সীমান্তে ধৃত বাংলাদেশি নারী ও শিশু: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অমান্য করে কারাগারে রাখার অভিযোগ
ভারতে
ধৃত বাংলাদেশি নারী ও শিশুদের আইনভঙ্গ করে কারাগারে রাখার অভিযোগ করেছেন
বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে
পাঠানো এক অভিযোগপত্রে মাসুম অভিযোগ করেছে, সীমান্তে আটক বাংলাদেশি নারী ও
শিশুদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করে তাদের ফরেনার্স আইনে সোপর্দ করা হচ্ছে।
মাসুমের আরও অভিযোগ, নারী ও শিশুদের যেখানে হোমে রাখার কথা তা না করে এদের
সাধারণ কারাগারে রাখা হচ্ছে। এই ঘটনা নিয়মিত ঘটে চলেছে বলে অভিযোগ জানিয়ে
মাসুমের সম্পাদক বিপ্লব মুখার্জি বলেছেন, এর আগেও বহুবার স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রকের নির্দেশ অমান্য করার বিষয়টি কমিশনের নজরে আনার চেষ্টা হয়েছে।
এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশের আইজি সহ জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট
বিভাগ, সব জায়গাতেই প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ পত্র পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত
কোনও সুরাহা হয় নি। তিনি বলেছেন, ২০১২ সালের মে মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রকের একটি নির্দেশ নামায় ( নং ১৪০৫১/১৪/২০১১-এফ.লঞ স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রক(ফরেনার্স ডিভিশন), ভারত সরকার তাং ১ মে, ২০১২) স্পষ্ট বলা হয়েছে,
পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া কোনও বিদেশি নারী ও শিশু ধরা পড়ার পর যদি তদন্ত করে
দেখা যায় যে সে বা তারা পাচারচক্রের শিকার হয়েছেন, তবে তাদের কোনমতেই
বিদেশি আইনে বিচার করা যাবে না। সেই সঙ্গে আরও বলা হয়েছে, তদন্তে যদি দেখা
যায় যে, বিদেশি নারী স্বেচ্ছায় ভারতে আসেন নি এবং কোনও অপরাধে নিজের ইচ্ছায়
জড়িত হন নি তবে ধৃত নারীর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কোনও চার্জশিট দিতে পারবে
না। আর যদি ফরেনার্স আইনে এরকম কাউকে চার্জশিট দেওয়া হয়ে থাকে তবে তার
বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে হবে এবং বিস্তারিত তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রকে
পাঠাতে হবে যাতে ধৃত নারী ও শিশুকে নিজের দেশে ফেরত পাঠানো যায়। কিন্তু
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই নির্দেশকে অমান্য করে প্রতিদিনই সীমান্তে বা
অন্যত্র ধৃত বাংলাদেশি নারী ও শিশুদের সাধারণ ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি
দাঁড় করিয়ে সাধারণ কারাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে অন্যান্য
মানবাধিকার সংস্থাও। তাদের মতে, ভারতে বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী
ও শিশুরা পাচার হয়ে এপারে আসেন। ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর বিএসএফ
পশ্চিমবঙ্গের স্বরূপনগর সীমান্তে লিজা আখতার(২২) ও শাহনাজ বেগম(২৪) নামে
খুলনার দুই বাংলাদেশি নারীকে তাদের ১০ বছরের ভাইপো সহ আটক করে। পরে তাদের
স্বরুপনগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হলে কোনরকম তদন্ত ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে
ফরেণার্স আইনে মামলা করে ফৌজদারি আদালতে তোলা হয়। আদালত দুই নারীকে দমদম
কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর এবং শিশুটিকে একটি হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মানবাধিকার সংগঠনের প্রশ্ন, শিশুটিকে সাধারণ আদালতে হাজির করানো হয়েছে
সম্পূর্ণ আইন ভঙ্গ করে। শিশুটির বিচার হওয়ার কথা জুভেনাইল বোর্ডে। পুলিশের
বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাংলাদেশি নারী ও শিশুদের আটক করার পরই তারা কোনরকম তদন্ত
না করে ফরেনার্স আইনে মামলা করে দায় সারেন। আর এই ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের জেলে
ও হোমে বছরের বছর আটকে রয়েছেন শয়ে শয়ে নারী এবং হোমগুলিতে রয়েছে শ’খানেকের
বেশি শিশু। এই অবস্থার প্রতিকার চেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশনামা অনুযায়ী এই ধরণের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের
দাবি জানিয়েছে মাসুম। সেই সঙ্গে ধৃত বাংলাদেশি নারী ও শিশুদের দ্রুত
বাংলাদেশে প্রত্যাবাসনেরও দাবি জানানো হয়েছে। মাসুমের আরও বক্তব্য,
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ নামা অমান্য করে যে সব পুলিশ অফিসার কাজ
করছেন তাদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে। কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেবারও দাবি জানানো হয়েছে। এ
ব্যাপারে অবশ্য কমিশনের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
No comments