ট্রাম্পের ‘আরব ন্যাটো’ হবে ভয়ানক ভুল
মধ্যপ্রাচ্যে সভ্যতার ইতিহাস অনেকের কাছে অজানা নয়। লেখনরীতি, প্রাচীন শহর, কৃষি, জ্যোতিষ শাস্ত্র এবং গ্রন্থাগার- প্রথমে এখানেই তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এসব ইতিহাসের সঙ্গে নতুন খবর হল যে, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ‘আরব ন্যাটো’ গঠনের পরিকল্পনা করছে। স্নায়ু যুদ্ধের প্রথম দিকে ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ‘বাগদাদ প্যাক্ট’ নামে একই ধরনের একটি জোট গঠনের কাজে ব্যতিব্যস্ত ছিল। এটি সেন্ট্রাল ট্রিইটি অর্গানাইজেশন (সেনটো) বা মিডল ইস্ট ট্রিইটি অর্গানাইজেশন (মেটো) নামে পরিচিত। এ জোট তৈরির উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসেরের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের কয়েকটি দেশকে একত্রিত করা। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত জোট প্রতিষ্ঠার অর্থ শুধু আরব দেশগুলোকে একত্রিত করা নয়, বরং ইরানকে প্রতিহত করতে দেশের সুন্নি গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করা। এ ধরনের জোট গঠনের পরিকল্পনার অর্থ হল উপসাগরীয় অঞ্চলে উগ্র সুন্নি রাজতন্ত্রের জয়গান। অস্ত্র বিক্রেতাদের কাছে এর মানে হল,
শত শত কোটি ডলারের উন্নতমানের অস্ত্র প্রযুক্তি বিক্রি, যদিও এসব দেশের হাতে যেসব অস্ত্র রয়েছে সেগুলোই তারা ব্যবহার করার যোগ্য নয়। অন্যদিকে রয়েছে ইসরাইল, যারা ইরান জুজুর ভয় দেখিয়ে ফিলিস্তিনে বর্বরতা থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে চায়। উপসাগরীয় অঞ্চলের অধিকাংশ স্বৈরশাসকই সুন্নি। কিন্তু পূর্ব আরবের অনেকেই সুন্নি নয়। যেমন ইরাক, লেবানন, বাহরাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই সুন্নি নয়। আবার ইয়েমেন, সিরিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশে রয়েছে বিপুলসংখ্যক শিয়া মুসলিম। ঐক্যবদ্ধ সুন্নি জোট গঠিত হলে এসব দেশের কোটি লোকের কাছে- যারা সুন্নি নয়, কি বার্তা যাবে? আরব বিশ্বের পশ্চিমাংশের দেশ মিসর থেকে মরক্কো- কোথাও শিয়াদের তেমন প্রভাব নেই। আলোচনার বিষয় এটা যে, আরব বিশ্বে ইয়েমেনের মতো গরিব দেশের যুদ্ধে সৌদি আরবকে সমর্থন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি স্বার্থ হাসিল করছে? যুক্তরাষ্ট্র কি তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শত্রুর সংখ্যা বাড়ানোর প্রত্যাশা করছে? অধিকাংশ মার্কিনি সৌদি আরব ও ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করে আর ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিবর্তনীয় ও বেপরোয়া শত্রু বলেই মনে করে। এটা উল্লেখ্য যে, ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের আগে সুন্নি-শিয়া দ্বন্দ্ব একটা গৌণ বিষয় ছিল। সুন্নিরা শিয়াদের বিবাহ করত। অন্যান্য সংঘাত সেখানে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটা সত্য যে,
ইরান ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ১৯৭৯ সালের পর থেকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব বৃদ্ধির পর সংঘাতের দানা বাঁধতে শুরু করে। এক্ষেত্রে সৌদি আরব অসহনীয় সাম্প্রদায়িকতাকে গ্রহণ করে পাল্টা আক্রমণাত্মক অবস্থানে নেতৃত্ব দিতে শুরু করে। এছাড়া এটি ইসলামিক স্টেটের সন্ত্রাসবাদ উত্থানের পথে বড় অবদান রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় শিয়াদের কাফির, মুশরিক ও সুন্নি মতাদর্শ থেকে তারা বিতাড়িত বলে প্রচারণা চালাতে শুরু করে সুন্নিরা। এমনকি তাদেরকে অমুসলিম আখ্যা দেয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সুন্নিরা। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ অঞ্চলে সফরের মাধ্যমে সেখানে সুন্নি-শিয়া দ্বন্দ্বের ধারা-প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করবেন, যাতে ‘আরব ন্যাটো’ গঠনের ক্ষেত্র তৈরিতে সহজ হয়। এ সফরের মাধ্যমে ইরানের প্রতি শত্রুতা এবং শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিমোহিত হতে পারে। তবে আমেরিকান জনগণ এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বিষয়টির প্রতি মনোযোগ না দিলে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় আরেকটি স্থলযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। দ্য গার্ডিয়ান
No comments