বেড়েই চলছে পেঁয়াজের ঝাঁজ
রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে পেঁয়াজের দাম। দু’সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। হঠাৎ এ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বন্যায় আড়তে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়া, মজুদ কমে যাওয়া, ভারতীয় বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরির কথা বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, দেশে পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির ঈদ এলেই প্রতিবছর অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের দাম। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে চলতি বছরও। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে বেড়েই চলছে পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে; যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এ সপ্তাহে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। আর দু’সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি প্রায় ২০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, ঈদুল আজহা এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপণ্যটির দাম আরও বাড়বে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে গড়ে প্রতিমাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ১৫ হাজার টন। এর মধ্যে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। এছাড়া রমজান মাস ও কোরবানির সময় দেড় থেকে দুই লাখ টন বাড়তি পেঁয়াজের চাহিদা তৈরি হয়। এ চাহিদাকে পুঁজি করেই সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। কোরবানির ঈদকে টার্গেট করেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। দেশে উৎপাদন, আমদানি ও চাহিদা হিসাব করলে এখনও দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ৫০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। আর ঢাকায় পেঁয়াজের প্রধান পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে মঙ্গলবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৬ থেকে ৩৯ টাকায় এবং ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে শতকরা ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮০ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
আর দেশীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে টিসিবির হিসাব আর প্রকৃত বাজার দরে বরাবর একটি বড় পার্থক্য থাকে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মাস ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে ছিল। তবে কয়েক দিন ধরে তা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বর্ষা মৌসুম ও আমদানি কম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীদের মজুদকেও একটি কারণ বলেছেন তারা। প্রধান পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে পেঁয়াজের পাইকার মেসার্স স্বাধীন বাণিজ্যালয়ের কর্ণধার শহিদুল বলেন, দেশের পেঁয়াজের বাজার ভারত থেকে আমদানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার খবরে দেশের সরবরাহকারীরাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিও কমে গেছে। সেই সুযোগে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের একজন ব্যবসায়ী জানান, বাজারে দেশি পেঁয়াজ আছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে দাম এত বাড়ত না। দেশে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টিতে মজুদ করা পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদাররা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। যে কারণে তাদেরও বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। আর বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই শেষপর্যন্ত এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে ভোক্তার ওপর। জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর ২০-২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। রমজান মাস ও কোরবানিকে কেন্দ্র করে এ চাহিদা বেড়ে যায়। এ চাহিদার বিপরীতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৮ লাখ টন। চাহিদা পূরণে আমদানি করা বাকি পেঁয়াজের বেশিরভাগই আসে পাশের দেশ ভারত থেকে। তবে ব্যবসায়ীরা মনে করেন, পেঁয়াজের চাহিদার ৬০ ভাগ দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ হয়। বাকিটা আমদানি করে মেটাতে হয়।
No comments