অটিজম আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
অটিজম
আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে
আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, যারা অটিজমে ভুগছে তাদের
অবহেলা করবেন না। তারা আমাদের সমাজেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেক সুস্থ
মানুষ যা পারে না সেই সুপ্ত প্রতিভা তাদের রয়েছে। আমাদেরকেই সেই সুপ্ত
প্রতিভাগুলো বিকশিত করার সুযোগ করে দিতে হবে। আর সমাজে তাদের একটা সুন্দর
স্থান করে দিতে হবে। গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন
কেন্দ্রে ১১তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান
অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুস্থ
মানুষকে যেভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে তেমনি যারা প্রতিবন্ধী এবং অটিজমে ভুগছে
তাদের প্রতি আমাদের সমাজকে আরো সচেতন হতে হবে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
কারণ এটা তাদের জন্মের কোনো দোষ নয়, আল্লাহ তো মানুষকে বিভিন্নভাবেই সৃষ্টি
করেন। কাজেই সেটাকে অবহেলার চোখে দেখা ঠিক নয়। তাই সমাজের সচেতনতা
একান্তভাবেই প্রয়োজনীয়। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাচ্ছি অভিভাবক এবং
শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে। যাতে তারা আচার আচরণ, কথা
বলা ইত্যাদির মাধ্যমে অটিজমে আত্রান্তদের সুস্থ করতে ভূমিকা রাখতে পারেন।
অর্থাৎ শিক্ষকরাও পারবে তাদের আরো সুস্থ করে তুলতে। তাদের মধ্যে সেই
সচেতনতাটা সৃষ্টি করা একান্তভাবেই দরকার। সেটাই আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রী
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সদস্য ইসাবা হাফিজের বঞ্চনার কথা
উল্লেখ করে বলেন, আমি যখন ইসাবার বক্তৃতা শুনছিলাম তখন খুব কষ্ট হচ্ছিল। এই
মানসিকতা পরিবর্তন করে সবাইকে বরং আরো সংবেদনশীল হয়ে, আরো সহানুভূতিশীল
হয়ে অটিজম আক্রান্তদের আদর-ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নিতে হবে। আর তাদের
মাঝে যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী অটিজম বক্তা ইসাবার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, ইসাবা
বলেছে সে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে কি-না। ‘আমি বলবো সে দিতে পারবে’।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রতিবন্ধীদের পাবলিক পরীক্ষায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট
বাড়িয়ে দেয়ার তার সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, এসএসসি এবং
এইচএসসি পরীক্ষায় অন্যরা যে সময়ে পরীক্ষা দেয় তাদের চাইতে সাধারণভাবেই ২০
থেকে ৩০ মিনিট সময় বেশি দিয়ে থাকি। যেন তারা তাদের পরীক্ষাটা ভালোভাবে দিতে
পারে। ইতিমধ্যে ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি। অটিজম বিষয়ে মানুষকে সচেতন
করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির
চেয়ারপারসন তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের কথা উল্লেখ করে বলেন, আগে বাংলাদেশে
অটিজম সম্পর্কে মানুষের তেমন কোনো ধারণা ছিল না। আমার কন্যা সায়মা
ওয়াজেদ-এর নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অটিজম-এর গুরুত্ব ও
সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন উৎসবে মানুষের কাছে তিনি যেসব
কার্ড পাঠান, অটিস্টিক শিশুদের আঁকা কার্ডই পাঠান। যার কার্ড নির্বাচিত হয়
তাকে সম্মানী হিসেবে এক লাখ করে টাকাও প্রদান করেন। এ সময় অটিস্টিক শিশুদের
প্রতিভার বিকাশে দেশের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান
প্রধানমন্ত্রী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে
সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। স্বাস্থ্য ও
পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান
আহমেদ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি
ডা. মোজাম্মেল হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
সমাজকল্যাণ সচিব জিল্লার রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। অটিজম আক্রান্তদের
পক্ষে নবম শ্রেণির ছাত্রী ইসাবা হাফিজ সুস্মী বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ সহ
সারা বিশ্বে ২রা এপ্রিল দিনটি অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে ‘নারী ও বালিকাদের
ক্ষমতায়ন, হোক না তারা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে
পালিত হয়। অটিজম আক্রান্ত এবং প্রতিবন্ধীদের জীবন মান উন্নয়নের নিমিত্তে
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২রা এপ্রিলকে সর্বসম্মতভাবে অটিজম সচেতনতা দিবস
হিসেবে ঘোষণা করে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ক্ষেত্রে
প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনজন অটিজম আক্রান্তকে এবং অটিজম সম্পর্কে
সচেতনতা সৃষ্টিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে
পুরস্কৃত করেন। প্রধানমন্ত্রী পরে অটিজম আক্রান্তদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।
No comments