লোডশেডিং থাকবে আরও কয়েকদিন
জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে জনজীবন যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন বিদ্যুতের লোডশেডিং তা আরও অসহনীয় করে তুলেছে। গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই কয়েক দিন ধরে চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং। দেশের বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, যাতে আসন্ন রমজানের বাড়তি চাহিদা পূরণে সমস্যা না হয়। আর দু-একটি কেন্দ্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে কারিগরি ত্রুটিতে। কোনো কোনোটি গ্যাস সরবরাহের কারণে। সোমবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন চার দিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এ সময়ের মধ্যে উৎপাদনে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার পিডিবি (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে তারা দুটি সার কারখানায় (কাফকো ও যমুনা) গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ওই গ্যাস বিভিন্ন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়বে। মঙ্গলবার পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৮ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট।
তবে চাহিদা ও ঘাটতির মধ্যে এখনও বড় ফারাক রয়েছে। বেসরকারি হিসাবে এ ঘাটতি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এ অবস্থায় লোডশেডিং আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় সব স্থানেই বিদ্যুৎ চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ নেই। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দিনে ৪ থেকে ৫ বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎহীন থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, রংপুর, যশোরের মতো বড় বড় শহর-নগরেও লোডশেডিং হচ্ছে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা করে। গ্রামাঞ্চল ও মফস্বল শহরে লোডশেডিং হচ্ছে দফায় দফায়। সঙ্গে কোথাও কোথাও রয়েছে লো-ভোল্টেজের সমস্যা। এতে একদিকে যেমন জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে শিল্পকারখানার উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটছে। বিস্তারিত ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে সারা দেশের চিত্র-
রাজশাহী : ২ মে থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ভ্যাপসা গরমের মধ্যে জনজীবনে যেমন দুর্ভোগ নেমে এসেছে, তেমনি কলকারখানায় উৎপাদনও মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। রাজশাহী নগরীর বিসিক এলাকায় অবস্থিত এজি প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল গনি জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানার উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটেছে। প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এক ঘণ্টা থেকে ফের যাচ্ছে। কখনও দুই ঘণ্টা পর এসে এক ঘণ্টা থাকছে। এছাড়া ভোল্টেজ কম থাকায় যন্ত্রপাতিরও ক্ষতি হচ্ছে। এরই মধ্যে তার একটি মোটর পুড়ে গেছে। পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকায় প্রায় ৩০০ ডালমিল রয়েছে। ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকায় মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধের পথে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, বাধ্য হয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে গ্রাহকদের সহনশীল হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে প্রতিদিন স্থানভেদে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। নগরীর চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৯শ’ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড- পিডিবি সরবরাহ করছে সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রোজ গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। প্রচণ্ড দাবদাহে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একদিকে গরম অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পিডিবি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি মিলে ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৪২৩ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ করা বাকি ১৫০ থেকে ২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে জাতীয় গ্রিড থেকে। রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি ইউনিটেই গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
খুলনা : খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দিনে গড়ে প্রায় ৪৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি চলছে। প্রায় ১ মাস ধরেই চলছে এই অবস্থা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দিনে গড়ে প্রায় ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকা এবং দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে মেশিনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বরিশাল ও গৌরনদী : বিদ্যুৎ চাহিদার অর্ধেক মিলছে বরিশালে। বরিশালের বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্র জানিয়েছে, বরিশাল নগরী, জেলার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকসহ ঝালকাঠি ও নলছিটি উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা পিক আওয়ারে ১২০ মেগাওয়াট, অফপিক আওয়ারে ৯০ থেকে ৯৫ মেগাওয়াট। অথচ পিক আওয়ারে ৬০ থেকে ৬৫ ও অফপিক আওয়ারে ৪৫ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে এক থেকে দুই ঘণ্টা পর পর চলছে লোডশেডিং।
রংপুর : তীব্র গরমের পাশাপাশি অব্যাহত লোডশেডিংয়ে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রংপুর আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ অফিস সূত্র জানায়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলার বিদ্যুৎ চাহিদা ৫০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৩০ মেগাওয়াট।
সিলেট : উৎপাদনের এক চতুর্থাংশ চাহিদা থাকলেও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে সিলেট অঞ্চলের গ্রাহকরা। সিলেট অঞ্চলে রোজ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সরকারি-বেসরকারি ৮টি উৎপাদন কেন্দ্র এ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র ৩৯০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট ব্যবহৃত হয় সিলেটে। অতিরিক্ত প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়।
বগুড়া : ২৪ ঘণ্টার অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না বগুড়ার গ্রাহকরা। চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ মিলছে না। বগুড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রশিদ জানান, কয়েকদিন আগে ঝড়ে ভৈরবে টাওয়ার পড়ে যাওয়া, কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকা ও সিরাজগঞ্জ, পাবনার বেড়া এবং বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে।
কুমিল্লা : কুমিল্লায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকরা চাহিদার তুলনায় অর্ধেকও বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন না। জেলার ১৭টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে। আর কুমিল্লা মহানগরসহ আশপাশের এলাকায় পিডিবি গ্রাহকদের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে।
ফরিদপুর ও বোয়ালমারী : ফরিদপুর বিদ্যুৎ বিতরণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় রোজ বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৪০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
যশোর : কয়েক দিনের টানা তীব্র দাবদাহে যশোরে জনজীবন অতিষ্ঠ। এর মধ্যেই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, ২২ মে যশোরে সারা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মো. এরশাদ উল্লাহ জানান, ভিআইপি এলাকা ছাড়া বাদ বাকি এলাকায় দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বড়জোর ৫-৬ ঘণ্টা পিডিবি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন জানান, ময়মনসিংহে প্রতিদিন ১০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড থেকে ১০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। কিন্তু সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি ও টেকনিক্যাল ফল্টের কারণে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।
শরীয়তপুর ও ডামুড্যা : জেলার ৬টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ ও ওজোপাডিকোর বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে পল্লী বিদ্যুতের দেড় লক্ষাধিক গ্রাহক সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পর বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। দিনে গড়ে ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
পিরোজপুর : লোডশেডিং বন্ধ, জাতীয় গ্রিডের সাব-স্টেশনসহ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। মঙ্গলবার জলার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের আয়োজনে শহরের গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব সড়কে মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন শফিউল হক মিঠু, একে আজাদ, সাদউল্লাহ লিটন, খালিদ প্রমুখ।
জীবননগর : জীবননগরে এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। অসহনীয় গরমের মধ্যে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিংও। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহক।
রাজশাহী : ২ মে থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ভ্যাপসা গরমের মধ্যে জনজীবনে যেমন দুর্ভোগ নেমে এসেছে, তেমনি কলকারখানায় উৎপাদনও মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। রাজশাহী নগরীর বিসিক এলাকায় অবস্থিত এজি প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল গনি জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানার উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটেছে। প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এক ঘণ্টা থেকে ফের যাচ্ছে। কখনও দুই ঘণ্টা পর এসে এক ঘণ্টা থাকছে। এছাড়া ভোল্টেজ কম থাকায় যন্ত্রপাতিরও ক্ষতি হচ্ছে। এরই মধ্যে তার একটি মোটর পুড়ে গেছে। পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকায় প্রায় ৩০০ ডালমিল রয়েছে। ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকায় মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধের পথে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, বাধ্য হয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে গ্রাহকদের সহনশীল হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে প্রতিদিন স্থানভেদে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। নগরীর চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৯শ’ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড- পিডিবি সরবরাহ করছে সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রোজ গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। প্রচণ্ড দাবদাহে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একদিকে গরম অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পিডিবি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি মিলে ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৪২৩ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ করা বাকি ১৫০ থেকে ২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে জাতীয় গ্রিড থেকে। রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি ইউনিটেই গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
খুলনা : খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দিনে গড়ে প্রায় ৪৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি চলছে। প্রায় ১ মাস ধরেই চলছে এই অবস্থা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দিনে গড়ে প্রায় ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকা এবং দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে মেশিনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বরিশাল ও গৌরনদী : বিদ্যুৎ চাহিদার অর্ধেক মিলছে বরিশালে। বরিশালের বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্র জানিয়েছে, বরিশাল নগরী, জেলার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকসহ ঝালকাঠি ও নলছিটি উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা পিক আওয়ারে ১২০ মেগাওয়াট, অফপিক আওয়ারে ৯০ থেকে ৯৫ মেগাওয়াট। অথচ পিক আওয়ারে ৬০ থেকে ৬৫ ও অফপিক আওয়ারে ৪৫ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে এক থেকে দুই ঘণ্টা পর পর চলছে লোডশেডিং।
রংপুর : তীব্র গরমের পাশাপাশি অব্যাহত লোডশেডিংয়ে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রংপুর আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ অফিস সূত্র জানায়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলার বিদ্যুৎ চাহিদা ৫০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৩০ মেগাওয়াট।
সিলেট : উৎপাদনের এক চতুর্থাংশ চাহিদা থাকলেও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে সিলেট অঞ্চলের গ্রাহকরা। সিলেট অঞ্চলে রোজ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সরকারি-বেসরকারি ৮টি উৎপাদন কেন্দ্র এ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র ৩৯০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট ব্যবহৃত হয় সিলেটে। অতিরিক্ত প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়।
বগুড়া : ২৪ ঘণ্টার অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না বগুড়ার গ্রাহকরা। চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ মিলছে না। বগুড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রশিদ জানান, কয়েকদিন আগে ঝড়ে ভৈরবে টাওয়ার পড়ে যাওয়া, কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকা ও সিরাজগঞ্জ, পাবনার বেড়া এবং বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে।
কুমিল্লা : কুমিল্লায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকরা চাহিদার তুলনায় অর্ধেকও বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন না। জেলার ১৭টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে। আর কুমিল্লা মহানগরসহ আশপাশের এলাকায় পিডিবি গ্রাহকদের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে।
ফরিদপুর ও বোয়ালমারী : ফরিদপুর বিদ্যুৎ বিতরণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় রোজ বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৪০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
যশোর : কয়েক দিনের টানা তীব্র দাবদাহে যশোরে জনজীবন অতিষ্ঠ। এর মধ্যেই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, ২২ মে যশোরে সারা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মো. এরশাদ উল্লাহ জানান, ভিআইপি এলাকা ছাড়া বাদ বাকি এলাকায় দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বড়জোর ৫-৬ ঘণ্টা পিডিবি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন জানান, ময়মনসিংহে প্রতিদিন ১০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড থেকে ১০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। কিন্তু সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি ও টেকনিক্যাল ফল্টের কারণে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।
শরীয়তপুর ও ডামুড্যা : জেলার ৬টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ ও ওজোপাডিকোর বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে পল্লী বিদ্যুতের দেড় লক্ষাধিক গ্রাহক সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পর বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। দিনে গড়ে ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
পিরোজপুর : লোডশেডিং বন্ধ, জাতীয় গ্রিডের সাব-স্টেশনসহ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। মঙ্গলবার জলার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের আয়োজনে শহরের গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব সড়কে মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন শফিউল হক মিঠু, একে আজাদ, সাদউল্লাহ লিটন, খালিদ প্রমুখ।
জীবননগর : জীবননগরে এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। অসহনীয় গরমের মধ্যে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিংও। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহক।
No comments