দেশের অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায় -স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশ কারও কাছে
হাত পেতে নয় বরং বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে এবং নিজস্ব সম্পদ দিয়েই
আত্মনির্ভরশীল হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একদিন জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা
ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবেই গড়ে উঠবে এবং বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে।
কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমাদের যতটুকু সম্পদ, তাই দিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি,
এগিয়ে যাবো। এ দেশকে আমরা আরো সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাবো। গতকাল
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পদক-২০১৮ বিতরণ অনুষ্ঠানে
প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই, আমাদের স্বাধীনতার
চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা নিয়ে এই বাংলাদেশ যে এগিয়ে
যাচ্ছে, সে যাত্রা যেন থেমে না যায়। এই যাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। ২০২১
সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ
হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে
রাজনৈতিক স্বাধীনতা এলেও জাতির পিতার অবর্তমানে অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি।
তাকে ’৭৫-এর ১৫ই আগস্ট নির্মমভাবে হত্যার পর সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের
মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। অথচ জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনে
যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তুলে তাকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে
যান। আজকে সেখান থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। তবে, যদি
জাতির পিতা বেঁচে থাকতেন তাহলে আজকে ’৭৫ এর পর ৪৩ বছর লাগতো না। আরো অনেক
আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের পর্যায়ে চলে যেতে পারতো। অনুষ্ঠানে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল
দেশের তালিকায় আসা বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে এরই মধ্যে সম্মানজনক অবস্থানে
এসেছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন,
‘উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে জাতিসংঘের তিনটি শর্তের মধ্যে দুটো শর্ত পূরণ করা
হলেই স্বীকৃতি পাওয়া যায়। আমরা তিনটি শর্ত বড় ব্যবধানে পূরণ করতে পেরেছি।
জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় (জিএনআই) হবে
১,২৩০ ডলার অথবা আরো বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয়
দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬১০ ডলার। একটি দেশের মানবসম্পদ সূচক, হিউম্যান অ্যাসেটস
ইনডেস্ক (এইচএআই) অবশ্যই ৬৬ অথবা বেশি এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, ইকোনমিক
ভালনারেবিলিটি ইনডেস্ক (ইভিআই) ৩২ অথবা নিচে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে
বাংলাদেশের সূচক যথাক্রমে ৭২ দশমিক ৯ এবং ২৪ দশমিক ৮। প্রধানমন্ত্রী বলেন,
গত বছর ইউনেস্কো জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্য দলিলের অমূল্য
অংশ হিসেবে তাদের মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
৭ই মার্চের ভাষণ তাই এখন শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নয়, এটি বিশ্বের সম্পদ।
একাত্তরের ২৫শে মার্চের কাল রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ ও
নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ২৬শে মার্চের
প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যে ঘোষণা
তৎকালীন ইপিআর-এর (বর্তমান বিজিবি) ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে
পড়ে। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত (২০০৫-০৬) সরকারের সর্বশেষ বছর থেকে
বর্তমানে তার সরকারের শাসনে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে
বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার
যা বর্তমানে ১,৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১
দশমিক ৫ শতাংশ যা বর্তমানে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। জিডিপি ছিল ৫ দশমিক ৪০
শতাংশ বর্তমানে যা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৫
বিলিয়ন ডলার বর্তমানে যা ৩৪ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। জিডিপির
আকার ছিল ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা যা বর্তমানে হয়েছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার
৮১৭ কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে
৩৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি ডাবল ডিজিট থেকে নেমে বছরের এ সময়
নাগাদ ৫ দশমিক ৭ ভাগ হয়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ বেড়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার
হয়েছে। আমাদের বাজেট অতীতের থেকে চারগুণের বেশি বেড়ে বর্তমানে ৪ লাখ ২৬৬
কোটি টাকা হয়েছে। এডিপি ১৯ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি
টাকা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩২শ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের
উপরে হয়েছে। তিনি বলেন, যদিও তার সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতা ত্যাগের সময় দেশে
বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াট। বিএনপি পরবর্তী ৫ বছরে ১
ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে উল্টো প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট কমিয়ে ফেলে।
বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে উল্লেখ করে
প্রধানমন্ত্রী ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিতে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে
এবং দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বহুমুখী করেছে বলেও উল্লেখ করেন।
স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত ১৮ জন
এ বছর সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরসহ ১৮ জনকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা এই স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, উন্নয়নসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এই পদক প্রদান করা হয়। এ বছর যারা স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন, তারা হচ্ছেন- কাজী জাকির হাসান (মরণোত্তর), শহীদ বুদ্ধিজীবী এসএমএ রাশীদুল হাসান (মরণোত্তর), শংকর গোবিন্দ চৌধুরী (মরণোত্তর), এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীরউত্তম-এসিএসসি (অব.), এম আবদুর রহিম (মরণোত্তর), ভূপতি ভূষণ চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ লে. মো. আনোয়ারুল আজিম (মরণোত্তর), হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ আমানুল্লাহ্ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (মরণোত্তর), শহীদ মতিউর রহমান মল্লিক (মরণোত্তর), শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক (মরণোত্তর), আমজাদুল হক, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, কৃষি সাংবাদিকতায় চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ, চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডা. এ কে এম ডি আহসান আলী, সমাজসেবায় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, সাহিত্যে সেলিনা হোসেন ও খাদ্যনিরাপত্তায় ড. মো. আবদুল মজিদ। পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন তারা নিজে এবং মরণোত্তর পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবং পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পুরস্কার প্রদানের মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশ ও জাতির প্রতি তাদের কর্তব্যবোধ আরো জাগ্রত হবে। তারা এই দেশকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং স্বাধীনতা পদক বিজয়ীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন। এ পর্যন্ত ২৪৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে ৩ লাখ টাকার চেক, ১৮ ক্যারেট সোনার একটি পদক ও সনদ দেয়া হয়।
স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত ১৮ জন
এ বছর সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরসহ ১৮ জনকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা এই স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, উন্নয়নসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এই পদক প্রদান করা হয়। এ বছর যারা স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন, তারা হচ্ছেন- কাজী জাকির হাসান (মরণোত্তর), শহীদ বুদ্ধিজীবী এসএমএ রাশীদুল হাসান (মরণোত্তর), শংকর গোবিন্দ চৌধুরী (মরণোত্তর), এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীরউত্তম-এসিএসসি (অব.), এম আবদুর রহিম (মরণোত্তর), ভূপতি ভূষণ চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ লে. মো. আনোয়ারুল আজিম (মরণোত্তর), হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ আমানুল্লাহ্ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (মরণোত্তর), শহীদ মতিউর রহমান মল্লিক (মরণোত্তর), শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক (মরণোত্তর), আমজাদুল হক, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, কৃষি সাংবাদিকতায় চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ, চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডা. এ কে এম ডি আহসান আলী, সমাজসেবায় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, সাহিত্যে সেলিনা হোসেন ও খাদ্যনিরাপত্তায় ড. মো. আবদুল মজিদ। পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন তারা নিজে এবং মরণোত্তর পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবং পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পুরস্কার প্রদানের মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশ ও জাতির প্রতি তাদের কর্তব্যবোধ আরো জাগ্রত হবে। তারা এই দেশকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং স্বাধীনতা পদক বিজয়ীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন। এ পর্যন্ত ২৪৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে ৩ লাখ টাকার চেক, ১৮ ক্যারেট সোনার একটি পদক ও সনদ দেয়া হয়।
No comments