র্যাগ ভয়ঙ্কর by সিরাজুস সালেকিন ও আফরোজ ইসলাম
কম্পিউটার
সায়েন্সে উচ্চশিক্ষা নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন
মিজানুর রহমান। কিন্তু তার কম্পিউটার বিষয়ে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন প্রথম
বর্ষেই ভেঙে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে নিজ বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীর দ্বারা
শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। অবস্থা
এতটাই ভয়াবহ যে, হাজারো আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো রিকশাচালক বাবাকেই
চিনতে পারেননি তিনি। শেষে শিক্ষা কার্যক্রম বাদ দিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে
মিজানুরকে। এর আগে জানুয়ারিতে র্যাগিংয়ের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রদের
দ্বারা নির্যাতিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ত্যাগ করেন রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। ওই মাসেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন
ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীকে র্যাগ দেয়া নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে। এখানেই শেষ নয়। গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত ছয়
শিক্ষার্থীকে বিভাগের সিনিয়র কর্তৃক মেসে ডেকে নিয়ে র্যাগিংয়ের নামে
অর্ধনগ্ন করে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই র্যাগিংয়ের চর্চা সবচেয়ে
বেশি। সঙ্গেই রয়েছে সরকারি মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি
কলেজসহ খ্যাতনামা সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশের সবচেয়ে খ্যাতনামা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীরাই র্যাগিং অনুশীলন করে। দেশের
প্রথমসারির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে
সিনিয়র শিক্ষার্থীরা ‘জুনিয়রদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া’, ‘জুনিয়র-সিনিয়র
সম্পর্ক উন্নয়ন’, ‘মজা করা’ বা ‘জুনিয়রদের আদব-কায়দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের
নিয়ম শেখানো’ এর নামে র্যাগিং শুরু করে। বেশির ভাগ সময়ই নিছক মজার ছলে
শুরু হয় র্যাগিং। কিন্তু জুনিয়রদের নিয়ে সিনিয়রদের এই মজা ক্রমশই রূপ নেয়
নির্যাতনে। আবার অনেক সময় জুনিয়রদের আদব-কায়দা শেখাতে গিয়ে প্রথমে সামান্য
গালাগালি থেকে শুরু হয়ে হুমকিধামকি দিয়ে শেষ হয় শারীরিক নির্যাতনে। পরিচিত
পদ্ধতির সঙ্গে বিভিন্ন অভিনব কায়দায় চলে নির্যাতন। নবীন শিক্ষার্থীদের
জোরপূর্বক সব রাজনৈতিক বড় ভাইদের পরিচয় মুখস্থ করানো, পিতা-মাতা ও পরিবারের
অন্যদের জড়িয়ে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার, প্রকাশ্যে নগ্ন করে নাচানো, চরম
অশ্লীল বই পড়তে বাধ্য করা, সবার সামনে যৌন অভিনয়ে বাধ্য করা, পেস্ট খেতে
বাধ্য করা, সবার সামনে পর্নো দৃশ্য দেখতে বাধ্য করা, রাতে মশার কামড়
খাওয়ানোর জন্য বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা, কান ধরে উঠবস, বুকডন, মুরগি হয়ে
বসিয়ে রাখা, প্রকাশ্যে কোনো মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে বাধ্য করা, শীতের
মধ্যে পানিতে নামানো ও ফুটবল খেলতে বাধ্য করা, শীতের রাতে সিনিয়রদের কাজে
বাইরে পাঠানো, সিগারেট-গাঁজা-মদ পানে বাধ্য করা, ম্যাচের কাঠি দিয়ে রুম বা
মাঠের মাপ নেয়া, কোনো আদেশ না মানলে গায়ে হাত তোলা, কথার মারপ্যাঁচে বিব্রত
করা ছাড়াও নানাভাবে র্যাগিং চলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসগুলোতে। উচ্চশিক্ষা লাভে এসে সিনিয়রদের এমন আচরণ মেনে নিতে পারেন
না অনেকেই। তাই অনেকে বাধ্য হয় হল বা ক্যাম্পাস ছাড়তে। অনেকে মানসিকভাবে
অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর যারা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারেন তাদের অনেকের
মধ্যেই পরবর্তী শিক্ষার্থীদের বর্তমানের চেয়েও অতিরিক্ত মাত্রায় র্যাগ
দেয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। র্যাগিং নামক এমন নিষ্ঠুর রসিকতায় শুরুতেই থেমে
যায় অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্নযাত্রা। অনেক শিক্ষার্থীই ছেড়ে দেন ক্যাম্পাস,
অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এমনকি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন অনেক
শিক্ষার্থী। র্যাগিংয়ের শিকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই মানসিক অস্বস্তিতে
ভোগেন। অনেক সময় মানসিক ভারসাম্যহীনতার দিকে নিয়ে যায় শিক্ষার্থীকে। তবে
বিশেষজ্ঞদের মতে, র্যাগিংয়ের ফলে সকল শিক্ষার্থীদের ওপর একই ধরনের প্রভাব
পড়ে না। মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম বলেন, র্যাগিংয়ের শিকার
শিক্ষার্থী মানসিকভাবে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তা মূলত র্যাগিংয়ের ধরন ও
মাত্রার ওপর নির্ভর করে। তবে শিক্ষার্থীর পরিবার তাদের ব্যক্তি সত্ত্বাকে
কতটা গুরুত্ব দেয় তার ওপর অনেকটা নির্ভর করে র্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীর
মানসিক অবস্থার। সাধারণত র্যাগিংয়ের ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক আঘাত লাগে,
নিজেদের ছোট ও অসহায় মনে হয়। যেসব পরিবার তাদের সন্তানদের ব্যক্তি
সত্ত্বাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না, শুধু তাদের রেজাল্টকে মূল্যায়ন করে এসব
পরিবারের সন্তানদের নিজেদের সমাজের কাছে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। এসব মানুষ
যখন র্যাগিংয়ের শিকার হয় স্বাভাবিকভাবেই তারা বাকিদের চেয়ে মানসিকভাবে
বেশি ভেঙে পড়েন। র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত
শিক্ষার্থীদের প্রতি পরিবার ও বন্ধুদের সহমর্মী আচরণ তাদের দ্রুত সুস্থ করে
তুলতে পারে বলে মনে করেন তিনি। মেহতাব খানম বলেন, র্যাগিংয়ের শিকার
শিক্ষার্থীদের বারবার র্যাগিংয়ের সময়কার দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়ে। এই সময়
পরিবার যদি তাদের অসহায়ত্বটাকে বুঝতে পারে এবং যথেষ্ট সহমর্মী আচরণ করে
তাহলে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। তবে যেসব শিক্ষার্থীর আগে থেকে
কোনো মানসিক সমস্যা থাকে তাদের র্যাগিংয়ের পর মানসিক অবস্থা ভয়াবহ হতে
পারে। এসব শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে
অনেক সময় তাদের ওষুধের প্রয়োজন পড়ে। যাদের অবস্থা বেশি গুরতর তাদের অনেকের
গলা শুকিয়ে আসে, তাদের মনে হয় তারা এখনই মরে যাবে। এসব রোগীর ক্ষেত্রে
থেরাপি পর্যন্ত দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কারসহ মোট ২১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে র্যাগিংয়ের দায়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহু শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তার পরও ক্রমশই বেড়েই চলছে র্যাগিংয়ের ঘটনা। ফলে উচ্চশিক্ষা লাভে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে র্যাগিং; যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন ও শিক্ষকরাও রীতিমতো বিব্রত। পাশের দেশ ভারতের কিছু রাজ্যে র্যাগিং প্রতিরোধে নির্দিষ্ট আইন থাকলেও আমাদের দেশে এ বিষয়ে কোনো আইন নেই। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন র্যাগিং প্রথাকে নিষিদ্ধ করেছে। গত ২রা ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে র্যাগিং নিষিদ্ধ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া ২০০৮ সালে র্যাগিং নিষিদ্ধ করে র্যাগিংয়ের নির্মমতায় এগিয়ে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু শিক্ষার্থী নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পর্যন্ত র্যাগিং বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি র্যাগিং বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে জাবির শিক্ষকরা। আবাসিক হলগুলোতে র্যাগিংয়ের ঘটনা বেশি ঘটে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহা বলেন, আবাসিক হলগুলোয় যতদিন আবাসিক পরিবেশ তৈরি না হবে ততদিন র্যাগিং সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। হয়তো কমানো যাবে, কিন্তু সম্পূর্ণ নির্মূল করা যাবে না। র্যাগিংয়ের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নিশ্চিত করে তিনি জানান, প্রতিটি হলে হল সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সবার ফোন নাম্বার টানিয়ে দেয়া হয়েছে। যেকোনো সমস্যায় যেকোনো সময় শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করতে পারবে। এছাড়া কোর্স টিচার, হল প্রশাসনসহ সব শিক্ষক শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করে বলেও জানান তিনি। র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা শিক্ষার্থী মিজানুরকে তার পরিবার বাড়িতে নিয়ে গেছে জানিয়ে র্যাগিংয়ের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, মিজানুরের পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটিকে মিজানুরের সঙ্গে কথা বলতে দেয়নি। মিজানের সঙ্গে কথা না বলে ঘটনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে না। মিজানুরের সঙ্গে কথা বলে র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। প্রতি বছর ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও হলগুলোতে র্যাগিং প্রতিরোধে টানানো হয় নোটিশ। কিন্তু তাতে থেমে থাকে না এই নিপীড়ন। র্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিহিত করতেও ভয় পায়। কারণ, র্যাগিংয়ের সঙ্গে যুক্ত বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে তাদের নামে অভিযোগ করে লাভ হবে না বলেও জানিয়ে দেয় এসব ছাত্র নেতা। তাছাড়া অভিযোগ করলে পরবর্তীকালে সমস্যা আরো বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিশ্বাস র্যাগিংকে নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন এবং র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে পারলে র্যাগিং বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া ক্যাম্পসগুলোতে সুস্থধারার রাজনীতি চর্চা হলে র্যাগিংয়ের বিষয়টা থাকার কথা না। তবে র্যাগিং বন্ধে শিক্ষার্থীদের পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তাদের ধারণা। শিক্ষকরা মনে করেন, পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা পাওয়া কোনো শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের মতো একটি অপসংস্কৃতি চর্চা করতে পারে না। তাই দেশের সব শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীকে র্যাগিং বন্ধে এক হয়ে কাজ করার আহ্ববান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সে সঙ্গে নবাগত শিক্ষার্থীর র্যাগিংয়ের বিষয়ে সচেতন থাকা ও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের জানানোর পরামর্শ দেন তারা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময়, ভর্তির সময় ও হলে ওঠার সময় র্যাগিংয়ের মতো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হয়। অরিয়েন্টেশনের সময়ও তাদের সচেতন করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর র্যাগিংয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা পেলে কখনোই কোনো শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ে উৎসাহিত হতে পারে না মন্তব্য করেন জহির উদ্দিন। র্যাগিংয়ের দিক থেকে কিছুটা নমনীয় পর্যায়ে আছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। ঢাবির সহকারী প্রক্টর ড. লিটন কুমার সাহা বলেন, র্যাগিংয়ের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জিরো টলারেন্স, ঢাবিতে র্যাগিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। তাদের কাছে র্যাগিয়ের বিষয়ে সম্প্রতি কোনো অভিযোগ আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কোনো রকম অভিযোগ আসে সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সব সময় র্যাগিংয়ের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয় বলেও জানান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও বিজয় একাত্তর হলের হাউজ টিউটর তৌহিদুল হক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পারিক সৌহার্দ্যবোধ কখনই মাত্রা ছাড়িয়ে যায় না। র্যাগিং খারাপ কিছু না। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে তা সৌজন্যবোধকে ছাড়িয়ে যায়। সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে নেতিবাচক রূপ নেয়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রহণ করা হয় ভয়ভীতি দেখিয়ে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়রদের গ্রহণ করা হয় ছোট ভাই হিসেবে। যে কারণে তাদের কষ্ট দেয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে র্যাগিং প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বা শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় চলে এন্টি র্যাগিং কার্যক্রম। র্যাগিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখার উদ্যোগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাবিতে গঠন করা হয় ‘এন্টি র্যাগিং সেল’। এন্টি র্যাগিং সেলের সমন্বয়ক সুমন মোড়ল বলেন, ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রথম বর্ষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সিনিয়র কর্তৃক নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। পরিচিত হওয়ার নামে অনেক সিনিয়র শিক্ষার্থী নবাগতদের র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের সাংস্কৃতিক-সামাজিক পরিমণ্ডল গড়ে ওঠার কথা, তা ব্যাহত হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে র্যাগিংয়ে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘এন্টি র্যাগিং সেল’ পরিচালনা করা হচ্ছে। র্যাগিংয়ে নিরুৎসাহিত করা থেকে শাস্তি নিশ্চিত করা পর্যন্ত পাঁচ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে এই প্রতিষ্ঠানটি। সংগঠনের পক্ষ থেকে র্যাগিং বন্ধে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্টি র্যাগিং সেল গঠন ও র্যাগিংয়ের সঙ্গে যুক্ত সবার শাস্তির বিধান নিশ্চিত করার দাবি জানান সুমন।
গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কারসহ মোট ২১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে র্যাগিংয়ের দায়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহু শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তার পরও ক্রমশই বেড়েই চলছে র্যাগিংয়ের ঘটনা। ফলে উচ্চশিক্ষা লাভে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে র্যাগিং; যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন ও শিক্ষকরাও রীতিমতো বিব্রত। পাশের দেশ ভারতের কিছু রাজ্যে র্যাগিং প্রতিরোধে নির্দিষ্ট আইন থাকলেও আমাদের দেশে এ বিষয়ে কোনো আইন নেই। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন র্যাগিং প্রথাকে নিষিদ্ধ করেছে। গত ২রা ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে র্যাগিং নিষিদ্ধ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া ২০০৮ সালে র্যাগিং নিষিদ্ধ করে র্যাগিংয়ের নির্মমতায় এগিয়ে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু শিক্ষার্থী নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পর্যন্ত র্যাগিং বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি র্যাগিং বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে জাবির শিক্ষকরা। আবাসিক হলগুলোতে র্যাগিংয়ের ঘটনা বেশি ঘটে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহা বলেন, আবাসিক হলগুলোয় যতদিন আবাসিক পরিবেশ তৈরি না হবে ততদিন র্যাগিং সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। হয়তো কমানো যাবে, কিন্তু সম্পূর্ণ নির্মূল করা যাবে না। র্যাগিংয়ের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নিশ্চিত করে তিনি জানান, প্রতিটি হলে হল সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সবার ফোন নাম্বার টানিয়ে দেয়া হয়েছে। যেকোনো সমস্যায় যেকোনো সময় শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করতে পারবে। এছাড়া কোর্স টিচার, হল প্রশাসনসহ সব শিক্ষক শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করে বলেও জানান তিনি। র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা শিক্ষার্থী মিজানুরকে তার পরিবার বাড়িতে নিয়ে গেছে জানিয়ে র্যাগিংয়ের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, মিজানুরের পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটিকে মিজানুরের সঙ্গে কথা বলতে দেয়নি। মিজানের সঙ্গে কথা না বলে ঘটনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে না। মিজানুরের সঙ্গে কথা বলে র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। প্রতি বছর ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও হলগুলোতে র্যাগিং প্রতিরোধে টানানো হয় নোটিশ। কিন্তু তাতে থেমে থাকে না এই নিপীড়ন। র্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিহিত করতেও ভয় পায়। কারণ, র্যাগিংয়ের সঙ্গে যুক্ত বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে তাদের নামে অভিযোগ করে লাভ হবে না বলেও জানিয়ে দেয় এসব ছাত্র নেতা। তাছাড়া অভিযোগ করলে পরবর্তীকালে সমস্যা আরো বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিশ্বাস র্যাগিংকে নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন এবং র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে পারলে র্যাগিং বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া ক্যাম্পসগুলোতে সুস্থধারার রাজনীতি চর্চা হলে র্যাগিংয়ের বিষয়টা থাকার কথা না। তবে র্যাগিং বন্ধে শিক্ষার্থীদের পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তাদের ধারণা। শিক্ষকরা মনে করেন, পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা পাওয়া কোনো শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের মতো একটি অপসংস্কৃতি চর্চা করতে পারে না। তাই দেশের সব শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীকে র্যাগিং বন্ধে এক হয়ে কাজ করার আহ্ববান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সে সঙ্গে নবাগত শিক্ষার্থীর র্যাগিংয়ের বিষয়ে সচেতন থাকা ও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের জানানোর পরামর্শ দেন তারা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময়, ভর্তির সময় ও হলে ওঠার সময় র্যাগিংয়ের মতো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হয়। অরিয়েন্টেশনের সময়ও তাদের সচেতন করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর র্যাগিংয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা পেলে কখনোই কোনো শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ে উৎসাহিত হতে পারে না মন্তব্য করেন জহির উদ্দিন। র্যাগিংয়ের দিক থেকে কিছুটা নমনীয় পর্যায়ে আছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। ঢাবির সহকারী প্রক্টর ড. লিটন কুমার সাহা বলেন, র্যাগিংয়ের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জিরো টলারেন্স, ঢাবিতে র্যাগিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। তাদের কাছে র্যাগিয়ের বিষয়ে সম্প্রতি কোনো অভিযোগ আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কোনো রকম অভিযোগ আসে সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সব সময় র্যাগিংয়ের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয় বলেও জানান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও বিজয় একাত্তর হলের হাউজ টিউটর তৌহিদুল হক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পারিক সৌহার্দ্যবোধ কখনই মাত্রা ছাড়িয়ে যায় না। র্যাগিং খারাপ কিছু না। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে তা সৌজন্যবোধকে ছাড়িয়ে যায়। সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে নেতিবাচক রূপ নেয়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রহণ করা হয় ভয়ভীতি দেখিয়ে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়রদের গ্রহণ করা হয় ছোট ভাই হিসেবে। যে কারণে তাদের কষ্ট দেয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে র্যাগিং প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বা শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় চলে এন্টি র্যাগিং কার্যক্রম। র্যাগিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখার উদ্যোগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাবিতে গঠন করা হয় ‘এন্টি র্যাগিং সেল’। এন্টি র্যাগিং সেলের সমন্বয়ক সুমন মোড়ল বলেন, ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রথম বর্ষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সিনিয়র কর্তৃক নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। পরিচিত হওয়ার নামে অনেক সিনিয়র শিক্ষার্থী নবাগতদের র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের সাংস্কৃতিক-সামাজিক পরিমণ্ডল গড়ে ওঠার কথা, তা ব্যাহত হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে র্যাগিংয়ে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘এন্টি র্যাগিং সেল’ পরিচালনা করা হচ্ছে। র্যাগিংয়ে নিরুৎসাহিত করা থেকে শাস্তি নিশ্চিত করা পর্যন্ত পাঁচ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে এই প্রতিষ্ঠানটি। সংগঠনের পক্ষ থেকে র্যাগিং বন্ধে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্টি র্যাগিং সেল গঠন ও র্যাগিংয়ের সঙ্গে যুক্ত সবার শাস্তির বিধান নিশ্চিত করার দাবি জানান সুমন।
No comments