটা অবশ্য একটু হলেও এতক্ষণ ধরে ঘটতে থাকা যৌক্তিক গল্প বয়ানে ছন্দপতন ঘটায় বলে আমার মনে হয়, নিয়তির প্রতিশোধ সিনেমার সম্ভাব্য জটিল বাঁকগুলোকে একটু হলেও হালকা করেছে বলে আমি মনে করি। এতো এতো অনাচার চারদিকে, কিন্তু প্রকৃতিকে কদাচিৎ প্রতিশোধ নিতে দেখি আমরা! বরং বাবু যেভাবে বিষ প্রয়োগে নিজের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহচর ইরেশকে হত্যা করে, বা তারই বিশ্বস্ত উকিল যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে সেটার উপস্থাপনা অনেক যৌক্তিক ছিল। শুভ্রা কলকাতায় চলে যাওয়ার পরে তার এবং অপুর পরস্পরের চিঠির অপেক্ষা করা এবং চিঠিতে অভিন্ন অনুভূতির প্রকাশ মনকে চিঠিপত্তরের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে প্রেমময় করে তোলে। কলকাতায় যাওয়ার জন্য অপুর বয়সোচিত Desperateness অধিকাংশ দর্শককেই তার তরুণ বয়সের উত্তাল সরল প্রেমকে মনে যে করিয়ে দিয়েছে, সেকথা হলফ করে বলতে পারি। শুভ্রার সাবলম্বী হওয়ার টানাপড়েনটা আরো একটু জিটেইলিং দাবি করে বলে মনে হয়েছে। আর থিয়েটারের নায়িকা খুঁজতে গেলেই সেটি কোনো না কোনোভাবে রক্তকরবীর নন্দিনীই কেন হতে হয় সেটা আমার মাথায় আসে না! তবে নাটকের পরিচালক কর্তৃক বাঙাল উচ্চারণ শুধরে দেওয়ার ব্যাপারটি শুভ্রার Cultural transformation-এর চমৎকার ইঙ্গিত দেয়। বিসম্বরের মিডলাইফ ক্রাইসিসজনিত উদ্দেশ্য বুঝতে পারা সত্ত্বেও শুভ্রা যেভাবে স্বাভাবিকভাবে বিষয়টিকে হ্যান্ডেল করে সেটা একজন পরিস্থিতির শিকার তরুণীর বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে পরিণত হয়ে ওঠার চমৎকার উদাহরণ সৃষ্টি করে। কারণ, এতটা পরিণত হয়ে না উঠলে পরবর্তীতে পিতৃহত্যার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা বা সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করার মতো দৃঢ় পদক্ষেপ যৌক্তিক হয়ে উঠতো না। গ্রেফতার হওয়ার পরে শারীরিকভাবে ভগ্নপ্রায় বাবু কর্তৃক আশপাশে কোনও সমর্থক না থাকা সত্ত্বেও ভিকটরি সাইন প্রদর্শন করতে গিয়ে পড়ে যাওয়া হাসির উদ্রেক করার পাশাপাশি আমাদের অসৎ রাজনীতিবিদদের অহেতুক আস্ফালনকে দুর্দান্তভাবে স্যাটায়ার করে! অপু-শুভ্রার প্রেম নিয়ে দুই পরিবারের কোনও প্রকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত না দেখানোতে সন্তানের প্রতি উদার এবং ভালোবাসাপূর্ণ পিতামাতাকে দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশের বাস্তবতায় সন্তান অন্তপ্রাণ পিতামাতাকে ধর্মীয় অনুশাসনের অসহায়ত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখিমাত্র, কিন্তু কোনোভাবেই তাদের নিষ্ঠুর পিতামাতা মনে হয় না! ফলে সেই উদার পিতামাতার সন্তান যখন চলন্ত লঞ্চ থেকে প্রেমের কারণে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেয় তখন কষ্টটা দ্বিগুণ হয়ে ওঠে! বাবা শহিদুল আলম সাচ্চুর জন্য মায়া আর অপু-শুভ্রার জন্য সর্বগ্রাসী শূন্যতা তৈরি হয়! মৃত অপুকে খুঁজে ফেরা শুভ্রা যখন মিডলং শটে জলের উপরে থপথপ করে পা ফেলে দৌড়াতে থাকে তখন আবারো আকিরা কুরোসাওয়ার রশমনের কথা মনে পড়ে। কাদা-জল মাড়িয়ে রশমনের গেটের দিকে এগিয়ে যাওয়া আর শুভ্রার দৌড় আদৌ একই রকম নয়, কিন্তু কুরোসাওয়া এই কাজটি খুব করতেন, ক্যামেরা মুভমেন্টে না গিয়ে Movement of nature, wind অথবা movement of artist ব্যবহার করতেন। বোঝা যায় সত্যজিৎ রায়সহ অগণিত বাংলা সিনেমার পরিচালকের মতো গিয়াস উদ্দিন সেলিমকেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কুরোসাওয়া হয়তোবা প্রভাবিত করে থাকবেন এবং নিঃসন্দেহে এই প্রভাব আশীর্বাদস্বরূপ! অপুর মৃত্যুর পরে পাখির সাদা পালকের হাইস্পিড শটটি সমস্ত আত্মাকে খালি করে দেওয়ার পাশাপাশি ব্রেভহার্ট চলচ্চিত্রে উইলিয়াম ওয়ালস চরিত্র রূপদানকারী মেলগিবসনের যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হওয়ার মুহূর্তে হাত থেকে রুমাল খসে পড়ার শটটির কথা মনে করিয়ে দেয়! এই সকল সাদৃশ্য বা অনুপ্রেরণা শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্রতী নির্মাতাকে সামনে নিয়ে আসে।
আমার মনে হয় গল্প বয়ান নিয়ে যথেষ্ট কথা বলে ফেলেছি, এবারে অন্যান্য কারিগরি দিক নিয়ে কিছু কথা বলি। প্রথমে বলতেই হয় একি করলেন কামরুল হাসান খসরু! প্রতিটি শট যেন একেকটা পেইন্টিং! কী অসামান্য লাইট ডিজাইনিং। নিকট অতীতে এমন অসামান্য ক্যামেরা নৈপুণ্য কোনও বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে দেখেছি বলে মনে হয় না! আর সেলিমের ছবিতে জলের ব্যবহার যেন তার সিগনেচারে পরিণত হয়েছে! বিপুল জলরাশিতে প্রেম এবং হাহাকারের তীব্র মিশ্রণ তাকে যেন অনন্য করে তোলে! সংগীতের পরিমিত ব্যবহার স্বপ্নজালকে আরো বেশি পরিপক্বতা দিয়েছে। তবে কিছু কিছু আবহসংগীত খুব চেনা বিদেশি চলচ্চিত্রের অনুরূপ না হলেই পারত! কিন্তু সাউন্ড ডিজাইনে যত্ন সম্পর্কে নিশ্চিত হই তখন যখন দেখি শুভ্রা থিয়েটার পরিচালকের সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে থিয়েটারের বাইরের সিঁড়িতে এসে বসে এবং বিসম্বরের সঙ্গে কথোপকথনের সময় হলে সাউন্ড শোনা যায়। এই ছবির প্রতিটি অভিনয়শিল্পী যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার। অভিনয়ের Ranking করতে গেলে অনেকেরই ওপর অবিচার করা হয়, কারণ প্রত্যেকেই তার চরিত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে ফজলুর রহমান বাবু, ইরেশ যাকের, শিল্পী সরকার অপু, ফারহানা মিঠু, শহিদুল আলম সাচ্চু, শাহেদ আলী, মিশা সওদাগর, পরীমনি বা ইয়াশ রোহানকে মানুষ অনেকদিন মনে রাখবে। বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের নায়িকা পরীমনিকে গিয়াসউদ্দিন সেলিম যেভাবে বদলে ফেলেছেন, সেটা রীতিমত ম্যাজিশিয়ানের কাজ। পরীমনিও তার প্রতি সেলিমের আস্থার প্রতি যথেষ্ট সুবিচার করেছেন। লক্ষ করলাম বেশিরভাগ সমালোচক পরীমনির সংলাপ প্রক্ষেপণের প্রশংসা করছেন। কিন্তু আমি বলব পরীমনির যদি খুব সচেতনভাবে কোনো কিছুর ওপরে কাজ করার থাকে তাহলে সেটা হবে উচ্চারণ এবং বাচনভঙ্গির ওপরে। ঠোঁট খুলে কণ্ঠ প্রসারিত করে কথা বলার প্র্যাকটিস করতে হবে, পরিণত শিল্পীর কণ্ঠ এবং বাচনভঙ্গি অনেক অভিজাত হতে হয়, এটা মাথায় না রাখলে চলবে না। ইয়াশ রোহানের ভালো অভিনেতা হয়ে ওঠার সকল সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু মুখের অভিব্যক্তি চোখে প্রতিফলিত না হলে অভিনয়টা ঠিক জমে ওঠে না। স্বপ্নজালের প্রোডাকশন ডিজাইন, আর্ট ডিরেকশন, কস্টিউম সবকিছু অনবদ্য। তবে কস্টিউমের ক্ষেত্রে প্রাইমারি কালারগুলো এড়িয়ে যেতে পারলে ফ্রেমগুলো আরো বেশি শিল্পসম্মত হয়ে উঠতে সুবিধা হয়। মেকাপ নিয়ে কথা না বললেই নয়। কেবল ফজলুর রহমান বাবু আর পরীমনির মেকাপ দিয়েই চোখ বন্ধ করে বলা যায় বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা মেকাপ হয়েছে স্বপ্নজাল চলচ্চিত্রে। আমি বলবো না আহামরি নতুন গল্পের ছবি স্বপ্নজাল, বরং এটি নির্মাতার প্রথম চলচ্চিত্র মনপুরার আদলেরই একটা গল্প। কিন্তু নির্মাণের দক্ষতায় অনন্য হয়ে উঠেছে স্বপ্নজাল। পরিশেষে স্বপ্নজাল চলচ্চিত্রের পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম, চিত্রগ্রাহক কামরুল হাসান খসরুসহ সকল অভিনয় শিল্পী এবং কলাকুশলীকে ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকে আরো একধাপ এগিয়ে নেওয়ার জন্য ।
লেখক: নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
No comments