স্বপ্নের মৃত্যু ঘটিয়ে আনিছুরের লাশ এল
দিন বদলের স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন আনিছুর রহমান (২৫)। প্রায় আড়াই বছর পর গতকাল রোববার বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। তবে স্বাভাবিকভাবে নয়; লাশ হয়ে। সঙ্গে অপমৃত্যু ঘটেছে নিজের পরিবারের স্বপ্নের। আনিছুর যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মশ্বিমনগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীকান্তপুর গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের অদূরে একটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। ২১ ফেব্রুয়ারি ভবনটির ছাদের কার্নিশ ভেঙে নিচে পড়ে গিয়ে আনিছুরের মৃত্যু হয়। গতকাল সকালে তাঁর মরদেহ বাড়িতে এসে পৌঁছায়। পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। আনিছুরের বাবা আবদুর রহমান বলেন, তিনি পেশায় একজন কৃষক। জমি আছে ১২ বিঘা। এর মধ্য থেকে তিন বিঘা বন্ধক রেখে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠান। এখনো সেই জমি তিনি ফেরত নিতে পারেননি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আনিছুরের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।’
গতকাল সকালে লক্ষ্মীকান্তপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে উঠানে রাখা হয়েছে আনিছুরের লাশ। মা আদুরী বিবি (৫৫) ছেলের লাশের সামনে দুই হাত দিয়ে বুক চাপড়ে বিলাপ করে বলছেন, ‘আমার বাজানের এ কী হয়ে গেল। আমি কী করে বাঁচব, বাজান?’ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবদুর রহমানের (৬০) দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়ে দুটির বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে মুনছুর রহমান (৩০) কৃষিকাজ করেন। তিনি বিয়ে করেছেন। আনিছুর অবিবাহিত ছিলেন। এসএসসি পাস করার পর বেকার কাটছিল সময়। তবে মাঝেমধ্যে বাবার কৃষিকাজে সহায়তা করতেন। ভাগ্য বদলের আশায় মালয়েশিয়া যান। মুনছুর রহমান বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভাইকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিলাম। আশা করেছিলাম, সংসারে সুদিন আসবে। দায়-দেনা শোধ হবে। আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গেল।’
No comments