বাড়ছে যক্ষ্মা রোগী by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
দেশে
বাড়ছে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে নতুন ১৯ হাজারের
বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে
সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অন্যান্য যক্ষ্মা রোগীসহ শিশু যক্ষ্মা
রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। যক্ষ্মা শনাক্তকরণের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের
কারণে এই সংখ্যা বেশি চিহ্নিত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। দেশে
যক্ষ্মা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য আশাব্যঞ্জক হলেও ওষুধ প্রতিরোধী
যক্ষ্মা বা মাল্টি ড্রাগ রেজিসটেন্ট টিউবারকিউলোসিস (এমডিআর) নিয়ন্ত্রণ
এখনও বড় একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে কারণ হলো ডায়াগনসিস
সংক্রান্ত জটিলতা। এখনও এ ধরনের রোগীদের আনুমানিক ৮০ শতাংশই শনাক্তের বাইরে
থাকছে। আর সব ধরনের যক্ষ্মা চিকিৎসার আওতা-বহির্ভূত থাকছে ৩৩ শতাংশ রোগী।
তবে, শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও জীবাণুযুক্ত ফুসফুসে যক্ষ্মার
চিকিৎসায় সাফল্যের হার (৯৫ শতাংশ) সন্তোষজনক।
২০১৫ সালে যেখানে শিশু যক্ষ্মা রোগী ছিল ৭ হাজার ৯৮৪ জন, সেখানে ২০১৭ সালে তা বেড়ে নতুন দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬২ জন। শতকরা হিসেবে দুই বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৬ শতাংশের ওপরে। শিশুসহ ২০১৬ সালে দেশে শনাক্তকৃত মোট যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ২৯০ জন। আর ২০১৭ সালে তা দাঁড়ায় ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৬৮ জন। ২২শে মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ব্র্যাক ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থাসমূহ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এমডিআর রোগী শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে যে সংখ্যক জিন এক্সপার্ট মেশিন থাকার কথা, তা নেই। তাছাড়া সচেতনতার অভাব ও চিকিৎসাব্যয় বেশি বলে অনেকের পক্ষে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে এর সফলতা তুলনামূলক কম।
ব্র্যাকের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিস্ট ডা. মো. আবুল খায়ের বাশার এক প্রবন্ধে ২০১৭ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল টিবি রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রতি লাখে যক্ষ্মার কারণে মৃত্যু হয় ৪০ জনের। প্রতি বছর প্রতি লাখে নতুন যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ২২১ জন। কফে জীবাণুযুক্ত ফুসফুসের যক্ষ্মা চিকিৎসার সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশ। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা চিকিৎসার সাফল্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরো অগ্রগামী। এক্ষেত্রে বিশ্বে যেখানে সাফল্যের হার ৫৪ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে সাফল্যের হার ৭৭ শতাংশ। এই রোগ নির্মূল করতে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০৩৫ সালে যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ ও প্রকোপের হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায় সরকার। এলক্ষ্যে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে ব্র্যাকসহ ২৭টি বেসরকারি সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর আরও এক লাখের বেশি যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের বাইরে থাকে। এই হিসাব মিলে এই সংখ্যা ১৫ থেকে ১৭ লাখ ওপরে হবে। আক্রান্তদের মধ্যে প্রতিজনের দুই বছর মেয়াদি চিকিৎসায় সরকারের খরচ হয় ৩ লাখ টাকা। টিবি বিশেষজ্ঞরা বলেন, যক্ষ্মা একটি বায়ুবাহিত রোগ। মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। যক্ষ্মা দুই রকম। ফুসফুসের যক্ষ্মা এবং ফুসফুস বহির্ভূত যক্ষ্মা। যক্ষ্মা রোগের প্রাথমিক লক্ষণ কাশি ও জ্বর। ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়ায় খাওয়ার রুচি থাকে না। শরীরের যেকোনো স্থানে যক্ষ্মা রোগ হতে পারে। তবে শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ যক্ষ্মা রোগ ছড়ায় ফুসফুসে। নিয়মিত ওষুধ সেবন ও চিকিৎসকের পরামর্শে এ রোগ ভালো হয়। তিন সপ্তাহ বা তার অধিক সময় ধরে কাশি হলে পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়া একান্ত জরুরি। তারা বলেন, কফে জীবাণুযুক্ত রোগীদের আরোগ্য লাভ করার সংখ্যাই বেশি। এটি ইতিবাচক বলে তারা মন্তব্য করেন। আর বাকি ৬ শতাংশ, যারা অনিয়মিত, লস টু ফলো আপ এবং মৃত্যুবরণ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) পরিসংখ্যান মতে, ২০১৫ সালে ২ লাখ ৬ হাজার ৯১৫ জন, ২০১৪ সালে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৭ জন, ২০১৩ সালে ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৯৩ জন, ২০১২ সালে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৭ জন এবং ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৭ জন। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক এক অধ্যাপক বলেন, টিবি রোগীর একটি সংখ্যা শনাক্ত না হওয়ার বিষয়টি সঠিক। এজন্য টিবি রোগীর সঠিক সংখ্যা বলা কঠিন। তিনি বলেন, এটা প্রি-ডায়াগনসিস ও পোস্ট ডায়াগনসিস হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। যক্ষ্মা রোগীর যে সংখ্যাটা শনাক্তের বাইরে থাকছে- এটা অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয়। এতে সমাজের ক্ষতি হবে। রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতাও। সংশ্লিষ্টদের এদিকে নজর দিতে হবে বলে তিনি পরামর্শ দেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দেশে আগামীকাল বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালন করা হচ্ছে। এবারের যক্ষ্মা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- নেতৃত্ব চাই যক্ষ্মা নির্মূলে, ইতিহাস গড়ি সবাই মিলে।’
২০১৫ সালে যেখানে শিশু যক্ষ্মা রোগী ছিল ৭ হাজার ৯৮৪ জন, সেখানে ২০১৭ সালে তা বেড়ে নতুন দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬২ জন। শতকরা হিসেবে দুই বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৬ শতাংশের ওপরে। শিশুসহ ২০১৬ সালে দেশে শনাক্তকৃত মোট যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ২৯০ জন। আর ২০১৭ সালে তা দাঁড়ায় ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৬৮ জন। ২২শে মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ব্র্যাক ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থাসমূহ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এমডিআর রোগী শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে যে সংখ্যক জিন এক্সপার্ট মেশিন থাকার কথা, তা নেই। তাছাড়া সচেতনতার অভাব ও চিকিৎসাব্যয় বেশি বলে অনেকের পক্ষে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে এর সফলতা তুলনামূলক কম।
ব্র্যাকের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিস্ট ডা. মো. আবুল খায়ের বাশার এক প্রবন্ধে ২০১৭ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল টিবি রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রতি লাখে যক্ষ্মার কারণে মৃত্যু হয় ৪০ জনের। প্রতি বছর প্রতি লাখে নতুন যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ২২১ জন। কফে জীবাণুযুক্ত ফুসফুসের যক্ষ্মা চিকিৎসার সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশ। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা চিকিৎসার সাফল্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরো অগ্রগামী। এক্ষেত্রে বিশ্বে যেখানে সাফল্যের হার ৫৪ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে সাফল্যের হার ৭৭ শতাংশ। এই রোগ নির্মূল করতে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০৩৫ সালে যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ ও প্রকোপের হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায় সরকার। এলক্ষ্যে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে ব্র্যাকসহ ২৭টি বেসরকারি সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর আরও এক লাখের বেশি যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের বাইরে থাকে। এই হিসাব মিলে এই সংখ্যা ১৫ থেকে ১৭ লাখ ওপরে হবে। আক্রান্তদের মধ্যে প্রতিজনের দুই বছর মেয়াদি চিকিৎসায় সরকারের খরচ হয় ৩ লাখ টাকা। টিবি বিশেষজ্ঞরা বলেন, যক্ষ্মা একটি বায়ুবাহিত রোগ। মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। যক্ষ্মা দুই রকম। ফুসফুসের যক্ষ্মা এবং ফুসফুস বহির্ভূত যক্ষ্মা। যক্ষ্মা রোগের প্রাথমিক লক্ষণ কাশি ও জ্বর। ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়ায় খাওয়ার রুচি থাকে না। শরীরের যেকোনো স্থানে যক্ষ্মা রোগ হতে পারে। তবে শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ যক্ষ্মা রোগ ছড়ায় ফুসফুসে। নিয়মিত ওষুধ সেবন ও চিকিৎসকের পরামর্শে এ রোগ ভালো হয়। তিন সপ্তাহ বা তার অধিক সময় ধরে কাশি হলে পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়া একান্ত জরুরি। তারা বলেন, কফে জীবাণুযুক্ত রোগীদের আরোগ্য লাভ করার সংখ্যাই বেশি। এটি ইতিবাচক বলে তারা মন্তব্য করেন। আর বাকি ৬ শতাংশ, যারা অনিয়মিত, লস টু ফলো আপ এবং মৃত্যুবরণ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) পরিসংখ্যান মতে, ২০১৫ সালে ২ লাখ ৬ হাজার ৯১৫ জন, ২০১৪ সালে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৭ জন, ২০১৩ সালে ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৯৩ জন, ২০১২ সালে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৭ জন এবং ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৭ জন। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক এক অধ্যাপক বলেন, টিবি রোগীর একটি সংখ্যা শনাক্ত না হওয়ার বিষয়টি সঠিক। এজন্য টিবি রোগীর সঠিক সংখ্যা বলা কঠিন। তিনি বলেন, এটা প্রি-ডায়াগনসিস ও পোস্ট ডায়াগনসিস হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। যক্ষ্মা রোগীর যে সংখ্যাটা শনাক্তের বাইরে থাকছে- এটা অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয়। এতে সমাজের ক্ষতি হবে। রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতাও। সংশ্লিষ্টদের এদিকে নজর দিতে হবে বলে তিনি পরামর্শ দেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দেশে আগামীকাল বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালন করা হচ্ছে। এবারের যক্ষ্মা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- নেতৃত্ব চাই যক্ষ্মা নির্মূলে, ইতিহাস গড়ি সবাই মিলে।’
No comments