সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশের গ্রাম্যবধূর আর্তি by রোকনুজ্জামান পিয়াস
বাংলাদেশের
সহজ-সরল এক গ্রাম্যবধূ। তিনি এখন সৌদি আরবের যৌনদাসী। তাকে দিয়ে দালালরা
যৌন ব্যবসা করিয়ে যাচ্ছে গত প্রায় সাড়ে তিনমাস ধরে। সৌদি নিয়ে যাওয়ার পর
থেকেই তাকে দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে। ওই নারী জানান, সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে
তিন-চার দিনের জন্য বিক্রি করে দেয়া হয়। এরপর আবার ফেরত আনা হয়।
একদিন বা দু’দিন অফিসে রেখে আবারো পাঠিয়ে দেয়া হয় নতুন কোনো খদ্দেরের কাছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত হাতবদল হচ্ছেন বরিশালের এই নারী। বিনিময়ে পকেট ভরছে সৌদি আরব ও বাংলাদেশি দালালদের। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, এই অর্থের ৭০ ভাগ ভোগ করে সৌদি দালালরা। বাকি ৩০ ভাগ চলে যায় বাংলাদেশি দালালদের পকেটে। নির্যাতিত এই নারী এখন অনেকটা অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছেন। দেশে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। মোবাইল ফোনে স্বামীকে তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘আমাকে ওরা (রিক্রুটিং এজেন্সি) বিক্রি করে দিয়েছে।’ ‘মন চাইলে দেশে নিয়ে যাইয়েন, না চাইলে দরকার নেই। ইচ্ছা হইলে ফোন দিয়েন, না হইলে কিচ্ছু করার নেই। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। কিছু নেইও আমার।’ স্বামীর অভিযোগ, বিএমইটিতে অভিযোগ দেয়ায় তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে স্ত্রীকে ফেরত আনতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) একাধিকবার অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স স্টানফোর্ড এমপ্লয়মেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডকে (আরএল নং ১৩৫২) চিঠি দিলেও কর্ণপাত করেনি তারা। সর্বশেষ গত ২৬শে ডিসেম্বর আরো একটি চিঠি দেয় ব্যুরো। তাতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ওই নারীকে ফেরত আনতে আলটিমেটাম দেয়া হয়। অন্যথায়, রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিবাসী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। তবে এ চিঠি প্রেরণের ৭দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এজেন্সিটি।
নির্যাতিত নারীর স্বামী, ও বিএমইটিতে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২২শে নভেম্বর ফকিরাপুলের ডিআইটি রোডে অবস্থিত মেসার্স স্টানফোর্ড এমপ্লয়মেন্ট প্রা: লি: নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যান ওই নারী। সৌদি আরব যাওয়ার পর তাকে প্রথমে সেদেশের ‘আজিল অফিস ফর রিক্রুটিং’ নামে একটি অফিসে রাখা হয়। এর তিনদিন পর স্বামীকে ফোন করেন তিনি। ওই সময় তিনি বলেন, ‘তুমি আমারে কোন বিদেশে পাঠাইলা, রাজু (রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি) আমাকে বিক্রি করে দিছে।’ জানান, তাকে গৃহকর্মীর কাজ দেয়া হয়নি। তাকে দিয়ে দেহব্যবসা করানো হচ্ছে। রাজি না হলে মারধর করে। এরপর আর কোনো কথা হয়নি। বহু চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলতে পারেনি। নির্যাতিত নারীর স্বামী বলেন, এ ঘটনার পর তিনি ফকিরাপুলের স্টানফোর্ড এজেন্সিতে যোগাযোগ করেন। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এজেন্সির অফিসে সকালে গেলে তারা বলতো দুুুপুরে কথা বলা যাবে। তাদের কথামতো দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। দুপুরে বলতো, বিকাল বা সন্ধ্যায় কথা বলা যাবে। এভাবে যখন রাত হয়ে যেতো, বলতো আজ আর সম্ভব না। অফিস বন্ধ হয়ে যাবে। এভাবে বেশ কয়েকদিন তাদের অফিসে যান স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য। কিন্তু তারা তাকে কথা বলিয়ে না দিলেও বলে তার বউ ভালো আছে। তিনি বলেন, এর একমাস পর বাংলাদেশি মিম বেগম নামে এক নারীর মোবাইল ফোন দিয়ে তার স্ত্রী ফোন দেয়। সে তার ওপর চালানো নির্যাতনের কথা বলে। এমনকি মিম বেগমও এ দুর্ভোগের কথা শুনে তাকে ফোন করে বউকে ফেরত নিয়ে আসতে বলে। মিম বেগম তখন দেশে ফেরত আসার জন্য ওই অফিসে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি ওই অফিসে অবস্থানকালেই এক সৌদি ব্যক্তি তার স্ত্রীর ওপর যৌন নির্যাতন চালায়। এ ঘটনা তিনি ভিডিও করেন। অফিসের একজন ভিডিও করার এই দৃশ্য দেখে ফেলে। পরে মিম বেগমের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। তবে তার আগে তিনি মেমোরি কার্ড বের করে নেন। পরবর্তীতে দেশে ফেরার পর সেগুলো নির্যাতিত নারীর স্বামীর কাছে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে নির্যাতিত নারীর স্বামী বিএমইটিতে অভিযোগ দায়ের করেন। গত ২৮শে নভেম্বর দেয়া ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী সৌদি আরবে যাওয়ার পর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সে জ্বালা যন্ত্রণা ভোগ করছে। এমনকি খাবারও ঠিকমতো দেয়া হয় না। বর্তমানে সৌদির মক্তবে বাথরুমে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অভিযোগে তিনি বলেন, এ তথ্য আমি মিম বেগমের কাছ থেকে পাই। কারণ তিনি আগে থেকেই সৌদিতে অবস্থান করছিলেন। ওই মক্তবেই তার স্ত্রীর দেখা হয়েছিলো। সে সময় তার মাধ্যমে স্ত্রীর খবর জানতে পারি। বর্তমানে মিম বেগম চলে এসেছে এবং তার মুখে আমার স্ত্রীর নির্যাতনের কথা বিস্তারিত জানতে পারি। নির্যাতিত নারীর স্বামী অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, তিনি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে স্ত্রীর অবস্থান জানতে চাইলে তারা আমাকে গালিগালাজ করে। আর বলে, ২ বছরের আগে তোর স্ত্রীকে ফেরত আনা যাবে না, কারণ সে আমাদের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করে গেছে। তুই যদি শেখ হাসিনার কাছেও বিচার দিস, তাহলেও পারবি না। এই কথাগুলো তার মোবাইলে রেকর্ড আছে বলেও বিএমইটিতে দেয়া অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে ওই নারীর সঙ্গে তার স্বামীর কথোপকথনের রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, তাকে সংশ্লিষ্ট অফিসে রাখা হয়। সেখান থেকে কোনো সৌদির সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারা বাসাবাড়ি বা অন্য কোনো জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালায়। রাজি না হলে মারধর করে। ওই নারী আরো জানায়, অনেক সময় ৩-৪ জন পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। নির্ধারিত এ সময় পর তাকে আবারো আজিল অফিস ফর রিক্রুটিং নামের ওই অফিসে ফেরত নিয়ে আসা হয়। তার নির্যাতিত স্ত্রী জানান, তারা তাকে ৫-৭ দিনের জন্য কন্ট্রাকে বিক্রি করে দেয়। এভাবে চলতে থাকে। এমনকি নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির ভেতরেও তারা তাকে ধর্ষণ করে। তিনি বলেন, বিদেশে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তাকে কোনো টাকা দেয়া হয়নি। এই টাকা বাংলাদেশি ও সৌদির দালালরা ভাগাভাগি করে নেয়।
অপরদিকে সম্প্রতি দেশে ফিরে আসা মিম বেগম ওই নারীর ওপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি দেশে আসার জন্য আজিল অফিস ফর রিক্রুটিং অফিসে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয়। তার নির্যাতনের কথা শুনি। এমনকি আমরা সেখানে থাকাকালেই এক সৌদি তাকে ধর্ষণ করে। আমি সেটা গোপনে ভিডিও করি। কিন্তু অফিসের একজন দেখে ফেলায় আমার মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। তবে তার আগে মেমোরি কার্ড খুলে নিয়ে নেই। তিনি আরো বলেন, আমার মোবাইলটির দাম বাংলাদেশি টাকায় ৪৫ হাজার টাকা। তিনি দীর্ঘদিন ওই দেশে গৃহকর্মীর কাজ করে দেশে ফিরে আসছিলেন। তিনি বলেন, আমি নিজেও মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এ ব্যাপারে জানিয়েছি।
বিএমইটি সূত্রে জানা গেছে, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে প্রথম দফায় গত ৭ই ডিসেম্বর তারা ওই নারীকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু এরপরও তাকে ফেরত আনেনি। পরে আরো একটি চিঠি দেয়া হয়। গত ২৬শে ডিসেম্বর দেয়া ওই চিঠিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ফেরত এনে বিএমইটিতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি এজেন্সিটি।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে মেসার্স স্টানফোর্ড প্রা: লি:-এর এসিস্ট্যান্ট মানেজার সুব্রত সরকার জানান, প্রথমদিকে ফেরত আনার জন্য তার স্বামী অফিসে যোগাযোগ করেছিলো। বলেছিলো, সেখানে তার ভালো লাগছে না। কিন্তু দুই বছরের চুক্তি রয়েছে তাই জরিমানা দিয়ে আনতে হবে জানালে তারা যৌন নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ আনে। এ ব্যাপারে ওই নারীর স্বামী বিএমইটিতে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি আমাদের অফিসের কর্মকর্তা শান্তদেব সাহা দেখছেন। আমরাও একটা রিপিট অভিযোগ দিয়েছি।
একদিন বা দু’দিন অফিসে রেখে আবারো পাঠিয়ে দেয়া হয় নতুন কোনো খদ্দেরের কাছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত হাতবদল হচ্ছেন বরিশালের এই নারী। বিনিময়ে পকেট ভরছে সৌদি আরব ও বাংলাদেশি দালালদের। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, এই অর্থের ৭০ ভাগ ভোগ করে সৌদি দালালরা। বাকি ৩০ ভাগ চলে যায় বাংলাদেশি দালালদের পকেটে। নির্যাতিত এই নারী এখন অনেকটা অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছেন। দেশে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। মোবাইল ফোনে স্বামীকে তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘আমাকে ওরা (রিক্রুটিং এজেন্সি) বিক্রি করে দিয়েছে।’ ‘মন চাইলে দেশে নিয়ে যাইয়েন, না চাইলে দরকার নেই। ইচ্ছা হইলে ফোন দিয়েন, না হইলে কিচ্ছু করার নেই। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। কিছু নেইও আমার।’ স্বামীর অভিযোগ, বিএমইটিতে অভিযোগ দেয়ায় তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে স্ত্রীকে ফেরত আনতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) একাধিকবার অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স স্টানফোর্ড এমপ্লয়মেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডকে (আরএল নং ১৩৫২) চিঠি দিলেও কর্ণপাত করেনি তারা। সর্বশেষ গত ২৬শে ডিসেম্বর আরো একটি চিঠি দেয় ব্যুরো। তাতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ওই নারীকে ফেরত আনতে আলটিমেটাম দেয়া হয়। অন্যথায়, রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিবাসী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। তবে এ চিঠি প্রেরণের ৭দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এজেন্সিটি।
নির্যাতিত নারীর স্বামী, ও বিএমইটিতে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২২শে নভেম্বর ফকিরাপুলের ডিআইটি রোডে অবস্থিত মেসার্স স্টানফোর্ড এমপ্লয়মেন্ট প্রা: লি: নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যান ওই নারী। সৌদি আরব যাওয়ার পর তাকে প্রথমে সেদেশের ‘আজিল অফিস ফর রিক্রুটিং’ নামে একটি অফিসে রাখা হয়। এর তিনদিন পর স্বামীকে ফোন করেন তিনি। ওই সময় তিনি বলেন, ‘তুমি আমারে কোন বিদেশে পাঠাইলা, রাজু (রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি) আমাকে বিক্রি করে দিছে।’ জানান, তাকে গৃহকর্মীর কাজ দেয়া হয়নি। তাকে দিয়ে দেহব্যবসা করানো হচ্ছে। রাজি না হলে মারধর করে। এরপর আর কোনো কথা হয়নি। বহু চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলতে পারেনি। নির্যাতিত নারীর স্বামী বলেন, এ ঘটনার পর তিনি ফকিরাপুলের স্টানফোর্ড এজেন্সিতে যোগাযোগ করেন। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এজেন্সির অফিসে সকালে গেলে তারা বলতো দুুুপুরে কথা বলা যাবে। তাদের কথামতো দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। দুপুরে বলতো, বিকাল বা সন্ধ্যায় কথা বলা যাবে। এভাবে যখন রাত হয়ে যেতো, বলতো আজ আর সম্ভব না। অফিস বন্ধ হয়ে যাবে। এভাবে বেশ কয়েকদিন তাদের অফিসে যান স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য। কিন্তু তারা তাকে কথা বলিয়ে না দিলেও বলে তার বউ ভালো আছে। তিনি বলেন, এর একমাস পর বাংলাদেশি মিম বেগম নামে এক নারীর মোবাইল ফোন দিয়ে তার স্ত্রী ফোন দেয়। সে তার ওপর চালানো নির্যাতনের কথা বলে। এমনকি মিম বেগমও এ দুর্ভোগের কথা শুনে তাকে ফোন করে বউকে ফেরত নিয়ে আসতে বলে। মিম বেগম তখন দেশে ফেরত আসার জন্য ওই অফিসে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি ওই অফিসে অবস্থানকালেই এক সৌদি ব্যক্তি তার স্ত্রীর ওপর যৌন নির্যাতন চালায়। এ ঘটনা তিনি ভিডিও করেন। অফিসের একজন ভিডিও করার এই দৃশ্য দেখে ফেলে। পরে মিম বেগমের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। তবে তার আগে তিনি মেমোরি কার্ড বের করে নেন। পরবর্তীতে দেশে ফেরার পর সেগুলো নির্যাতিত নারীর স্বামীর কাছে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে নির্যাতিত নারীর স্বামী বিএমইটিতে অভিযোগ দায়ের করেন। গত ২৮শে নভেম্বর দেয়া ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী সৌদি আরবে যাওয়ার পর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সে জ্বালা যন্ত্রণা ভোগ করছে। এমনকি খাবারও ঠিকমতো দেয়া হয় না। বর্তমানে সৌদির মক্তবে বাথরুমে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অভিযোগে তিনি বলেন, এ তথ্য আমি মিম বেগমের কাছ থেকে পাই। কারণ তিনি আগে থেকেই সৌদিতে অবস্থান করছিলেন। ওই মক্তবেই তার স্ত্রীর দেখা হয়েছিলো। সে সময় তার মাধ্যমে স্ত্রীর খবর জানতে পারি। বর্তমানে মিম বেগম চলে এসেছে এবং তার মুখে আমার স্ত্রীর নির্যাতনের কথা বিস্তারিত জানতে পারি। নির্যাতিত নারীর স্বামী অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, তিনি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে স্ত্রীর অবস্থান জানতে চাইলে তারা আমাকে গালিগালাজ করে। আর বলে, ২ বছরের আগে তোর স্ত্রীকে ফেরত আনা যাবে না, কারণ সে আমাদের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করে গেছে। তুই যদি শেখ হাসিনার কাছেও বিচার দিস, তাহলেও পারবি না। এই কথাগুলো তার মোবাইলে রেকর্ড আছে বলেও বিএমইটিতে দেয়া অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে ওই নারীর সঙ্গে তার স্বামীর কথোপকথনের রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, তাকে সংশ্লিষ্ট অফিসে রাখা হয়। সেখান থেকে কোনো সৌদির সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারা বাসাবাড়ি বা অন্য কোনো জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালায়। রাজি না হলে মারধর করে। ওই নারী আরো জানায়, অনেক সময় ৩-৪ জন পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। নির্ধারিত এ সময় পর তাকে আবারো আজিল অফিস ফর রিক্রুটিং নামের ওই অফিসে ফেরত নিয়ে আসা হয়। তার নির্যাতিত স্ত্রী জানান, তারা তাকে ৫-৭ দিনের জন্য কন্ট্রাকে বিক্রি করে দেয়। এভাবে চলতে থাকে। এমনকি নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির ভেতরেও তারা তাকে ধর্ষণ করে। তিনি বলেন, বিদেশে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তাকে কোনো টাকা দেয়া হয়নি। এই টাকা বাংলাদেশি ও সৌদির দালালরা ভাগাভাগি করে নেয়।
অপরদিকে সম্প্রতি দেশে ফিরে আসা মিম বেগম ওই নারীর ওপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি দেশে আসার জন্য আজিল অফিস ফর রিক্রুটিং অফিসে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয়। তার নির্যাতনের কথা শুনি। এমনকি আমরা সেখানে থাকাকালেই এক সৌদি তাকে ধর্ষণ করে। আমি সেটা গোপনে ভিডিও করি। কিন্তু অফিসের একজন দেখে ফেলায় আমার মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। তবে তার আগে মেমোরি কার্ড খুলে নিয়ে নেই। তিনি আরো বলেন, আমার মোবাইলটির দাম বাংলাদেশি টাকায় ৪৫ হাজার টাকা। তিনি দীর্ঘদিন ওই দেশে গৃহকর্মীর কাজ করে দেশে ফিরে আসছিলেন। তিনি বলেন, আমি নিজেও মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এ ব্যাপারে জানিয়েছি।
বিএমইটি সূত্রে জানা গেছে, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে প্রথম দফায় গত ৭ই ডিসেম্বর তারা ওই নারীকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু এরপরও তাকে ফেরত আনেনি। পরে আরো একটি চিঠি দেয়া হয়। গত ২৬শে ডিসেম্বর দেয়া ওই চিঠিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ফেরত এনে বিএমইটিতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি এজেন্সিটি।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে মেসার্স স্টানফোর্ড প্রা: লি:-এর এসিস্ট্যান্ট মানেজার সুব্রত সরকার জানান, প্রথমদিকে ফেরত আনার জন্য তার স্বামী অফিসে যোগাযোগ করেছিলো। বলেছিলো, সেখানে তার ভালো লাগছে না। কিন্তু দুই বছরের চুক্তি রয়েছে তাই জরিমানা দিয়ে আনতে হবে জানালে তারা যৌন নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ আনে। এ ব্যাপারে ওই নারীর স্বামী বিএমইটিতে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি আমাদের অফিসের কর্মকর্তা শান্তদেব সাহা দেখছেন। আমরাও একটা রিপিট অভিযোগ দিয়েছি।
No comments