সাংবাদিকদের নৈশভোজে যাচ্ছেন না ট্রাম্প

সাংবাদিকদের ‘গণশত্রু’ বলে নিন্দা করার ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে নতুন করে তাঁদের ওপর রাগ ঝাড়লেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানিয়ে দিলেন, হোয়াইট হাউসের খবর পরিবেশনকারী সাংবাদিকদের সংগঠন হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএইচসিএ) এ বছরের নৈশভোজে যোগ দেবেন না। সাধারণত ঐতিহ্যবাহী এ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট, সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অংশ নেন। ঐতিহ্য ভেঙে ট্রাম্পের আগামী ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় এ নৈশভোজে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমজগতে। ট্রাম্প শনিবার টুইটারে লেখেন, ‘এ বছর হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নৈশভোজে থাকছি না। সবাই ভালো থাকবেন, সন্ধ্যাটা ভালো কাটুক।’ এর আগের দিন শুক্রবারই ট্রাম্প রক্ষণশীল রাজনীতিকদের এক অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের ‘গণশত্রু’ বলে আখ্যায়িত করেন। তাঁর সমালোচনা করা প্রতিবেদনগুলোকে তিনি ‘ভুয়া খবর’ বলে উল্লেখ করেন। একই দিন হোয়াইট হাউসের প্রেস ব্রিফিংয়ে সিএনএন, বিবিসি, গার্ডিয়ান, পলিটিকোসহ বেশ কয়েকটি শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বেছে বেছে কিছু সাংবাদিককে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে যখন গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে তুমুল সমালোচনা চলছে, তার মধ্যেই ট্রাম্প টুইটারে ডব্লিউএইচসিএর নৈশভোজে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেন।
মিডিয়ার প্রতি ট্রাম্পের আচরণের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এবারের নৈশভোজে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়েছিল। নৈশভোজের শেষে ভ্যানিটি ফেয়ার এবং ব্লুমবার্গ এই দুটি সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে একটি গালা পার্টি হওয়ার কথা ছিল। সেটি তারা বাতিল করেছে। এ ছাড়া ২৮ এপ্রিল একটি আগাম পার্টি দেওয়ার কথা ছিল নিউ ইয়র্কার-এর। তারাও সেটি বাতিল করেছে। নৈশভোজের মূল আয়োজক ডব্লিউএইচসিএর সভাপতি জেফ ম্যাসন বলেছেন, তাঁরা পূর্বনির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠানটি চালাবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সেখানে না যাওয়ার ঘোষণা সম্পর্কে ম্যাসন বলেন, তিনি সেখানে যাবেন কি যাবেন না, সেটা তাঁর নিজস্ব বিষয়। ১৯২১ সাল থেকে হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রতি বছর বসন্তকালে এ বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করে আসছে। সাংবাদিকতার বৃত্তি দিতে তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে এ নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সম্প্রতি ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে লক্ষ্য করে একের পর এক আক্রমণাত্মক মন্তব্য আসায় সাংবাদিকেরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার বেছে বেছে নির্দিষ্ট কিছু সাংবাদিককে হোয়াইট হাউসের প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢুকতে না দেওয়ার পর ডব্লিউএইচসিএ এর তীব্র নিন্দা জানায়। নিউইয়র্ক টাইমস হোয়াইট হাউসের এই সিদ্ধান্তকে ‘সন্দেহাতীতভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অপমান’ এবং সিএনএন একে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস এটিকে আখ্যা দিয়েছে ‘মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউসের ঘোষিত যুদ্ধের নতুন ধাপ’ বলে।
ডব্লিউএইচসিএ’র নৈশভোজ
* শুরু হয় ১৯২১ সালে। প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯২৪ সালে এতে যোগ দেন ক্যালভিন কোলেজ।
* ১৯৩০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম টাফ্টের মৃত্যুর কারণে, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর অংশগ্রহণের কারণে এবং ১৯৫১ সালে এই আয়োজন বাতিল করা হয়।
* মার্কিন প্রেসিডেন্টরা এই নৈশভোজে গরহাজির থেকেছেন কদাচিৎ। ১৯৭২ সালে রিচার্ড নিক্সন এবং ১৯৭৮ সালে জিমি কার্টার ক্লান্তির কথা বলে যাননি। রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৮১ সালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ক্যাম্প ডেভিডে অবকাশে ছিলেন।
* নারীদের ঢুকতে না দিলে যাবেন না, এ হুমকি দিয়েছিলেন জন এফ কেনেডি। পরে নারীদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।
* এখন যেমন প্রেসিডেন্টদের তোপের মুখে পড়তে হয়, তা শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। ২০০৬ সালে অভিনেতা ও উপস্থাপক স্টিফেন কোলবার্টের বিদ্রূপে তিষ্ঠাতে না পেরে বেরিয়ে যান তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কয়েকজন সহযোগী।

No comments

Powered by Blogger.