৯০% গাছে বিলবোর্ড ও পেরেক
রাজধানীতে পরপর দুই বছর গাছের চাপায় দুজন নিহত হন। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ বা অরক্ষিত গাছের ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে কোনো তথ্য নেই। মোট কত গাছ আছে শহরে, তারও হিসাব জানে না দুই সিটি করপোরেশন। পরিবেশবিদেরা বলছেন, রাজধানীর প্রায় ৯০ শতাংশ গাছেই বিলবোর্ড ও পেরেক লাগানো। গত বছরের ৭ মার্চ গাছের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্রনির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু। ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে ফুটপাতের ওপর বিশাল আকৃতির একটি কৃষ্ণচূড়াগাছ শিকড় থেকে উপড়ে পড়ে তাঁকে বহনকারী রিকশাকে চাপা দেয়। মিঠু নিহত হন কিন্তু বেঁচে যান রিকশাচালক। এ বছরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। ১৯ মার্চ সংসদ ভবন এলাকায় একটি কৃষ্ণচূড়াগাছ পথচলতি যানবাহনের ওপর ভেঙে পড়ে। একজন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন এবং আহত হন একজন সিএনজিচালক। পরপর দুটি মৃত্যুর ঘটনার পরেও দুই সিটি তাদের ঝুঁকিপূর্ণ বা অরক্ষিত গাছের কোনো হিসাব করেনি। এমনকি এগুলো শনাক্ত করারও কোনো ব্যবস্থা তাদের নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কোনো গাছেরই হিসাব তাঁদের কাছে নেই। কোনো গাছ ঝুঁকিপূর্ণ বা জনদুর্ভোগ তৈরি করে কি না, তা শনাক্ত করার কোনো ব্যবস্থাও সিটি করপোরেশনের নেই। পরিবেশবিদেরা বলছেন, রাজধানীতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাজে সড়কে বা ফুটপাতে খোঁড়াখুঁড়ি চলে। এতে অনেক সময় গাছের শিকড় কাটা পড়ে। আবার ফুটপাতে উন্নয়নের ফলেও গাছের শিকড় বিস্তৃত হতে পারে না। ফলে ওপরে গাছকে সজীব দেখালেও নিচে তা দুর্বল থাকে।
এতে ঝড় হলে তা উপড়ে পড়ে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই জানায়, আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে কোনো গাছ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে তা সম্পত্তি বিভাগকে জানায়। তখন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত গাছ কাটাবিষয়ক কমিটির অনুমতি নিয়ে তারা ব্যবস্থা নেয়। তবে ঝড়ে উপড়ানো কোনো গাছ সড়কে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে সিটি করপোরেশন তাৎক্ষণিক তা সরিয়ে নেয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামও একই কথা বলেন। তাঁদের কাছেও কোনো হিসাব নেই। তবে তিনি বলেন, অঞ্চলের রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁরা কিছু ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কেটেছেন, সংখ্যায় কত তা জানেন না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নগরবিদ ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, গাছপালা দেখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কোন গাছগুলো জনদুর্ভোগ তৈরি করতে পারে, সেগুলো তাদের বিবেচনায় নিতে হবে। মানুষের অত্যাচারে গাছ গোড়া থেকেই নষ্ট হচ্ছে। প্রায় ৯০ শতাংশ গাছে বিলবোর্ড ও পেরেক লাগানো। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই। তিনি আরও বলেন, গুলশানের গাছগুলো মরে গেছে। সেগুলো যদি ভেঙে কারও ওপরে পড়ে, তাহলে তা দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এর দায়ভার সিটি করপোরেশনের। উন্নয়নের নামে গাছ কাটলেই হবে না, সংবেদনশীলতা প্রয়োজন। গাছ রোপণের পাশাপাশি গাছ পালনও জরুরি।
No comments