মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ফিরিয়ে দিন আমার শৈশব by শামীমুল হক
মাননীয়
শিক্ষামন্ত্রী, ফিরিয়ে দিন আমার শৈশব। আনন্দ, উল্লাস। ফিরিয়ে দিন জীবনের
গুরুত্বপূর্ণ ছেলেবেলা। পারবেন কি হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি ঘণ্টা, দিন, মাস,
বছরের হিসাব দিতে? যদি প্রশ্ন করি মাননীয় মন্ত্রী, আপনার ছেলেবেলা কিভাবে
কেটেছে? আমাদের মতো বুঝতে না বুঝতেই বইয়ের বোঝা কাঁধে নিয়ে? আমার মতো আপনার
মা কি ভোর ৫টায় ঘুম থেকে আপনাকে টেনে তুলেছে? সূর্যের হাসিও কি বিদ্যালয়ের
ক্লাসরুমে বসেই দেখতে হয়েছে? দিনরাত পড়া আর পড়ায় আমার মতো আপনিও কি ব্যস্ত
থেকেছেন? খেলাধুলার ইচ্ছাও কি আমার মতো আপনিও বিসর্জন দিয়েছিলেন? এই ছোট্ট
বয়সে বেড়াতে যাওয়াও জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। যদি উত্তর- না হয়, তাহলে
আমাদের জীবনে কেন শৈশব বলে কিছু রইলো না? কেন আমরা গ্রামের মেঠো পথে ভোরে
খালি পায়ে হাঁটতে পারি না? কেন আমাদের পায়ে কেডস আর শরীরে স্কুল ড্রেস চেপে
দৌড়াতে হয় বিদ্যালয়ে? কেন আমাদের ঘাড়ে চাপানো হলো জিপিএ-৫ নামক এক
বিষফোঁড়া। যে ফোঁড়া আমাদের জীবনকে করে দিয়েছে তছনছ।
আনন্দকে চিরদিনের মতো ঠেলে দিয়েছে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে। কেন পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে আমাদের জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে? এত কেন-এর উত্তর জানতে ইচ্ছে করে মাননীয় মন্ত্রী। কারণ যখন আমার পিতা-মাতার কাছে শুনি তাদের শৈশবের উল্লাসের কথা, যখন তাদের মুখে শুনি বিকালের মাঠে গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্দা, বউছি, কুতকুত, দড়িলাফসহ নানা খেলার কথা, তখন আমাদের মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আমাদেরও মন চায় শৈশবকে এনজয় করতে। আমাদেরও মন চায় দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠের আইল ধরে হেঁটে বেড়াতে। আমাদেরও মন চায় বাড়ির উঠানে মাদুর পেতে বসে রাতের চাঁদ দেখতে। আর দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানীর মুখে কিস্সা শুনতে। আমি শুনেছি, আপনাদের সময় এসবই ছিল চিত্র। সে সময় শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বিকালে ফিরে সবাই ছুটতেন খেলার মাঠে। সন্ধ্যায় যখন আজান পড়তো সঙ্গে সঙ্গে খেলা বন্ধ করে সবাই যার যার বাড়ি চলে যেতেন। তারপর হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসতেন। কারণ তখন জিপিএ-৫ নামক বিষফোঁড়া আপনাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ক্লাস ফাইভে যে পিইসি পরীক্ষা চালু করেছেন এ ব্যবস্থাও আমাদের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। আমাদের অভিভাবকরা জিপিএ-৫ এবং সমাপনী পরীক্ষা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। বইয়ের বাইরের কোনো জ্ঞান আমরা অর্জন করতে পারি না। মাননীয় মন্ত্রী আপনি নিশ্চয় আমার সঙ্গে একমত হবেন যে, শিশুরা যত বেশি বাইরে ঘুরবে ততবেশি তাদের বুদ্ধি খুলবে। কিন্তু আপনার আমলে এসব যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আপনার শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের জীবন স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট আর বাসার মধ্যে আবদ্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় ঠিকমতো ঘুমুতেও পারি না আমরা শিশুরা। ফলে ঘরকুনো হয়ে পড়ছি। আত্মীয়স্বজন ও রক্তের সম্পর্কীয় চাচা, ফুফু, মামা, খালাকেও ভালোবাসতে পারি না। তাদের প্রতি কোনো প্রেমও জন্মায় না। এছাড়া পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে ধুমধাম করে। কিন্তু এ পরীক্ষার সার্টিফিকেট তো কোনো কাজেই আসছে না। চাকরি, উচ্চশিক্ষা কোনো কাজেই এ দুটি পরীক্ষার সার্টিফিকেট চাওয়া হয় না। এসএসসি সার্টিফিকেট থেকেই মূল্যায়ন শুরু হয় সার্টিফিকেটের। এখানেও প্রশ্ন জাগে- যে সার্টিফিকেটের কোনো মূল্যই নেই তাহলে এত ঘটা করে এ সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য পরীক্ষার প্রয়োজন কি? মাননীয় মন্ত্রী একটি কথা বলতে চাই, যে শৈশব হওয়ার কথা দুরন্ত, ঝলমলে, উজ্জ্বল। সেই শৈশবকে আপনি করে দিয়েছেন চিন্তাযুক্ত, আবদ্ধ আর অন্ধকার। আপনি আপনার শৈশব আর আমার শৈশবকে কি কখনো মিলিয়ে দেখেছেন। একবার চোখ বুঝুন তো। দেখুন, খেয়াল করুন আপনার শৈশব কিভাবে কেটেছে। কিভাবে আপনি শীতের সকালে পিঠা আর পুলির গন্ধে নিজে শিহরিত হয়েছেন। নিশ্চয় আমার মায়ের মতো আপনার মা আপনাকে ঘুম থেকে তুলে টেনে হিঁচড়ে স্কুলে নিয়ে যায়নি। আবার স্কুল থেকে আসার পর তাড়াতাড়ি কিছু মুখে দিয়ে পড়ার টেবিলে জোর করে বসায়নি। যদি এমনটা না করে আপনি দেশের সম্পদ হতে পারেন তাহলে আমরা কেন আপনার ছোট্ট সময়ের মতো লেখাপড়া করে, আনন্দ করে, শৈশবকে শৈশবের মতো কাটিয়ে দেশের সম্পদ হতে পারবো না। বলতে পারবেন কি? শেষ করতে চাই মাননীয় মন্ত্রী এই বলে, আমাদের শৈশব ফিরিয়ে দিন। আমাদের কোমল হৃদয়কে নিজের মতো করে ভালোবাসতে দিন। দেখবেন আপনার স্বপ্ন এমনিতেই পূরণ হবে। এমনটা হলে আমরা শিশুরা আপনাকে মনে রাখবো আজীবন। হাজারো শিশু ফিরে পাবে তার শৈশব।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: শিক্ষামন্ত্রী আপনি হয়তো বলবেন, এটা আপনার দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের অধীন নয়। এটা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। কিন্তু আমরা বলতে চাই, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে আপনার পরিকল্পনা নিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আপনাকেই ভাবতে হবে। আর এবছর তো প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পাশাপাশি ফলও ফাঁস হয়েছে। আরো কত কি ঘটবে কে জানে? তাই বলছি, আর দেরি নয়, আমার শৈশব ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি প্রশ্নফাঁস বন্ধ করুন। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই। সত্যিকারের মেধাবীরা এগিয়ে যাক। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষায় পাস করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই।
আনন্দকে চিরদিনের মতো ঠেলে দিয়েছে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে। কেন পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে আমাদের জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে? এত কেন-এর উত্তর জানতে ইচ্ছে করে মাননীয় মন্ত্রী। কারণ যখন আমার পিতা-মাতার কাছে শুনি তাদের শৈশবের উল্লাসের কথা, যখন তাদের মুখে শুনি বিকালের মাঠে গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্দা, বউছি, কুতকুত, দড়িলাফসহ নানা খেলার কথা, তখন আমাদের মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আমাদেরও মন চায় শৈশবকে এনজয় করতে। আমাদেরও মন চায় দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠের আইল ধরে হেঁটে বেড়াতে। আমাদেরও মন চায় বাড়ির উঠানে মাদুর পেতে বসে রাতের চাঁদ দেখতে। আর দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানীর মুখে কিস্সা শুনতে। আমি শুনেছি, আপনাদের সময় এসবই ছিল চিত্র। সে সময় শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বিকালে ফিরে সবাই ছুটতেন খেলার মাঠে। সন্ধ্যায় যখন আজান পড়তো সঙ্গে সঙ্গে খেলা বন্ধ করে সবাই যার যার বাড়ি চলে যেতেন। তারপর হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসতেন। কারণ তখন জিপিএ-৫ নামক বিষফোঁড়া আপনাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ক্লাস ফাইভে যে পিইসি পরীক্ষা চালু করেছেন এ ব্যবস্থাও আমাদের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। আমাদের অভিভাবকরা জিপিএ-৫ এবং সমাপনী পরীক্ষা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। বইয়ের বাইরের কোনো জ্ঞান আমরা অর্জন করতে পারি না। মাননীয় মন্ত্রী আপনি নিশ্চয় আমার সঙ্গে একমত হবেন যে, শিশুরা যত বেশি বাইরে ঘুরবে ততবেশি তাদের বুদ্ধি খুলবে। কিন্তু আপনার আমলে এসব যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আপনার শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের জীবন স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট আর বাসার মধ্যে আবদ্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় ঠিকমতো ঘুমুতেও পারি না আমরা শিশুরা। ফলে ঘরকুনো হয়ে পড়ছি। আত্মীয়স্বজন ও রক্তের সম্পর্কীয় চাচা, ফুফু, মামা, খালাকেও ভালোবাসতে পারি না। তাদের প্রতি কোনো প্রেমও জন্মায় না। এছাড়া পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে ধুমধাম করে। কিন্তু এ পরীক্ষার সার্টিফিকেট তো কোনো কাজেই আসছে না। চাকরি, উচ্চশিক্ষা কোনো কাজেই এ দুটি পরীক্ষার সার্টিফিকেট চাওয়া হয় না। এসএসসি সার্টিফিকেট থেকেই মূল্যায়ন শুরু হয় সার্টিফিকেটের। এখানেও প্রশ্ন জাগে- যে সার্টিফিকেটের কোনো মূল্যই নেই তাহলে এত ঘটা করে এ সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য পরীক্ষার প্রয়োজন কি? মাননীয় মন্ত্রী একটি কথা বলতে চাই, যে শৈশব হওয়ার কথা দুরন্ত, ঝলমলে, উজ্জ্বল। সেই শৈশবকে আপনি করে দিয়েছেন চিন্তাযুক্ত, আবদ্ধ আর অন্ধকার। আপনি আপনার শৈশব আর আমার শৈশবকে কি কখনো মিলিয়ে দেখেছেন। একবার চোখ বুঝুন তো। দেখুন, খেয়াল করুন আপনার শৈশব কিভাবে কেটেছে। কিভাবে আপনি শীতের সকালে পিঠা আর পুলির গন্ধে নিজে শিহরিত হয়েছেন। নিশ্চয় আমার মায়ের মতো আপনার মা আপনাকে ঘুম থেকে তুলে টেনে হিঁচড়ে স্কুলে নিয়ে যায়নি। আবার স্কুল থেকে আসার পর তাড়াতাড়ি কিছু মুখে দিয়ে পড়ার টেবিলে জোর করে বসায়নি। যদি এমনটা না করে আপনি দেশের সম্পদ হতে পারেন তাহলে আমরা কেন আপনার ছোট্ট সময়ের মতো লেখাপড়া করে, আনন্দ করে, শৈশবকে শৈশবের মতো কাটিয়ে দেশের সম্পদ হতে পারবো না। বলতে পারবেন কি? শেষ করতে চাই মাননীয় মন্ত্রী এই বলে, আমাদের শৈশব ফিরিয়ে দিন। আমাদের কোমল হৃদয়কে নিজের মতো করে ভালোবাসতে দিন। দেখবেন আপনার স্বপ্ন এমনিতেই পূরণ হবে। এমনটা হলে আমরা শিশুরা আপনাকে মনে রাখবো আজীবন। হাজারো শিশু ফিরে পাবে তার শৈশব।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: শিক্ষামন্ত্রী আপনি হয়তো বলবেন, এটা আপনার দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের অধীন নয়। এটা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। কিন্তু আমরা বলতে চাই, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে আপনার পরিকল্পনা নিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আপনাকেই ভাবতে হবে। আর এবছর তো প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পাশাপাশি ফলও ফাঁস হয়েছে। আরো কত কি ঘটবে কে জানে? তাই বলছি, আর দেরি নয়, আমার শৈশব ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি প্রশ্নফাঁস বন্ধ করুন। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই। সত্যিকারের মেধাবীরা এগিয়ে যাক। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষায় পাস করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই।
No comments