সরকারবিরোধী জনমত তৈরি করবে বিএনপি
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার ভারত সফরের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে বিএনপি। এ সফরে দুই দেশের
মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে গণমাধ্যমে
প্রকাশিত খবরকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এ বিষয়ে সার্বিক
তথ্য সংগ্রহে জ্যেষ্ঠ কয়েক নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা নানা মাধ্যমে
তথ্য সংগ্রহ করছেন। এ ইস্যুতে সরকারবিরোধী জনমত তৈরিতে রাজপথে নামার
প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। দলের নীতিনির্ধারক এবং বুদ্ধিজীবীদের মতামত নিয়ে
তৈরি করা হচ্ছে কর্মপরিকল্পনা। চুক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হতে সারা
দেশে গণসংযোগ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এজন্য লিফলেট তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় ধরনের সমাবেশ করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে
বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দলটি। ভারতের
সঙ্গে সামরিক চুক্তি বা সমঝোতা হবে কিনা- সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক
ঘোষণা আসার পরই চূড়ান্ত করা হবে কর্মপরিকল্পনা। বিএনপির নীতিনির্ধারণী
সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ভারত নয়, যে কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি হলে
সরকার আমাদের জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু
বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকেই গুরুত্ব দিচ্ছে।
জনগণকে অন্ধকারে রেখে অতীতে এমন একাধিক চুক্তি করেছে। ট্রানজিট, নৌবন্দর
ব্যবহারে ভারতকে সুযোগ দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত আমরা তিস্তার পানি পাইনি।
প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করবেন- জনগণ এমনটাই আশা
করে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সামরিক চুক্তি হতে
পারে বলে নানা মাধ্যমে খবর শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন
পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য-বিবৃতি আসেনি। ভারত সফরে কী আলোচনা হবে,
তা দেশবাসীকে জানানো উচিত। দেশের স্বার্থবিরোধী বা বাংলাদেশের
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে যায়, এ ধরনের কোনো চুক্তি জনগণ গ্রহণ করবে
না। ফখরুল বলেন, বিএনপি গণমানুষের রাজনীতি করে। দেশ এবং মানুষের স্বার্থ
রক্ষায় আমরা সব সময় সোচ্চার ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। প্রধানমন্ত্রীর ভারত
সফরে দেশবিরোধী কোনো চুক্তি হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিরোধে যা যা করা
দরকার বিএনপি সবই করবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, সামরিক চুক্তি
ইস্যুতে সরকারবিরোধী জনমত তৈরি করা সহজ হবে। দেশের সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে
বেশ সতর্ক। এ ধরনের চুক্তিকে তারা দেশের স্বার্থবিরোধী বলেই মনে করে। এরই
মধ্যে প্রায় সব মহল থেকেই এ ব্যাপারে বিরোধিতা করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের
মধ্যেও অনেকে এ ধরনের চুক্তির বিপক্ষে। তাই এ ইস্যুতে মাঠে নামলে জনগণও তা
ইতিবাচকভাবে নেবে। সম্প্রতি কয়েক বুদ্ধিজীবী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়েও আলোচনা
হয়। সামরিক চুক্তি বিষয়ে বিএনপি কী ভাবছে, তা জানতে চান তারা। এ ধরনের
চুক্তি হলে বিরোধিতা করে জনগণের কাছে যাওয়া উচিত বলে মত দেন তারা।
এ সময়
খালেদা জিয়া তাদের বলেন, বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। দেশের
স্বার্থবিরোধী যে কোনো চুক্তির ব্যাপারে তার দল কোনো ছাড় দেবে না। ‘জাতীয়
সম্পদ, জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে দেশনেত্রী খালেদা
জিয়ার ডাক’ শিরোনামে প্রকাশিত পোস্টারে ১৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। একই
দাবিতে লিফলেটও করা হয়। কিন্তু যখন পোস্টার ও লিফলেটের খসড়া করা হয় তখনও
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর চূড়ান্ত হয়নি। সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার পর
পোস্টার ছাপিয়ে সারা দেশে পাঠানো হলেও লিফলেট ছাপানো স্থগিত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্ভাব্য সামরিক চুক্তি হচ্ছে- সরকারের পক্ষ থেকে
এমন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি লিফলেটে সংযুক্ত করা হবে। কয়েকদিনের মধ্যে এ
নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন খালেদা জিয়া। লিফলেট ছাপার
পরই তা নিয়ে সারা দেশে গণসংযোগে নামতে নেতাদের নির্দেশ দেয়া হবে। জানতে
চাইলে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও প্রচার সেলের সমন্বয়ক শহীদউদ্দিন চৌধুরী
এ্যানী যুগান্তরকে বলেন, দলের পক্ষ থেকে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে দুটি
পোস্টার সারা দেশে পাঠানো হয়েছে। ‘জাতীয় সম্পদ, জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র
পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ডাক’- এ শিরোনামে পোস্টারের
পাশাপাশি লিফলেটও ছাপার প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু দলের হাইকমান্ড লিফলেট
ছাপানোর কাজ স্থগিত রাখে। লিফলেটে হয়তো কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, সম্ভাব্য সামরিক চুক্তি বা সমঝোতার প্রতিবাদে রাজধানীতে বড়
ধরনের সমাবেশ করার প্রস্তাব দিয়েছে দল ও জোটের কয়েক নেতা। সম্প্রতি জোটের
এক নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ইস্যুতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটকে
সক্রিয় হওয়ার কথা বলেন। সফরের আগে সোহরাওয়ার্দীতে বড় সমাবেশের মাধ্যমে
সরকারকে একটা বার্তা দেয়া যায় কিনা, সে ব্যাপারে চেয়ারপারসনকে ভেবে দেখতে
বলেন। খালেদা জিয়া এতে মৌন সম্মতি দেন বলে ওই নেতা যুগান্তরকে জানান।
জানতে
চাইলে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ও পররাষ্ট্র উইংয়ের সদস্য সচিব ড.
আসাদুজ্জামান রিপন যুগান্তরকে বলেন, হঠাৎ প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়টি সামনে
আনা হল। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী
বা সচিব এ চুক্তির বিষয়ে কেউ কোনো বক্তব্য দিচ্ছেন না। গণমাধ্যমের খবর যদি
সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে সরকারের উচিত, হঠাৎ করে কেন আমাদের জন্য প্রতিরক্ষা
চুক্তি এত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, আমাদের আদৌ কোনো নিরাপত্তা সংকট আছে কিনা বা
বহিঃশত্রুর হাতে আক্রান্ত হওয়ার শংকা রয়েছে কিনা, তা দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট
করা। রিপন আরও বলেন, সামরিক চুক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে সরকার অস্ত্র
কিনবে। কিন্তু ভারতই তো অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। সম্প্রতি জঙ্গি হামলার কথা
উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা আজ বিশ্বব্যাপী ঘটছে। দেশের অভ্যন্তরে
জঙ্গি বা সন্ত্রাসের যত ঘটনা এ পর্যন্ত ঘটছে, তা প্রতিরোধে আমাদের
গৌরবোজ্জ্বল সেনাবাহিনী ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথেষ্ট সামর্থ্য
রয়েছে। এজন্য যদি অন্য কোনো দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করা হয়, তা
দেশের জন্য বিপদ ডেকে আনবে বলে মনে করে বিএনপি। রিপন বলেন, সামরিক চুক্তির
মতো দেশবিরোধী চুক্তি নিয়ে জনগণ বেশ উদ্বিগ্ন। আশা করি, সরকার জনগণের এ
উদ্বেগকে গুরুত্ব দেবে। যদি তা না করে, তবে জনগণের দল হিসেবে বিএনপি যে
কোনো সিদ্ধান্ত নিতে কার্পণ্য করবে না। দেশবিরোধী সম্ভাব্য চুক্তির
বিরুদ্ধে এখন সভা-সমাবেশ বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। যেহেতু
জনগণ এ চুক্তি মানবে না, তাই তাদের সঙ্গে নিয়েই বিএনপি আন্দোলন করবে।
No comments