বিএনপির চার নেতাকে গ্রেপ্তার কেন বেআইনি নয় -হাইকোর্টের রুল
বিএনপি
ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের চার নেতাকে গ্রেপ্তার কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না,
জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে বিরোধী দলের এই চার নেতাকে গ্রেপ্তারে
জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা
নেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। ২৯শে মার্চ বিএনপি’র ভাইস
চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের জনস্বার্থে দায়েরকৃত একটি রিট
আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন। আগামী চার
সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশ
কমিশনার, ডিএমপি’র রমনা জোনের উপ-কমিশনার, গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের
অতিরিক্ত কমিশনার, দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার, রমনা জোনের অতিরিক্ত
উপ-কমিশনারসহ ১৪ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিট আবেদনটির ফাইল ল’ইয়ার ছিলেন এডভোকেট সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া। আদালতে
শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার নওশাদ জমির,
আসাদুজ্জামান খান, কায়সার কামাল, এহসানুর রহমান, কামরুজ্জামান মামুন ও মীর
হেলাল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন
সাজু। উল্লেখ্য, ২৪শে ফেব্রুয়ারি নয়াপল্টনে বিএনপি’র কালো পতাকা প্রদর্শনের
কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন
আলালকে চ্যাংদোলা করে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ৬ই মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের
সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় প্রেস ক্লাব চত্বর থেকে অস্ত্র উঁচিয়ে
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও কদম ফোয়ারা থেকে ছাত্রদল ঢাকা
মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন মিলনকে ধরে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী
পুলিশ। ৮ই মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি’র মানববন্ধন চলাকালে
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর
ছাত্রদলের সভাপতি এসএম মিজানুর রহমানকে টেনে-হিঁচড়ে ধরে নিয়ে যায় সাদা
পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্যরা। পরে মিলনকে শাহবাগ থানার এক মামলায় গ্রেপ্তার
দেখিয়ে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে
পাঠানো হয় এবং ১২ই মার্চ তার মৃত্যুর খবর আসে। পুলিশ দাবি করে, এই ছাত্রদল
নেতা অসুস্থ হয়ে মারা যান। তবে পরিবারের দাবি রিমান্ডে নির্যাতনের মাধ্যমে
মিলনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে পুলিশ। হাইকোর্ট রুল জারির পর ব্যারিস্টার
মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, মিলনের উপর অসম্ভব অত্যাচার করা হয়, পরে তার
মৃত্যু হয়েছে। আমাদের আপিল বিভাগের একটি রায় আছে কীভাবে গ্রেপ্তার করতে
হবে, রিমান্ডে নেয়ার ব্যাপারে অনেকগুলো বিষয় আছে। সেখানে গ্রেপ্তারের
ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ও রিমান্ড মঞ্জুরের ক্ষেত্রে ( ডিএলআর
৬৯, এডি ৬৩-এ) বিচারকদের প্রতি কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যেটা সকল
প্রশাসনের জন্য বাধ্যতামূলক। খুবই পরিচ্ছন্ন এবং সুদূরপ্রসারী রায়। মওদুদ
বলেন, বাংলাদেশে প্রতিদিনই বিরোধী নেতাকর্মীদের নির্দয়ভাবে গ্রেপ্তার ও
রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে আমরা এই চারজনকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া
‘সম্পূর্ণভাবে আইন ও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের পরিপন্থি’ দাবি করে রিট
করেছি। আদালত রুল জারির পর আগামী ১লা আগস্ট আবেদনটির পরবর্তী শুনানির দিন
নির্ধারণ করেছেন।
No comments